সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লেডি ক্রাইম রিপোর্টার মৌসুমী

কলকাতার এক বিখ্যাত দাপুটে মাতব্বর সাংবাদিককে রাতে ডিউটি সেরে অফিস এর গাড়ি করে বাড়ী ফেরার সময়, তার বাড়ির ফ্ল্যাটের নিচ থেকে আচমকাই পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। তার সাথে কিছু কথা কাটাকাটি ও বচসার জেরে পুলিশ তাকে বাড়ীর সামনে থেকেই সোজা থানায় তুলে নিয়ে চলে যায়। আর এই খবর পেয়েই সেই সময়ে সেই বড়ো চ্যানেলের একটু কোণঠাসা সেই এক মহিলা সুন্দরী ক্রাইম রিপোর্টার মাঝরাতেই সল্টলেকের পুলিশ কমিশনারকে সোজা ফোন করে বসে কোনো কিছু না ভেবেই মাঝরাতে। আর তাতেই কাজ হয় তৎক্ষণাৎ। বদলে যায় পুলিশের ব্যবহার, আচার আচরণ আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। যে অফিসার তাকে তুলে আনে তার অবস্হা তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। 


বহু বছর পর সেই বিখ্যাত সাংবাদিক এর কাছ থেকে সেই গল্পটা শুনে মনে হলো আমার, আরে এই বিখ্যাত দাপুটে ডাকাবুকো লেডি ক্রাইম রিপোর্টার এর সাথে তো আমিও একসাথে কিছুদিন কাজ করেছি। তাহলে তো সেই রিপোর্টার আমারও পরিচিত। সেই বিখ্যাত দাপুটে আর উন্নাসিক সাংবাদিক এর সাফ জবাব হ্যাঁ, তুমিও চেনো তাকে অভিজিৎ। কিন্তু ওর মতো ভালো মেয়ে হয়না। আজ কলকাতায় থাকলে ও কিন্তু ভালো পুলিশ রিপোর্টার হয়েই কাজ করত। মার্কেটে নেই তাই। আজকাল যারা দাদা ধরে নানা ভাবে করে কম্মে খাচ্ছে চাকরি করছে, তাদের থেকে ঢের বেশি ভালো রিপোর্টার হয়ে কাজ করত ওই মৌসুমী।
 
হ্যাঁ, আজ সেই দাপুটে সুন্দরী লেডি ক্রাইম রিপোর্টার এর গল্প আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। যে সেই বহরমপুর থেকে কলকাতায় এসেছিলো রিপোর্টার এর চাকরি করতে। ইটিভি নিউজ এ যে পুলিশ রিপোর্টার হয়ে সেই বিখ্যাত লোহা মানে শুভ্র চট্টোপাধ্যায় আর সুজিত ভৌমিক এর সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করেছে একসময়। নানা আমলে, নানা সময়ে বসদের বেশ প্রিয় হয়েছে ও ওর কাজের সুবাদে আর ওর সুন্দর মিষ্টি ব্যবহার এর জন্য। হ্যাঁ, সেই বিখ্যাত ক্রাইম রিপোর্টার হলেন আমাদের সেই বিখ্যাত মৌসুমী দাস।

 ইটিভির সেই লাল বুম নিয়ে যে সারা শহর ঘুরে বেড়াতো নানা খবরের সন্ধানে। ছেলেদের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে খবর করতে তার কোনো অসুবিধা হতো না। হাসি খুশি, মিষ্টি ব্যবহার, আর মিষ্টি কথায় অসাধারণ ফিল্ডে ব্যাট করতো মৌসুমী নিজেও বেশ স্বচ্ছন্দে। আমিও অল্প কিছুদিন কলকাতায় কাজ এর সময় ওর সাথে কাজ করেছি সেই এক অফিসে। সেই ৫৫ বি মির্জা গালিব স্ট্রীট এর ইটিভির অফিসে। সেই দীপালি, মৌসুমী, পিয়ালী, অরূপ দত্ত, মনিরুল হোসেন, জয়ন্ত চোধুরী, নব্যেন্দু গুহ, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, জটাশঙ্কর লাহিড়ী, সেই বিখ্যাত সুবীর চক্রবর্তী, পার্থ চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ সাহা, মানব গুহ, শাবানা, আরও কত সব বিখ্যাত লোকজন যে কাজ করত সেই সময় হয়তো বুড়ো হয়ে আর মনে পড়ে না আমার। হ্যাঁ, সেই মণীশ কুমার, অমিতাভ, সেই রিসেপশন এর মিঠু, সেই আশীষ আরও কত জন। হ্যাঁ বিখ্যাত সেই ম্যানেজার সুদীপ্ত দা আর বিশ্বজিৎ বাবু। সেই দেবাশীষ মৈত্র, ফান্টা, মানস, মনোজ, সৌমেন, শুভেন্দু, রাও, পিন্টু, আরও কতজন যে ছিল। কেউ বাদ পড়লে ক্ষমা চাইলাম আগাম আমি নাম মনে না পড়ার জন্য। 

সেই অফিস এর নিচে চা খেতে যাওয়া। সেই আমাদের অফিস এর কাছেই ইন্ডিয়া টিভির অফিস ছিল। রাস্তা পার হয়ে রাতের ডিউটি সেরে আমি আর ও কতদিন একসাথে পার্ক স্ট্রিট মোড় অবধি গেছি হেঁটে গল্প করতে করতে তার ঠিক নেই। ও মেট্রো ধরে ঘরে ফিরবে হোস্টেলে আর আমি হাওড়া ফিরবো বাস ধরে। লোহার সাথে ওর খবর নিয়ে লড়াই সর্বজনবিদিত ছিল। যে কোনো হাউসে দুটো বা তিনটে পুলিশ রিপোর্টার থাকলে এমন হবেই। যা সেই ইটিভি নিউজ এও হয়েছিল সেই প্রাগৈতিহাসিক আমলেও। 

 বহুদিন পর আমার সেই বিখ্যাত সাংবাদিক এর সাথে কথা হচ্ছিল একদিন। সেও সেই রাতের কথা বলে আমায় বললো মৌসুমী কিন্তু বেশ ভালো রিপোর্টার পুলিশ বিটে। আর আমারও মনে হলো হ্যাঁ, সত্যিই তো কেমন কলকাতা থেকে হারিয়ে গেলো মৌসুমী হঠাৎ করেই। বিয়ে হলো ওর, অনেকবার বলেছিল এসো তুমি বৌদিকে নিয়ে। বোধহয় পূর্ব মেদিনীপুরের দিদির বাড়ী ছিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও রাতের ট্রেন ধরে দিদির বাড়ী যেতো। রোগা, স্লিম, লম্বা সেই ছিপছিপে তন্বী মৌসুমীকে বহুদিন পর ওর কথা মনে পড়ে গেলো আমার। আজ মৌসুমী কলকাতা থেকে অনেক দূরে থাকে। নিউইয়র্ক এর শহরে বা আরও দূরে কোথাও হয়তো আমি জানিনা সেটা।

 সেই বহরমপুর থেকে কলকাতায় রিপোর্টার হবে বলে এসেছিল যে মেয়েটি। কত লড়াই করেছে দিন রাত এক করে কষ্ট করেছে ও রিপোর্টার হবার জন্য। তারপর এই পেশাকে ছেড়ে দিব্যি সুখেই বেঁচে আছে আজ ও। দুর থেকে মাঝে মাঝে ওর সাথে টুকটাক কথা হয় আমার। ফেসবুকে ওকে দেখি। আমি ওর উজ্জ্বল জীবন যাপনের ছবি দেখি। আর মনে মনে ভাবি ভাগ্যিস ও এই পেশা ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। না হলে হয়তো আজও নানা ভাবে নানা জনের কাছে তেল দিয়ে সাইড লাইন থেকে মেইন লাইনে আসার জন্য চেষ্টা করতে হতো। কিন্তু যেটা ও করতে পারত না কোনোদিনই কোনোভাবেই। কারণ সেটা যে ওর ধাতে নেই আর চরিত্রে নেই। 

আর সেটার জন্য তো সেই সময় অনেক বেশি খবর পেয়েও কেমন করে সেই চ্যানেলে কলকাতার এক বিখ্যাত ক্রাইম রিপোর্টার দাদার কাছের আপনার জন না হতে পেরে সাইড লাইনে বসে থাকতে হয়েছে ওকে বহুদিন। আর এক্সট্রা প্লেয়ার এর ভূমিকায় অভিনয় করে খুশী থাকতে হয়েছে তাকে। যদিও সেই সত্বেও সে খবর থেকে দূরে থাকেনি। তবুও সে এই অবস্থায় নানা খবর দিয়ে নানা ভাবে চ্যানেলকে ভালবেসে কাজ করে গেছে মুখ বুজে চুপ করে। আর তাই তার সোর্স দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্য রিপোর্টারদের থেকে। যেটা নিয়ে হিংসা করলেও কেউ তার খবর নিয়ে কথা বলেনি কোনোদিন। আর তাই সে অফিসের সেই যে দাদাকে উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই রাতে তাকেই খবর পেলে দিত। সেই দাদাই তার খবর চ্যানেলে প্রচারিত করতে সাহায্য করত সেই সময় একটু। আর তাই হয়তো সেই রাতে সেই দাদার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই রাতে মৌসুমী।

আসলে দাদাদের দয়া আর দাক্ষিণ্য থাকলে বাংলা মিডিয়াতে সব সম্ভব হয়। সূর্য পূর্বের বদলে পশ্চিমেও উঠতে পারে বোধহয়। আর সমুদ্রের জলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পার হয়ে যাওয়া যায় অনায়াসেই। আবার মাত্র তিন বছর টিভি চ্যানেলে কাজ করে এসাইনমেন্ট এর ডেস্ক থেকে সোজা অ্যাঙ্কর হয়ে যাওয়া যায়। লাফিয়ে এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে টাকা বাড়িয়ে কাজ পাওয়া যায়। ম্যানেজিং এডিটর আর কনসাল্টিং এডিটর এর বন্ধু হয়ে যাওয়া যায়। 

যাকগে এসব বলে লাভ নেই কোনো। বিদেশের মাটিতে বাস করে আর এসব শুনে আর কি লাভ হবে ওর। কিছুই হবে না লাভ। তবু সেই আমলের সেই প্রথা অনুযায়ী আজও এতদিন পরেও একভাবেই চলছে বাংলার বিখ্যাত এই মিডিয়ার কালচার। যে কালচারে সম্পৃক্ত হয়ে অভিনয় করতে পারলে তুমি টিকে যাবে আর না হলেই তুমি আউট। যে কালচার বা কুলাচার বাম আমলে এতো প্রকট হয়নি যতটা প্রকট হয়েছে এই বাংলার মা মাটি আর মানুষের আমলে, ঘাসের ওপর জোড়া ফুলের আমলে।

ভাগ্যিস মৌসুমী তুমি এই সেক্টর ছেড়ে এই বাংলার মাটি, জল, হাওয়া ছেড়ে দূরে অনেক অনেক দূরে চলে গেছো। বেঁচে গেছো তুমি। না হলে হয়তো কিছু মানুষের কাছে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে তোমাকেও তৈলমর্দন করে হাসি মুখে টিকে থাকতে হতো শুধু কটা টাকার জন্য নিজের কাজ বাঁচাবার জন্য এই পেশায় টিকে থাকবার জন্য। বিশ্বাস করো খুব ভালো হয়েছে পুরোনো সেই ভালোবাসার পেশাকে ছেড়ে তুমি বিন্দাস আছো, ভালো থাকো। 

তোমার সেই কানে ফোন দিয়ে খবর তোলা, সেই চেনা হাসি মুখ। সেই কলকাতার রাস্তায় দৌড়ে বেড়ানো। সেই লালবাজারের গেট, সেই ভবানী ভবনের সিঁড়িতে তোমার হেঁটে চলে যাওয়া বা রিসেপশনে একা একা বসে থাকা। এমন নানা টুকরো ছবি, টুকরো কোলাজ আজ ভেসে উঠলো মনের মাঝে এই গভীর রাতে। আমি জানিনা তোমার ওখানে এখন দিন না রাত। মনে পড়ল সেই রিপোর্টার যে একদিন তার অফিসের এক দাদাকে বিপদ থেকে বাঁচাতে বিন্দুমাত্র ভাবেনি। ঝাঁপিয়ে পড়েছে, উপকার করেছে সেই দাদার একটা ফোন পেয়েই। তার কথা আমার সাদা জীবনের কালো কথায় লেখা দরকার। যাকে আমিও চিনতাম একদিন।

 আজ না হয় আমিও মিডিয়া ছেড়ে টোটো চালক হয়ে গেছি। আর সেই দাদাও না হয় মিডিয়া ছেড়ে মিডিয়া কনসালটেন্সি করছে এদিক ওদিক বিন্দাস জীবন কাটিয়ে বেঁচে আছে কাউকে তেল না দিয়ে, কারুর কাছে হাত জোড় না করে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছে সেও। তবু এই ঘটনা, এই গল্প এই চরিত্র তো আর ভুলে যাওয়া যাবে না কোনোদিন, কোনসময়।

 সেই মির্জা গালিব স্ট্রীট এর চেনা অফিস, সেই পার্ক স্ট্রিট এর রাস্তা, সেই অফিস এর নিচের চা এর দোকান, সেই একটু এগোলেই ট্রাম লাইন আর চ্যানেল টেন এর অফিস। সেই মিষ্টির দোকান, সেই দুপুরে নানাজনের টিফিন বক্স থেকে খাবার খাওয়া, সেই অফিস এর কাছে মহুয়া বাংলার নতুন অফিস হওয়া। সেখানে আড্ডা মারতে যাওয়া সেই শিবাজী, বুদ্ধ আরও কতজন যে ছিল সেই মহুয়ার আড্ডায়।
 
আমার জীবনের, মৌসুমীর জীবনের অনেকগুলো বছর কেটেছে এই জায়গায়। তাই মনে হলো হারিয়ে যাওয়া সেই ক্রাইম রিপোর্টারকে নিয়ে কিছু লেখা দরকার। লিখে ফেললাম আজ এই গভীর রাতে। জানি হয়তো আর কোনোদিন আমাদের দেখাই হবে না কোনোদিন আর মৌসুমীর সাথে আমার। তবু বেঁচে থাকবে আমাদের এই অমলিন মিষ্টি সম্পর্ক আর কিছু টুকরো স্মৃতি। যাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যে যার মতো করে। যে যার নিজের নিজের জায়গায়। শুধু ওই অফিসের কিছু দাপুটে মাতব্বরদের তেল না দিয়ে আর হাত জোড় না করে নিজেদের মত করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা আর কি। ভালো থেকো মৌসুমী। কলকাতা এলে দেখা হলে ভালো লাগবে। টোটো চালকের সাথে প্রাক্তন লেডি ক্রাইম রিপোর্টার এর দেখা হলে মন্দ হবে না মনে হয়, কি বলো তুমি। 

লেডি ক্রাইম রিপোর্টার মৌসুমী - অভিজিৎ বসু।
একুশে নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...