সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জীবন আর মৃত্যুর মাঝে শুধুই দাঁড়ি।

সকালেও জীবন ছিল। বুকটা ঢিপ ঢিপ করছিল। বুকের মাঝে যন্ত্রটা একভাবেই ধুকপুক আওয়াজ করছিল। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম জড়ানো চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘড়ি দেখে উঠে পড়েছিল বিছানা থেকে। নিয়ম মেনেই ভোর হয়ে, সকাল হয়েছিল একদম ঘড়ি ধরেই ঠিক মেপে মেপে। এই জীবন আছে তো আর এই জীবন নেই। তার মধ্য একসুতোর ফারাক মনে হয়। এই জীবনের ঘড়ি টিকটিক করে চলছে তো এই ঘড়ির হঠাৎ করেই থেমে যাওয়া। ঠিক যেনো দেওয়াল ঘড়ির সেই ব্যাটারি ফুরিয়ে যাবার মত অবস্থা আর কি। 

ব্যাটারি চালিত এই জীবন আর জীবনের ভাবনা চিন্তা, ভাব, ভালোবাসা, হিংসা, কষ্ট, যন্ত্রণা পাওয়া, আর না পাওয়া, চাওয়া আর না চেয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করা, চুপ করে থাকা এমন হাজারও ঘটনা ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকে জীবনের এই নদীর তীরে। একে একে তারা ভীড় করে সবাই মিলে। ঠিক যেমন করে মহালয়ার ভোর বেলায় তর্পণ করতে গিয়ে ভীড় হয় গঙ্গার ঘাটে। যে মানুষটার সঙ্গে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া, ঘটি বাটি নিয়ে অশান্তি আর ঠোকাঠুকি হওয়া। আবার রাতের অন্ধকারে সেই মানুষটার পাশেই জড়ো সড়ো হয়ে কুঁকড়ে শুয়ে পড়া আর চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে থাকা অপলক নয়নে ভালোবাসার চাওনি দিয়ে। জীবন তো এমনই। এমন করেই সে জড়িয়ে থাকে শীতের সকালে কম্বলের ভেতর গুটিশুটি মেরে।

 মরতে যে তার বড়ই ভয় হয়। তবু এই জীবনের মাঝেই যে হঠাৎ করেই মৃত্যু আসে সবার অগোচরে, নিশাচর পাখির মতই চুপিসাড়ে। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে। সবার অজান্তে ঠিক রাতের অন্ধকারে খিড়কি দুয়ার খুলে ঢুকে পড়ে কেউ গুটিশুটি মেরে। তখনও যে জীবন বুঝতেই পারে না তার মাথার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ চুপি চুপি। আলতো করে চুমো দিয়ে বলে যাও তোমার সময় শেষ এবার যে আমার পালা।

 কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে জীবন ওই রাতের আবছা আঁধারে রাতের অন্ধকারে ছায়ামাখা ওই মৃত্যুর দিকে। চোখ কচলে দেখে সত্যিই কি কেউ এসেছে তার কাছে। না কি এটাও ভ্রান্তিবিলাস। আর একটু সময় আছে তার এটা বোধহয় ভোরের স্বপ্নের ভুল দেখা। এটা এই আবছা ছায়ার আলতো ছোঁয়া। কিন্তু না অস্ফুটে হেসে মৃত্যু, জীবনকে বলে না কোনো ভুল নয় যে আমার। সত্যিই সময় শেষ আর তাই আমি এসেছি তোমার কাছে। 

মনে পড়ে যায় কত কিছুই। এত হৈ চৈ হুল্লোড়, এত মাতব্বরি, এত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলার জন্য লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি, সব যে ছেড়েই চলে যাওয়া এই সব কিছুই ফেলে দিয়ে। আঁকড়ে ধরা, টেনে রাখা জীবনের লাল নীল হলুদ ফিতের ফাঁসে আটকে পড়া ওই জীবনকে শেষবারের মত আঁকড়ে ধরা। কত মুখের ভীড়, কত স্মৃতি,কত শত মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া অচেনা পথ ধরে এক অচিন লোকে গহন জঙ্গলে। যেখানে নিজেকে প্রমাণ করার তাড়া নেই, দৌড়ে একে অপরকে টপকে ওপরে ওঠার কোনো তাড়া নেই। হাসতে হাসতে কাউকে ছুরি মেরে তাকে বন্ধু বলে বুকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা নেই। 

এ যেনো এক অন্য জগৎ। দুর থেকে দেখা সেই ফেলে আসা ছেড়ে আসা নদীর তীরে ভীড় করেছে কত চেনা অচেনা অজানা মানুষ। যারা কোনোদিন কিছুই জানায় নি, কিছুই বলে নি এই জীবনে। সব তারাই কেমন RIP আর প্রনাম জানিয়ে বিদায় জানিয়ে দিচ্ছে আমায়। আর আমি চুপ করে শুয়ে আছি আমার চেনা ঘরে। সেই চেনা বিছানায়। চেনা বালিশে মুখ গুঁজে। সত্যিই যে ঘরে এত ঝগড়া, ভালোবাসা, ভুল বোঝাবুঝি হলো সেই ঘরেই কেমন চুপ করে শুয়ে থাকা মুখ বুজে। যে মুখ খোলার জন্য কত কথা শোনা সেই মুখ বন্ধ হলো অবশেষে। 

এত কথা লিখতাম না আমি এই জীবন আর মরণ নিয়ে। আসলে হঠাৎ মিল্টন সেন ফোন করলো বহুদিন পর। বেশ ভালো লাগলো ওর দাদা ডাক শুনে। বললো দাদা পাঁচুটা মরে গেলো। আমি শুনে একটু চুপ করে রইলাম। তারপর একে একে দেখলাম শোকের বার্তা, পুরোনো হাসি মুখের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক সেই অচেনা দেওয়ালে। ঠিক যেনো পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে অন্ধকার জগতে চলে যাওয়া। আর সেই চলে যাওয়ার পথে টুকরো টুকরো হাসি মুখের উজ্জ্বল সব ছবি উড়িয়ে দিয়ে শোক পালন করা। 

যে ছবি একদিন জীবন্ত হয়ে আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াতো। আজ সেই ছবি, ছবির মানুষটা টুক করে কেটে পড়লো সবাইকে ছেড়ে। হ্যাঁ, এই জীবন আর মৃত্যুর টানাপোড়েন। এই জীবন আর মৃত্যুর অপেক্ষা। এই জীবন আর মৃত্যুর একটা ছোট্ট দাঁড়ির মাঝেই লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা, মায়া, মমতা, প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে যাওয়ার একরাশ বেদনা আর যন্ত্রণা। যে বেদনাকে যন্ত্রণাকে বুকে নিয়েই চলে যেতে হয় অন্ধকার পথ ধরে দূরে অনেক দূরে।

জীবন আর মৃত্যুর মাঝে শুধুই দাঁড়ি। - অভিজিৎ বসু।
 তেইশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...