সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি স্বপ্ন দেখা মানুষের মৃত্যু

খবরটা পেলাম একটু আগে মাঝরাতেই। একটা প্রেস রিলিজ লেটার মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে এসে পড়েছিল অনেকক্ষণ আগেই। আমি দেখলাম ফেসবুকের দেওয়ালে তখনও পূজোর ভীড় উপচে পড়েছে চারিদিকে। হঠাৎ তার মাঝেই একটা দুটো করে আলোর উৎসব তার আলো ছেড়ে অন্ধকার করা একটি দুঃসংবাদ ভেসে এলো আমার কাছে ফেসবুকের উজ্জ্বল দেওয়ালে। হ্যাঁ, দেশের শিল্প জগতে আজ এক কালো দিন, অন্ধকার এর দিন। সেই রতন টাটা আজ আর নেই। সাদা জীবনের কালো কথায় আজ একটি স্বপ্ন দেখা মানুষের কথা। যে মানুষটির স্বপ্ন পূরণ হয়নি শুধু মাত্র রাজনীতির জন্য।

সেই যিনি বহুদিন আগে একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। যে স্বপ্নের কথা বোধহয় গল্প করতে করতে চা খেতে খেতে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বলেছিলেন তিনি। যে সিঙ্গুরে টাটা কোম্পানি কারখানা করবে একটা ছোটো ন্যানো গাড়ির। যে গাড়ি হবে মধ্যবিত্তের একটা স্বপ্নের গাড়ি। কারণ টাটার এই ছোটো গাড়ি মিলবে মাত্র এক লাখ টাকায়। সত্যিই তো লাখ টাকায় গাড়ি, সেই গাড়ির কারখানা হবে আমার নিজের জেলা হুগলীর সিঙ্গুরে তৈরি হবে এই গাড়ির কারখানা। খবরটা শুনে বেশ ভালো লেগেছিল আমার।

 
শিল্পাঞ্চল হুগলী জেলার দিকে দিকে নানা কারখানার গেট বন্ধ। কারখানার ভিতর ঘন বন জঙ্গল আর সাপেদের বসবাস। কারখানার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায় না কোনোদিনই। আর তার মাঝে মাঝে কারখানার গেটে লাল পার্টির ঝান্ডা আর সবুজ পার্টির ঝান্ডা দেখা যায়। ইউনিয়ন অফিসগুলো সব ভেঙে পড়ছে চারিদিকে। কিন্তু নেতাদের দেখা মেলেনা যে আর সেই দলীয় কার্যালয়ে। এই হলো শিল্প মানচিত্রে এক সময়ের উজ্জ্বল আজকের সেই ক্ষয়িষ্ণু এই হুগলী জেলার চিত্র।আর এর মাঝেই খবর এলো যে এই জেলায় গাড়ি কারখানা তৈরি করতে চান দেশের অন্যতম শিল্পপতি রতন টাটা। যে কারখানা হলে সারা দেশের কাছে উদাহরণ হয়ে যাবে লাখ টাকার গাড়ি তৈরির কারখানা হলো আমার নিজের হুগলী জেলায়। 

বিশ্বাস করুন হুগলী জেলার বাসিন্দা হিসেবে সত্যিই মনটা বেশ ভরে গেলো আমার। ভালো হয়ে গেলো আমার মন জেলার বাসিন্দা হিসেবে। টাটার কারখানার জন্য জমি দেখা হলো। সেই প্রথম দিন টাটার কর্তা রবিকান্ত এলেন জমি দর্শন করতে সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্রামে। কিন্তু প্রথম দিনেই সেই সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়াতে মাটিতে শুয়ে পড়ে মহিলারা টাটার লোকদের মনে ভয় পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো যাতে একটা প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ তৈরি করা যায় প্রথম থেকেই। বলা যায় যে কোনোভাবেই তারা এই তিন চার ফসলি জমি ছাড়বে না। নশো সাতানব্বই একর জমি অধিগ্রহণ নিয়ে শুরু হলো জোর রাজনৈতিক লড়াই আর তরজা দুপক্ষের মধ্যে। সরকার আর বিরোধী পক্ষ।

সিঙ্গুরে তৈরি হলো জমিদাতা ইচ্ছুক চাষী আর জমি না দেওয়া অনিচ্ছুক চাষীর দুটো দল। একপক্ষে দাঁড়িয়ে পড়লেন সেই সময়ের বিরোধী নেত্রী অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি যে কোনো বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করে তাঁর নিজের টিআরপি পাওয়া আর রাজ্যের ক্ষমতা দখল করা যার রাজনৈতিক জীবনের প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য সেই কবে থেকে। অন্যদিকে লাল পার্টির সিপিএম দল যে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করতে করতে গায়ে গতরে মোটা হয়ে গেছে যারা এই দীর্ঘ তিন দশক ক্ষমতায় থেকে। 

আর সেই কারণে তাদের সেই দলের প্রবল জোর আর আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়ে গেছে সেই লাল পার্টির মনের মধ্যে। আর তাই স্থানীয় কৃষক সভার কোনো গোপন রিপোর্ট না দেখেই এই তিন ফসলি জমির সবুজ মাঠে কারখানা তৈরির উদ্যোগ নিলেন বামেদের সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেমন নিজের মেজাজ আর মর্জিতে। আর স্থানীয় সিপিএমের নেতারা বললেন কোনো অসুবিধা নেই আমরা সব সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরে আছি তো। সেই বিখ্যাত দাপুটে নেতা সুহৃদ দত্ত। যিনি বোধহয় ভেবেছিলেন এই তাঁর নিজের দাপটেই কারখানার জমি তাঁরা জোর করে নিয়ে নিতে পারবেন চাষীদের থেকে কোনো ওজর আপত্তি ছাড়াই। 

আর সেটা বোধহয় কিছুটা ভরসা করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্থানীয় প্রশাসনের কথায় ও নেতাদের কথায় যে জমি তারা পেয়ে যাবেন বেশ অনায়াসেই। কারণ ইচ্ছুক চাষীর সংখ্যা যে বেশি অনিচ্ছুক চাষীদের থেকে। আর তাদের সাথে আছে পুলিশ এর দল। সেই সব দাপুটে নেতাদের ভরসা দেখে বোধহয় সেই স্বপ্ন দেখা মানুষটাও সেই রতন টাটাও ভেবেছিলেন তাহলে হয়তো সত্যিই তার একলাখি ন্যানো প্রকল্প সফল হবেই এইবার এই সিঙ্গুরের জমিতে। এই রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গে তিনি কারখানা গড়তে পারবেন অনেক কষ্টে যে স্বপ্ন তাঁর অনেক দিনের। সেই আশা পূরণ হবে তাঁর নিশ্চয়ই। 

কিন্তু বিধি যে বাম তাঁর এক্ষেত্রে। সব হিসেব নিকেষ উল্টে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর জোরদার আন্দোলন, অনশন কর্মসূচি, ধর্মঘট, রাস্তা আটকে জাতীয় সড়কের ওপর রাস্তার ওপর বসে পড়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে সব মানুষকে কেমন এককাট্টা করে ফেললেন তিনি কেমন খুব সহজেই। তিনি শুধু এটা বুঝিয়ে দিতে সমর্থ হলেন সবাইকেই যে জোর করে ভিটে মাটি মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে এই লালপার্টির সরকার। শুধু সিঙ্গুরেই নয়, নন্দীগ্রামেও একই কায়দায় জোর করে জমি নেবার নোটিশ পড়লো। ব্যাস গোটা রাজ্য জুড়ে হুলুস্থুল। গরীব পার্টির সরকার জোর করে জমি নিয়ে নিচ্ছে। গরীবের জমি নিয়ে নিচ্ছে। আর তাতেই তৃণমূল বুঝিয়ে দিলো যে এটা ঠিক কাজ করছে না সরকার। আর তাতেই তাদের বাজিমাত হলো কেমন সহজেই। আর সেই নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেলো বোধহয় সেইদিন। 

অনেক চেষ্টা হলো, অনেক দু পক্ষের বাদানুবাদ হলো, লাঠি চার্জ হলো, মাথা ফাটল, তাপসী মালিকের মৃত্যু হলো, সিঙ্গুরের জমিতে সিবিআই এর পা পড়লো, সেই টাটার কুশপুতুল দাহ করার জন্য আজকের মন্ত্রী বেচারাম মান্না চাষীদের নিয়ে রতন টাটার সাদা কাপড় জড়ানো মুর্তি তৈরি করলো। তারপর সেই মুর্তি কাঁধে করে নিয়ে প্রতীকী ভাবে ঘোরানো হলো। তারপর সেই মুর্তি পোড়ানো হলো ঘেরা জমির বাইরে। আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সামনে। 

সেদিন আমি আর বিতনু চট্টোপাধ্যায় এবিপি আনন্দ চ্যানেলের বিখ্যাত সাংবাদিক সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলাম সিঙ্গুরের মাঠের ধারে পড়ন্ত এক বিকেল বেলায়। সেই সাদা কম দামের সুতির শাড়ি আর পায়ে সাদা সস্তার চটি পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসে আছেন সিঙ্গুরে জমির আলের ওপরে সবুজ ঘাসের ওপর। কেমন চোখে মুখে একটা তৃপ্তির মিষ্টি হাসি। আর সেই ভারতরত্ন দেশের গর্ব রতন টাটার দেহকে প্রতীকী ভাবে শব সাজিয়ে ঘোরানো হচ্ছে জমির চারপাশে সিঙ্গুরের টাটা কারখানার মাঠের ধারে এদিক থেকে ওদিক। যাতে তিনি কোনোভাবেই সিঙ্গুরে কারখানা গড়তে না পারেন তার জন্যে এই প্রতীকী অন্দোলন কুশপুতুল জ্বালিয়ে। আর চাষীদের স্লোগান টাটা তুমি দুর হঠো।সিঙ্গুর থেকে দুর হঠো।

যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আজকের রাজনীতির হুগলীর সেই সোনার ছেলে আমার এক সময়ের পরিচিত বেচারাম মান্না। দিদির খুব প্রিয় বেচা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সেই গোটা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে বসে আছেন মাটির গন্ধ মেখে মাটির আল এর সবুজ ঘাস এর ওপর একা একা। পড়ন্ত বিকেলে রোদের লাল আলো তাঁর মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। আর তিনি উপভোগ করছেন সেই টাটার কুশপুতুল দাহ করার এই দৃশ্য।  এই জোরদার আন্দোলনকে উপভোগ করছেন তিনি।

আজ সেই মানুষটা সত্যিই আর নেই। কুশপুতুল নয়। কাপড়ে মোড়া টাটার কুশপুতুল নয়। আজ সেই সারা দেশের গর্ব,ভারতরত্ন পাওয়া সেই ছোট্টো স্বপ্ন দেখা মানুষটাই আজ আর নেই‌ যে। টাটা গ্রুপের তরফে সেই কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বদলে গেলো রাজনীতির পাশা খেলা। এই পূজোর সময় একদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আন্দোলন এর সময় রতন টাটা সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যাবার কথা ঘোষণা করেছিলেন নিজেই। বলেছিলেন আমি আর সিঙ্গুরে কারখানা করবো না। 

কারণ তখন টাটা কারখানায় কাজ করতে আসা কর্মীদের তৃণমুল এর আন্দোলনকারীরা আক্রমণ করছে। তাদের ভয় দেখিয়ে কাজে আসতে বাধা দিচ্ছে জেলার বিভিন্ন জায়গায়। পুলিশকে বলেও পাহারা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ধীরে ধীরেই বন্ধ হয়ে গেলো সিঙ্গুরে কারখানার কাজ। কারণ ভয় পেয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয় তাদের কর্মীদের। যাঁদের সেই সময় নানা এলাকা থেকে বৈদ্যবাটী থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।আর এই ভয় দেখানোর যিনি নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন সেই এক হুগলী জেলার এক পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান। সেকথা আজও স্বীকার করেন তিনি সেকথা। দল যদিও তাঁকে দলের সুখের সময় খুব বেশি তাঁকে দেখেনি, সেই সময়ের আন্দোলন করা সেই পুরোনো ডাকাবুকো নেতাকে। কিন্তু তারজন্য তাঁর কোনো আফশোষ নেই যে আজও। সেটাও সেই নেতা বলেন আমায়। যে নেতা আমায় বেশ ভালোবাসেন আজও। জেলায় একমাত্র নেতা যে কেউ খুব বিপদে পড়েছে এমন খবর পেলেই তিনি তাঁর সাহায্যের দুহাত বাড়িয়ে দেন। সে কারুর চিকিৎসা হোক বা পড়াশোনা হোক। 
সেই একবুক ভর্তি স্বপ্ন দেখা মানুষটি ফিরে গেলেন বিফল মনোরথ হয়ে রাজ্য ছেড়ে সিঙ্গুর ছেড়ে একা একাই গোপনে। আর তাঁর সাথে সিঙ্গুরের হাজার হাজার ছেলে মেয়ে যারা নানা ভাবে ছোটো, বড়ো, মেজো, সেজো নানা ধরনের নানা মাপের স্বপ্ন দেখেছিল একদিন। সেই একটা কাজ পাবার স্বপ্ন দেখেছিল।কাজ পেলে ঘরে ভাত খেতে পাবে তার বৃদ্ধ বাবা মা এই স্বপ্ন দেখেছিল যাঁরা। তারাও যে সব কেমন যেন নির্বাক হয়ে গেলো। আজ রাতের এই ছোট্ট এক প্রেস রিলিজ দেওয়া শোক বার্তায়। রতন টাটা আর নেই। 

 সিঙ্গুরের সেই মাঠের ঘেরা জমির ভেতর কেমন এই রাতের অন্ধকারে শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে আজ চারিদিকে। শুধু একটাই কথা আজ সেই সিঙ্গুরের ইচ্ছুক আর অনিচ্ছুক চাষীরা বলছে, যে টাটার কুশপুতুল পুড়িয়ে মৃত্যু কামনা করেছিল একদিন তারা সবাই সেই আজ থেকে আঠারো বছর আগে। আজ সেই স্বপ্ন দেখা রতন টাটা সত্যিই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন দূরে অনেক দূরে। আকাশের তারা হয়ে চলে গেলেন তিনি। সেই স্বপ্নকে বুকে জড়িয়ে। 

একটি স্বপ্ন দেখা মানুষের মৃত্যু - অভিজিৎ বসু।
দশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...