আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস। চারিদিকে শুধুই ছড়িয়ে পড়েছে সফল পুরুষের নানা ধরনের আর নানা রকমের উজ্জ্বল সব ছবি। দেওয়াল জুড়ে শুধুই সফলতার ছবির ঝকমকে বিজ্ঞাপন। চোখে রোদ চশমা পরে পাহাড়ের চূড়ায় সফল পুরুষের বুক চেতানো বিজ্ঞাপনী ছবি। আবার কোথাও কালো মসৃণ রাস্তায় দামী গাড়ি চালিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলা জীবনের মন ভালো করা ছবি। আবার কোথাও সুন্দরী নারীকে কাছে টেনে তাকে বুকের মাঝে হৃদ মাঝারে রেখে মোহময় মনোমুগ্ধকর ছবির সুন্দর বিজ্ঞাপন।
আসলে পুরুষ, পুরুষাকার, পৌরুষত্ব, মানেই কি শুধু সফলতা, সাফল্য অর্জন আর তার উজ্জ্বল সব ঝাঁ চকচকে বিজ্ঞাপনী ঝলক। যা দেখে সব চোখ ধাঁধিয়ে যায়। যা সব ঝাঁ চকচকে জীবন এর প্রতিচ্ছবি হয়েই ঘুরে বেড়ায় আমাদের চারপাশে ইতি উতি। এদিক ওদিক ঘাই মারে সব শীতের দুপুরে পুকুরের কালো জলে কৈ মাছের মতো। আচ্ছা ওই যে পাড়ার পাঁচু বা বংশী সেকি জানে আজকের এই দিনটা শুধুই তাদের দিন।
যে পাঁচু কোনরকমে সকাল হলেই ট্রেন ধরে ফিরি করতে যায় এটা ওটা জিনিস নিয়ে ওর কালো রং চটা ব্যাগে ভরে নিয়ে। ওর চোখের হাই পাওয়ার এর চশমার পাওয়ার বাড়লেও সে কিছুতেই বাগে আনতে পারে না চোখের পাওয়ারকে। আর সেই জন্য হাসি মুখে কোনো দিন পয়সা রোজগার করতে গিয়ে কম বা বেশি পয়সা দিয়ে ফেলে খদ্দেরকে। ঘরে ফিরে সেই কথা বলতেই সুন্দরী বউ এর মুখ ঝামটা খায় চুপ করে। তবু সত্যিই কি সুন্দর যে এই নারী আর পুরুষের গভীর গোপন সম্পর্ক। যে সম্পর্কের কোনো উজ্জ্বল ছবি ওই টেপা ফোনে ধরা না থাকলেও ওদের মনের ক্যামেরায় ধরা থাকে দিন-রাত, সকাল - সন্ধ্যা, সারা বছর।
আর ওই বংশী যে ওই যে পাড়ার মুদি দোকানের ফাই ফরমাশ খেটে দিন যাপন করে হাসি মুখে। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোনো অবস্থা। জীবনে উজ্জ্বলতার সুস্পষ্ট ছবির এক ফোঁটা স্পর্শের সন্ধান কোনোদিনও পায়নি তারা কেউই কোনোদিন। পাঁচুর ডাগর ডোগর বেশ সুন্দর বউ যাকে নিয়ে পাঁচুর গর্বের শেষ নেই,ওর আবার চিন্তারও শেষ নেই। সেই বউকি জানে আজ শুধুই পাঁচুদের দিন। আজ শুধুই বংশীদের দিন। কে জানে হয়তো জানেই না তারা। জেনেই বা লাভ কি তাদের।
আমার বউও কি জানে আজ শুধুই আমার দিন। হ্যাঁ,শুধুই আমার দিন। যে ঘরের পুরুষ মানুষ উজ্জ্বল নক্ষত্র মাখা হাসি, উজ্জ্বল বিজ্ঞাপনী ছবি তুলে রাখার আর সুযোগ পায়না কোনো ভাবেই। শুধুই চুপটি করে হেরে যাবার আর হারিয়ে যাবার ছবির ভীড়ে হাবুডুবু খায় দিন রাত। এক কালের সফল পুরুষ আজ কেমন বিফল হয়ে হাসতে হাসতে কাটিয়ে দেয় তার জীবন। আসলে জীবন তো এমনই। সফলতা, বিফলতা, হেরে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া, জিতে যাওয়া এসবের নিক্তিতে মাপা হয় পৌরুষত্ব আর পুরুষের ক্ষমতা। যে ক্ষমতার ক্ষমতায়ন ঠিক করে দেয় একজন সফল পুরুষ বা নারীর ক্ষমতার মাত্রা কতটা।
যদিও আজ পুরুষদের একচেটিয়া দিন। যে দিন শুরু হয়েছিল প্রথম বার ১৯৯২ সালে। আজ থেকে ৩২ বছর আগে। যদিও এই পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে।
২০০২ সালে দিবসটির নামকরণ করা হয় ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ তখনকার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই দিবসটি পালন করা হতো। বলা যায়, নারী দিবসের অনুরূপভাবেই দিবসটি পালিত হয়। ষাটের দশক থেকেই পুরুষ দিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস নিজের লেখায় এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে লিঙ্গ ভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবসটি উদ্যাপন করা হয়ে থাকে।
নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম। পরবর্তী সময়ে ১৯ নভেম্বর বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর প্রতি বছর এই দিবস এর একটা থিম থাকে। এই বছরের দু হাজার চব্বিশ সালের থিম হলো ' ইতিবাচক পুরুষ রোল মডেল '। এই বিশেষ দিনটি পুরুষদের সুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। তাহলে মনের মাঝে টিকে থাক এই পুরুষ দিবসের নানা কম বেশি উজ্জ্বল ছবি। যা বিশ্বের সব সফল আর বিফল পুরুষদের আরও বেশি করে ভালো থাকতে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
বিশ্ব পুরুষ দিবস - অভিজিৎ বসু।
উনিশে নভেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও গুগল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন