শান্তিনিকেতনে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে দুপুর বেলায় ছাতা হাতে হেঁটে চলেছি আমি। সবে তখন বোধহয় করোনার প্রকোপ একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। দুর থেকে কেউ ডাকলো এই অভিজিৎ। কিছুটা অবাক হয়ে ছিলাম আমি। এই নিদাঘ দুপুরে অচেনা জায়গায় কে আবার আমায় ডাকলো নাম ধরে আমার। রতনপল্লীর সেই সামনের মাঠের পাশে রাস্তা দিয়ে আমি ঘরে ফিরছি হেঁটে হেঁটে। রতন কুটির এর দিক থেকে আওয়াজটা এলো যেনো মনে হলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম সেই বহুদিনের পরিচিত ঝকঝকে কর্পোরেট সুলভ লুক নিয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে বাংলার বিখ্যাত সাংবাদিক সেই প্রসেনজিৎ বক্সি।
যার সাথে দরকারে আর অদরকারে, প্রয়োজনে আর অপ্রয়োজনে, দাদা চাকরি চাই বলে গাল শুনবো জেনেও যখন তখন ফোন করা যায় হাসিমুখে। আবার কোনো ফেসবুক পোস্ট বুঝতে না পারলে গাল খাবো জেনেও ফোন করা যায় রাত দুপুরে যখন তখন। কেনো জানিনা আমার কোনোদিন এই ব্যক্তিকে ফোন করতে দ্বিধা বা দ্বন্দ্ব হয়নি বা ভয় হয়নি কোনো সময়। সে কলকাতায় মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষার সময় রাস্তায় বসে থেকেও ফোন করেছি আমি, কি গো কি খবর হাসি মুখে উত্তর পেয়েছি এই দাঁড়া আমি বেরোব অফিস রাস্তায় বেরিয়ে ফোন করছি তোকে। কিন্তু সেটা ঢপ হয়নি যথারীতি ফোন এসেছিল বল কি খবর।
শুধু একদিন আমি হঠাৎ করেই ফোন করে বেকুব বনে গেছিলাম। ওপর প্রান্তে মহিলার গলা। বৌদি বললেন ও বাড়ী নেই হাসপতালে ভর্তি তুমি জানোনা কিছু। আমি বললাম না। হ্যাঁ, সেটা শুনে আমি চুপ করে গেলাম। বৌদির মুখে শুনলাম সেই হাসপাতালে ভর্তির কথা। তারপর হাসপাতাল থেকে ফিরে আসা। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া। আবার আগের মত ফোন ধরা। সেই গল্প করা আর সফরনামা লেখা পড়েই দুম করে ফোন করা। দাদা কি লিখলে গো। এটাই তো আসল মজা ছিল আমাদের দুজনের।
সেই রতন কুটির এর সামনে ওকে দেখে যদিও ওর চেহারা, অনেকটা খারাপ লাগলো দেখে। তবু দুপুর বেলায় নানা গল্পে মজে গেলাম আমরা দুজনে কতোদিন পর। কত যে সময় কেটে গেলো সেই দুপুরে রাস্তার ধারে বসে থেকে আর গল্প করে তার হিসাব নেই। আসলে সেই মানুষের কথাই লিখবো বলে ঠিক করলাম আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। যে কথা বলতেই এই কলম ধরা। কবে আলাপ হয় কি সূত্রে সেটা আজ আর মনে নেই আমার। ইন্ডিয়া টিভির আমলে না চ্যানেল টেন এর দাপুটে আমলে কে জানে। সেটাও আজ আর মনে নেই। তবে সিঙ্গুরে যে খবর হতো সেই সময় ছবি চেয়ে ফোন করলে বলতাম ছবি পেয়ে যাবে। চিন্তা নেই কোনো তোমার।
হ্যাঁ, এটাই তো আমাদের সেই বিখ্যাত দাপুটে ডাকাবুকো অকুতোভয় সাংবাদিক প্রসেনজিৎ বক্সি। যার ডাকে কিছু ভয় বলে মনে হয় না। আমার যেমন খুশি আমি তাকে ডাকতে পারি বলতে পারি দেখো এটা তুমি আর এই বয়সেও কেমন দিব্বি মিশে যায় একে অপরের সাথে।আর তেল না মেরে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সে হাসিমুখে। এটাই তো আমার কাছে বড়ো পাওনা। যার জন্য মনে হয় এইসব মানুষ গুলো আশপাশে ছিল বলে আজ বাঁচা কঠিন হলেও বেশ উপভোগের আর আনন্দের জীবন।
এই অসুস্থ হবার সময়ে শুধু কথা বলতে পারিনি আমি। সেটা তো অবশ্যই একটা বড়ো বিষয় ছিল। কত যে রাতে টেক্সট করে বিরক্ত করেছি আমি কাজ চেয়ে তার আর ঠিক নেই। কিন্তু রাগ করে পাল্টা কড়া ভাষায় জবাব দিতে দেখিনি আমি তাকে। হ্যাঁ এটাই আমাদের সবার প্রিয় প্রসেনজিৎ বক্সি। যে একসময়ে দিদির কাছের লোক হলেও আজ সে কিছুটা মোদীর কাছের লোকও। এই বয়সেও কি সাজগোজ করে সুন্দর টানা লাইভ করে যাচ্ছে সে।
এই যে নানা ধরনের মানুষের জীবন এর মাঝে একটু অন্য রকমের জীবন। যে জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা যায় স্বচ্ছন্দে আর নির্ভয়ে কথা বলা যায় মন খুলে আর প্রাণ খুলে। না হলে কে যে আর কার সাথে এইভাবেই হাসি মুখে কথা বলে কে জানে। যে বর্তমানে রঙিন পোশাক পরে লাইভ দেয় সারারাত জেগে আমার এগুলো দেখে বেশ ভালো লাগল আর কি। একজন বিখ্যাত সাংবাদিক কনসাল্টিং এডিটর হলেও কেমন হাসি মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর হেসে জীবন চালাচ্ছে।সেই উদ্যোগটাও নেই আজ কোথাও।
তাই ওই ব্যক্তিকে দেখে বেশ ভালই লাগে আমার এই টানাটানির সংসারে বেশ কষ্ট করে জীবন কাটিয়ে দিতে দেখে। সেই কনসাল্টিং এডিটর আর টোটো চালকের অমলিন বন্ধুতের সম্পর্ক নিয়ে। যে সম্পর্কে লেনা দেনা কম, যে সম্পর্কে চাওয়া আর পাওয়া নিয়ে কোনো অভিমান বা অনুযোগ নেই, যে সম্পর্কে শুধুই নির্মল খিস্তি আর গাল শুনে মন ভালো করা আছে।
এই জটিল কুটিল ব্যাধিগ্রস্ত বাংলা মিডিয়াতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমন দু একজন না থাকলে কি আর ভালো লাগে বলুন। তাই লিখে ফেললাম কিছু কথা। দুর্গাপুরে বাড়ী ওর। তাই সেই চেনা মানুষটার কথা লিখে ফেললাম আমি আজ এই রাত দুপুরে।
সেই এস এম এস এর একটা লাইন মনে পড়ে গেলো আমার, এই রাত দুপুরে যে আমারও খারাপ লাগে তোর এই অবস্থা দেখে। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না আমি। সত্যিই তো এটাই বা আর আজকাল কে আর কার জন্যে বলে। সাদা কবুতর এর জীবনে আমার কালো দাগহীন জীবনে শুধুই এটাই বড় প্রাপ্তি আমার। সিঙ্গুরের দৌলতে হয়তো এটাই বড় প্রাপ্তি আমার।
যে সেই সিঙ্গুরের তাপসী মালিক এর মৃত্যুর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ফোন করা নিয়ে লিখেছিলাম আমি। যেখানে সে লিখেছিল জেলার এক খিস্টিপ্রবন সাংবাদিক এর এই পোস্ট দেখলেই আসল সব কথা বেরিয়ে আসবে এর বেশি কিছুই বললাম না আমি। হ্যাঁ, সত্যিই তো জীবনের সেই গভীর গোপন কথা তো অনেকেই আজ আর স্বীকার করেন না ভয় পান।
তবু তো আমায় ভালোবেসে সেই কথা বলে উল্লেখ করে আমায় সত্যিই বেশ দামী করে দিলো এই সমাজে তুমি। যে সেই গৌহাটির এক বাংলা চ্যানেল করা মালিকের ফোন না ধরে সেই চ্যানেল এর লোক আমায় বলে যে যদি কথা বলেন উনি। আমার কথায় সেই মালিকের সাথে তাঁর কথা হয় পরে।
এটাই তো এই টোটো চালকের এলোমেলো এলেবেলে জীবনে অনেক বড়ো প্রাপ্তি। যে প্রাপ্তি আমার কাছে অনেক বড়ো। তুমি। সুস্থ থাকো ভালো থেকো। আর মাঝে মাঝেই ফোন করলে বলো নানা রকম কথা আর মন খুলে খিস্তি দিও আমায়। তাহলেই আমাদের দুজনের এই নিটোল সম্পর্কও বেঁচে থাকবে।
প্রসেনজিৎ বক্সি - অভিজিৎ বসু।
একুশে নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
সৌজন্য সাক্ষাত ফেইসবুকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন