একটা শব্দ ইদানিং বেশ হাটে মাঠে ঘাটে সব জায়গায় ঘুরছে দ্রোহ। বিশেষ্য পদের এই শব্দ দ্রোহ হলো অনিষ্টাচারণ, অপকার, শত্রুতা, কলহ, আর বিরুদ্ধতা,পরাভব,অভিভব। এমন নানা শব্দবন্ধের মোড়কে আবদ্ধ হলো এই দ্রোহ। যে দ্রোহের ঘেরাটোপে বন্দী হয়েছে উৎসব, বন্দী হয়েছে কার্নিভাল, বন্দী হয়েছে আমাদের রাজনৈতিক সংঘাত। যে সংঘাত অনিবার্য ভাবেই সৃষ্টি করেছে নানা আন্দোলন আর
সেই আন্দোলনের পাল্টা জবাব দেওয়া।
আসলে এর মধ্যেই যে লুকিয়ে আছে সুক্ষ্ম রাজনীতির মারপ্যাঁচ। যে রাজনীতির বৃত্তে নানা ভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে আন্দোলনকারী চিকিৎসক থেকে শুরু করে বাম, ডান, লাল, সবুজ আর গেরুয়া দল সবাই। সবটাই যে রাজনীতির হিসেব আর নিকেশের ঘেরাটোপে বন্দী। সে দ্রোহ হোক বা বিদ্রোহ হোক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে,শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে, আমরণ অনশন কর্মসূচি থেকে নানা আন্দোলন করে চিকিৎসকরা বুঝিয়ে দিতে চান যে তারা যে করেই হোক জয়লাভ করতে চান এই আন্দোলনে। যে আন্দোলন একমাত্র তাদেরই তৈরি করা আন্দোলন।
কিন্তু সেই আন্দোলনের মাঝে কলকাতায় হলো জোড়া কার্নিভাল। একটি পূজোর জমজমাট কার্নিভাল। রেড রোডের এই কার্নিভাল ঘিরে নানা আয়োজন আর অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠান এর দিকে তাকালে মনে হয় না যে রাজ্যে পাল্টা দ্রোহ কার্নিভাল এর ডাক দিয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। যে দ্রোহ কার্নিভাল নিয়ে কত ওজর আপত্তি পুলিশের। তারপর অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে যে ব্যারিকেড দেওয়া হয় সেগুলো খুলে দেওয়া হয়। এই একদিকে পূজোর জমজমাট কার্নিভাল অন্যদিকে দ্রোহের বিদ্রোহের প্রতিবাদের কার্নিভাল। যার অনুমতি চেয়ে চিকিৎসকদের সংগঠন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে তাদের সেই আর্জি মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। হাইকোর্টের বিচারপতি রবিকিশন কপুরের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। সেই শুনানির শেষে রাজ্যের বিপক্ষে রায় দিয়ে বিচারপতি জানিয়ে দেন, সকলেরই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। আদালত বার বার এই নির্দেশ দিয়েছে।
যে নির্দেশের ফলে এক পক্ষের জয় আর অন্য পক্ষের পরাজয়। এই জয় আর পরাজয় এর মধ্যে দিয়েই চলছে দু পক্ষের নানা টানা পোড়েন। রাজনীতির এই নানা টানাপোড়েনে চারিদিকে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। যে গুঞ্জন উঠেছে যে এই আন্দোলনে তাহলে কি দ্রোহের জয় হলো আদালত এর নির্দেশে অন্তত এই কার্নিভাল ইস্যুতে। নাকি কিছুই হলো না। এই হিসেব নিকেশের মাঝে রাজনীতির এই মারপ্যাঁচে কিছুটা যেনো থমকে গেছে আন্দোলনকারীরা। কেউ কেউ বলছেন দ্রোহের আগুনে পুড়ে কি কারুর হাতের পুতুল হয়ে যাচ্ছে এই আন্দোলন করা চিকিৎসকরা। আর যার সুফল ঘরে তুলতে এই ইস্যুতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্যের বাম দল। যার জন্য তারা আগেই বামফ্রন্টের তরফে খোলা চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আন্দোলনরত চিকিৎসক দের জন্য তাদের এই অবস্থার কথা ভেবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দেবার কথা বলেছেন বামফ্রন্ট এর চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁদের দাবি রাজ্যের এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দ্রুত অবনতির জন্য তারা চান সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ।
আর এতে কিছুটা হলেও এই হারিয়ে যাওয়া লাল পার্টির পয়েন্ট বেড়ে গেছে অনেকটাই। যেটা খুব সুচতুর ভাবে এই লাল আর গেরুয়াকে দ্বিখণ্ডিত করে একজনকে জব্দ করে অন্য জনকে পয়েন্ট তোলার সুযোগ করে দিয়ে হাসতে হাসতে কার্নিভালে মেতে রইলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর থেকে ভালো রাজনীতি আর কি হতে পারে। এই চিকিৎসকদের দ্রোহ কালে বিজেপিকে এই ভাবে রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা আরও ক্ষয়িষ্ণু করে দিয়ে আর হারিয়ে যাওয়া সিপিএমকে কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন দিয়ে বাজারে দামী করে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটাই বুঝিয়ে দিলেন রাজনীতিতে দ্রোহ, আর বিদ্রোহ এসব তার অনেক আগেই বুঝে নেওয়া হয়েছে।
আর তাই তিনি বোধহয় ভবিষ্যতের ভোটের রাজনীতির কথা ভেবে কিছুটা নিশ্চিন্তেই আছেন। যেখানে এত হৈ চৈ হুল্লোড় আর তার মাঝে দ্রোহের আগুনে দগ্ধ হয়ে যারা আন্দোলনে মত্ত তাঁরা সবাই সঠিক ভাবে এটা বুঝতে পারছেন তো।
দ্রোহ আর বিদ্রোহের ঘেরাটোপে বন্দী কার্নিভাল-
অভিজিৎ বসু।
পনেরো অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন