সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সন্দীপ প্রামাণিক

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক রাতের রিপোর্টার এর কথা। সেই আমাদের শনিবার বোধহয় বা অন্য কোনোদিন এর নাইট ওয়াচম্যান রিপোর্টার এর কথা। যে ঘটনার কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। যে কথা বলতেই হবে আমায় আমার এই ক্ষুদ্র সাংবাদিক জীবনের লেখা নানা ঘটনার মধ্যে। যেটা না বললে ঠিক হবে না। আসলে সেই বেহালার সন্দীপ প্রামাণিক আমাদের সবার প্রিয় হাসিখুশি সেই ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টার এর কথা আজ সাদা জীবনের কালো কথায়।

 যে প্রতিদিন রাত আটটা বেজে গেলেই তার নাইট ডিউটির দিন পকেটে হাত দিয়ে অফিস এসেই হেসে দাঁড়িয়ে পড়তো আমার কাছে। আর বলতো দাদা, আমি এসে গেছি কোনো চিন্তা নেই তোমার। কি আছে আর কি করতে হবে আমায় বলে দিও দাদা। এই বলেই ও ক্যামেরা রুমে চলে যেতো ক্যামেরা রেডি করতে আর জিনিসপত্র ঠিক করতে। বেশ হাসিখুশি মিতভাষী এক রিপোর্টার। একটু বয়স হলেও কাজের ক্ষেত্রে কোনো না নেই ওর কোনোদিন। বেশ যে কোনো কাজ ও হাসিমুখে করে দেবে মুখ বুজে। ও বলেনি কোনোদিন যে দাদা এটা পারবো না আমি। বেহালায় বেশ ভালই খবর করে ও। 


একদিন বিকেলে চব্বিশ ঘণ্টার মিডিয়া সিটির অফিসে অ্যাসাইনমেন্টের টেবিলে বসে আছি আমি।‌ অফিস একটু যেনো চুপচাপ। খবর কম, উত্তেজনাও কম আর কি। টিভি চ্যানেলের অফিসে এই উত্তেজনা হৈ চৈ হুল্লোড় নিয়েই তো জীবনের এতগুলো বছর কেটে গেল আর কি। এদিক ওদিক সবাই কেউ চা খেতে যাবে বলে আড়মোড়া ভাঙছে কেউ আবার চা খেয়ে অফিস এর টেবিল এ ফিরে আসছে। সেই সময় হঠাৎ করেই আমার মোবাইল ফোনে সন্দীপ প্রামাণিক এর ফোন এলো।

 বেশ হাঁফাচ্ছে ও। দাদা, দাদা। আমি বললাম হ্যাঁ, বলো কি হয়েছে কি তোমার। ওর গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না ওপর প্রান্ত থেকে। দাদা, আমি বললাম বলো কি হলো। বললো দাদা একটা ছবি দিয়েছি একটু দেখুন। বলতেই দেখলাম একটা ছবি ডাউনলোড হচ্ছে ধীরে ধীরে প্রায় আট মিনিটের ছবি হবে। সন্দীপ শুধু বললো দাদা বড়ো দুর্ঘটনা ঘটেছে। তখনও বেশ কাঁপছে ও যেনো। 


ছবিটা ডাউনলোড হবার পর দেখেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। তড়াক করে আমার হাইপার স্বভাব নিয়ে চিল চিৎকার, আরে দাদা বড়ো খবর হয়েছে বলেই ধ্রুবকে বললাম আমি তৎক্ষণাৎ। আর আমার এই উত্তেজনা দেখে আমার এডিটর অনির্বাণ চৌধুরী আমায় যথা নিয়মে গালাগাল দিতে কসুর করেননি কোনোদিন। এই কি আর ঘটেছে বল তোর মাথায় যে পৃথিবী ভেঙে পড়েছে মনে হচ্ছে তোর চিৎকার শুনে। 

সে যাই হোক ছবিটা ডাউনলোড হবার পরে চ্যানেলে চালানো হলো। শুধু সেই মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার ছবি তুলেছে একমাত্র আমাদের সেই বিখ্যাত রাতের সাংবাদিক বেহালার সন্দীপ প্রামাণিক। সেদিন সন্দীপ মোটর সাইকেল করে বাড়ী ফিরছিল কোনো কাজ সেরে। সেই সময় ওর চোখের সামনেই মাঝেরহাট ব্রীজ ভেঙে পড়ে। ও ওর নিজের মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে সন্দীপ অত বড় দুর্ঘটনা দেখেও কিন্তু একদম ঘাবড়ে যায়নি। দাঁড়িয়ে থেকে সেই ছবি তুলে নিয়েছে সে। 

 রাস্তার পাশে মোটর সাইকেল রেখে সে ছবি করেছে। বুকে বল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে। তারপর আমায় ফোন করে বলেছে দাদা ছবিটা দেখো তুমি। আর ওর ছবি দেখে আমরা সেই দিন সবার আগে প্রায় কুড়ি মিনিট বা তার বেশি সেই মাখেরহাট ব্রীজ ভেঙে পড়ে যাওয়ার ছবি চ্যানেলে দেখিয়েছিলাম। সবার আগে সেই সন্দীপ প্রামাণিক এর তোলা মোবাইল এর ছবি আমরা ২৪ ঘন্টা চ্যানেলে সবার আগে দেখিয়েছিল সেদিন। যার মূল কারিগর ছিল সন্দীপ প্রামাণিক। আমাদের সেই বেহালার সন্দীপ। 


ঝিমিয়ে পড়া, আলসেমি লেগে যাওয়া অফিসে একটা শুধু খবরের আগমনে গোটা অফিসের চেহারা বদলে দিল সেদিন ও। আমি উত্তেজনায় ফুটছি। ধ্রুবকে বললাম দাদা বড়ো ঘটনা সবাই যে যেখানে আছে সবাইকে স্পটে পাঠিয়ে দাও দাদা। এটা বড়ো দুর্ঘটনা দাদা। ধ্রুব বললো হ্যাঁ, দাদা। তারপর তো সবটাই ইতিহাস। আর দৌড়ে যাওয়া। খবরের শিরোনামে চলে এলো সেই ব্রীজ ভেঙে পড়ার খবর।

 সেদিন সেই বিকেলে যে ওই দুর্ঘটনার ঘটনা দেখেও সেটার সাক্ষী হয়েও নিজের মোবাইল ফোনে ছবি করে এই সব কথা জানিয়েছিল সে আমায় বুকে জোর নিয়ে। ছবি পাঠিয়েছিল আমায় সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকেও । তারপর ওর গলা কাঁপে। ও আর দাঁড়াতে পারছে না বুঝতে পারে সে নিজেই। তারপর ওর মনে হয় সত্যিই এত বড় একটা ব্রীজ ওর চোখের সামনে ভেঙে পড়ে গেলো। সে স্বপ্ন দেখছে নাতো। সত্যিই তো ঘটেছে এই ঘটনা। যখন সে একটু একটু করে বুঝতে পারে তখন সে কিছুটা বিহ্বল হয়ে পরে। মুখ দিয়ে ওর আর কোনো আওয়াজ বের হতে পারে না। 

হ্যাঁ, তারপর সবাই সব চ্যানেল ঝাঁপিয়ে পড়ে এই মাঝেরহাট ব্রীজ ভাঙার খবরে। কিন্তু তার আগে পনেরো বা কুড়ি মিনিট শুধু মাত্র ২৪ ঘন্টা চ্যানেলে এই ব্রীজ ভেঙে পড়ার এক্সক্লুসিভ ছবি দেখানো হয়। যে ছবি তুলেছিল আমাদের সেই রাতের নাইট রিপোর্টার সন্দীপ প্রামাণিক। হ্যাঁ, ওর বোধহয় রবিবার নাইট ডিউটি থাকতো নাকি কে জানে। 

সেই আমাদের সবার প্রিয় সন্দীপ প্রামাণিক। যার করা এই ছবির কথা আজও আমার মনে আছে ঘটনার এতদিন পরেও। সেই পোদ্দার কোর্টে অফিস করতে আসা ওর রাতে পকেটে হাত দিয়ে হাসি মুখে। দাদা আমি এসে গেছি দাদা। আবার সেই মিডিয়া সিটির অফিসে এসে রাতের ডিউটি ধরা। কতদিন যে আমায় ধর্মতলা বা মাঝরাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছে সে তার ঠিক নেই। দাদা কোনো চিন্তা নেই তোমার আমি আছি তো। এইভাবেই সন্দীপ রাতে আমায় নিশ্চিন্তে নিরাপদে ঘরে ফেরার কথা বলেছে। 


আসলে ও হয়তো পাকাপাকি রিপোর্টার নয়। স্থায়ী রিপোর্টার নয় চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলের। কিন্তু তবু সেদিন ও যে ছবি করেছিল রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে ভেঙে পড়া ব্রীজ এর। যে ছবির জন্য সবার আগে আমাদের সেই চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেল এই খবর ও ছবি আগে দেখিয়েছিল অন্য চ্যানেলের থেকে। সেটা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। আর সেটার সব কৃতিত্ব আমাদের সেই রাতের রিপোর্টার সন্দীপ প্রামাণিক। যে সেদিন বিকেল বেলায় ও কাউকে বুঝতে না দিয়ে সবাইকে হাসি মূখে গোল দিয়েছিল। 

সত্যিই অসাধারণ স্যালুট জানাই সন্দীপ প্রামাণিক তোমায়। এরপর কতদিন কত স্মৃতি যে জড়িয়ে আছে ওর সাথে। সেই আলিপুরের ওয়েদার এর খবর দেওয়া ওর। সেই নানা ধরনের খবর করে গেছে ও কাউকে না বলে বা দেখিয়ে। চুপ করে মুখ বুজে খবরের নেশায় দৌড়ে গেছে এই বয়সেও। 

যে কোনো যে ভাবে হোক দরকার পড়লে ওকে ফোন করলেই হলো। অপর প্রান্তে সেই ওর চেনা গলা। দাদা বলো কি চাই তোমার। সন্দীপ এই খবরটি হয়েছে। ওর হাসি মুখে বলা হ্যাঁ, দাদা ওরা করেছে আমি দেখছি দাদা এই খবরটি। বলেই খবর জোগাড় করে পাঠিয়ে দেওয়া। এটাই আমাদের আসল সন্দীপ প্রামাণিক। যার কথা না লিখলে বোধহয় আমার এই সাদা জীবনের কালো কথার ঠিক মূল্যায়ন করা হতো না।

 জীবনের এই রাস্তায় সন্দীপ এর মত ছেলেমেয়েরা আছে বলেই এই ঝিমিয়ে পড়া বিকেলে একটা খবরে এত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা খবরের অফিসে। আমার দ্রুত অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয়। আমি কেমন যেন পাগলামো শুরু করি। সবাইকে দৌড়তে বলি স্পটে। যেটার জন্য আজও আমি মিস করি সেই চেনা নিউজরুম। আর সেই নানা মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি।


 আর সন্দীপ প্রামাণিক এর মত মানুষেরা সেই বড়ো দুর্ঘটনার খবর করেও কেমন নির্বিকার হয়ে চুপচাপ হাসি মুখে বেঁচে থাকে। আর শুধু একটা ফোন করে বলে দেয় দাদা এটা একটু দেখো তুমি। আর নাইট ডিউটির দিন রাত হলেই পকেটে হাত দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে দাদা আমি এসে গেছি। তোমার কোনো চিন্তা নেই আর। শুধু কোথায় যেতে হবে বলো দাদা। সত্যিই বড়ো ভালো ছিল সেই দিনগুলো কি বোলো সন্দীপ। তুমি এইভাবেই এই বয়সেও এমন করেই খবর করে যেও। আর সবাইকে হাসি মুখে গোল দিও। 

আমাদের সন্দীপ প্রামাণিক - অভিজিৎ বসু।
সাতাশে নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও গুগল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...