সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লাইফ সার্টিফিকেট

ক্যালেন্ডারের পাতায় বছর শেষ হতে আর বেশি বাকি নেই। এই তো সেদিন হৈ হুল্লোড় করে জানুয়ারি মাস পড়লো। দিকে দিকে পয়লা জানুয়ারি পালন হলো। পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন হলো। সকাল থেকেই মাইক বাজলো। নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। মোবাইলে নতুন বার্তা এলো, হ্যাপি নিউ ইয়ার এর। সেটা দেখে মুগ্ধ হলাম আমি, আপনি, সবাই যাক নতুন বছর এলো বলে কথা। তেইশ পেরিয়ে চব্বিশ সাল। কিন্তু আজ সেই চব্বিশ সাল ও প্রায় শেষের পথে।

কিন্তু সেই নতুন বছর কেমন করে যেনো গড়াতে গড়াতে একেবারে শেষের দিকে। এত কথা বলছি একটাই কারণে যে বছর শেষের সময়ে এই ভীড়ের আর জটলার ছবি দেখে মনে পড়ে যায় আমার যে তাহলে সত্যিই বছর শেষ হলো বলে। হুগলীর উত্তরপাড়া কোতরং পুরসভা পাড়ায় পাড়ায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শুরু করেছে লাইফ সার্টিফিকেট নেওয়ার ক্যাম্প।

 জয় বাংলা পেনশন পেতে এই বছর শেষ হলেই লাগে লাইফ সার্টিফিকেট এর প্রমাণ পত্র। যা জমা দিয়ে জানাতে হয় সেই বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা বেঁচে আছেন বহাল তবিয়তে। কিন্তু সেই অশীতিপর বৃদ্ধ বৃদ্ধারা যাবেন কোথায় এই তাদের বেঁচে থাকার কথা জানাতে। একে তো তারা অসুস্থ । তার ওপর তারা বেশিরভাগ নড়তে পারেন না ঘর ছেড়ে। তাই পুরসভা নিজেই করেছে সেই ক্যাম্প বিভিন্ন এলাকায় বা ওয়ার্ডের যাতে তাদের সুবিধা হয়। পুরসভার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব এর কথায়, মা মাটি মানুষের সরকার মানুষের সরকার। এই ক্যাম্প করে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের সেই পরিষেবা দিতে চাইছে যাতে তাদের সুবিধা হয় এই সার্টিফিকেট পেতে। আর শহরের বৃদ্ধ বৃদ্ধরাও খুশি এই ক্যাম্প হয়েছে বলে।

এত গেলো সাধারণ মানুষের কথা আর পুরসভার পরিষেবার কথা আর পুরপ্রধান দিলীপ যাদব এর রাজনীতির কথা। যে কথার মধ্য মানবিকতা লুকিয়ে আছে। কিন্তু আমার মনে হলো একটু অন্য কথা। যে কথা মনে মনে আমায় বেশ মজা দেয়। আচ্ছা এই যে নানা মানুষের ভীড়। যাদের সগর্ব হাজিরা দেওয়া। উপস্থিত হয়ে জানিয়ে দেওয়া আমরা এখনও এই সমাজে সংসারে জিন্দা আছি কোনো ভাবে। ছেলে, মেয়ে, বউ, নাতি আর পুঁতি নিয়ে। পাড়া প্রতিবেশী নিয়ে, আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে। 

কেউ খবর নেয় আবার কেউ নেয় না। এটাই তো জীবন। আর সেই জীবনের লাইফ সার্টিফিকেট তোলার ভীড় দেখে আমি একটু অবাক হলাম আর কি।  হাতজোড় করে পুরপ্রধান দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দিকে তাকিয়ে। এই ছবি, এই উদ্যোগ, দেখে ভালো লাগলো আমার। নতুন বছর পড়ার আগেই খাতায় কলমে জানিয়ে দেওয়া যে আমরা বৃদ্ধ হলেও বেঁচে আছি আজও এই স্বার্থপর সমাজে সবার সাথেসাথে। আর বেঁচে আছি বলেই তো আমরা সেই কথা আগাম জানিয়ে দিচ্ছি ফরম ভরে।

সত্যিই অসাধারণ এই জীবনের জলছবি আর তার নানা চিত্র ফুটে উঠেছে এইভাবেই। জীবনে যে কাজ বাকি থাকনা কেনো। এই বেঁচে থাকার কথা আগাম জানিয়ে দিয়ে ব্যাংক, পোস্ট অফিস, নবান্নকে জানিয়ে দেওয়া যে আমি বৃদ্ধ হলেও বেঁচে আছি আজও তোমাদের সাথেই মিলে মিশে এক হয়ে। সত্যিই শেষ বয়সে এসে শুধু মাত্র ওই বেঁচে থাকার কথা ঘোষণার মধ্যে যে এত সুখ লুকিয়ে আছে জানতাম না আমি। যে ছবির মাঝে রঙিন জীবনের ধূলি ধূসর রঙের এই নানা ছবি ফুটে আছে। 

লাইফ সার্টিফিকেট - অভিজিৎ বসু।
বারো নভেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও দিলীপ যাদব টিম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...