সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের অরূপ কালি

জ্যোতি বসুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন জয়কৃষ্ণ ঘোষ। আর  আমাদের ইটিভি বাংলার সেই পুরোনো সংসারে আশীষ ঘোষ এর ছায়াসঙ্গী ছিলেন সেই বিখ্যাত আমাদের সবার অরূপ কালি। হ্যাঁ,বাংলা মিডিয়ার এই বিখ্যাত দাপুটে সদাহাস্যময় অথচ হাসির পেছনে কি লুকিয়ে আছে সেটা না বুঝতে পারা সেই ইটিভির জয়কৃষ্ণ ঘোষ এর কথা আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় লিখতে বসেছি। আমি জানি না কি হবে আমার। তবু বহুদিন পর ইটিভির চাকরি, ইটিভির অফিস, নানা কথা, নানা স্মৃতির মাঝে অরূপ কালি একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল। আর তাই কলম ধরা।


হাজার হাজার চরিত্রের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় হাঁটতে নেমে হঠাৎ একদিন দেখা হলো আমার ইটিভির চাকরি করতে গিয়ে সেই পর্দার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা একজন মানুষের সঙ্গে। সেই যে মানুষটা আমার বাংলার যে আজ সারাদিন নামক টুকরো খবরে, সেই ছোটো ছোটো টুকরো টুকরো খবর দিয়ে বুলেটিন এর একটা অংশ ভরিয়ে দেওয়া হতো শেষের দিকে। নানা জেলার আবদার আর অনুরোধের খবর দিয়ে। যারা হেডলাইন বা কোনো প্যাকেজ স্টোরিতে যাদের ঠাঁই হতো না। তাদের জন্য মন রক্ষার স্বার্থে শান্তনা পুরস্কার হলো এই আজ সারাদিনে একটু জায়গা পাওয়া। 

কিন্তু সেই আজ সারাদিনেও জায়গা না পেয়ে একদিন ভয়ে ভয়ে সেই ছায়াসঙ্গীকে একদিন ফোন করলাম আমি। দাদা, আজ যে আমার আজ সারাদিনেও হলো না জায়গা আমার একটুও। আর সেই সদাহাস্যময় দাদা, কিন্তু একদম রাগ না দেখিয়ে, গলায় বস এর মত গম্ভীর আওয়াজ না করে। এককথায় তাঁর সোজা সরল উত্তর লেজে কেটে গেছে রে, বুঝলি লেজে কেটে গেছে। আমি দিয়েছিলাম তোরটা লেজে কেটে গেছে।সেই বিখ্যাত সাংবাদিক ইটিভি বাংলার অন্যতম কারিগর হলেন সেই বিখ্যাত আমাদের অরূপ কালি। আমাদের সবার প্রিয় অরূপদা। যার ওপর নির্ভর করতেন আশিষ দা অনেকটা। 

আজ আমার এই ব্লগে সাদা জীবনের কালো কথায় অরূপদার কথা লিখতে ইচ্ছা হলো। মনে পড়ে গেলো সেই নানা কথা। হয়তো এই লেখার মুখবন্ধ বড়ো হলো অনেকটাই। কিন্তু অরূপ কালির জন্য এই জায়গাটুকু তো কিছুই নয় এই ছোটো পরিসরে তাঁকে নিয়ে আপনাদের বোঝাতে পারলাম কি না জানিনা আমি। জেলায় কাজ এর সুবাদে কলকাতায় চাকরি করা সবাই আমাদের কাছে দাদা আর দিদি সে ভয়ে বা ভক্তিতে যাই হোক। তাদের সবার ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত বাপ্যার। আর তারওপর যদি কেউ চ্যানেল এর প্রধান কারিগর এর ছায়াসঙ্গী, অফিস আসার সঙ্গী, গাড়ি করে বাড়ী ফেরার সঙ্গী, চা খাবার সঙ্গী হয়, তাহলে তো তাকে ভয়, শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা সব তাঁর পায়ে সমর্পণ করেই চাকরি করতে হয় না কি। আমার অন্তত তেমন মনে হয়েছে যেনো। না হলে যে লেজেই কেটে যাবে সবকিছু আমার। 

আগে অরূপ দা কোথায় ছিল, কোন মিডিয়াতে সেটা জানার চেষ্টা করিনি আমি কোনোদিন, আর সৌভাগ্য হয়নি আমার সেটা জানার। সবে বাজারে বাংলা টিভি মিডিয়ার যুগ শুরু হয়েছে। সেই পুরোনো প্রস্তর যুগের কথা এটা। এখন যেমন বাজারে মিডিয়া অনেক, আর সেই মিডিয়াতে বাবু অনেক, আর তাদের ছায়াসঙ্গীও অনেক। এক এক সময়, এক এক শিফটে এক এক ধরনের  ছায়া সঙ্গী সব অফিসে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সেই আমলে অরূপদা কে টপকে গিয়ে আর কেউ সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে সেটা আমার অন্ততঃ মনে পড়ে না এতো দিন পরেও। যাই হোক সেই প্রস্তর যুগে হয়তো ছায়াসঙ্গী কনসেপ্টটা এতো আজকালের মত প্রকট হয়ে ওঠেনি। তাই একাই অরূপদা রাজত্ব করে গেছে হাসি মুখে লেজে কেটে গেল বলে দীর্ঘদিন।

শুনেছিলাম হুগলী জেলায় থেকে আশীষদার বাড়ির কাছেই থাকে সে। তাই আসার পথে এক গাড়িতে অফিস আসা আর ফেরা। কি আর করা যাবে এত খবরের চাপ, কাজের চাপ এটুকু তো সুবিধা পাওয়ার হক আছে তাঁর না কি এটা নিয়ে আর কথা বলার কি হলো। কিন্তু কলকাতায় না থেকেও দুর থেকে বুঝতাম এই বিষয় নিয়ে কলকাতাতেও সবার মনেই ফিসফিস প্রশ্ন আছে কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে আসেনা কিছুতেই। কি দরকার এই অপ্রিয় কথা জিজ্ঞাসা করে কেউ বসের বিরাগভাজন হবার রিস্ক কেই বা নিতে চায় বলুন। তাই সেই শিককাবাব এর গন্ধ পাওয়া সেই বিখ্যাত ঘোঁট বারান্দায়  সিগারেট খেতে খেতে ফিসফিস আলোচনা হলেও ব্যাস এই ভাবেই চলে যাচ্ছিল আমাদের ইটিভি বাংলার সংসার। 

আমার আজও মনে আছে আমার বিয়েতে সবাই এলো শ্রীরামপুরে। মেয়ের মুখে ভাতে এলো সবাই। কিন্তু আশিষ দা আর অরূপ দা এলেন তারা। তারপর সেই জ্যোতি বসুর সাক্ষাৎকার নেওয়া অরূপ দার কোন চ্যানেল সেটা মনে নেই আজ। আর তরুনকান্তি দাস প্রথমে জেলায় জেলায় খবর নিয়ে আলোচনা করলেও পরে সেই জায়গাটা নিয়ে নেয় অরূপ কালি সেই আমাদের সবার কাছ থেকে খবর কি আছে জেনে নিত ফোন করে। শুধু তাই নয় কলকাতাতেও বেশ কিছুটা তাঁর কন্ঠস্বর ভেসে আসত নানা ঘটনায়। আর এখন তো এই ধরনের, এই শ্রেনীর মানুষ জন মিডিয়াতে একদম ভরে গেছে। 

আজ সেই আমলের এই একজনের কথা বলতে লিখতে ইচ্ছা হলো। সেই এক বিখ্যাত জেলা রিপোর্টার এর কাছে শোনা এক গল্প দু হাজার এক সাল হবে ইটিভির আমার বাংলা জনপ্রিয় খুব। সেই সময় জেলায় জেলায় খালি ধর্ষণ এর খবর দেখানো হচ্ছে। সেই জেলার রিপোর্টার অরুপদা কে বলে এই ভাবে জেলায় শুধু ধর্ষণ এর খবর দেখলে আমরা যারা রাস্তায় ঘুরে খবর করি তাদের কাজের অসুবিধা হচ্ছে। অরূপ দার সাফ জবাব ছিল তাহলে চ্যানেলের টি আর পি বাড়বে কি করে। তারপর আর কিছু কথা বলতে পারেনি ওই জেলার দাপুটে রিপোর্টার কিছু। কিন্তু এই আমলে এমন করে চ্যানেল চললে নির্ঘাত সেই সময় তবু সিপিএম কিছুই করেনি বিশেষ টিভির লোকদের। এই আমলে হলে কি হতো সেটা ভাবতেও পারিনা আমি। বাম আমলে মনে হয় এত খবর করেও কম চাপে থাকতে হয়েছে সংবাদ মাধ্যমকে। যা এই আমলে চাপে থাকতে হয় মিডিয়াকে আর সেই মিডিয়ার যারা কর্ণধার তাদের। 

যাকগে সেসব অতীত দিনের কথা বলে আর কি হবে বলুন।  ভেঙে গেলো আমাদের সেই ইটিভির সংসার। আশীষ দা টিভি ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন বাংলা স্টেটসম্যান কাগজে। সেখানেও হাজির হলো সেই অরূপ কালি। একদিন দেখলাম সিঙ্গুরের মাঠে গাড়ি নিয়ে হাজির আশীষ দার সাথে অরূপ দা। আর পর দিন কাগজের প্রথম পাতায় বড়ো বড়ো করে অরূপ কালির নামে কপি। আমরা সব কাগজ দেখে হ্যাঁ হয়ে যেতাম। সিঙ্গুরে টাটার কারখানার সামনে চাষীদের জমি আন্দোলনে এই কাগজটার একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। একদিন অরূপদা পরে কথায় কথায় বলেছিল আরে শোন সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর মুকুল রায়, সব বাঘা বাঘা তৃণমুল এর নেতারা আশিষ দাকে ফোন করতেন। কত কিছু সেই সময় যে ঘটেছিল তোরা জানিস না কিছুই। 

কিন্তু না, সেই কত কিছু ঘটে গেলেও তাঁরা যে পাল্টে আর বদলে যাননি সেটা বোধহয় ভুল নয়। স্টেটসম্যান কাগজ ছেড়ে আশিষ দা গেলেন প্রাত্যহিক সংবাদ কাগজে। আর সেই প্রাত্যহিক সংবাদ এর কাগজে কাজ শুরু করলো অরূপ কালি। মৌলালীতে অফিস বোধহয়। একদিন আমি গেলাম দেখা করতে ঘুরতে ঘুরতে। বেশ সুন্দর নতুন সাজানো গোছানো অফিসে। ভেবেছিলাম বলবো আশীষদার কাছে  দাদা একটু দেখুন আপনি। যদি কোনো কাজ এর সুযোগ হয় এখানে। একটু একা একা বলবো সেই কথা ভেবে গেলাম। কিন্তু না সেই সুযোগ আর সেই ফাঁকা ঘর পেলাম না কিছুতেই। আশীষদার কাছে বসে আছে অরূপ দা। ছায়া কি আর কায়া ছাড়া বাঁচতে পারে কোনো সময়। 

পড়ে এই কাগজের অনেক জেলার রিপোর্টার জানায় এই কাগজটা বেশ ভালই চলছিল। বেশ সুন্দর ঝকঝকে ব্যাপার ছিল এই কাগজটার। কাগজটা নিয়ে মালিক বোধহয় রামেন্দু বাবু চিটফান্ড এর সেই খুব কড়াকড়ির সময়েও কাগজের ফান্ড নিয়ে নাকি খুব ভালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তিনি নিজের উদ্যোগে।  কিন্তু সেই কাগজটাও বন্ধ হয়ে গেলো কেনো কে জানে। এই কাগজের বহু জেলার রিপোর্টারদের বক্তব্য কাগজটা চালানো যেতো কিন্তু কী হলো জানিনা আমরা কেউই। কিন্তু ওই কাগজ নিয়ে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন। অনেকে দৌড়ঝাঁপ করে নতুন কাগজে জোর কদমে কাজ শুরু করেছিলেন। 


তারপর আর আমাদের সেই তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ারের কথা বিশেষ মনে পড়েনি। সেই সৈকত বসু, গার্গী গুহ ঠাকুর, যারা এখন টিভি নাইন চ্যানেলের জোড়া ফলা। যদিও সেই ইটিভির বিখ্যাত স্পোর্টস রিপোর্টার অমৃতাংশু এখন টিভি নাইন চ্যানেলের এডিটর। তাঁর দৌলতেই আনন্দবাজার পত্রিকা ছেড়ে আবার টিভির মাঠে নেমে পড়েছেন তাঁরা এই বুড়ো বয়সে। সেই তৃণমূল বিট করা অনিন্দিতা হাসিখুশি এই রিপোর্টার তৃণমূলের ভালো খবর জোগাড় করতো। সেই ডেস্কের সাজানো গোছানো রজত, সেই পুরুলিয়ায় রিপোর্টার হয়ে চলে যাওয়া তীর্থ, সেই বিখ্যাত শুভ্রনীল, সেই বেহালার দিব্যেন্দু, সেই বিখ্যাত জয়ন্ত চৌধূরী, বিশ্বজিৎ ভট্টচার্য, রবিশঙ্কর দত্ত, ত্রিফলা সেই আমলের। সেই আশিষ দার প্রিয় ভজ যার ভালো নাম শৌনক। 


সেই বিখ্যাত মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ইউ এন আই থেকে এসেছিলেন। সেই বিখ্যাত হৈমন্তী, তন্বী, পিয়ালি, দীপালি, দীপান্বিতাদি, শাবানা, সেই তরুণকান্তি দাস যে আশীষদার কাছের মানুষ ছিল বেশ বর্তমান কাগজ থেকে এসেছিল।সেই মনিরুল হোসেন, সেই আমাদের সিদ্ধার্থ, সেই পুলিশ রিপোর্টার দীপঙ্কর বর্তমানে কবি। আর সেই ন্যাশনাল নিউজ করতো নামটা ভুলে গেলাম ফর্সা মতন দেখতে, হ্যাঁ মনে পড়ল নিধি মালহোত্রা। সেই শুভাশীষ মৈত্র। হয়তো আরও কেউ ছিল মনে পড়ল না তার জন্য আমি আগেই ক্ষমা চাইলাম। এই ছিল সেই তিন নম্বর বাড়ির কলকাতার সংসার আর এই সংসারে জয়কৃষ্ণ ঘোষ ছিলেন আমাদের সবার ঠাণ্ডা মাথার  সেই অরূপদা। এত গেলো কলকাতার কথা। 

জেলায় তখন বিখ্যাত গৌতম সরকার, নব্যেন্দু গুহ, সনৎ ঝা, উত্তম পাল, আশাবুল হোসেন, সঞ্জয় বিশ্বাস, সমীরন পাল, হীরক কর, অর্কপ্রভ সরকার, সুরজিৎ, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, সুজিত ভৌমিক, আরও সব অনেকেই ছিল যারা আজ কেউ মিডিয়াতে আছে কেউ নেই। কিন্তু আমাদের সেই প্রস্তর যুগের জেলা আর কলকাতার টিম বেশ ভালই ছিল একদম যেনো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর এই দুই টিমেই অবাধ স্বচ্ছন্দ বিচরণ ছিল অরূপদার। যাক গে বহুদিন হলো প্রস্তর যুগের সেই সংসার আজ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে কবেই। কেউ কেউ এখনো এই মিডিয়া তে টিকে আছে ঝুলে ঝুলে কোনো রকমে, কেউ কেউ আবার মিডিয়ার বাইরে ছিটকে পড়ে আমার মত রাতের অন্ধকারে অতীত ঘেঁটে বেড়ায়।

 বহুদিন পর অরূপ দার ফেসবুকে জ্যোতি বসুর একটি সাক্ষাৎকার দেখে মনে পড়ে গেলো সেই পুরোনো দিনের নানা কথা। দেখলাম অরূপদার সেই ইউটিউব চ্যানেল। বেশ ভালো লাগলো দেখে। মাঝে শুনেছিলাম বোধহয় অরূপ দা একদিন কাগজের এডিটর হয়ে ছিলেন। একদিন ফোন করলাম সেই চেনা নম্বরে এডিটর অরূপদা কে। কিন্তু না সেই ফোন আর ধরেন নি এডিটর অরূপ দা।  সত্যিই তো এডিটর কি আর ফোন ধরেন চটকরে কারুর। 


আসলে মিডিয়াতে কাজ করা লোকজন মানুষরা বোধহয় এই মাধ্যম ধরেই টিকে থাকতে চায়, বেঁচে থাকতে চায় সারাটা জীবন। এই জগতের বাইরে তারা  আর কিছুই খুঁজে পায়না। আর তাই তারা রাতের অন্ধকারে কেমন ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। এদের কথা মনে করেই রাত দুপুরে সময় নষ্ট করতে চায় তারা। এসব পুরোনো লেখা আর কথা পড়ে হঠাৎ কেউ কেউ ফোন করেন আমায়। যাঁরা বহুকাল কোনোও যোগাযোগ করেননি আমার সঙ্গে বহুদিন, বহুবছর। তারাও ফোনে বলেন বাহ বেশ ভালো লাগছে কিন্তু এই সব কথা পড়ে। চেনা মানুষদের মনে করিয়ে দিচ্ছ তুমি আবার। 

বেশ ভালো লাগে সেই সব পুরোনো দিনের স্মৃতি ঘেঁটে মনে পড়ে যায় নানা জনের কথা। জীবনের এই দীর্ঘ পথ ঘাট পার করে শেষ বেলায় এসে মনে পড়ে যায় যে ভালই তো সাদা জীবনের কালো কথায় কিছু ভালো কথা, কিছু কালো কথা লেখা থাক না হয়। কেউ বলবে কি দরকার এসব লেখার। কেউ বলবে একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে বোধ হয়। কেউ বলবে তোমার আসল মানুষ চেনা ভুল হয়েছে তাই ভুল বিশ্লেষণ করলে তুমি ওকে নিয়ে। সে যাই হোক জীবনের ফেলে আসা দিন, ফেলে আসা সম্পর্ক, জীবনের প্রথম চাকরির সেই নানা রং বেরং এর উজ্জ্বল দিনগুলো ধরা থাক এইভাবেই আমার ব্লগে। কিন্তু আমি আমার মনের গহন অরণ্যে যা দেখতে পাই তাকেই আমি লিখে ফেলি এই আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে। আমার এলোমেলো এলেবেলে জীবনের নানা কথা।

আমাদের অরূপ কালি - অভিজিৎ বসু।
তেইশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...