সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হারিয়ে যাওয়া চিঠি

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় শুধু চিঠি আর চিঠি। হ্যাঁ, সেই সাদা কালো অক্ষরে লেখা নানা ধরনের চিঠির কথা। খোলা মাঠে খোলা চিঠি ছেড়ে একদম হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এই বয়সেও তিনি বেশ বুকে সাহস নিয়ে আর সহজ সরল ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছে খোলা চিঠি প্রেরন করেছেন। সত্যিই এই কাজকে অসাধারণ বলতে কিন্তু লজ্জা নেই কোনও।রাজনীতির ময়দানে এই মানুষটাকে যত দেখি ততো যেনো মুগ্ধ হয়ে যাই। 


এমন একটা সময়ে তিলোত্তমা খুনে দোষীদের শাস্তি চেয়ে ও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে মুখ্য মন্ত্রীর কাছে বামফ্রন্টের এই খোলা চিঠি। জানা নেই এই ফ্রন্ট এখনও কতটা সক্রিয় হয়ে ফ্রন্টফুটে ব্যাট করতে সক্ষম এই কঠিন পিচে। তবুও সেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু রাহুল দ্রাবিড় বা সুনীল গাভাস্কার এর মত বাউন্সার বল সামলে পত্রবোমা ছুঁড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর দিকে। তিনি জানেন না এর ফল পাল্টা অভিঘাত কি হবে। 

আসলে এই খোলা মাঠে খোলা চিঠি ছেড়ে দিয়ে আন্দোলন করা আর অনশন করা চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর আবেদন এই মুখ্যমন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই আন্দোলনের বিষয়টি একটু দেখুন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনায় বসুন তিনি। আন্দোলনকারী চিকিৎসক দের দশ দফা দাবি মেনে নিয়ে এখনই বা দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হোক। না হলে যে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সেই আবেদন জানিয়েই খোলা চিঠি বিমান বসুর। এত গেলো এই রাজনীতির মাঠের সেই মুক্ত বাতাসে খোলা চিঠির কথা। 

এই চিঠির ইতিহাস  ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম যে চিঠি হলো একজনের পক্ষ থেকে অন্য জনের জন্য লিখিত বার্তা। যা দুপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখে। বন্ধু ও আত্মীয়দের আরও ঘনিষ্ট করে। পেশাদারি সম্পর্কের উন্নয়ন করে ও নিজেকে প্রকাশের একটা সুযোগ দেয়। এমনকি সাক্ষরতা টিকিয়ে রাখতেও একসময় এই চিঠির অবদান ছিল। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই চিঠির আদান প্রদান ছিল। ইলিয়াডে সেই কথার উল্লেখ আছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের প্রতি এডওয়ার্ড টেলার এবং লিও শেলার্ডের লেখা সেই বিখ্যাত আইনস্টাইন এর চিঠি যে চিঠিতে পারমাণবিক বোমা তৈরীর প্রস্তাব ছিল। আর এই সব ঐতিহাসিক ভাবে, চিঠির প্রচলন ছিল প্রাচীন ভারত, মিশর, সুমের, প্রাচীন রোম, এবং চীনে। এই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলার যুগেও যা সমানভাবে এর চল আজও আছে। সতেরো আর আঠারো শতকে চিঠি লেখা হতো স্ব শিক্ষার জন্য। চিঠি ছিল পাঠ চর্চা, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা আর কিছু মত বিনিময়ের পদ্ধতি।


 আবার কিছু লোক এটাকে কেবলমাত্র নিছকই লেখালেখি ভাবতো। বাইবেলের বেশ কিছু পরিচ্ছেদ এই চিঠির মাধ্যমে লেখা হয়েছে। আবার কোনো সময় এই চিঠি শিল্পের রূপ পায় যে সেটা সাহিত্যের বিষয় হয়ে ওঠে যেমন বাইজেন্টাইনে এপিস্টোলোগ্রাফি বা সাহিত্যের পত্র উপন্যাস। অন্যদিকে যেমন বুদ্ধদেব গুহর সেই বিখ্যাত লেখা কুর্চিকে লেখা ঋভুর চিঠি। ঠিক তেমনি করেই সেই সিজার বোর্গিয়ার হাতে লেখা একটি চিঠি। সান্তা ক্লজকে লেখা এক শিশুর হাতে লেখা সেই বিখ্যাত চিঠি। আর্থার কোনান ডয়েলের লেখা সেই বিখ্যাত চিঠি। ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে এমন হাজারো চিঠির সুলুক সন্ধান পাওয়া যাবে। 

কিন্তু এই সব কিছুকে হারিয়ে দিয়ে একদম বোল্ড আউট করে দিয়ে যে চিঠি হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল সেটা হলো শনিবারের চিঠি। যা ছিল বাংলাভাষার অন্যতম বিখ্যাত একটি সাহিত্য সাময়িকী। যা বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক কাগজ এবং এর মূল স্বত্বাধিকারী ছিলেন অশোক চট্টোপাধ্যায়। যোগানন্দ দাস ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তবে আদ্যোপান্ত শনিবারের চিঠি'র প্রাণপুরুষ ছিলেন কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস। 


শনিবারের চিঠি দু‌ই পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রথম প্রকাশ ১০ই শ্রাবণ ১৩৩১ তথা ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জুলাই। প্রতিষ্ঠালগ্নে সম্পাদক ছিলেন যোগানন্দ দাস। তবে ভাদ্র ১৩৩১/ ফাল্গুন ১৩৩১ সংখ্যা (সাপ্তাহিক একাদশ সংখ্যা) থেকে সজনীকান্ত দাস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোহিতলাল মজুমদার, হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, পরিমল গোস্বামী প্রমুখ। এঁদের ভাষা ছিল ব্যঙ্গময়; সমালোচনার লক্ষ্য ছিল পিত্ত জ্বালিয়ে দেওয়া। যে লেখায় হৈ চৈ পড়ে যেত। 


এই সাপ্তাহিক সাহিত্যপত্রটি ১৯৩০-৪০-এর দশকে কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙলা সাহিত্যের জগতে বিশেষ সাড়া জাগিয়েছিল। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ কল্লোল, প্রগতি, কালি-কলম, পরিচয়, পূর্বাশা, কবিতা, চতুরঙ্গ প্রভৃতি পত্রিকাসমূহের সঙ্গে শনিবারের চিঠি’র নাম জড়িত ছিল অবিচ্ছেদ্যভাবে। রবীন্দ্রনাথ-প্রমথ চৌধুরী-শরৎচন্দ্র থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের সংখ্যায় সংখ্যায় তুলোধোনা করে পত্রিকাটি সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে গিয়েছিল।এই শনিবার এর চিঠিতে কবি জীবনানন্দ দাশের লেখাও আলোচনা করা হয়েছে যখন তিনি স্বল্পালোচিত কবি ছিলেন সেই সময়ে। 


এতো গেলো সব বিখ্যাত বিখ্যাত চিঠির কথা যা ইতিহাসের পাতা জুড়ে লেখা আছে, নানা ভাবে আর নানা রূপে। কিন্তু সেই যে হিন্দমোটরের চিলে কোঠার সেই ছাদ থেকে যে চিঠি চলে আসতো রিষড়াতে আমার বাড়িতে। দুজন কলেজের আলাপ হওয়া বন্ধু একে অপরকে মনের কথা লিখতো শুধু চিঠি বিনিময় করে। সেই ট্রেন আসার আগে বুক পকেটে চিঠি গুঁজে দিয়ে দৌড়ে লাফিয়ে চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়া। তারপর ট্রেনের কামরাতে বসে ভজনের লেখা পড়ে আনন্দ পাওয়া অনাবিল আনন্দ আর নিরঙ্কুশ সুখ। রাতে ঘরে ফিরে সেই চিঠির উত্তর লেখার জন্য কলম ধরা বই এর পড়া বন্ধ করে। সেই চিঠির কথা কোথাও লেখা নেই কিন্তু এই সাদা জীবনের কালো কথায় যে এমন হাজার চিঠি খস খস শব্দ আজও জুড়ে আছে আমাদের দুজনের হৃদয়ে। যে অনাবিল অনাঘ্রাতা চিঠির গন্ধ আজও আমাদের দুজনের মেঠো সম্পর্কের মাঝে লুকিয়ে আছে সেই চিলেকোঠায় বন্দী হয়ে।

হ্যাঁ, সত্যিই এই চিঠি তো মানুষের মনের আয়না। যে আয়নায় নিজেকে দেখে নেওয়া একে অপরের কাছে। আর একটা খোলা চিঠি নয় খাম বন্ধ গোপন এক চিঠির কথা বলে শেষ করবো এই লেখা। যে চিঠির কথা, অনুভূতি, দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, যে চিঠির মিষ্টি সুবাস, আমায় ভালবাসতে শিখিয়েছিল আমার যৌবনকালে। সেই কুর্চিকে ঋভুর ভালোবাসার মতই।

 যে চিঠি পাওয়ার আশায় আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম কলেজের ক্লাস শেষ হলে সেই ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে। কোনোদিন চিঠি আসতো উড়ে উড়ে মিষ্টি গন্ধ ভরা সাদা খামে। কবুতর এর নরম বুকের গন্ধ মেখে। আর আমি মাঝ রাতে ভয়ে ভয়ে অতি সন্তর্পনে সেই চিঠির ভাঁজ খুলতাম। আশা আর স্বপ্ন নিয়ে। একবুক ভালোবাসা নিয়ে। সেই চিঠির উত্তর লিখতে বসে রাত ভোর হয়ে যেতো কখন টেরই পেতাম না আমি। তারপর ক্লাসের নোটস লেখার খাতায় তাড়াহুড়ো করে উত্তর লিখে মনে হতো ঠিক লিখলাম কি। 

কতদিন লেগেছিল সেই তুই থেকে তুমিতে আসতে আমাদের সেই চিঠির গভীর গোপন ভালোবাসার চিনচিনে সম্পর্কের সিলমোহর দিতে। যে সিলমোহর দেওয়ার পর সেই বামফ্রন্টের খোলা চিঠি নয়, সাদা খাম বন্ধ সেই চিঠি আমাদের গভীর গোপন ভালো বাসার দুজনের কাছে আসার প্রধান বাহন হয়ে গেলো যে কি করে সেটা বুঝতেই পারলাম না। সেই গঙ্গার তীরে বসে একে অপরকে ভয়ে ভয়ে বন্ধ খামে চিঠি বিনিময়। কেউ কারুর দিকে না তাকিয়ে। 

একজনের হাতের লেখা মুক্তোর মত। অন্যজনের লেখা সুন্দর নয়। কিন্তু এই দুজনের মনের আয়না কেমন যেনো অজান্তেই সেই সন্ধ্যা বেলায় ঘরে ফেরা পাখির ডানায় ভর করে তাদের মনের দরজা খুলে দিয়েছিল নিজেদের অজান্তেই একে অপরের কাছে। জানিনা কত যত্নে লেখা সেই চিঠিও আজ হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে আমার অনেক কিছুই। 


তবু সব হারিয়েও যেনো এই প্রথম ভালোবাসার চিঠির খস খস শব্দ আজও রাতের অন্ধকারে পা টিপে টিপে আমার কাছে আসে। আমায় ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বলে, একি সব চিঠি হারিয়ে ফেললে তুমি। আমি ধড়মড় করে ঘুম ভেঙে বিছানায় বসে হাতড়ে বেড়াই আমার সেই হারিয়ে যাওয়া চিঠিগুলোকে। সেই ভজনের লেখা চিলেকোঠার চিঠি, সেই গঙ্গার তীরে বসে পাওয়া মিষ্টি গন্ধ মাখা, কবুতরের বুকের নরম ওম মাখা চিঠিগুলোকে আজও খুঁজে বেড়াই আমি। রাতের অন্ধকারে খুঁজে বেড়াই আমি আমার হারিয়ে যাওয়া সেই চিঠিগুলোকে। 

হারিয়ে যাওয়া চিঠি - অভিজিৎ বসু।
পনেরো অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য গুগল।

মন্তব্যসমূহ

  1. আজ আর কেউ চিঠি লেখে না।চিঠির স্মৃতি কখনও কখনও বড়ই ভারক্রান্ত করে দেয় মনকে। হারিয়ে যাওয়া চিঠি হঠাৎ মনে করিয়ে দেয় অনেক কিছুই।চমৎকার লেখা।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...