বৃহস্পতিবার মানেই তো লক্ষ্মীবার। সেই বিশেষ দিন যেদিন সারা সপ্তাহের পড়াশোনা করার পর ফল প্রকাশের দিন। এই দিন সংখ্যা দিয়ে বোঝা যায় কোন চ্যানেল কত নম্বর পেলো টিআরপি রেটিং এর নিরিখে। যে রেটিং ঠিক যেনো দাবার ঘুঁটি সাজিয়ে একবার এগিয়ে যাওয়া আর পরক্ষণেই আবার এক পা পিছিয়ে যাওয়া। ঠিক যেনো সাপ আর লুডো খেলার মতই। একবার মই ধরে এগিয়ে দ্রুত লয়ে ওপরে উঠে যাওয়া। আবার পরক্ষনেই সাপের মুখে পরে নিচে নেমে আসা মুখ চুন করে।
কিন্তু আশ্চর্য ঘটনা ঘটে এই বাংলা মিডিয়ায়। যেখানে সেই যে প্রায় একযুগ আগে একটি এগিয়ে থাকা আর এগিয়ে রাখা বাংলার চ্যানেল মইতে চেপে ওপরে মগডালে উঠে বসেছে সে আর শীত, গ্রীষ্ম,বর্ষা, বসন্ত, হেমন্ত চলে গেলেও কোনোভাবেই আর নামতে চায়না কিছুতেই নিচে। একদম একভাবেই একনম্বরে বসে থাকে হাসিমুখে। আর ওপর থেকে মিটিমিটি হাসি হেসে বলে দেখ কেমন লাগে। বাংলা মিডিয়ার সেরা সেরা লোকদের কি মনে হয়না একবারও সেই মগডালে উঠে বসা চ্যানেল এর লোকদের কাছে তারা কত ছোটো হয়েই মাতব্বরি করে যাচ্ছে বছরের পর বছর এই বাংলা মিডিয়ায়। কোনো ভাবেই লাজ লজ্জা হীনমন্যতায় ভোগে না তারা। একবারও মনে হয়না এটা কেনো হবে বছর বছর। আমাদের পারতেই হবে। ওদেরকে ধরতেই হবে, হারাতে না পারলেও ছুঁতেই হবে। না, সেই প্রতিজ্ঞাও বোধহয় দেখা যায়না কিছুতেই কোনোভাবেই। ভাবটা এমন যেমন চলছে চলুক ক্ষতি কী। যিনি এই এক নম্বর চ্যানেলকে দু নম্বর করে দেখিয়েছিলেন তিনি তো আর আজ আমাদের মধ্যে নেই। সেই অঞ্জন বন্দোপাধ্যায়।
আজ দুপুরে সুদূর মুম্বাই থেকে একজন বাংলার বিখ্যাত সাংবাদিক এর হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ এল আমার মত একজন বেকার লোকের কাছে। যিনি বর্তমানে কলকাতা ছেড়ে, বাংলা ছেড়ে দিল্লী আর মুম্বাইতে কর্মরত। নিউজ এইট্টিন এর ম্যানেজিং এডিটর পোস্টে কর্মরত তিনি। আমার প্রিয় বন্ধু ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক। যদিও খবরে না থাকার কারণে খবর নিয়ে কোনো কথা নেই আমাদের মধ্যে। সম্প্রতি নিউজ এইট্টিন লোকায়ত চ্যানেলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি হাসি মুখেই। আরও বেশ কিছু চ্যানেল দেখছেন তিনি। সেই সংস্থার নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে।
আজ এই ফল প্রকাশের দিন দেখা গেছে ভোটের সময় লোকমত চ্যানেল টিভি নাইন ভারতবর্ষকে বেশ কিছুটা রুরাল জায়গায় গ্রামের মেঠো জায়গায় টিআরপিতে পিছিয়ে দিয়েছে। স্বভাবতই কিছুটা খুশি হয়েই সেই সাদা কালো নম্বর শেয়ার করেছে ধ্রুব অনেককে। তার সাথে আমাকেও। আর সেই গ্রাফ এর নম্বর আর সাথে দুটো লাইন লিখেছে ও, আর একটু ঠেলে দিলেই ওরা পড়ে যাবে। বেশ মজার লাইন। রেলের ট্রাকে লাইন ঠেলার মত জোরসে ঠেলো হেঁইয়ো। বাংলায় যে ঠেলার কাজটা একসময় দু নম্বর চ্যানেল হয়ে করতো জী গ্রুপের বাংলা চ্যানেল চব্বিশ ঘন্টা সে আজ অনেকটাই পিছনের সারিতে। যে চ্যানেল বাংলায় দু নম্বর চ্যানেল হিসাবে স্থান পেয়ে বাজারে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার ইতিহাস নিয়ে অনেকেই অনেক কথাই বলেন। বাজারে কান পাতলে অনেক কিছুই শোনা যায়। তাতে আর আমজনতার কি এসে যায়। আর আমার মতো টোটো চালকের কি বা আসে যায়।
কিন্তু একজন বাংলার মাটিতে খেলা খেলোয়াড়। এই গ্রাম বাংলার মাঠের গন্ধ শুঁকে বড়ো হওয়া খেলোয়াড়। যার শয়নে, স্বপনে, জাগরণে খবর, খবর আর শুধুই খবর। যে নিজের জেদ অধ্যবসায় আর নিষ্ঠা দিয়ে সেই হায়দরাবাদ এর ডেস্ক এর থেকে ধীরে ধীরে মুম্বাই পৌঁছে গেছে তার কাছে তো এটা একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। বাংলায় না হোক বাণিজ্য নগরীতে বসে না হয় একটু কফির কাপে চুমুক দিয়ে সংখা নিয়ে একটু খেলা করা যাক। যে খেলা খেলতে সে নিজে বড়ই ভালোবাসে। যে খেলায় মাঠে তার প্রতিপক্ষকে মাটিতে ফেলে দিয়ে উচ্ছসিত হতে বড়ই ভালোবাসে। এটাই তার নেশা আর প্যাশন। তাই আজ দুপুরে ওর এই সর্বভারতীয় টিআরপি রেটিং দেখে ওর খুশী হয়ে যাওয়া দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো।
মনে পড়ে গেলো সেই পুরোনো দিনের চব্বিশ ঘণ্টার কথা। এমন বৃহস্পতি বার এলেই এডিটর অনির্বাণ চৌধুরী ল্যাপটপ খুলে বসে আছেন। চুল চেরা বিচার হচ্ছে কার অনুষ্ঠান পয়েন্ট দিলো আর কার দিলো না। লাজুক মুখে সেই বিখ্যাত অ্যাঙ্কর এডিটর এর ঘরে প্রবেশ করতেন। তার দুটো স্লুট এই বারেও ভালো পয়েন্ট দিয়েছে। খুশি হতেন এডিটর বেশ। চশমার ফাঁক দিয়ে নজর করতেন তিনি বাকিদের কি অবস্থা হলো।
অফিসের নানা পদের বাবুদের তখন শুধু খবর নয় এই সংখ্যা নিয়েই কাটাছেঁড়া চলতো দিনভর এই বৃহস্পতি বার। সত্যিই কি ভালো লাগতো সেই দিনটা। এগিয়ে গেলে খুশি খুশি ভাব। আর পিছিয়ে গেলে কেমন মন খারাপ। কিন্তু সেই যে কথা গ্রাম আর খবর দিয়ে শহরকে ঘিরে ফেলতে হবে। সেই আপ্ত বাক্যকে স্মরণ করেই বোধহয় বাংলা ছেড়ে মুম্বাই গিয়েও কিছুটা সফল হলো আমাদের ম্যানেজিং এডিটর ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক। আর সেই সফলতা পেয়েই ওর সেই ভোকাল টনিক আর একটু ঠেলে দাও ওরা পড়ে যাবে।
যা বাংলায় এই ঠেলার কাজটা বারো বছর ধরেই কেউ ভাবতে পারেনি আর করতে পারেনি। তাই মগডালে উঠে সুখে বসে আছে আর এগিয়ে আছে একজনই ফি বছর। বাংলায় যা হয়নি সেটা বাণিজ্য নগরীতে হবে না এমন স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কি। এক গ্রাম বাংলার ছেলের হাতধরে যদি সেই স্বপ্ন সফল হয় একদা এই বাংলার মিডিয়ায় কাজ করা এই টোটো চালক সবথেকে খুশি হবে।
আজ স্বপ্ন দেখার দিন - অভিজিৎ বসু।
আটাশ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন