এই রোদ, এই বৃষ্টি। এই সুখ, এই দুঃখ। এই আনন্দ, এই হতাশা। এই জীবনকে কত সুন্দর বলে বুকে জড়িয়ে ধরা, এই জীবনে হতাশার সাগরে ডুব সাঁতার দেওয়া। এসব নিয়েই তো জীবনের নানা রং বেরংয়ের সফর নামা। দূরে মন্দিরে ঘণ্টা আর ঢাকের বাদ্যি বাজছে। আকাশে জমা মেঘের ইতস্তত উড়ে যাওয়া এদিক থেকে ওদিক। মেঘের গা ঘেঁষে একদল বুনো পাখির উড়ে মিলিয়ে যাওয়া চোখের সামনে দিয়ে। মা কঙ্কালী তলার মন্দিরে জয়ধ্বনি ভক্তদের দু হাত তুলে। এসবের মাঝেই সেই চেনা টুকরো টুকরো মুখ। চেনা হাসি, চেনা কন্ঠ, চেনা মানুষের আনাগোনা মা কঙ্কালীতলার হাটে।
আজ বেশ অনেক দিন পর সকাল হতেই মাথায় রোদ নিয়ে প্রায় একঘন্টা সাইকেল চালিয়ে চলে এলাম কঙ্কালীতলা হাটে। বেশ মনটা ফুরফুরে ছিল আজ আমার। বহুদিন পর হাটে এলাম আজ। সাইকেলে প্যাডেল করে ঘেমে নেয়ে একশা হয়ে হাটে এলাম। অনেকটা ফাঁকা লাগলো আজকের এই শনিবারের হাট। অনেকেই পূজোর আগে আর আসেনি হাটে বেচাকেনা করতে। আমার তো আর বেচাকেনার আশায় মাটিতে গাছের নিচে বসে পড়া নয়। শুধু একবুক টাটকা বাতাস পেতে দুটো চেনা গ্রামের প্রান্তিক মানুষের সাথে মনের কথা বলতেই ছুটে আসা। যে ছুটে আসার মধ্য একটা প্রাণের টান আর মনের গভীর ভালোবাসা লুকিয়ে আছে যে।
আকাশ ডাকছে গুড়গুড় করে। দূরে মন্দির চত্বরে ঢাকের বোলে পূজোর বাদ্যি বাজছে মনের কোণে। মাথার ওপর ভেজা গাছের ডালে বসে আপনমনে ছাতার পাখির দল কেমন চিৎকার করছে তাদের ডানা ঝাপটে সদলবলে গা শুকোতে শুকোতে। কোপাই নদীর ওপর দিয়ে বৌ কথা কও পাখির উড়ে যাওয়া আর তার মিষ্টি ডাক শুনে মনটা ভরে যায় আমার। নাই বা হলো বেচা আর কেনা। নাই বা হলো হাটের মাঝে বহু মানুষের আনা আর গোনা। ওই যে ভেজা রাস্তা পেরিয়ে কালো ছাগল আপনমনে ঘুরে বেড়ায় বৃষ্টি এড়িয়ে আমার চোখের সামনে। ওই যে বৃষ্টির আমেজে কেমন গুটিশুটি মেরে আপন মনে ঘুমিয়ে পড়েছে মার মন্দিরের সেই সবার প্রিয় লাল ভুলো।
আর ওই যে লাল পোশাকের সাধু ভেজা রাস্তা পেরিয়ে ঘরে ফেরে আপন মনে। নাই বা হলো পাওয়া কিছু তার আজকের এই দিনে। নাই বা ভর্তি হয়ে উপচে পড়লো তার কাপড়ের ওই শতছিন্ন ঝুলি। দূরে কোপাই এর ধার ধরে গরু নিয়ে ঘরে ফেরা অসময়ে এক গোয়ালার। জীবনের এই পাওয়াই বা কম কি। জীবনের এই ব্যালেন্সের খেলার এই এলোমেলো এলেবেলে জীবন জুড়ে শুধুই নানা রং বেরঙ এর ছবির সমাহার। যে ছবির মাঝে, যে ছবির জগতে যে প্রাণের ভীড়ে বারবার আমি মিশে যেতে চাই এমন করেই।
মনে পড়ে যায় আমার সেই বিখ্যাত মানুষের বিখ্যাত সাহিত্যিকের লেখা একটি কথা অভিজিৎ, জীবনকে দেখো,জীবনই হলো সব থেকে বড় শিক্ষক। আজ সেই জীবন দেখার নেশায় মেতে উঠেছে আমার এই ভেঙে পড়া,নুয়ে পরা,এলোমেলো এলেবেলে জীবন। যে জীবনে চলতে চলতে অনেক দুঃখ,কষ্ট,যন্ত্রণা, হতাশা ঘিরে ধরে আমায় মাঝে মাঝেই।
তবু এসবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বুঁদ হয়ে এই হাটের মাঝে গাছের নিচে বসে হাঁটু মুড়ে বলতে ইচ্ছা করে সত্যিই অসাধারণ এই জীবনের উত্তাপ। যে গনগনে তাপে আমার ভেজা হৃদয় উত্তাপ পায়। আমি ঘরে ফিরি ভিজতে ভিজতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে। দুর থেকে ভেসে আসে মন্দিরের ঘণ্টার আওয়াজ, ঢাকের বাদ্যি, পাখির কিচির মিচির গান। আমি ধীরে ধীরে ভিজে ভিজে সাইকেল চালিয়ে ঘরে ফিরি আনন্দে।
বৃষ্টি ভেজা কঙ্কালীতলা হাট - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ অক্টোবর,দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন