সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চারিদিকে শুধু চালাকের ভিড়

আজকাল আর আমার ঘর থেকে আর রাস্তায় বের হতে ঠিক ভালো লাগে না। কেনো জানিনা কে জানে হয়তো এটা একটা ঘরকুনো রোগ হয়েছে আমার এই রাস্তায় না বেরিয়ে। বা ঠিক ওই বাদুড়ের মত বেঁচে থাকার চেষ্টা করা ঘরের মাঝে আলো আঁধারি পরিবেশের মধ্যে ঠিক ওই ঝুলে ঝুলে। ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে দিন কাটাতে বেশ স্বচ্ছন্দ লাগে আমার। ঘরের মধ্যেই সকাল, ঘরের মধ্যে দুপুর, ঘরের মধ্যে সন্ধ্যা আর তারপর সেই ঘরের মধ্যেই কালো অন্ধকার রাত। 

ঠিক ওই যেমন জেলখানায় মন্ত্রী মশাই এর দিন কাটে, রাত কাটে, দুপুর কাটে সেই গোমড়া মুখে। সেই তাঁর চেনা হাসিটাই উবে গেছে কতদিন হলো বোধহয় ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে। উবে গেছে আগের সেই চেনা চেহারা, সেই আগের জেল্লা , তাঁর দাপুটে মনোভাব, হুটার বাজিয়ে জোরে সবাইকে টপকে চলে যাওয়া এদিক থেকে ওদিক পানে। 

আসলে আজকাল রাস্তায় বের হলেই চারিদিকে সব কিলবিল করছে চালাক এর দল। কেমন ওই ওপর চালাক, মিষ্টি হাসি মুখের চালাক, গোমড়া গম্ভীর মুখের ইন্টেলেকচুয়াল চালাক, একদম ছেদো দাঁত বের করা চালাক, হিলহিলে চালাক, মোটা নাদুস নুদুস চালাক, আর ওই কোলেস্টেরল ভর্তি পিপের মত চেহারা নিয়ে চালাক। কিম্বা শরীরে মনে সুগার লেভেল পরীক্ষা করে হাই হলেও কেমন মিষ্টি চালাক। চারিদিকে শুধু চালাক আর চালাক। এত চালাকের মাঝে নিজেকে কেমন যেনো বেমানান লাগে আর বেশ বোকা বোকা লাগে। 

হাটে, বাজারে, শপিং মলে, মাছের দোকানে, মুদির দোকানে, চারিদিকে গিজ গিজ করছে ওই চালাকের দল। এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছে, উপুড় হয়ে যাচ্ছে, করমর্দন করছে, আলিঙ্গন করছে। দিব্যি সুখেই বেঁচে আছে তারা একে অপরের প্রতি চালাকি করে আর চালাকি দেখিয়ে একে অপরকে আশ্লেষে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে। সব জেনে বুঝেও কেমন একে অপরকে দেখেও না বোঝার ভান না করেই বেঁচে আছে তারা। নানা ধরনের আর নানা আকারের চালাকের বর্ম পরে ঠিক ওই হেলমেটের মতই কিছু একটা মাথায় দিয়ে। দেখে বোঝার উপায় নেই কোন জাতের চালাক, এক গোত্রের না ভিন্ন গোত্রের। 

ওই দেখুন না আমার গা ঘেঁষে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো যে দু চাকার গাড়ী নিয়ে দ্রুত গতিতে কেমন চালাকি করে রাস্তার পাশে আমায় একটু চেপে দিয়ে। আর একটু এদিক ওদিক হলেই আমি আমার সাধের সাইকেল নিয়ে গড়িয়ে যেতাম ড্রেনের মধ্যে। আর ওই দ্রুতগামী বাইক চালকের মুখে তখন চালাকি করে সাইড মেরে আমায় চেপে দিয়ে চলে যাওয়ার ফুর্তিতে আরও জোরে গাড়ি চালিয়ে ছুটে যাওয়া। হ্যাঁ, এটাই হলো আসল কথা।

বোকাদের সাইড কাটিয়ে নানা ভাবে তাদের কাছ থেকে সুযোগ নিয়ে, সুবিধা নিয়ে, তাদের বিপদে ফেলে নিজেদের স্বার্থে একটু চালাকি করে আনন্দে দুহাত তুলে বেঁচে থাকা। এটাই আজকাল আমি ঠিক সহ্য করতে পারি না। আর তাই আমার খারাপ লাগে ভিড় উপচে পড়া রাস্তায় হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ চালাক মানুষের ভিড়ে নিজেকে কেমন যেনো বোকা বোকা আর বেমানান লাগে। 

মনে হয় সত্যিই কি তাহলে আমি আর কোনোদিন চালাক হতে না পারি, চালাক সেজেও ঘুরতে পারবো না রাস্তায়। ঠিক ওই ওদের মতো হাসি মুখে মাথায় চালাকময় বর্ম পড়ে। বেশ রোগা শীর্ণকায় চালাক হয়ে। আর হাসি মাখা মুখ করে। কে জানে দ্রুত গতিতে ঘরে ফেরার পথ ধরলাম আমি একা একা।

 কিন্তু চারিদিক থেকে চালাক এর দল ঘিরে ধরে ফেলেছে আমায়। ওরা বোধহয় চিনতে পেরেছে যে আমি ওদের দলের লোক নয়। আচমকাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছি আমি ভুল করে। নানা ধরনের হাসি মাখা মুখ, বর্ম পড়া মুখ, চেনা মুখ, অচেনা মুখ ঘিরে ধরেছে আমায় চারিদিক থেকে। 

আর আমি কেমন অসহায় বোধ করছি যেনো। কুল কুল করে এই হেমন্ত মাসেও ঘামছি যেনো। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না আমি। আর ওরা কেমন আমায় দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে, উদ্বাহু হয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে নেচে উঠছে আমায় ঘিরে ধরে। আর আমি চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার পাশে এককোনে চুপটি করে। 

চারিদিকে শুধু চালাক এর ভিড় - অভিজিৎ বসু।
আঠারো নভেম্বর দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...