সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটুকরো আলোর খোঁজে

ঘরের ধূলি ধূসর বাক্স ঘেঁটে মিলে গেলো লাল, নীল, সবুজ, সাদা রঙের সব হরেক রঙের আলো। বাক্সবন্দী ওই আলো পেয়ে আমার অন্ধকার নিস্তব্ধ ধুলো পড়া ঘরে কেমন উজ্জ্বল আলোময় হাসির শব্দহীন আওয়াজ ভেসে আসে আজ দুর থেকে। এই অন্ধকার ঘরে কেমন আলোর খোঁজে আমরা সবাই বেশ ব্যস্ত এই সময়ে। অন্ধকার রাতের খরা কাটিয়ে চারিদিক জুড়েই নানা আলোর বাহার ঝুলছে এদিক থেকে, ওদিক থেকে। ওই একচিলতে বারান্দায় ঝুলছে ম্রিয়মান নরম মিটি মিটি আলোর মিষ্টি ঝলকানি। যে অভিমানী বারান্দাকে বহুদিন ভালো করে আমার দেখাই হয়না আর। সেই এক চিলতে বারান্দাও কেমন মহার্ঘ্য হয়ে ওঠে এই আলোর মরশুমে। ঠিক ওই এক ঘরে, এক সাথে বাস করা, মুখ বুজে সংসার করা ওই বহু পুরোনো দামী মানুষটার মতই। যার কোনো খবর নেওয়া হয় না আর আমার বহুদিন, বহু বছর, বহু যুগ। তার জীবনের মুছে যাওয়া আলোর ঠিকানা খুঁজে পাওয়া হয় না আর বহুদিন এদিক ওদিক অনেক দৌড়েও। আজ সেই বারান্দাই যেনো কত সহজে আপনার হয়ে যায় ঠিক এই আলোর মরশুমে আমার জীবনের এই দামী মানুষটার মতই।

 হ্যাঁ, আঁধার কাটিয়ে এই আলোর মরশুমে ভেসে পড়া। গা এলিয়ে দেওয়া। একদম বুকের মাঝে কষ্ট চেপে, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করা। একটুকরো আলোর স্পর্শ পেতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া ওই শেষবারের জন্য। আঁকড়ে ধরা, জড়িয়ে ধরা উজ্জ্বল এলোমেলো আলোকে বুকের মাঝে। যে আলোর এলোমেলো ঝাপটায় বহুদিন পর ক্লান্ত হয়ে দু চোখ বুজে আমার পড়ে থাকতে ইচ্ছা করে ঘরের এক কোণে চুপ করে। যে আলোর খোঁজে আর খানা তল্লাশিতে ব্যস্ত আমরা সবাই যে যার নিজের মতো করেই। দৌড়ে, ছুটে, ঝাঁপিয়ে , একে অন্যকে ঠেলে দিয়ে। আমার হাপর টানা বুকের মাঝে তখন কেমন যেনো চিনচিন করা ব্যথার রিনরিনে সরু চুরির আওয়াজ। যে ব্যথার কোনো সরবিট্রেট নেই যে আমার কাছে। 

 বহুদিন পর ঠিক যেনো ওই মন খারাপ করা এই অভিমানী বারান্দায়, ঝুলে থাকা এলোমেলো আলোকে দেখে আমার মনে পড়ে গেলো পুরোনো দিনের নানা কথা। সেই গঙ্গার ধারে বসে থাকা ওই উত্তুরে আলতো হাওয়া মেখে আলোর খোঁজে আমার অভিমানী প্রেমিকার উদাসী মুখের সেই গন্ধ মাখা চুলের ঝাপটা, তার নরম চোখের এলোমেলো আলো, নরম ঠোঁটের হাতছানি, নরম আঙ্গুলের একটুকরো স্পর্শ, নরম বুকের মিষ্টি গন্ধ আজও যেনো সেসব আলোমাখা কথা বড়ো বেশি মনে পড়ে যায় আমার। যে খোলা বারান্দায়, জানলার এক চিলতে কোণে, ঠাঁই পেয়েছে আজ নানা ধরনের আলো। নানা রকম আলোর ঝলকানি দেখে পথের ধারে অপেক্ষা করছে আজ নানা আলোর বাহার তারা ঝুলছে চারিদিক জুড়েই আমার চারিপাশে। অন্ধকার জীবনের এই গ্রিল বারান্দায় কেমন নিষ্ঠুর হয়ে।

আসলে অন্ধকার এর উৎস হতে যেনো সেই উৎসারিত আলো। এই বিখ্যাত লাইনটা ঠিক এই সময়েই মনে পড়ে যায় আবার। যে আলো চারিদিক থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে এদিক থেকে, ওদিক থেকে। জানলার ফাঁক গলে পড়ছে আলোর নরম স্পর্শ, বারান্দায় আলোর এলোমেলো অবিন্যস্ত ঝুলে থাকা। ক্ষীণ নরম ওই খড় খড়ে দড়ির উপর এক কোণে ঝুলে থাকা পুরোনো নানা জিনিসের মাঝখান থেকে নিচে নেমে পড়েছে নানা রঙ এর আলোর কানভ্যাস। আর যে ক্যানভাসে নানা চেনা মুখের হাসি উপচে পড়ছে যেনো ঠিক ওই আগের মতই।

আমিও কেমন বেসামাল হয়ে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি সেই আলোর ক্যানভাসকে বুকে নিয়ে। যে ক্যানভাসে আঁকা বাঁকা ছবি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার বুটা একচিলতে আলো হয়ে এদিক থেকে ওদিক, যে ক্যানভাসে ছবি হয়ে ধীর পায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার বহু পুরোনো দিনের সঙ্গী সেই অভিমানী বারান্দার মত সেই বহু দিনের প্রেমিকা আমার ঘরের একমাত্র আলো। যে আজ আমার অন্ধকার ঘরে একমাত্র আলোর ঠিকানা। যাকে দেখলে মনে পড়ে সত্যিই তো অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো। যার দুচোখের তারায় আজ আলোর বদলে অন্ধকার এর ভীড় উপচে পড়ছে, চুঁইয়ে পরছে, ছড়িয়ে পড়ছে। আর যে ক্যানভাসে এই দুজনের মাঝে কেমন একা একা ঘুরে বেড়াই আমি আমার এলোমেলো, এলেবেলে ছন্দহীন জীবন নিয়ে শুধু একটুকরো আলোর খোঁজে। 

একটুকরো আলোর খোঁজে - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...