ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ আমার। এক সাংবাদিকের প্রায় তিরিশ বছর আগের কিছু লেখা তার জীবনের রোজনামচা পড়ে পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায় সাংবাদিক ও এক লেখকের আজ। বারবার মনে হয়েছে যে এই বহু দিনের পুরোনো একটা আপাত ক্লিশে সম্পর্ক কেমন যেনো জড়িয়ে আছে বহুদিন বহু বছর ধরে। আমার সেই অদ্ভূত ভাবে এই জীবনের শ্বাস প্রশ্বাসে একটু একটু করে সেই নেশা চেপে বসেছে ধীরে ধীরে।
সেই নদীয়ার জেলা সাংবাদিক এর চাকরি থেকে জীবন শুরু। এই সাংবাদিকতা করার সুবাদে বহু জেলায় ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চলা জীবনের মোরাম রাস্তায় এদিক থেকে ওদিক। বহু মানুষের সাথে যোগাযোগ, আলাপ একসময় সেই নেশা ধরা সাংবাদিক হুগলী জেলায় কাজ এর সুবাদে আলাপ হয় আমার সাথেও একদিন শ্রীরামপুরের পল্লী ডাক এর সেই ভাঙা অফিসে।
বহুদিন আগেই আমার হুগলী জেলার প্রতিদিন কাগজের প্রতিনিধি তরুণ মুখোপাধ্যায় আমায় বলেছেন, অভিজিৎ তুই এত জনের কথা লিখিস একবার সমৃদ্ধ দত্ত কথা লিখতে পারিস কিন্তু। আজ ও কতদূর পৌঁছে গেছে একা একা নিজের চেষ্টায়। আমরা সবাই ওর সাথে কাজ করতাম। আজ আমাদের সেটা গর্ব হয়। তরুণদার সেই কথা শুনে আমার মনে হয়ে ছিল এমন একজন মানুষকে কে নিয়ে কি বা লিখবো আমি। যা আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় ঝুলিতে জমা আছে। কি লেখা যায় তাঁকে নিয়ে ভয় কাটিয়ে ভরসা করে। তবু বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলাম ওই আজ ভোর বেলার একটি ফেসবুক এর পোস্ট দেখে। যে পোস্ট তাঁর জীবনের অনেকটাই আমার সামনে উন্মোচিত করে দিল। সাহস করে আমি কিছু এই হেমন্তের ভোরবেলায় লিখতে বসলাম তাঁকে নিয়ে। হ্যাঁ, ভয় কাটিয়ে ভরসা করে কলম ধরলাম আমি।
সেই জেলা থেকে কলকাতায়, তারপর কলকাতা থেকে একের পর এক সিঁড়ি টপকে দিল্লী পৌঁছে গেলো সেই সাংবাদিক কেমন হাসি মুখে অনায়াসে। একদম চুপচাপ, ভদ্র, বিনয়ী, পড়াশোনায় মনোযোগী একজন ছাত্র যাকে দেখলে ঠিক জেলার সাংবাদিক না ভেবে এসডিও বা মহকুমাশাসক মনে হয় আমার। সেই কম কথা বলা একজন পরিশীলিত মানুষ এই সাংবাদিক এর সাথে পরিচয়, ঘনিষ্টতা খুব বিশেষ না হলেও পল্লী ডাক কাগজে যাওয়ার সুবাদে দেখা হতো আমার সাথেও। হেসে জিজ্ঞাসা করতে অভিজিৎ কি খবর আছে আজ। তুমি ভালো আছো তো। আমি সেই সময় এই সব বিখ্যাত জেলা সাংবাদিকদের দেখে আপ্লুত হতাম। প্রবীরদা এসেছেন বলে জিজ্ঞাসা করতেন আমায়। সেই পকেটে হাত দিয়ে সুন্দর চেহারার একজন মানুষ যে অন্তত আর যাই হোক জেলা সাংবাদিক নয় ঠিক।
হ্যাঁ, এমন সুন্দর পরিপাটি আর একজন সেই সময় হুগলী জেলায় কাজ করছেন উত্তরপাড়ার গৌতম বন্দোপাধ্যায়। আনন্দবাজার পত্রিকার বিখ্যাত সাংবাদিক। বহু জন বর্তমান কাগজের হয়ে হুগলী জেলায় কাজ করতে এসেছেন সেই দেবাঞ্জন দা, সেই পুলকেশ দা, সেই দেবদাস অধিকারী, সেই সমৃদ্ধ দত্ত। কিন্তু এই শেষের জন একদম আলাদা ঘরানার একজন মানুষ ও সাংবাদিক। যার মধ্যে হৈ চৈ, হুল্লোড়, চিৎকার চেঁচামেচি কোনোটাই নেই। একদম চুপচাপ ফুলে ছাপ এর মত খবর করে আবার সেই চুঁচুড়া ফিরে যাওয়া হাসি মুখে। তখন সবে পরিবার সংসার হয়েছে বোধহয় তাঁর।
এমন সেই আজকের বিখ্যাত সাংবাদিক সমৃদ্ধ দত্তর কথা লিখতে ইচ্ছা হলো আমার। যে লেখা অনেকদিন ধরেই ভেবেছি কিন্তু বুকে সাহস নিয়ে লিখতে পারিনি আমি কোনোদিন। তরুণ দা বলেছিলেন কিন্তু তবু ভেবেছি এই আমি একজন প্রায় কম পড়াশোনা করা জেলার একজন পাতি সাংবাদিক হয়ে কি করে লিখবো দিল্লির বিখ্যাত একজন লেখক আর সাংবাদিক এর কিছু কথা। যদিও আমার কাছে সমৃদ্ধ দার তাঁর দুটো দিল্লির মোবাইল নম্বর আমার মোবাইল ফোনে সেভ করা আছে। মাঝে মাঝেই ছবি দেখে, বই প্রকাশ দেখে ভালো লাগে আমার দুর থেকে।
এই মানুষটার সাথে একদিন দেখা হয়েছিল হুগলী জেলায় সাংবাদিকতার সুবাদে। বেশ গর্ব হয় আমার। দিল্লীতে পোস্টিং বহু জন যারা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি তাদের গর্ব করে বলেছি আমি বারবার, সমৃদ্ধ দত্তদার সাথে আমি জেলায় কাজ করেছি একদিন হুগলী জেলায়। যেটা বলতে গিয়ে বেশ ভালো লেগেছে আমার। জেলা প্রতিনিধি থেকে ঘুরতে ঘুরতে সেই নতুন পরিবার সংসার নিয়ে দিল্লী গিয়ে খবরের দুনিয়ায় সেই রাঘব বোয়ালদের মাঝে নিজের জায়গা করে নেওয়া যেটা বেশ কঠিন আর কঠোর ছিল সেটাই করে দেখিয়েছেন তিনি ধীরে ধীরে চুপচাপ। সেই আকবর আলী খোন্দকার, সেই সিং দা, সেই তপন দাশগুপ্তের বড়বাজারের অফিস, সেই রবীন মুখার্জীর অফিস, সেই পল্লী ডাক এর অফিস, সেই প্রবীরদা, তরুণ দা, গৌতম দা, ফাল্গুনী দা, এমন কতজন যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সেই সময় কে জানে।
সত্যিই বহমান নদীর মতই একজন সাংবাদিকের বেঁচে থাকা জীবনের মাঝে এমন সব কিছুই ভেসে থাকে এদিক ওদিক কচুরিপানার মতই। স্মৃতির পাতা উল্টেপাল্টে দেখলে সেসব ভেসে ওঠে নিজে নিজেই। সেই মনে আছে আমার আজও ঝড়ের রাতে বৃষ্টি হচ্ছে খুব। চুঁচুড়া সদর শহরের সেই ডাক্তার আশীষ মণ্ডল এর ছেলের বিয়েতে উপস্থিত আমি। হুগলী মোড় এর কাছে এক বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে হাজির সমৃদ্ধ দাও। ডাক্তার বাবু বলেন আমায় সমৃদ্ধ এসেছে বুঝলি অভিজিৎ। দেখলাম বহুদিন পরে সেই মুখে হাসি নিয়ে জিজ্ঞাসা অভিজিৎ কেমন আছো। মেয়ে বউ এর সাথে আলাপ হলো। তখন আমি জেলায় ইটিভির প্রতিনিধি একটু নাম হয়েছে। তবু সেই সময় তাঁকে দেখেও কেমন যেনো গুটিয়ে থাকা।
বৃষ্টি হচ্ছে বলে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন তিনি। কিন্তু চিনতে পারল সেই পুরোনো জেলার সম্পর্ক ধরে। এটাই বেশ ভালো লাগলো আমার বহুদিন পর। আজকাল অনেক ওপরে উঠে গেলে সব কেমন পুরোনো মেঠো আর অকাজের সম্পর্ক কে ঠাণ্ডা হিমশীতল সম্পর্ক গড়ে ফেলে আর তাকে হিমঘরে বন্দী করে দেয়। যে সম্পর্কের সীমানা ছাড়িয়ে আর যাতে তাঁর কাছে কিছুতেই পৌঁছতে না পারা যায় হাজার চেষ্টা করেও। যাকগে কিছুই লিখতে পারব না ভেবে কিছু অভিজ্ঞতা মনের কথা লিখে ফেললাম আমি আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায়।
আরও অনেক ঘটনাই আজ আর মনে পড়ে না আর আমার। তবে সেই ছোটো দুই ওর ছেলের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সেই আকবর দা, অন্যদের রাত জেগে পাহারা দেওয়া এটা মনে আছে। আজ সেই দুই ছেলের ছবি দেখে মনে পড়ে যায় সেই কথা। তবু সেই যার জন্মদিনের কথা স্মরণ করে আজকে ভোরবেলার ফেসবুক পোস্ট করে নিজের ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিচারণ করলেন তিনি। সেই বিখ্যাত মানুষের জন্মদিনে একটাই কথা লিখতে ইচ্ছা হয় আমারও। যে চিঠি তিনি আমায় দিয়েছিলেন বহুবছর আগে যোধপুর পার্কের বাড়িতে বসে এমন এক সকাল বেলায়।
সেই তাঁর নিজের হাতে লেখা চিঠি। অভিজিৎ, জীবনকে দেখো জীবনই হলো সবথেকে বড় শিক্ষক। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এই কথা,এই লাইন মনে রেখেছি আমিও আজ দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরেই। শুধুই জীবনকে দেখি, নানা জীবনকে দেখি। বারবার জীবনকে দেখি আমি। যে জীবনের মাঝে লুকিয়ে থাকে নানা কাহিনী, নানা গল্প। হয়তো লিখতে পারিনা সেসব কিছুই। তবু আজকে ভোরবেলায় মনে হলো ফেলে আসা দিনের সেই পুরোনো দিনের কিছু কথা লিখে ফেলি। আমার এই এলোমেলো, এলেবেলে সাংবাদিক এর জীবনে। যে কথা আঁকাবাঁকা অক্ষরে মেঠো পথ ধরে আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে লেখা থাকবে।
কোনোদিন হয়তো সেই লেখা পড়ে দেখবো আর মনে হবে এই বিখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক এর সঙ্গে আমিও কিছুদিন একসাথে জেলায় কাজ করেছি জেলার পাতি সাংবাদিক হয়ে। ভরসা করে বলতে পারব আমি যে দিল্লীর সমৃদ্ধ দত্তকে আমিও চিনি। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। আপনার আজকের এই লেখা পড়ে কিছু লিখে ফেললাম আপনার সাথে আমার সম্পর্কের বেড়া টপকে। আশা করি তারজন্য কিছু মনে করবেন না আপনি। ভুল লিখে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন আমায়।
আমাদের সেই সমৃদ্ধ দা - অভিজিৎ বসু।
দোসরা নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন