সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান

বহুদিন পর মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে গিয়ে সেই বহু পুরোনো বাংলার রাজনীতিতে অতি পরিচিত এই মুখটার ছবি খুঁজে পেলাম আমি হঠাৎ। একসময় সব চ্যানেলে প্রচারিত হতো তাঁর কথা, তাঁর ফোন ইন, তাঁর ছবি দেখতে পেতাম আমরা নানা ঘটনা ঘটলেই টিভির পর্দায়। আজ সেই বাংলার কংগ্রেসের রাজনীতিতে এক সময়ের জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক নেতার ছবিটা কেমন হারিয়ে গেছে যেনো ধীরে ধীরে। হ্যাঁ, কোথায় যে গেলেন আব্দুল মান্নান দা কে জানে। সেই চেনা মুখের হাসি। চেনা ছবিটা বহুদিন ধরেই দেখা যায় নি আর। 
তাই আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় সেই বহু পুরোনো কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানদার কথা। 
হুগলী জেলায় কাজ করার সুবাদে মান্নান দার সঙ্গে আমার পরিচয় বহু দিন এর পুরোনো। মান্নান দা যখন কলকাতার রাজপথে কাজ করা সাংবাদিক ছাড়া কথা বলতেন না একদম। ফোন ধরতেন না জেলার ছোটো খাটো সাংবাদিক এর। যখন তিনি দাপিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিতে মাঠে নেমে রাজনীতি করছেন সেই সময়েও তিনি যে কোনো দরকারে, যে কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলতেন অভিজিৎ আমি কলকাতা বেরিয়ে যাবো কিন্তু। আমি বলতাম দাদা পাঁচ মিনিট সময় লাগবে আমি আসছি কোনোদিন না করেন নি তিনি সেই সময়। হাসি মুখে সব আবদার মেনে নিতেন তিনি আমার। 

সাদা ধুতি, পাঞ্জাবি বেশ সুন্দর একটা হাসি মুখ নিয়ে কখনও সেই চাতরার পুরোনো বাড়িতে, কোনো সময় শেওড়াফুলির সেই পার্টি অফিসে আবার কোনো সময় চাতরা কুমোরপাড়ার গঙ্গার ধারের কাছের সেই বাড়িতে থাকতেন তিনি। বলে দিতেন কোথায় যেতে হবে। বাড়ি গেলেই সকাল বেলায় খাবার জন্য খুব পিড়াপিড়ি করতেন তিনি। খুব অতিথি পরায়ন মানুষ মান্নান দা। আসলে ভীড় উপচে পড়া নেতাদের উপস্থিতি, তাঁদের কাছে সব ভীড় করে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মনে পড়ে গেলো কংগ্রেস এর সেই একদম শীর্ষ স্তরের নেতাদের কাছে স্বচ্ছন্দে পৌঁছে যাওয়া সেই নেতা কিন্তু সারা জীবন আর দলবদলে অন্য দলের পতাকা হাতে তুলে নিলেন না তিনি কোনোদিনই। সারা জীবন সেই কংগ্রেসেই থেকে গেলেন তিনি। এটা আমার বেশ ভালো লাগে মান্নান দার এই ব্যাপারটা। 

একসময় যে মানুষটা কংগ্রেসী রাজ্যে রাজনীতিতে বেশ শক্ত ভালো জায়গায় বিচরণ করতেন। কংগ্রেসের হাজার বহুধা বিভক্ত এই দলের মধ্যে তিনি কিন্তু বেশ খুশি মনেই সেই পুরোনো দিনের কংগ্রেসের সাথেই সারা জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। আরামবাগ থেকে চাঁপদানী চলে আসা। তারপর হুগলীর রাজনীতিতে থেকেও রাজ্য রাজনীতিতে একটা বড়ো ভূমিকা পালন করতেন তিনি। কিন্তু সেটা মুখে কোনোদিন বলতেন না তাঁর এই হট লাইনের কথা কাউকেই। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হয়ে তাঁর সাথে কোনো দিন বিধান সভার অন্দরে প্রবেশ করতে পারিনি আমি। কিন্তু আমার এক হুগলীর বন্ধুকে মান্নান দা প্রতিদিন একসাথে তাঁর নিজের গাড়ি করে হুগলী থেকে নিয়ে এসে কলকাতায় অফিস পৌঁছে দিতেন। আসলে আগেকার দিনের এই যে সব মানুষগুলো তাঁদের কাছে এইসব বিষয় সমূহ কিছুটা শিক্ষণীয়। যা আমার সাথেও অনেকবার অনেক ঘটনা ঘটেছে। 

আমার মনে আছে আমি দিল্লী বেড়াতে গেছি বঙ্গভবনে উঠেছি। মান্নান দা সেটা জানতেন। বললেন অভিজিৎ তুমি কবে যাবে আমি বললাম দাদা, আমি এই দুদিন বঙ্গভবনে থাকবো। দেখলাম মান্নান দা আগেই ফোন করে আমার নাম বলে রেখেছেন। সেই ভরা সিপিএম আমলে মান্নানদার নিজের জেলার একজন পাতি জেলার রিপোর্টার এর জন্য কত যে খাতির যত্ন করেছিল সেই সময় বঙ্গভবনের লোকজন বাবুর্চিরা কি বলব আমি। পরে শুনেছিলাম এই বঙ্গ ভবনের বহু কর্মীকে মান্নানদা চাকরি দিয়েছিলেন তিনি। সেই আবু বরকত গনি খান চৌধুরীকে ধরে রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে। তাই বাংলার বঙ্গভবনে কংগ্রেসী নেতার এই দাপট বেশ বেশি ছিল সেই ভরা বাম আমলে। এটা শুনে আমার বেশ ভালো লেগেছিল।

 নির্বাচনের দিন কলকাতার প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে গিয়ে বসতে হবে কিন্তু সেই কলকাতা যাওয়ার আগে শ্রীরামপুরে ইটিভির অফিসে এসে লাইভ দিয়ে তারপর বলতেন অভিজিৎ দেরী হয়ে যাচ্ছে আমি চলি ভাই। পরে এসে একদিন চা খাবো আমি। আজ আর দাঁড়াতে পারবো না। আমি শুনতাম উনি খুব উন্নাসিক, কলকাতার বিগ রিপোর্টারদের সাথেই কথা বলেন জেলাকে পাত্তা দেন না তাঁর দিল্লির হট লাইনের জন্য। কিন্তু আমার সেই কথা কোনোদিন মনেই হয়নি। সেই ওনার পা জখম হয়ে যাওয়া ওনার বাড়িতে গঙ্গার ধারে বসে আমগাছের ডালে আম ঝুলছে ইন্টারভিউ নেওয়া তারপর অভিজিৎ খেয়ে যেতেই হবে কিন্তু তোমাদের। আমি আর মিন্টে কতদিন যে দাদা এই বাড়ী থেকে ভাত খেয়ে এসেছি বলে পালিয়ে এসেছি কে জানে।

 সেই ভোর বেলায় পুরী পৌঁছে আমাদের একটা ঘর এর ব্যবস্থা হয়েছে আর ঘর নেই কোথায় পুরীতে। অগত্যা মান্নানদাকে ফোন করলাম আমি বিপদে পড়ে। মান্নান দা বললেন আমিও পুরী এসেছি এই স্বর্গদ্বার পেরিয়ে মোহনার দিকে চলে এসো এই হোটেলে আমি আছি। চিন্তা করোনা ঘরের ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। এমন কত যে উপকার হাসি মুখে কোনো হম্বি তম্বি না করেই করে দিতেন কোনো বড়ো নেতা মন্ত্রী না হয়েও কাউকে না জানিয়ে সেটা আর কি বলব। রাজ্যের যে কোনো ঘটনায় ইটিভি ছেড়ে নানা চ্যানেলে কাজ এর সুবাদে যে কোনো ফোন ইন এর জন্য তাঁর সেই বিখ্যাত নম্বরে ফোন করতাম আমি, বলতাম দাদা অভিজিৎ বলছি আমি। ও তুমি এই চ্যানেলে এখন। আবার নিজেই ওপর প্রান্ত থেকে বলতেন তোমরা কি আর করবে চাকরি তো করতেই হবে তোমাদের। বলে ফোন ইন দিতেন বাড়ী বসেই। 

একসময় তো একটা বাম আমলের চ্যানেলে সদ্য সেই চ্যানেল তখন তৃণমূল হয়েছে তাঁর ফোন যাবে না বলে ফরমান জারি করলেন বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ঘনিষ্ট এক বিখ্যাত এডিটর। সেই চ্যানেলের এক কর্মীকে নিয়েই মান্নান দা বিধানসভায় আসার আগে অফিস পৌঁছে দিতেন। হুটার বাজিয়ে হুশ করে হাসি মুখে অফিস পৌঁছে যেতো সেই আমার সহকর্মী কেমন একমুখ হাসি হেসে। কিন্তু সেই চ্যানেলে এই নেতার ফোন যাবে না বলায় আমি বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। যাই হোক কি আর করা যাবে। এডিটরকে তো কিছুই বলা যাবে না। তারওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ঘনিষ্ট এডিটর বলে কথা। আজ যদিও সেই এডিটর এমন একটা চ্যানেলে কাজ করছেন যে চ্যানেলে অভূতপূর্ব ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ভজনা করে না। সত্যিই বিচিত্র এই হিসেব আর নিকেশ।

 বহুদিন ধরেই মনে পড়ছে আমার সেই রাজ্য রাজনীতিতে হারিয়ে যাওয়া হাসি মুখের সেই আব্দুল মান্নানদার কথা। সেই যে পঁচিশে সেপ্টেম্বর এর সন্ধ্যা বেলায় সিঙ্গুরে বিডিও অফিস পৌঁছে গেলেন তিনি গাড়ি নিয়ে সিঙ্গুরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মান্নানদাকে দেখেই বললেন, আসুন মান্নান দা। দুজনের পাশে বসে হাসি মুখে কথা হলো। সব ক্যামেরায় সেই হাসি মুখের ছবি হলো। রাত বাড়লে কি হবে কি করা হবে কত যে আলোচনা হলো দুজনের। সুন্দর সম্পর্ক ছিল সেই সময়, আবদুল মান্নান আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর। আমার বেশ ভালই লাগত। সেই বিডিও ঘরে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে পাশে বসিয়ে আমাদের ইন্টারভিউ দিলেন। বললেন এই জোর করে জমি অধিগ্রহণ এর বিরুদ্ধে। সেই কংগ্রেসের প্রিয় রঞ্জন দাশমুন্সী গিয়েছিলেন সিঙ্গুরে সভা করতে। সেই সব দিনগুলো কিন্তু খারাপ ছিল না। 

এমন হাজারো টুকরো টুকরো স্মৃতি আমার মনে পড়ে যায় এই ভোরবেলার সময়। মান্নান দার ভাই মুজিবর শ্রীরামপুরে থাকেন মাঝে মাঝেই কথা হয় তাঁর সাথে বলে দাদা আমাদের এক রয়ে গেলো। কিছুই করলো না দাদা কারুর জন্য। সেই স্কুল মাস্টার এর চাকরি অবসর গ্রহণ আর কংগ্রেসী ঘরানার রাজনীতিতেই আস্থা রেখে সারাটা জীবনই কাটিয়ে দিলেন হাসি মুখে। খুব বেশি ক্ষমতার মসনদে বসার জন্য এর ওর কাছে হাতজোড় করে দাঁড়ালেন না তিনি। একটা পরিচ্ছন্ন ইমেজ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বেঁচে রইলেন তিনি। আমাদের সবার প্রিয় সবার খুব কাছের একজন রাজনীতিবিদ হয়ে। 

যে মানুষটাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন হয়তো। তিনি নিজের গোষ্ঠীর লোক ছাড়া আর কাউকে সংগঠনে যুক্ত হতে দিতেন না। অন্যদের পাত্তা দিতেন না জেলার রাজনীতিতে। কাউকে ওপরে ওঠার সুযোগ দিতেন না। কিন্তু এই আমার মনে হয় যেখানে কিছু পাওয়ার আশায় একটু পদ পাওয়ার জন্য সব কিছু বিসর্জন দিয়ে অনেকে অনেক রকম ভাবে ঝুঁকে পড়ে নানা ভাবে কংগ্রেসের পতাকা ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করলেন। সেটাই আসল ট্রেন্ড হয়ে গেলো এই বাংলার রাজনীতিতে। কিন্তু মান্নান দা সেটা করতে পারলেন না এই জীবনে। আর পারলেন না বলেই বোধহয় আজ এই সাদা জীবনের কালো কথায় আজ ভোরবেলায় এত কিছু মনে পড়ে গেলো আমার। এত কিছু অনুভূতির কথা লিখতে পারলাম আমি এই ভোর বেলায় আমার এই ব্লগে। 

সেই সিপিএমের হাতে মার খেয়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি আমি দেখলাম মান্নান দা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোক পাঠানোর আগেই শ্রীরামপুরে ওয়ালস হাসপাতালে এসে হাজির হলেন তিনি। কত ভীড় তাঁর সাথে। কংগ্রেসের নেতার সাথেও সেই ভীড় উপচে পড়া মানুষটা আজ একা, একদম একা হয়ে গেছেন অনেকটাই। ঘর বন্দী হয়ে গেছেন আজ তিনি। হয়তো এই তৃণমূলের রাজনীতির ঝাপটায় কিছুটা হলেও বেসামাল হয়ে গেছেন তিনিও। কিন্তু যে আদর্শ আর শিরদাঁড়া নিয়ে আজও তিনি কংগ্রেসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বাস করে ভরসা করে গোটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন তিনি এটা দেখে বড়ো ভালো লাগে আমার। 

চারিদিকে যখন দ্রুত ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানা ভাবে শিরদাঁড়া হেলিয়ে দিয়ে এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে। এই মা মাটি আর মানুষের জমানায়। সেখানে সেই ক্ষমতায় দুর্বল হয়ে হয়ে যাওয়া আব্দুল মান্নান দাকে দেখলে এটা মনে হয় যে ক্ষমতায় টিকে থাকা আর অর্থ উপায় করার জন্যই রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়া নয়। কিছু আদর্শ, কিছু নীতি, কিছু শিরদাঁড়ার জোর নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় এই পঙ্কিল রাজনীতিতে। আর সাধারণ মানুষের জন্য কিছু উপকার করে যেতে হয়। 

যেটা বোধহয় কিছুটা হলেও সেই কাজ তিনি করেছেন তাঁর রাজনীতির সুবর্ণ যুগে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়। যা আমায় বঙ্গভবনের সেই মালদা, মুর্শিদাবাদের ছেলে গুলো বলেছিল দাদা আমাদের ভগবান। না হলে আমরা কি করে বাঁচতাম এই চাকরিটা না পেলে। আজ রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে সরে গিয়েও আমাদের সবাইকে সেটা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, সেই সাদা ধুতি আর সাদা পাঞ্জাবি পরা সদা হাস্যময় কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। 
ভালো থাকবেন মান্নান দা। একদিন দেখা করব আপনার সঙ্গে। সেই পুরোনো দিনের গল্প শুনবো আপনার কাছে। আর আপনি বলবেন অভিজিৎ তুমি কিন্তু না খেয়ে যাবে না কিছুতেই। আর আমি বলব না দাদা পরদিন ঠিক খাবো। আজ আমার তাড়া আছে। আপনার ঘরের পাশ দিয়ে গঙ্গার জল দেখে বলবো সত্যিই আপনার এই বাড়িটা খুব সুন্দর জায়গায়।আপনিও হুটার বাজিয়ে কলকাতা ছুটবেন তারপর। আমিও খবরের দৌড়ে ছুটে বেড়াবো এই বুড়ো বয়সে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া দিনের এই ছবি, এই স্মৃতি জড়িয়ে তো বেঁচে থাকা। 

কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান - অভিজিৎ বসু।
আঠাশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...