সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো থেকো তুমি শুভ্রা

মাঝে মাঝেই আমার কাছে শুভ্রার এই ছবিটা ভেসে আসে। একদম কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে আমার দিকে। হয়তো বলছে কি হলো আমায় চিনতেই পারছো না যে অভিজিৎ দা। ভেবেছি দেখেই ওকে রিমুভ করে দেবো বা সরিয়ে দেবো ফেসবুকের দেওয়াল থেকে কিন্তু সেটা পারিনি আমি। খুব যে ওর সাথে আমার সখ্যতা ছিল সেটা নয়। খুব যে আমার সাথে ওর যোগাযোগ বা পরিচয় ছিল সেটাও নয়। ইটিভির হায়দরাবাদ ডেস্ক এ ছিল ও। মাঝে মাঝে ফোন করতো কপি নিয়ে ওইটুকুই যা আলাপ বা পরিচয় ওর সাথে। উচ্ছল, প্রাণবন্ত একটি মেয়ে। হাসিখুশি মেয়ে। ওর চোখ দুটো ভারী সুন্দর ছিল। আজ কাল দিনে, রাতে, দুপুরে হঠাৎ করেই আমার কাছে ফিরে আসে শুভ্রার বন্ধুতের বার্তা। কিন্তু কেন, কে জানে। হারিয়ে যাওয়া শুভ্রা কি আবার ফিরে আসতে চায়। জানিনা আমি। 

এই যে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় চেনা সব মানুষজন আমাদের জীবন থেকে হঠাৎ করেই তো হারিয়ে যায় কাউকে কিছু না বলেই কোনো নোটিশ না দিয়েই। একসাথে কাজ করা মানুষজন, পাশাপাশি বাড়িতে বাস করা মানুষজন, ট্রেনে একসাথে অফিস যাওয়া মানুষজন হঠাৎ করেই কেমন কপুরের মতই উবে যায় তারা। খবর পাওয়া যায় ওই মানুষটা কাল অফিস থেকে বাড়ী ফিরে অসুস্থ হলেন আর মারা গেলেন। আর এই খবর শুনে মনে মনে ভাবি যা এই তো কাল একসাথে এক ট্রেনের কামরায় অফিস গেলাম। তাস খেলার আনন্দে মশগুল ছিলেন তিনি। আর আজ তিনি নেই। সত্যিই জীবন যে কত অনিত্য কে জানে। এই আছে আর এই নেই এই নিয়েই তো জীবন আমাদের।

কিন্তু শুভ্রা। কত সুন্দর ছটফটে মেয়েটা। দৌড়ে বেড়াতো ডেস্কের এদিক ওদিক। খবর ধরানোর কত তাড়া ছিল ওর। কি প্রাণবন্ত মেয়েটা। হঠাৎ কি যে হলো। আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলো। তখন বোধহয় মির্জা গালিব স্ট্রীট এর অফিস ছিল ইটিভির। সেক্টর ফাইভে উঠে যায়নি শসেই অফিস। শুভ্রা ওর কয়েক দিনের বাচ্চাকে জন্ম দিয়ে চলে গেলো আমাদের সবাইকে ছেড়ে। ঠিক আজ আর আমার মনে নেই কি হয়েছিল ওর। শুধু এটা জানি ট্রাম লাইন পেরিয়ে সেই পিস হেভেনে ওকে দেখতে গেছিলাম আমরা সবাই। ওকে আনা হলো হাসপাতাল থেকে, ওকে দেখতে গেলাম আমরা। লাল সিঁদুরে আর শাড়িতে কেমন সুন্দর দেখাচ্ছিল ওকে সেদিন। সবাই ওকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম সেদিন। ওই একরত্তি ছেলেকে ছেড়ে ও চলে গেলো দূরে অনেক দূরে। 

বিশ্বাস করুন ভগবান এর ওপর সেদিন খুব রাগ হয়েছিলো আমার। এ কেমনতর বিচার। এক রত্তি ছেলে তার মাকে হারালো। ধীরে ধীরে তো ক্ষত শুকিয়ে যায়। ধীরে ধীরে জীবনের গভীর গোপন ব্যথা তো কমে যায়। জীবনের এই সব দুঃখ বোধহয় কিছুটা সহ্য করেই বেঁচে থাকতে হয়। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া এটাই তো জীবনের ধর্ম। শোক তাপ দুঃখ সব কিছুকেই মানিয়ে নেওয়া। সেটা হয়তো ফিরোজ চেষ্টা করছে আজও এতদিন পরেও। ছেলেটা বোধহয় অনেক বড় হয়ে গেছে আজ। জানিনা আমি সে খবর। শুধু জানি যে শুভ্রার এই ছবি আমায় অনেক কিছুই মনে করিয়ে দিলো। সেই হায়দরাবাদ এর ভরা গমগমে নিউজ ডেস্ক, সেই গম্ভীর মুখে সিদ্ধার্থ সরকার এর চশমা চোখে বসে থাকা, সেই কম সময়ের খবর এর চ্যানেলের নানা দাপাদাপি। সেই কলকাতার মির্জা গালিব স্ট্রিট এর অফিস। এমন নানা কথা যে মনে করিয়ে দিলো শুভ্রা আজ আমায়।

কেনো যে এইভাবে ও ফিরে এলো কে জানে। আমার ফেসবুকের দেওয়ালে হেলান দিয়ে এসে দাঁড়ালো ওর সেই চিরাচরিত ভঙ্গিতে। একদম ঠিক আগের মতই। যেভাবে ফোন করে বলতো অভিজিৎ দা তোমার কপি পেলাম ছবি আসেনি এখনও কিন্তু দাদা। তাড়াতাড়ি দাও এটা আমায় লিখতে হবে ধরাতে হবে। আমি ফোনে বলতাম এই তো যাচ্ছে গো ছবি। না, জানি সেই কথপোকথন আর কোনোদিন হবে না আমাদের দুজনের। ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে শুভ্রার আওয়াজ শুনতে পাবো না ছবি আসছে জানালো অভিজিৎ দা। এই বলে ফোন রেখে ও কপি লিখতে বসত হয়তো ডেস্কে। 

জানি এসব যে অতীত আজ। শুভ্রার এই চেনা ছবি আমার ফেসবুকের দেওয়ালে ভেসে আসে বার বার। জানি আমি এই ছবিও যে অতীত আজ। যে আজও আমার কাছে মাঝে মাঝেই ভেসে আসে হঠাৎ করেই। মনে করিয়ে দিয়ে যায় অনেক কিছুই। জানিনা কেনো যে আজ এই সকাল বেলায় শুভ্রা ফিরে এলো আবার কে জানে। ভালো থেকো তুমি শুভ্রা।

ভালো থেকো তুমি শুভ্রা - অভিজিৎ বসু।
ছাব্বিশ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...