এই পূজো আমার। আর ওই পূজো ওদের। মা দূর্গার এই পূজোর মণ্ডপে কেমন যেনো আমরা আর ওরা। কেমন যেনো সেই পুরাকালের লক্ষণরেখা টেনে দেবার মতো ব্যবস্থা করা আছে মণ্ডপের চারিপাশে অদৃশ্য একটা দড়ির টান দিয়ে। আচ্ছা এমন যদি হতো নেবুতলা পার্কের পুজোয় বসে চা খাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর পাশে হাসি হাসি মুখে বসে আছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাহলে কেমন হতো বলুন তো ব্যাপারটা। ঝাঁপিয়ে পড়তো উদ্বেলিত জনতা। যাকে ডিভিসির বাঁধ নির্মাণ করেও আটকানো যেতো না সেই জনতাকে কোনো ভাবেই।
আমার কেনো জানি না এই নানা লেখার মাঝে ভোর এর আলো ফোটার আগে এমন একটা স্বপ্ন দেখতে খুব ইচ্ছা করে এই ভরা পূজোর মরশুমে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন এর তালিকায় থাকা কোনো পূজো মন্ডপে আচমকা প্রবেশ করলেন হাসিমুখে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বা সুকান্ত মজুমদার বা নিদেনপক্ষে হাসিমুখে হেলেদুলে আমাদের প্রিয় সেই দিলীপ ঘোষ। এরা সবাই রাজনীতির ময়দানের দাপুটে লোক হলেও কোনো কালো কথার সমালোচনার ফোয়ারা ছুটলো না কোনোভাবেই মণ্ডপে।
হাসি মুখে মূখ্যমন্ত্রী তাঁদের সাদর অভ্যর্থনা আর আমন্ত্রণ জানিয়ে ফিরহাদ হাকিম বা অরূপ বিশ্বাসকে বললেন এই ওদের ঘুরিয়ে ভালো করে ঠাকুর দেখা তোরা তোদের মণ্ডপ। দেখিস ওদের যেনো কোনো অসুবিধা না হয়। ভালো করে খাতির যত্ন করিস কিন্তু। পরে যেনো ওরা বলতে না পারে যে কোনো যত্ন আত্তি পায়নি তোদের পূজো দেখতে এসে। পূজোর চারটে দিন যদি এমন একটা অবস্থা হতো, এমন একটা ঘটনা ঘটে যেত কেমন হতো বলুন তো ব্যাপারটা।
তাহলে কি ভালো যে হতো কে জানে। না, এসব স্বপ্ন দেখাই যে সার। ভোরের স্বপ্ন যাই দেখি আমি,সেই স্বপ্ন যে কোনোদিন পূরণ হবে না সেটা আমরা সবাই জানি। তবু স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কি বলুন তো। যাঁরা সারা বছর একে অপরের বিরুদ্ধে বিষদ্গার করেন। একে অপরের দিকে বিধানসভায় তেড়ে যান, বিধানসভা বয়কট করে বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান আর সরকারের সমালোচনা করেন। সেই তাঁরা যদি একটু এই পুজোর চার পাঁচটা দিন একটু বদলে যান তাহলে কিন্তু মন্দ হয় না কি বলেন আপনারা।
মা দুর্গা, মা দশভূজা, জগতের সবার মা তো সবারই মা। আমার, আপনার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ,শুভেন্দু অধিকারীর, কুলতলীর গ্রামের ওই মেঠো মানুষের, আবার সেই পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় এর ওপর বাস করা সেই আদিবাসী মানুষদের। মা দুর্গা যে আমাদের সবার মা। তবে যাই হোক পূজোর চারটে দিন যদি এমন সুন্দর আবহাওয়া পাওয়া যেতো কি ভালো যে লাগতো। আজ সেই সব দিন নানা পূজোর ভীড়ে হারিয়ে গেছে কেমন করে কে জানে। যাকে খুঁজে পেতে বড়ো সাধ হয় আমার।
ভোররাতের এই স্বপ্নের হিমেল শ্রোতের ধাক্কায় কেমন করে যেন ভেসে যেতে ইচ্ছা করে আমার একা একাই। কেমন যেনো থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে মনে হয় বুকের মাঝে আশা জাগে হতেও তো পারে এমন স্বপ্ন দেখা একদিন সত্যিই হয়ে গেলো হয়তো। এই পূজোর মরশুমে তাহলে আর আমরা ওরা ভেদাভেদ থাকবে না যে মণ্ডপে মণ্ডপে। মধ্য কলকাতার ওদের পূজো কর্তা স্বচ্ছন্দে হাসি মুখে উত্তরের বা দক্ষিণের মণ্ডপে প্রবেশ করে আড্ডা মেরে অষ্টমী তিথিতে অঞ্জলী দিয়ে নিজের ডেরায় ফিরে আসবে বুক ফুলিয়ে।
আবার সময় কাটছাঁট করে দক্ষিণের পূজো কর্তা কেমন জড়তা কাটিয়ে পুলিশ পাহারা ছাড়া নিজের পরিবার নিয়ে হাজির মধ্য কলকাতার ভীড়ে ঠাসা পুজোর মন্ডপে। আমরা আর ওরার লক্ষণ রেখা কাটিয়ে কেমন হাসি আর গল্পে, গানে আর কবিতায় মেতে উঠল দুই পরিবার রাজনীতির নামাবুলি বা আলোয়ান নিজেদের গা থেকে খুলে ফেলে দিয়ে। সত্যিই এই পূজোর আড্ডায় চ্যানেলে চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে সেই সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখা সেই আমরা আর ওরার হাসি মুখের ছবি।
যে ছবি রাজ্য পেরিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে পাহাড় পর্বত সমুদ্র পার করে বিশ্বের কাছে পৌঁছে যেতো একটা উদাহরণ হয়ে। যেখানে আমরা আর ওরার দ্বন্দ ভুলে হিংসা ভুলে রাজনীতির পাঠশালার পুঁথি পাঠ ছেড়ে মানুষের মানবিক পাঠশালার ছাত্র হতো রাজনীতির এই লোকজন শুধু পূজোর এই কটা দিন। যাঁরা নতুন সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হলো এই পূজোর মরশুমে। তারপর না হয় মা চলে গেলে আবার সেই আগের পুরোনো ফর্মে ফিরে যাওয়া যাবে।
এক পক্ষের সেই বিরোধিতা, আন্দোলন, সমালোচনা, প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ করা। অন্য পক্ষের সেই রাজনীতির বুলি আউড়ে বিরোধী দলের আন্দোলনকে কটাক্ষ করা, দিল্লির দিকে আঙুল তুলে বার বার অভিযোগ করা, আর নানা ভাবে আমরা ওরার যুদ্ধকে টিকিয়ে রাখা রাজনীতির ময়দানে ফায়দা তুলতে। পূজো কেটে গেলে মিষ্টি মুখ আর কোলাকুলি সেরে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আবার মাঠে নেমে পড়া। এমন স্বপ্ন কেনো যে সত্যিই হয়না কে জানে।
ভোর বেলায় জানলার পাশের নিম গাছের ডালে চুপ করে পাখি বসে আছে। অন্ধকার কেটে আলো ফোটার অপেক্ষায়। আমিও কেমন চুপ করে এমন দিনের আশায় আলো ফোটার অপেক্ষায় থাকি আর প্রহর গুনি একা একাই। নিশ্চয়ই একদিন এই বাংলার রাজনীতিতে এমন সৌজন্যের দৃশ্য দেখা যাবে হয়তো কোনোদিন। সেই আশাতেই আমি স্বপ্ন দেখি। আর মনে মনে ভাবি নিশ্চয়ই আমার এই উৎসবের রাতে দেখা এই অলীক স্বপ্ন একদিন নিশ্চয়ই সত্যি হবে।
উৎসবের রাতে দেখা এক অলীক স্বপ্ন - অভিজিৎ বসু।
সাত অক্টোবর,দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন