সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গ্রামের কথা

কিছু কিছু গ্রামের নাম শুনলেই বড়ো ভালবাসতে ইচ্ছা হয় আমার। মনে হয় এই গ্রাম যেনো কত আপনার, কত নিজের, কত কাছের জন। তবু বড়ো ভয় হয় আমার, দ্রুত গ্রামকে গিলে খেতে এগিয়ে আসছে যেনো আগুনখেকো এই শহর। কেমন যেনো একটা সাপের মত চুপিসারে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে সে। ধীরে, অতি ধীরে সর্পিল গতিতে। 

সেদিন দেখলাম একটা বিজ্ঞাপনে গুসকরাতেও পৌঁছে গেছে শহর। পৌঁছে গেছে মাথা উঁচু করা ফ্ল্যাট বাড়ির সু উচ্চ ছাদ। মাটি কেনা নয়, ছাদ কেনার জ্বলজ্বলে বিজ্ঞাপন ফেসবুকের দেওয়ালে। মাত্র ছাব্বিশ লক্ষ টাকায় দু কামরার ছাদ কেনার জ্বলজ্বলে বিজ্ঞাপন। যে বিজ্ঞাপন দেখে মনে হলো তাহলে সত্যিই তো ধীর পায়ে, ধীর গতিতে আর ধীর লয়ে এগিয়ে আসছে শহর গ্রামকে গ্রাস করতে।

আসলে জীবনানন্দের রূপসী বাংলার গ্রাম, রাঢ় বঙ্গের গ্রাম, তার রূপ রস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক ওদিক। সোনার ধানের গন্ধমাখা হাওয়া প্রকৃতিতে। প্যাঁচার ধূসর ডানার মতো একটু একটু করে কুয়াশার রঙে পালক খুলছে শীত। সকালে কুয়াশা আহ্লাদে জড়িয়ে থাকছে সবকিছু। কেমন একটা কুয়াশায় ঢাকা জীবনের শুরু। 

 শীত পড়ছে এবার তারই আভাস হয়ে ঘাসে, কলাপাতায়, গাছে গাছে সেই কুয়াশা শিশির হয়ে জমছে। রোদ বাড়লে শিশিরের জলফোঁটা ধুলার শরীরে কিছুটা দাগ রেখে উবে যায়, কুয়াশা হারিয়ে যায়,এরকমই। বাংলার ঘরে ঘরে এখন শস্য-উৎসবের সময়। সব শ্রম ও আনন্দ ঢেলে মাঠে মাঠে যে সোনার ধান চাষ করেছেন চাষি, সেই শিশু গাছগুলো তারুণ্য পেরিয়ে শস্যবতী। সেগুলোর শরীরভরা পরিপুষ্ট ধানের প্রাচুর্য, ঐশ্বর্য আর মায়া। যে মায়াঘেরা গ্রামও এখন শহরের গ্রাসে বন্দী হয়ে পড়ছে যেনো আস্তে আস্তে। 


আর গাঁয়ের মাঝখানে প্রাচীন বটবৃক্ষ। নাম তার বাবাজী বটতলা। সে যে কবে, কতদিন আগে, কোন বাবাজী এই বটগাছ লাগিয়েছিলেন, তা আজ আর কে বলবে মনেই নেই হয় তো সেই কথা। বটতলায় বসে কেউ শরের ঝাঁটা বুনছে। আবার কেউ কেউ বাবুই ঘাসের দড়ি পাকাচ্ছে। ঝাঁটা বাঁধার কাজে লাগবে। সরু, ভালো পাক দেওয়া বাবুই দড়ি ও কিনতে হয়। আসলে গ্রামের জীবন যে বড়ো কষ্টের। কিন্তু সেই কষ্টের গ্রামের নাম বনকাটি। কি অদ্ভুত মায়া আর ভালোবাসা জড়াজড়ি করে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে এই পশ্চিম বর্ধমানের বনকাটি গ্রাম। 

আচ্ছা সেই যে বাতাসপুর গ্রাম। যে গ্রামের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া স্টেশনে সারা দিনে হাতে গোনা কটি ট্রেন থামে। তারপর শীতের আলসেমির নিঝুম দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে মাঠ পেরিয়ে আলপথ পেরিয়ে। কেমন করে শীত ধেয়ে আসে মাঠের আলপথ ধরে। কুয়াশা মাখা জলে স্নান করে মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে সেই হলুদ চাদরে মোড়া সর্ষে ক্ষেত। সবুজ কচি পাতার ফসল, পাশাপাশি মাথা দুলিয়ে মাঠের ধারে তাদের দৃশ্য দেখে মন ভালো হয়ে যায়।

সেই গ্রাম যে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে শহরের করাল গ্রাসে। আমার মাঝে মাঝে বেশ ভয় হয়। শহুরে সভ্যতার নানা নিদর্শন আর তার গৌরবকে বুকে ধরে আমার খুব প্রিয় সেই বাতাসপুর, বনকাটি , বেরগ্রাম, পিচকুড়ির ঢাল, ভুতুড়া, এদের কি একদিন গ্রাস করে নেবে এই শহর। অজয় নদীর ধারে গড়ে ওঠা গ্রামও কি শেষ হয়ে যাবে একদিন এইভাবেই। 

সেই গ্রামের নদীর বালি তুলে বদলে যাওয়া কিছু গ্রামের মানুষের জীবনের মতো। যে জীবনে আজ শহুরে ছোঁয়া লেগেছে, বালি আর পাথরের ছোঁয়ায় বদলে গেছে গ্রামের সহজ সরল কষ্টের জীবন। কিন্তু বাকি জীবন তো অন্ধকারেই ডুবে আছে যেনো। তবু সেই অন্ধকারের মাঝেও কেমন গোপন ভালোলাগা, গভীর ভালোবাসা, আর ভালোথাকা জড়িয়ে থাকে। এ গাঁ যে আমার খুব প্রিয়। 

গ্রামের কথা - অভিজিৎ বসু।
বাইশে নভেম্বর,দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...