আমরা হলাম একজন সিঙ্গুর। আর অন্য একজন হোলো নন্দীগ্রাম। হ্যাঁ, সেটাই আমাদের সব থেকে বড় পরিচয়। নাম গোত্রহীন একটা পরিচয় আমাদের গায়ে লেগে গেছে আমাদের নিজেদের অজান্তেই। যে পরিচয়টা যতদিন আমরা বেঁচে থাকবো ততদিন আমাদের গায়ে লেপ্টে থাকবে। যতদিন এই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আন্দোলন এর কথা উঠবে। ইতিহাস ঘেঁটে কেউ দেখবে তখন এই দুটো নাম বার বার উঠে আসবে। সেটা অবশ্য আমার কথা নয় এটাই বলে নন্দীগ্রাম। যদিও সিঙ্গুরের চাষীদের জমি ফেরত হলেও কেমন যেন থমকে গেছে তাদের জীবন। ঠিক যেমন থেমে গেছে আমার নিজের জীবনও।
কিন্তু নন্দীগ্রাম এত কিছুর পরেও হলদি নদী দিয়ে এত লাল জল বয়ে যাবার পরেও কেমন একভাবেই আজও দৌড়ে চলেছে। স্বচ্ছন্দ সহজ গতিতে সমানতালে একে ওপরের সাথে সুন্দর সহাবস্থান করে কেমন হাসি মুখে। যেটা আমি পারিনি কিছুতেই। যদিও তার জন্যে কোনো দিন নন্দীগ্রাম সিঙ্গুরকে আজও ভুলে যায়নি। বরং সব সময় বলেছে তুমি লিখে যাও কে বলেছে তুমি বাতিল। কে বলেছে তুমি পারছো না দৌড়তে। সেই কলকাতা অফিস এর ক্যাসেট বয়ে নিয়ে যাওয়ার দিন থেকে লড়াই করছি আমরা দুজন একসঙ্গে। সেই মাটির থেকে উঠে আসা আমাদের দুজনের এই মাঠে ময়দানের লড়াই কে যে যাই বলুক আমি মনে করি সেটা আর কেউ করেনি আমরা দুজন যা করেছি এই খবরের দুনিয়ায়। এটা মনে রাখতে হবে সেই ভি এইচ এস এর বিয়ে বাড়ির ক্যাসেট থেকে ছোটো ক্যাসেট তারপর চিপ ক্যামেরায় কাজ করা সাংবাদিক আমরা। তাই আমরা কেউ বাতিলের দলে পড়ে নেই।
এই ওর কথা গুলো শুনলে মনে হয় সত্যিই তো এই নিজেদের ঢাক পেটানোর যুগে এমন নিজের ঢাক পিটিয়েই তো কতজন এই বাংলায় কত কি করে ফেললো। বাংলা মিডিয়াতে তার ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ আর তাদের উজ্জ্বল হাসি মুখের উপস্থিতি আমরা টের পাই আকছার। তাহলে সিঙ্গুর পারবে না কেনো। নন্দীগ্রামের এই ভরসা দেওয়া কথা শুনে মনে মনে আমার কেমন যেন ভালো লাগে। আর তাই রাত বিরেতে আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমি তাই লিখতে বসি সেই নন্দীগ্রাম এর কথা।
হ্যাঁ, নন্দীগ্রামের সেই বিখ্যাত সাংবাদিক সবার ভালোবাসার, সবার খুব কাছের। সব পক্ষের যুক্তিতর্ক বাদানুবাদ বাদ দিয়ে এ পক্ষ আর ও পক্ষকে হাসি মুখে সামলে দিয়ে। সরকার পক্ষ আর বিরোধী পক্ষের ঘনিষ্ঠ সেই সাংবাদিক হলো আমাদের সুজিত ভৌমিক। পূর্ব মেদিনীপুরের ইটিভির স্ট্রিঙ্গার দিয়ে যার জীবন শুরু হয়েছিল একদিন। সেই সুতাহাটার তরুণকান্তি দাসের হাত ধরে যার দৌড় শুরু হয়েছিল আশীষ ঘোষের ইটিভিতে। আর আজ সেই বদলে যাওয়া ম্যাড়ম্যাড়ে ইটিভি এখন রংচঙে কর্পোরেট ইটিভির ঝকঝকে সুন্দর অফিস। সেই ঝকঝকে কর্পোরেট অফিসে চাকরি করা জেলায় কাজ করেও কেমন অনেকের থেকে উচ্চপদে আর অনেক বেশি ক্ষমতা নিয়ে কাজ করা সেই বহু পুরোনো সাংবাদিক আমাদের পূর্ব মেদিনীপুরের একচ্ছত্র সম্রাট হলো সেই সুজিত ভৌমিক। যেমন সম্রাট ছিলেন আমাদের উত্তরবঙ্গের আমাদের সবার শ্রদ্ধার সেই নব্যেন্দু গুহ বা সবার প্রিয় নব্যেন্দু দা। লিখবো একদিন তাঁর কথা।
আজ আমার এই রাতের অন্ধকারে আচমকা স্মৃতির স্ক্রিন জুড়ে সেই সুজিত এর কথা মনে হলো। যে আমায় বারবার আমার এই লেখা নিয়ে নানাজন নানা মন্তব্য সমালোচনা করলেও যে সমানভাবে বলে গেছে তুমি এই লেখা চালিয়ে যাও অভিজিৎ। সবাই এই লেখা পড়ছে চুপ করে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। আসলে সিঙ্গুর কে কি আর ভুলতে পারে কোনো ভাবে নন্দীগ্রাম। তারা যে দুজন একে অপরের কাছে খুব কাছের খুব আপনার সেই কোন আমল থেকেই।
সুজিত সেই আশীষ ঘোষ এর আমল থেকে শুরু করে সেই ইটিভির ধ্রুবর নতুন পুরোনো আমল পার করে সেই সিদ্ধার্থ সরকার স্যার এর আমল হাসি মুখে পার করে, এই হাল আমলের বিশ্ব মজুমদার এর আমলেও এই বিশ্ববাংলায় সমান ভাবেই কেমন হাসি মুখে কাজ করে যাচ্ছে এই বয়সেও। সমান তালে তাল মিলিয়ে কবিতাও লিখে যাচ্ছে ও। একদিকে সাংবাদিকতা আর অন্য দিকে কবিতা দুই মাঠেই বেশ চার আর ছয় মেরে ভালই ব্যাট করে যাচ্ছে আজও সে বহাল তবিয়তে কাউকে পরোয়া না করেই একদম টি টোয়েন্টি স্টাইলে। এক এক সময় আমার ওকে বিশ্বাস করুন কেমন হিংসা হয় যেনো। মনে মনে আমি ভাবি নন্দীগ্রাম যেটা পারে সেটা সিঙ্গুর পারে না কেনো কে জানে এটা হয়তো আমার অপারগতা।
সিঙ্গুর এর এই জমি আন্দোলন তো নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অক্সিজেন সাপ্লাই করেছিল একদিন একসময় কিছুটা। যে সিঙ্গুরের জমি অন্দোলনের সেই অক্সিজেন নিয়ে রাজ্যে ঝিমিয়ে পড়া একটা রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস কেমন চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল সেই সময়। সেই দোর্দণ্ড প্রতাপ লক্ষন শেঠের জেলায়। সেই জেলার একচ্ছত্র আধিপত্য কে কেমন করে কোন জাদু বলে আটকে দিয়ে আজকের বিরোধী দলের নেতা এই শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর রাজনীতির ময়দানে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিলেন সেই সময়।
সেসব আজ অতীত, এসব গল্প আজ বই এর পাতায় লেখা আছে। স্কুল পাঠ্যে বইতে তার উল্লেখ করা হয়েছে। যে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের কথা পড়ে বড়ো হচ্ছে এই বর্তমান প্রজন্মের ছোটো আর বড়ো পড়ুয়ারা হাসি মুখে। কিন্তু তার সাথে জড়িয়ে আছে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের এই দুই বিখ্যাত বা কুখ্যাত দুই জেলা সাংবাদিকের অল্প কিছু অবদান। যাক সে সব কথা বাদ দিন এটাই তো কাজ সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি দের। তার জন্য রাজনীতির লোকদের কাছে দাক্ষিণ্য লাভ করা আর করুণা পাওয়া সাংবাদিক এর কাজ নয়।
বহুদিন ধরেই ভাবছিলাম ওর কথা লিখবো যমজ এই সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামের কথা। যে কথা বলতে গেলে মনটা বেশ ভরে যায় আমার গর্বে। আজ মনে হয় সত্যি কথাই বলে পূর্ব মেদিনীপুরের সুজিত ভৌমিক। কে বলে আমি বাতিলের দলে। কে বলে আমি আজ আপনাদের থেকে দূরে সরে গিয়ে মিডিয়া থেকে দূরে সরে গিয়ে টোটো চালকের কাজ করে বাতিল হয়ে গেছি। কই আমি তো সিঙ্গুর এর ইতিহাস, নিজের এই ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর এর সাংবাদিক জীবনের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে পারবো না আমি কিছুতেই। যতদিন সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম এর নাম রাজনীতির ময়দানে থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমরাও বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকব জেলা জুড়ে, রাজ্য জুড়ে। ওর এই কথায় ভরসা লাগে আমার।
সেদিন কথায় কথায় ও বললো একদিন এসো তুমি ঘুরতে। আমি বললাম হ্যাঁ যাবো। সেই একবার ইটিভির চাকরি করতে করতে দীঘা যাওয়া সপরিবারে আমার। ওর সেই ঘর করে দেওয়া আমাদের কি একটা পার্কের পাশে ওল্ড দিঘাতে। হ্যাঁ সেই অমরাবতী পার্কের কাছে একটা জায়গায় থাকতাম আমরা সেই সময়। সেই বুটা তখন কত ছোট ছিল। সেই আমার বউ মেয়ে আর শশুড় শাশুড়ি একসাথে গেছিলাম গাড়ি ভাড়া করে সবাই। সেই জায়গায় দেখা করতে এলো নকু মানে ইটিভির আর কলকাতা টিভির সেই বিখ্যাত নকু আর ওর বান্ধবী অদিতিকে নিয়ে। আজও মনে পড়ে যায় আমার সেই সব কথা। সেই ক্যাসেট জমা দিয়ে আমার আর আর ওর সেই তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ার থেকে বেরিয়ে গল্প করতে করতে ধর্মতলার ভীড় রাস্তা ধরে হেঁটে ঘরে ফেরা। ওর দৌড়ে বাস ধরা অভিজিৎ চলি আমি সময় হয়ে গেছে লাস্ট বাস এর। আমি হাওড়া বাস ধরে ঘরে ফিরতাম ট্রেন ধরে শ্রীরামপুরে। সেই সব দিন এর কথা এই রাত দুপুরে আমায় বড়ো জ্বালাতন করে যে।
সেই মৃদুল দাশগুপ্তর কথা ওকে বলেছি একদিন আমার বাড়ীর পাশে থাকেন মৃদুল দা। ওর কবিতা সন্মেলনে ও আমন্ত্রণ জানাবে মৃদুল দাশগুপ্তকে বলেছে আমায়। ওর সেই ঝড়ের রাতে কাজ, ওর করোনার সময়ে কাজের সেরা পুরস্কার পাওয়া ইটিভির কর্তা ব্যক্তিদের থেকে। ওর ওপরে উঠে যাওয়ার ছবি দেখে মনে মনে ভালই লাগে আমার। সিঙ্গুর তো এই নন্দীগ্রামের কাছে হেরে গেলেও সেই হারে তো কোনো লজ্জা অপমান দুঃখ অভিমান কষ্ট আর যন্ত্রণা নেই। এই হার যে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার জন্যে হার। মনে মনে ওকে তাই এই রাতের অন্ধকারে বলি আমি, দেখো সিঙ্গুর যা পারেনি নন্দীগ্রাম সেটা করে দেখিয়ে দিয়েছে। তুমি এগিয়ে যাও, আরও এগিয়ে যাও সুজিত। যা দেখে আর কারুর ভালো না লাগলেও আমার মনে হবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম এই জুটি যুগ যুগ জিও।
সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম - অভিজিৎ বসু।
সাতাশে অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন