সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রামমোহনের মামার বাড়ির পুজো

হুগলী জেলার শ্রীরামপুরের প্রায় পাঁচশ বছরের পুরোনো পুজো চাতরার দেশগুরু ভট্টাচার্য্য বাড়ির দুর্গাপুজো জেলার অন্যতম আকর্ষণ। দুরদুরান্ত থেকে অনেকেই এই বাড়ির পুজো দেখতে বহু লোক আসেন। এই বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানা ইতিহাস। ইংরেজ শাসনকালের আগে থাকতেই এই বাড়ির যে বাড়িতে পুজো হতো তার স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান বাড়িতে এই পুজো হয় প্রায় তিনশ বছর ধরে। সব প্রাচীন রীতিনীতি মেনে হয় মা দুর্গার আরাধনা।

উত্তর চব্বিশ পরগনার আমডাঙার আদাহাটায় জমিদারি ছিল শ্রীরামপুর চাতরার ভট্টাচার্যদের। গ্রামের সিংহভাগ প্রজা ছিল মুসলমান।তারাই পুজোর একটা বড় খরচ বহন করতেন। ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনেই প্রায় পাঁচশো বছরের বেশি সময় ধরে এখনো এই পূজো হয়ে আসছে। আলী,আফজল ও রাকিনেরা এখনো পুজোর ফল,মূল নিয়ে হাজির হন পঞ্চমীর দিন এই গুরুবাড়িতে। তারা সবাই হাজির হন ভারত পথিক রামমোহন রায়ের শ্রীরামপুরের মামারবাড়িতে। 

বর্তমানে যখন দেশে ও বিদেশে জাতি ও বিদ্বেষের আগুন জ্বলছে চারিদিকে। তখন এই ভট্টাচার্য বাড়ির এক চালার এই দুর্গা প্রতিমা ঠিক যেন বর্ণ, ধর্ম ও নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে একাত্ব ও ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক হয়ে জ্বল জ্বল করছে এই গুরু বাড়ির দুর্গা প্রতিমা। প্রতি বছর প্রতিমার বিসর্জন হলেও মূল কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়না। কেবল সংস্কার হয় মাত্র।


শ্রীরামপুর রেল লাইন লাগোয়া এই চাতরা দেশগুরু ভট্টাচার্যের বাড়ি। রামমোহন রায়ের বাবা রামকান্ত রায়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পরিবারের কন্যা তারিণী দেবীর। ছেলেবেলায় মায়ের সঙ্গে শ্রীরামপুরের এই মাতুলালয়ে বেশ কয়েকবার এসেছেন রামমোহন রায়। সেই স্মৃতি এখনো রয়েছে ভট্টাচার্য বাড়ির আনাচে কানাচেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বাড়ির ঠাকুর দালানে রাখা বংশ তালিকা দেখলে সেই কথার উল্লেখ দেখা যায়। বাড়ির বংশধর শুভপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন,আমার বাবা প্রয়াত পিনাকী প্রসাদ ভট্টাচার্য বাড়ির পরম্পরা মেনেই দুর্গা দালানে মায়ের পুজো করতেন নিষ্ঠার সঙ্গে। বাবার অকাল প্রয়ানের পর আমরা সেই ধারা আজও বজায় রেখেছি। রথ যাত্রার দিন কাঠামো পুজো দিয়ে বাড়ির পুজো শুরু হয়।আমডাঙা থেকে মুসলিম প্রজারা পুজোর সামগ্রী নিয়ে হাজির হতেই পুজোর ষোলোকলা পূর্ণ হয়। 

অতীত কালে এই দেশগুরু ভট্টাচার্য্যদের বাড়ি হিন্দুদের টোল হিসেবে পরিচিত ছিল। এই বাড়িতেই দীক্ষা দেওয়া হতো।সেই জন্যে এই বাড়ির নাম হয় গুরু বাড়ী। তবে এখন আর দিন বদলে গেছে সেই টোল আর নেই। বন্ধ হয়ে গেছে টোল প্রথা। কিন্তু গুরু বাড়ির সদস্যরা আজও চালিয়ে আসছেন এই গুরু বাড়ির পূজো। হয়তো সময়ের সাথে অনেকটাই কমেছে পূজোর জৌলুস। কিন্তু এই গুরু বাড়ির পূজোর যে পরম্পরা সেটা আজও একভাবে রয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত দশমীর দিন এই শহরে সবার আগে গুরু বাড়ির পূজোর প্রতিমা গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়ার পর তারপর অন্যান্য ঠাকুর গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। এই রীতি অনুযায়ী আজও এই ভাবেই বিসর্জন দেওয়া হয় গুরু বাড়ির ঠাকুর। 

আগে একসময় এই পূজো শুরু হয়ে যেতো মহালয় থেকেই কিন্তু বর্তমানে পূজো হয় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত।  আজ হয়তো সেই গুরু বাড়ির টোল বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক ভক্তরা এই পূজোর সময়  ছুটে আসেন গুরু বাড়ির পূজো দেখতে। একসময় রেললাইনের ওপর প্রান্তে পূজো হলেও পরে এই পূজো বর্তমানে এই বাড়িতে চলে আসে। মাটির আসনে এই পূজো হয়। এই পুরোনো স্মৃতি আর নানা ইতিহাসকে সাক্ষী করে আজও শ্রীরামপুরের এই শতাব্দী প্রাচীন গুরুবাড়ির পূজো হয়ে আসছে। যে পূজোর ইতিহাসে জড়িয়ে আছে ভারত পথিক রামমোহন রায়ের নাম।

 তবে এই শ্রীরামপুর এর শহরের বাসিন্দাদের আক্ষেপ একটাই যে এই শহরে যদি একটা রামমোহন রায় এর মুর্তি বসত সেটা বেশ ভালো লাগতো তাদের। শহরের প্রবীণ এক নাগরিক প্রসন্ন কোলে জানান, যে শহরে রাজা রামমোহন রায়ের মামারবাড়ী। যে শহরে ছোটবেলায় তিনি এসেছিলেন।সেই শহরে একটা তাঁর মুর্তি স্থাপন করা গেলে খুব ভালো হতো। এই বিষয়ে তিনি শ্রীরামপুর পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বলে জানান। তাঁর মতে এমন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করলে বেশ ভালো লাগতো শহরের বাসিন্দা হিসেবে। যাই হোক নানা পূজোর ভীড়ে আজও শহরের এক প্রান্তে নিরিবিলিতে দাঁড়িয়ে আছে গুরুবাড়ি পুরোনো দিনের ইতিহাসকে বুকে আগলে। আর সেই বাড়ির পুজো হয়ে আসছে বংশ পরম্পরায়।

এত গেলো গুরু বাড়ির পূজোর ইতিহাস গল্প আর নানা কাহিনী। কিন্তু আমার ছোটবেলা তো কেটেছে এই গুরুবাড়ির আশপাশেই বাস করে। গুরু বাড়ীর ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে আমার সেই পাঁচ নম্বর এঁদো পুকুরের সেই মামার বাড়ি। যে বাড়িতেই কেটেছে আমার শৈশব। সেই ছোটবেলার নানা ঘটনার স্মৃতি অনেকটাই ফিকে আজ। তবু সেই পাঁচিল ঘেরা ঝোপ জঙ্গলে ভরা পালদের বাগান, সেই রেল লাইনের পাশে বসে বসে একে ট্রেন গোনা, সেই রাস্তার পাশে ভজাদের বাড়ির গায়ে দিনুদার মিষ্টির দোকান থেকে গরম রসগোল্লা আর গরম বোদে এনে  রুটি খাওয়া, সেই বিরাট এঁদো পুকুরের কালো জল কচুরিপানা ভর্তি, সেই জলে ইট ছুঁড়ে পানকৌড়ি তাড়ানো আর এসবের মাঝেই যে ওই রেল লাইনের ধারে সেই রং চটা ইঁটের ওই বাড়ির দেওয়ালে যে এত ইতিহাস জড়িয়ে আছে সেটা বোঝার বয়স হয়নি তখন আমার একদম।
 
শুধু এটা জানতাম এই সাদা ঠাকুর দালান আর বাড়িটা অন্য সব বাড়ির থেকে একটু আলাদা ধরনের। তাই আজও মনে পড়ে আমার এই সাদা বাড়ির সামনে উঠোনে মাকে লুকিয়ে লুকিয়ে গুরু পূর্ণিমার দিন সিন্নি প্রসাদ পেতে লাইন দিতাম অন্য সব বাচ্চাদের সঙ্গে। হাফ প্যান্ট আর খালি গায়ে। শাল পাতায় প্রসাদ সিন্নি আর একটা করে লাল বাতাসা পাওয়ার আশায় যেতাম সবার সঙ্গে আমিও। হাতে প্রসাদ নিয়ে এক দৌড়ে মামাবাড়ির কাছে সেই রাস্তার ধারে চলে আসা। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রসাদ খেয়ে কলে পেট ভরে জল খেয়ে খেলার মাঠে চলে যাওয়া বল খেলতে সেই  রাজবাড়ীর মাঠ বা অন্য কোনো মাঠে। সেই অচেনা গুরুবাড়ীতে প্রবেশ আমার সেই ছোট বেলায়। আর পূজোর সময় মার হাত ধরে সেই গুরুবাড়ীর চৌকাঠ পেরিয়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে অনেকক্ষণ সবার মার ভক্তিভরে প্রনাম করা দেখে কেমন যেনো অধৈর্য্য হয়ে পড়তাম আমি। বুঝতাম না আমি এত বেশি ভক্তি আর শ্রদ্ধা কেনো এই বাড়ির পূজোর জন্য রাখা আছে কে জানে। সবাই বলতেন গম্ভীর মুখে এটা গুরুবাড়ির পূজো।

 ধীরে ছোটো বেলা কেটে গেলো আমার। বড়ো হলাম গুরু বাড়ির পূজোর স্মৃতি রয়ে গেলো একভাবেই আমার কাছে। আজ আর সেই মামার বাড়ি পাঁচ নম্বর এঁদোপুকুরের বাড়ী থেকেও আর সেই বাড়িতে যাবার অধিকার নেই কোনো ভাবেই। তবে গুরুবাড়ী মানেই তো আমাদের সেই গুণ্ডাদা। সেই পিনাকী ভট্টাচার্য । যাকে একসময় বেশ ভয় পেতাম সমীহ করতাম আমি। পরে সেই আমি সাংবাদিক হবার পর গুণ্ডাদা আমায় ভাগনা বলেই ডাকতো বরাবর। এই তো রিপোর্টার কি খবর সব। পূজোর সময় ফোন করে বলতাম যাবো ঠাকুর এর ছবি তুলতে সকাল থেকে বসে থাকতেন গুণ্ডাদা ঠাকুর দালানে সেদিনের খবরের কাগজ নিয়ে। সেই পরিচিত সাদা ধুতি আর ফতুয়া পড়ে। তারপর ছবি তুলে চলে আসার পর কবে টিভিতে দেখাবে সেটা নিয়ে বেশ অনেক বার ফোন করে জানতেন তিনি আমাদের কাছে। এতে আমি বা অন্য কোনো রিপোর্টার কেউ মনে হয় না যে কেউ বিরক্ত হতেন না। কবে কোন কাগজে লেখা হয়েছে তাঁর গুরুবাড়ীর পূজোর ইতিহাস সেটা তাঁর সব মুখস্থ থাকতো। আমি যখন প্রতিদিন পত্রিকায় কাজ করি যেদিন সেই পত্রিকায় লেখা বের হলো খুব খুশি হলেন তিনি। আমায় বললেন হ্যাঁ রে বেশ বড় করে বেরিয়েছে গুরু বাড়ীর পূজোর লেখা। এই বাড়ী নিয়ে তাঁর একটা গর্ব ছিল বরাবর। রামমোহন রায়ের মামারবাড়ী বলে কথা।

 কংগ্রেস এর রাজনীতি করা সেই প্রিয়রঞ্জন 
দাসমুন্সীর ঘরানার লোক ছিলেন তিনি। বরাবর কংগ্রেস করে এসেছিলেন। পরে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগ দিয়ে কাউন্সিলর হন তিনি। সেই সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরে হাসিমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গুণ্ডাদা এদিক ওদিক মোটর সাইকেল করে। আমার ফ্ল্যাট বাড়ির পাশের পার্টি অফিসে রাস্তার ধারে বসে আছেন হাসি মুখে। রাস্তা দিয়ে যেতে দেখলেই বলতেন ওই যে রিপোর্টার আসছে অনেক খবর নিয়ে। রাজনীতির খবরের সব বিষয় সমূহ সব একদম তাঁর কাছে পরিষ্কার হয়ে ধরা দিত। শ্রীরামপুর এর সিল্ক শিল্পের কাজের যে কারখানা আছে তাঁর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি বহুদিন। 

আজ এই পূজোর মরশুমে দিন কয়েক আগেই সেই গুরুবাড়ীর দরজা পেরিয়ে, সেই চেনা গলাপোল পার হয়ে লাহিড়ী পাড়ায় যাচ্ছিলাম আমি একা একা। সেই জোড়া শিব মন্দির, সেই বেলগাছ পার করে সন্ধ্যার পর। ছোটো বেলায় কত যে এই বেল গাছে ব্রহ্মদৈত্যের গল্প শুনে ভয় পেতাম তার কোনো হিসেব নেই। আসলে সেই ছোটোবেলার পথ ঘাট প্রান্তর তো আর নেই। তবু রয়ে গেছে সেই নেড়া বেলগাছ, রয়ে গেছে পুরোনো শিব মন্দির, রয়ে গেছে গুরু বাড়ীর পূজো। শুধু নেই আমাদের সেই গুণ্ডা দা। পিনাকী ভট্টাচার্য দা। যাকে বিপদে পড়লে যখন যে কোনো সময় ফোন করে বলতাম দাদা এই কাজটা আপনার সইটা একটু করে দেবেন গরীব মানুষ খুব দরকার ওর। সেই সবজি বিক্রি করা পল্টুকে পাঠিয়ে যে কত উপকার করে দিয়েছেন কাজ করে দিয়েছেন ওর তার ঠিক নেই। আসলে পুরোনো কংগ্রেসী ঘরানার মানুষ যে। এই হাল আমলের তৃণমূল নেতাদের মত নয় আর কি। 

আজ এই গুরু বাড়ীর কথা লিখতে বসে তাই সেই গুণ্ডাদার মুখ, কথা, হাসির কথা মনে পড়ে গেলো আমার। রাজনীতির ময়দানে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া একজন মানুষ হয়তো রাজনীতির জীবনে আরো বেশি কিছু লাভ করতে পারতেন। আরও উঁচুতে উঠে অবস্থিত হয়ে আরও বড় কিছু হতে পারতেন নিজের রাজনৈতিক জীবনে যেটা তাঁর হওয়া প্রাপ্য ছিল। সেটা হয়তো পারেননি তিনি, পাননি সেটা কোনোদিন। তবু গুণ্ডা দা আজও আমাদের হৃদয় জুড়ে আছেন। তবে গুরুবাড়ীর কথা মনে পড়লে। লিখতে বসলেই মনে হবে গুণ্ডাদার কথা। যাকে আমরা করোনার সময়ে হারলাম আজও সন্ধ্যায় ওই রাস্তা দিয়ে গেলে মনে হয় ওই বুঝি লাল মেঝেতে ঠাকুর দালানে হাসি মুখে বসে আছেন আমাদের সবার সেই প্রিয় গুণ্ডাদা। যে আর পূজো এলে কোনোদিন ফোন করে জিজ্ঞাসা করবে না কবে আমাদের গুরুবাড়ীর পূজো দেখানো হবে রে, কবে তোর কাগজে এই বাড়ির পূজোর লেখা বের হবে জানাস আমায়। সত্যিই আজ বড়ো মিস করি আমি এই পূজোর মরশুমে গুণ্ডাদাকে। খুব মিস করি। 

রামমোহনের মামার বাড়ির পুজো 
অভিজিৎ বসু, শ্রীরামপুর, হুগলী।
তেসরা অক্টোবর দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...