সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সোমা

কিছু কিছু মানুষকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছা হলেও ভয়ে আতঙ্কে কলম ধরতে সাধ হলেও, সাধ্য হয় না আমার। আসলে এই বেকার জীবনের সব ইচ্ছা কি পূরণ করা যায়। আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় বহু চরিত্রের ভীড়ে এক অন্য চরিত্রের ছবি। যে ছবির কথা লেখা উচিত না অনুচিত আমি নিজেই জানি না। তাকে নিয়ে লিখলে কি তার ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া হবে তাও জানিনা আমি। শুধু আমি এটা জানি যে এত হাজার জনের কথা লিখতে বসে ওকে বাদ দেওয়া যায় না কোনোভাবেই আর কোনমতেই।

 যে আমায়, আর আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যে আমার এই শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলার চেষ্টা করতে সাহায্য করেছে সব সময়। যে আমার পাশে দাঁড়িয়ে সব সময় হাসি মুখে সব কিছুকে উৎরে দিয়েছে আর বলেছে তুমি চিন্তা করোনা একদম। যে আমার মেয়ের পড়ার জন্য ভাবতে চিন্তা করতে মানা করেছে। যে শুধু এই ভাবেই বারবার আমায় ঋণী করে রেখে দিয়েছে। তার কথা লিখতে ইচ্ছা হয় খুব আমার।

 
আসলে জীবনের এই চলার পথে রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও যে এমন কত গভীর গোপন সম্পর্ক টিকে থাকে লুকিয়ে চুরিয়ে তার ইয়ত্তা নেই। তার সন্ধান পাওয়া যায় না কোনোভাবেই। মনিমুক্তোর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা এমন দু একটি সম্পর্ক এদিক ওদিক করে গড়ে ওঠে নিজেদের অজান্তেই ঠিক ওই পাঁচিল বেয়ে গজিয়ে ওঠা নীল বর্ণের অপরাজিতার মতই। আর সেই সম্পর্কের বোঝা বয়ে বেরিয়ে আনন্দে‌ অভিভূত হতে হয় মনে মনে। মনে হয় এই স্বার্থসঙ্কুল পৃথিবীতে এখনও এমন গুটিকয় মানুষ বসবাস করেন বলেই বোধহয় পৃথিবীটা এতো দ্রুত গতিতে অবক্ষয় হলেও ভেঙে পড়েনি। টিকে আছে এই সব নীল বর্ণের কিছু ফুলেল সম্পর্ক, যে সম্পর্ককে মেরজাপের তারের বাঁধনে বাঁধা যায়না কিছুতেই।

 যারা যে কারুর জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন চিন্তা নেই কোনো আমি আছি তো। আর আমার মত বেকার মানুষেরা ভাবে এই ভাবে বেঁচে থাকার মধ্যে কেমন যেনো একটা হীনমন্যতায় না ভুগে সেই সাহায্য নিয়ে হাসি মুখেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করে তারা। মনে করে না এই ভাবে শিরদাঁড়া সোজা করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে লাভ কি। যার জন্যে অপরের কাছে ছোটো হয়েই টিকে থাকতে হয়। যাকগে এসব কথা বাদ দিয়ে সেই আমাদের মুর্শিদাবাদ এর নবাবের জেলার বিখ্যাত সাংবাদিক এর কথায় আসি। যার গ্ল্যামার, যার টিপটপ সুন্দর সাজ, যার বাচনভঙ্গি, যার মিডিয়াতে জেলার লোক হলেও কেমন একটা শহুরে রিপোর্টারের ছাপ সুস্পষ্ট। হ্যাঁ, সেই বিখ্যাত মুর্শিদাবাদ জেলার সাংবাদিক সোমা মাইতি আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। যার কথা আমি লিখতে বসলাম তাঁর অনুমতি না নিয়েই।

চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে যাকে আমি প্রথম দেখলাম পোদ্দার কোর্টের অফিসে এক বিকেল বেলায়। ঝাঁ চকচকে হয়ে অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই টেবিল, ওই টেবিল। একে মহিলা রিপোর্টার তার ওপর আবার বসদের আর দাদাদের কাছের লোক বলে কথা তাই বিশেষ কাছে ঘেঁষে বা কথা বলে নিজের বিপদ ডেকে আনতে চাইনি আমি। চা খেতে যাবো বলেও কালাম এর দোকানে চা খেতে যাবার সাহস দেখাইনি সেদিন ভর সন্ধ্যায়। 

কিন্তু আপাত কঠিন কালো চশমার ঘেরা টোপে বন্দী মেয়েটার সাথে কেমন করে যে সহজ সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলো আমার কে জানে। সেই মুর্শিদাবাদ জেলায় নদীতে বাস উল্টে যাওয়া। সোমার আমায় ফোন করে খবর দেওয়া অভিজিৎ দা বড়ো এক্সিডেন্ট হয়েছে। সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভালো কভারেজ করা। এমন নানা ঘটনার কথা মনে পড়ে যায় আজ এই শীতের দুপুর বেলায়। ওর খবরের প্রতি একটা প্রেম কাজ করে বরাবর। আর ওর অকুতোভয় সাহস যেটা ওই মুর্শিদাবাদ জেলায় ওকে কাজ করতে কোনো সমস্যায় ফেলেনি কোনোদিন।

 সেটা সেই পুজোয় বাক্স প্যাটরা নিয়ে জেলায় জেলায় পূজোর লাইভ করাই হোক কিংবা ভোটের সময় জেলায় জেলায় ভোট কভার করাই হোক। সোমা হলো প্রথম পছন্দের রিপোর্টার। যাকে বাদ দিয়ে লাইভ সিডিউল করা একদম দুষ্কর। জেলার রিপোর্টার হলেও এমন সাবলীল সহজ সুন্দর লাইভ দেওয়া লোক পাওয়া ভার। আর তাই মহিলা সাংবাদিক হলেও সব জায়গায় ওকে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে নিরাপদে থাকে অফিস। যার জন্য হয়তো ওর পারিবারিক সমস্যা হয়েছে কিন্তু অফিস এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সেটা ও করেও দিয়েছে হাসিমুখে। এটাই হলো ওর একটা বড় গুণ।

আসলে এই পেশায় এমন লোকের বড়ই অভাব। যাকে যে কোনো সময় যে কোনো খবরে কাজে লাগানো যায়। আর তারপর তো আমি চব্বিশ ঘণ্টা ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম। ও রয়ে গেছে কাজ করছে। কিন্তু সেই আগের টিম, আনন্দ, উত্তেজনা, ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করা সেটা বোধহয় অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গেছে আজকাল। অনেক চ্যানেল ওকে ডাকলেও ওর প্রথম প্রেম চব্বিশ ঘণ্টাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সুযোগ পেলেও চলে যায়নি ছেড়ে সে। কিন্তু হয়তো ওর মনে হয় পুরোনো জায়গা ছেড়ে নতুন জায়গায় গেলেই ভালো হতো। হয়তো কিছুটা আফশোষ হয় ওর এরজন্য। তবে সেই যে পুরোনো চব্বিশ ঘণ্টার প্রতি প্রেম ভালোবাসা সেটা আজও টিকে আছে মনের মধ্যে। আর তাই বোধহয় ছাড়তে পারেনি সে তার পুরোনো। 

আর সেই পুরোনো স্মৃতি আর সম্পর্কের জোরেই তো আমি চব্বিশ ঘণ্টা ছেড়ে দিয়ে চলে এলেও। মিডিয়ার কাজ ছেড়ে দিয়ে টোটো চালক হয়ে গেলেও টিকে আছে আমাদের দুজনের এই অসম পারস্পরিক সম্পর্কও। যে সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে কোনো লজ্জা নেই। কোনো আত্মগ্লানি নেই। কোনো হীনমন্যতায় ভোগা নেই। যে সম্পর্ক আজ পারিবারিক সম্পর্ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। 

আসলে কোনও খুব কাছের সম্পর্ক, নিকটের সম্পর্ক কেমন দূরের হয়ে যায় দুজনের অজান্তেই ধীরে ধীরে। আবার কোনো দূরের গ্রামের মেঠো সম্পর্ক কেমন শক্ত কঠিন পিচ ঢালা রাস্তার মত কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে যায়। বিচিত্র এই জীবন। বিচিত্র এই সম্পর্কের সরু সুতোয় বোনা বল। যে বল এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়, দৌড়ে বেড়ায়, আপনমনে আর আপন ছন্দে।

 ভয়ে আতঙ্কে হাত পায়ে কাঁপন ধরে গেলেও বুকে সাহস এনে আর শিরদাঁড়ার জোরে লিখে ফেললাম এই গভীর গোপন কথা। যে কথা অকথিত হয়েই ছিল এতদিন, আজ তার ঝাঁপি উল্টে দিয়ে কিছুটা হলেও আমার আজ ভালো লাগছে। যার অনুরণন এই অঘ্রাণ এর ঝিম ধরা বিকেলে আমায় নতুন করে বাঁচার রসদ দিলো। মনে হলো কিছুটা ভার লাঘব হলো আজ এই আলতো শীতের সন্ধ্যায়। 

যেখানে পাখির ডানাতে লেগে আছে হেমন্তের শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদের নরম আলো। যে আলোয় আলোকিত হোক আমাদের দুজনের সেই পুরোনো পোদ্দার কোর্টের অফিস, সেই কালাম এর চায়ের দোকান, সেই ট্রাম লাইনের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া ট্রামের ঘর ঘর আওয়াজ, সেই মিডিয়া সিটির ঝাঁ চকচকে অফিস, সেই বাংলা মিডিয়ার নানা সেরা লোকদের দাপুটে আনা আর গোনা, আর তার মাঝে শুধু এক টোটো চালকের বিন্দাস এলোমেলো, এলেবেলে জীবন। আর সেই জীবনের যুদ্ধ। যে যুদ্ধে আমি হেরে গেলেও, বারবার তুমি আমায় জিতিয়ে দিচ্ছ। ভালো থেকো তুমি সোমা। এই হেরে যাওয়া মানুষকে জিতিয়ে দেবার জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞ আমি। 

আমাদের সোমা - অভিজিৎ বসু।
একুশে নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...