সাদা জীবনের কালো কথায় আজ সেই নিউজ এজেন্সি ইউ এন আই এর বিখ্যাত সাংবাদিক মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এর কথা। একদম ঝকঝকে কর্পোরেট সুলভ একজন সাংবাদিক। সেই পুরোনো দিনের ইটিভির আমলে। ইটিভির বহু বসদের দেখে ভয় পেলেও যাঁকে দেখে ইষ্ট নাম জপ করতে হয়নি আমায় তাঁর সাথে কথা বলার সময়। বেশ নিজেই হাসিমুখে বলতেন কি রে কি খবর। একদম ঝকঝকে তকতকে ইংরাজি জানা একজন ধোপদুরস্ত সাংবাদিক। আমি একদম মুগ্ধ হয়েই দেখতাম তাঁকে। আর গম্ভীর ভাব নয় হাসি মুখ সব সময় তাঁর। তাই মৃত্যুঞ্জয়দার সাথে দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হয়নি কোনোদিন। খেলা নিয়ে ভালো দখল তাঁর। আর যে কোনো বাংলা কপিকে ইংরাজি করে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এই তো আমাদের সবার মৃত্যুঞ্জয় দা।
কাজের সুত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠা তাঁর সাথে। এরপর তো ধীরে ধীরে একে ওপরের থেকে দূরে চলে যাওয়া। সেই আজ থেকে কতদিন আগের ঘটনা প্রায় পঁচিশ বছর। সেই সময়ে তিনি বুঝেছিলেন বাংলা মিডিয়ার সাথে কাজ করা তাঁর পক্ষে মুশকিল হবে ভবিষ্যতে। আর তাই তিনি বেশ ধীরে ধীরে লাইন চেঞ্জ করে পড়াশোনার জগতে, শিক্ষকতার জগতে প্রবেশ করলেন। আর সেটাই বোধহয় তাঁর আসল জগৎ হলো যেখানে বেশ স্বচ্ছন্দে হাসি হেসে বিরাজ করছেন তিনি শিক্ষক হয়ে, বিভিন্ন জায়গায় পড়িয়ে শিক্ষক হয়ে।
আসলে এই যে সময় বুঝে তাঁর সাংবাদিকতার নিশি ডাকের নেশা ছেড়ে অন্য জগতে চলে যাওয়া। তারপর সেই জগতে গিয়ে নিজেকে ফের এডজাস্ট করা। সেখানে গিয়ে আবার ফের নিজের স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে, ভাস্বর হয়ে বিরাজ করা এটা বেশ কঠিন ব্যাপার হলেও সেটাই করে দেখালেন তিনি একদম হাসি মুখে। কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। আর এটাই হলেন আমাদের সেই মৃত্যুঞ্জয় দা।
মাঝে মাঝেই কথা হয় ফোনে। তাঁর হাজার কাজের মাঝে কোনো সময় ব্যস্ত থাকেন তিনি। বলেন পরে কথা বলছি রে অভিজিৎ। আর আমি তো বেকার লোক ঘুরে বেড়াই আর কি। অনেক বুদ্ধি দেন বলেন শোন কিছু কাজ করতে হবে। একদিন বললেন জেলায় জেলায় সেই আগে যে ইয়েলো পেজ বের হতো সেটা যদি করতে পারিস বেশ ভালো চলবে কিন্তু এটা। আসলে বিজ্ঞাপন এর জগৎ নিয়ে বেশ ভালো ধারণা ছিল তাঁর। এই ব্যবসা বাণিজ্য জগৎ নিয়েও ভালো অভিজ্ঞতা তাঁর। কিন্তু আমার দ্বারা যে কিছুই হবার নয়।
তাই দু একটা কাজ করতে বলেছেন আমায় কিন্তু যখন দেখলেন এর দ্বারা আর কিছুই হবার নয়। সেটা ভেবে আর বেশি কিছু বলেন নি আমায়। কিন্তু তার জন্য আমাদের সম্পর্কের দূরত্ব বেড়ে যায় নি। সম্পর্কের অবনতি হয়নি কোনোদিন কোনো ভাবেই। সেই আমার এলেবেলে এলোমেলো বিন্দাস জীবন নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা। হাসি মুখে কলকাতার বেহালার ফ্ল্যাট বাড়িতে বসে শুনে মনে মনে পাগল বলেছেন হয়তো। কিন্তু রাগ করেন নি কোনোদিন। বলেন নি তোর সাথে আর কথা বলবো না আমি। দিব্যেন্দু, উৎপল দার কথা জিজ্ঞাসা করেন মাঝে মাঝে আমায়।
আসলে সেই সব পুরোনো দিনের মানুষদের ঘরানা একটু অন্য রকমের। তাই হয়তো পছন্দ না হলেও কেমন করে যেনো আজও রয়ে গেছে আমাদের দুজনের এই অমলিন মেঠো সম্পর্ক। একজন কর্পোরেট ঝাঁ চকচকে শিক্ষক জীবন এর সাথে একজন এলোমেলো এলেবেলে কম শিক্ষিত জীবনের। সেই জীবনের কথাই যে আমি লিখতে চাই। যে কথা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কেউ বলেন সব তো সাদা কথা, কালো কোথায়। কেউ বলেন এসব আর স্মৃতিচারণ করে লাভ কি।
কিন্তু আমার মনে হয় সেই দিনের কথা ভুলি কি করে। সেই কালো সোয়েটার পড়ে মৃত্যুঞ্জয় দা ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিন নম্বর চৌরঙ্গী স্কোয়ার এর নিউজ রুমে পকেটে হাত দিয়ে। সেই ছোটো বারান্দায় যার নাম দেওয়া হয় পরে ঘোঁট বারান্দা সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন হাসি মুখে। কিন্তু সেই মানুষটার কোনো অহংকার, কোনো দাপট, কোনো রকম হামবড়া ভাব নেই।
জেলা থেকে কলকাতা অফিস গেলেই বলতেন পিঠ চাপড়ে বলতেন কি রে, কি খবর রে। বাড়ির কি খবর, সবাই ভালো আছেন তো। এখনো যেমন বলেন তোর মেয়ে বউ সবাই ভালো আছে তো রে। হ্যাঁ, এটা বলতেই এই লেখা। যেখানে সাদা জীবনের সাদা কথা। আজকাল যে এই সাদা মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। তাই মনে হলো মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এর কথা লিখি আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। যিনি সেই আমলের বিখ্যাত UNI এর এজেন্সির সাংবাদিকতা ছেড়ে কেমন নিজেকে বদলে নিয়ে অভিযোজিত করে দিব্যি হাসিমুখে বেঁচে আছেন। সত্যিই অসাধারণ এই বদলে ফেলা আর বদলে যাওয়া। যা আমি পারছিনা বলেই হয়তো এত কষ্ট, অপমান আর যন্ত্রণা সহ্য করে টিকে থাকা আর চুপ করে মুখ বুজে সব মেনে নেওয়া।
আমাদের ইটিভির মৃত্যুঞ্জয় দা - অভিজিৎ বসু।
তেরো নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন