সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমার ষষ্ঠী দর্শন

আজ সেই চেনা পথে লেখক বুদ্ধদেব গুহর বিখ্যাত বই ঝাঁকি দর্শনের মতই আমার সেই কলকাতায় ষষ্ঠী দর্শন করা। বোলপুর ছেড়ে চলে এসেছি দুদিন আগেই শ্রীরামপুর।আর সেই শ্রীরামপুর ছেড়ে উত্তর কলকাতার সেই পুরোনো গলি, তস্য গলি, সেই চেনা রাস্তা, চেনা দোকানপাট, চেনা পূজো মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো এদিক থেকে ওদিক। উত্তর কলকাতার  রাস্তার সেই সোঁদা গন্ধ, ছোটো গলির এদিক ওদিক থেকে বেরিয়ে পড়া বাড়ির ভেঙে পড়া অংশ। রাস্তার গলির মাঝে কলের জল অবিরাম গতিতে পড়ে যাওয়া। সেই সব দেখতে দেখতে কেমন ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় চেটেপুটে গিলে খেয়ে নেওয়া আনন্দের শেষ অংশ টুকু। 

বিশ্বাস করুন আমার তো মনে হয়নি এই শহর কলকাতার আর এক প্রান্তে নিরিবিলিতে আন্দোলন প্রতিবাদ আর আমরণ অনশন চলছে জোর কদমে। বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমে। শাসক দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন বেশ কিছু মানুষজন। একটা মৃত্যু, কিছু কথা, কিছু প্রশ্ন নানা ঘটনার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমাদের সবাইকে। আর এসবের মাঝেই যে চলে এসেছেন মা দুর্গা। মা উমা। জাগো মা দশপ্রহরণ ধারিণী। জাগো তুমি জাগো। ডাকে জেগে উঠেছে চারিদিক। 


আর তাই আমরা তিন জন ষষ্ঠীর বিকেলে বেশ গরম আর রোদকে উপেক্ষা করে ট্রেন ধরলাম হাওড়া যাবো বলে শ্রীরামপুর থেকে। বেশ ভিড় ট্রেন কিন্তু বসার জায়গা মিলে গেলো আমাদের। তিরিশ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম সেই চির উন্নত আর চির চেনা ভীড় ঠাসা প্লাটফর্ম হাওড়া স্টেশনে। প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে সেই পাতাল ঘর এর মতো সাবওয়ে পার করে একদম গঙ্গার ঘাটে এসে পৌঁছে গেছি আমরা। যে জলপথ পার করেছি মাত্র ছয় টাকায় সেই এক পথ পার করলাম বারো টাকাতে। একদম ডবল দাম বৃদ্ধি। কই তেমন কিছু বিপ্লব বা আন্দোলন বা চিৎকার ফোঁসফোঁস করছে না কেউ এই বেশি দাম দিয়ে টিকেট কেনার জন্য। বেশ খুশি মনে সবাই গঙ্গা পার করে ঠাকুর দেখতে ভিড় করছেন একে অপরের সঙ্গে পা মিলিয়ে। আমিও পা মেলালাম ভীড় ঠেলে। লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করলাম আমরা । অনেক কষ্টে সেই বাগবাজারের লঞ্চে উঠতে পারলাম আমরা। দ্বিগুণ দামে কেনা টিকিটে দ্বিগুণ ভীড় নিয়ে আমাদের লঞ্চ এগিয়ে চলল বেশ সুন্দর করে বেশ ধীরে ধীরে। সত্যিই জলপথকে সঠিক ভাবে কাজে লাগালে যে কি সুখ আর সুবিধা সেটা আর বুঝলো কে। যাক গে বাদ দি আজকের দিনে এইসব কথা। 


এসে গেলো সেই পুরোনো ঘিঞ্জি পুরোনো জায়গা আহিরিটোলা। বেশ ধাক্কা ধাক্কি করে লঞ্চ থেকে নামলাম আমরা তিনজন। তারপর রেল লাইন পেরিয়ে সেই চেনা রাস্তা ধরে এগোতে থাকলাম আমরা গুটি গুটি পায়ে। সত্যিই বিশ্বাস করুন বিচার চাই।  জাস্টিস চাই। এটা নিয়ে কোনো কথা নেই। তার মাঝে যে মা দুর্গা এসে পড়েছেন কি আর করা যাবে বেরিয়ে পড়ো। হাতে হাত ধরে, জমা জামা কাপড় বের করে শহরের রাজপথে ঘুরে বেড়াও। 

কেমন যেনো ঠিক একদম অন্য রূপে। ঠাণ্ডা জল কিনে গলা ভিজিয়ে চলে এলাম আহিরীটোলার মণ্ডপে। পুরোনো সেই মণ্ডপ, সেই পুরোনো দিনের সব নানা দোকান পাট, সেই রেল লাইন যে লাইন টপকে এদিকে এলাম আমি। সেই সুন্দর ভেঙে পরা ঠাকুর দালান। পুরোনো শহরকে তুলে আনার চেষ্টা। ভীড়ে ঠাসা মণ্ডপের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমরা সবাই মিলে একসাথে। আহিরীটোলার ঠাকুর দেখবো বলে খুশি বুটা। হাজার হাজার মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস কে অনুভব করে প্রবেশ করলাম মণ্ডপে আমরা। 

আর সেই সবার মুঠো ফোনে ছবি তোলার সুযোগ এর অপব্যবহার করে ভীড় উপচে পড়া মণ্ডপে কেমন উৎসবের চেহারা ফিরে আসার লক্ষণ দেখলাম যেনো। সেই ঠিক সন্ধ্যায় জ্বর আসার লক্ষণের মতই। যাকে উপভোগ করতে কোনো কষ্ট হলো না আমাদের কারুর। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে জব চার্ণকের এই পূরনো তিনশ বছরের শহরে আপন স্টাইলে।

 
কে বলে এই শহর জুড়ে শুধু প্রতিবাদ। কে বলে এই শহর কেমন প্রাণহীন হয়ে গেছে যেনো। কে বলে এই শহরে শুধু খুন ধর্ষণ আর অপরাধের শহর এর জন্য বিখ্যাত হয়ে গেছে। না, আহিরীটোলার মণ্ডপ দেখে সেই বি কে পাল এভিনিউ এর পার্কে বসে জিরিয়ে রেস্ট নিয়ে সেসব কথা মনে হলো না আমার। 

ফাঁকা পার্ক এর এককোনে রামকৃষ্ণের মুর্তি। সাজানো সুন্দর বাগানে বসে আছেন আমাদের সেই চৈতন্য হোক বলে যিনি  চৈতন্য না হলেও হাত তুলে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন আর হাঁসেন আপনমনে। আর বলেন যত মত তত পথ। সেই রামকৃষ্ণকে দেখে আমার বেশ মন ভালো হয়ে গেলো। এত গেলো বি কে পাল এর কথা। ফাঁকা মণ্ডপ, পার্ক এর সেই সিঁড়িতে বসে কতদিন যে আইসক্রিম খেয়ে, বাদাম খেয়ে সময় কাটিয়েছি তার কোন হিসাব নেই। এই পার্কটা বেশ পছন্দের জায়গা আমার।
বেশ কিছুক্ষণ পার্কে বসে ঢুকে পড়লাম অন্ধকার আল্পনার রাজ্যে। আলপনার ইতিহাসে জড়িয়ে পড়া মণ্ডপের মাঝে লুকিয়ে আছে কত কাহিনী। সেই কাহিনী আর শিল্পের মিশেলে তৈরি হয়েছে আহিরিটোলা যুবক বৃন্দের মণ্ডপ আলো আর আঁধারির পথ ধরে। যেনো এক অন্য রাজ্যে প্রবেশ করা। যে রাজ্যে আছে নানা শিল্পের সমাহার। যা দেখে মন প্রাণ ভরে যায়। মনে হয় এই ভাবে জোর করে বুটার সাথে কলকাতা এসে বেশ ভালই লাগলো। 

এই যে পর পর এক মণ্ডপ দেখে অন্য মণ্ডপে আবার ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া। আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নেওয়া। সব যেনো বেশ উপভোগের বিষয় কিন্তু। যে উপভোগ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখে শহরের রাজপথে কিছু মানুষ বিচার চাই বলে বসে পড়েছেন। হয়তো বিচার এর বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে না। সত্যিই মিলবে বিচার একদিন। ভোর হয়ে গেল রাস্তায় বাজছে ঢাকের বাদ্যি। দূরে মণ্ডপে চলছে পূজোর প্রস্তুতি। আমি লিখে চলেছি আমার ষষ্ঠী দর্শন। 

আমরাও রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম কুমোরটুলি পার্ক এর পূজোর মণ্ডপে। হারিয়ে যাওয়া সেই রেডিওর  সুর আর তার নানা চিত্র ফুটে উঠেছে এই মণ্ডপের দেওয়ালে। কলকাতা শহরে আর রেডিও কজন শোনেন তার কথা মনে করেই এই মণ্ডপ। মা দুর্গার এখানে একদম অন্য রূপ। ভীড়ে উপচে পড়েছে এই মণ্ডপ। গরমে ঘেমে ক্লান্ত হয়ে এই সুন্দর কুমোরটুলি পার্ক এর মণ্ডপ দেখে বাইরে এসেই দেখলাম চারিদিকে মেলা বসে গেছে যেনো। দোকানপাট, দোলনা হরেক কিসিমের জিনিসের মেলা।

আর মানুষের সব কেনার হিড়িক লেগেছে গোটা চত্বরে। এটাই যে চেনা ছবি ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়। মেলা ছেড়ে পুরোনো কুমোরপাড়ার এলাকা দিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখলাম মা দুর্গার পরেই যে মা লক্ষ্মী ঘরে আসবেন তার প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে কুমোর পাড়ায়। লক্ষ্মী লাভের চেষ্টায় ব্যস্ত কুমোর পাড়ার পটুয়াদের জোর প্রস্তুতি আর কাজকর্ম চলছে। একদিকে প্রতিমা তৈরি, অন্যদিকে হাতের কাজ করছেন এক বৃদ্ধ চাঁদমালা 
করতে ব্যস্ত তিনি আপনমনে সন্ধ্যা বেলায়। সত্যিই এই পূজো না হলে কত লোক যে বেকার হয়ে যাবে কে জানে। পূজোর জন্য এই যে হাজার লক্ষ মানুষের রুজি রোজগার। অর্থনীতির এই ধীর গতির চাকা ঘুরে একটু সচল হবার চেষ্টা করে এটাই বা কম কি। 

ট্রাম লাইন ধরে অটো ছুটছে বাগবাজারের দিকে। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ পৌঁছে দেবে অটো বাগবাজার কুড়ি টাকায়। অটোয় বসে চোখে পড়ল আমার রাস্তার পাশে একটি বাংলা চ্যানেলের হোর্ডিং আর  নানা মুখের বিজ্ঞাপন দেখলাম যেনো। সেই চেনা সব উজ্জ্বল মুখ এর সেই বিখ্যাত সব বাংলার সেরা সাংবাদিকদের দেখে মনে পড়ে গেলো একদিন এরাই যে আমার কাজের সঙ্গী ছিল একদিন এই বাংলার মিডিয়ায়। আর আজ আমি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভেসে চলেছি এই মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে। কাজের তাড়া নেই কোনো, অফিস আদালত থেকে মুক্তি মিলেছে অনেক আগেই। শুধুই ওই নদীর ধার ধরে নৌকার মতই ভেসে যাওয়া। 


হাত জোড় করে বাগবাজার মণ্ডপে এসে মার কাছে প্রার্থনা জানালাম মা, সবার মঙ্গল করো মা। সেই বাগবাজার পূজা মণ্ডপে মার তীব্র দৃষ্টি সন্তানদের প্রতি। যা দেখে মনটা খুব ভালো হয়ে গেলো। বাগবাজারের মণ্ডপে সেই ঘণ্টার আওয়াজ। সেই ঢাকের বাদ্যি। সেই আদ্যাশক্তি জগতমাতার স্ত্রোত পাঠ চলছে এদিক ওদিক। মাকে প্রণাম করে, সেই চেনা রেলপথ টপকে চলে এলাম বাগবাজার গঙ্গার ঘাটে। 

দেখলাম গঙ্গার জলের ওপর হালকা মানুষের অবয়বের ছায়া, জলের ওপর দোল খাচ্ছে ফাঁকানৌকা কেমন আপনমনে, গঙ্গার জল দিয়ে ভেসে যাচ্ছে অনেক কিছুই। মনে মনে মা গঙ্গাকে প্রনাম জানালাম। দেবী দুর্গাকে প্রনাম জানালাম। দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেলো। ষষ্ঠীর দর্শন শেষ আমার। আজ সপ্তমী। মাঝে আর কটা ঘন্টা, কটা দিন তারপর আবার যে এক বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা। মা বিচার যে চাই আমিও। আসল অপরাধীর বিচার চাই। আবার বছরের এই চারটে দিন তোমাকেও চাই মা বলে। তাতে আমায় যে যা বলে বলুক। ষষ্ঠীর রাত শেষ হলো। অন্ধকার কেটে ভোরের আলো ফুটছে। ঢাকের বাদ্যি বাজছে পূজোর মণ্ডপে। ঘুম জড়ানো চোখে মাকে মনে মনে প্রনাম করলাম, বললাম মা তুমি আমাকে শক্তি দিও শুধু লড়াই করার। 

আমার ষষ্ঠী দর্শন - অভিজিৎ বসু।
দশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...