সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের সবার দিলীপ দা


কোনো রাজনৈতিক নেতার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কলম ধরা তাকে তেল দেওয়া আমার ধাতে বা অভ্যাস নেই কোনো ভাবেই। আর কোনোদিনই সেটা আমি ঠিক করে করতেও পারিনি। আর আমি কোনো দিন তেমন কাজ করতেও পারিনি যে রাজনীতির লোকের জন্মদিনে হাসি মুখে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলবো দাদা হ্যাপি বার্থডে। এটা আমার ঠিক আসে না আর কি। 



শুক্রবার সকাল বেলায় এই চা খাবার ছবিটা দেখে মনে হলো। হ্যাঁ,এই ব্যক্তির সাথে আমিও তো মাঝে মাঝে চা খেতে উত্তরপাড়ায় যাই। সেটা আর কারুর কাছে না গেলেও ওর কাছে চা খেতে যাই বিনে পয়সায়। রাজনীতিক নেতার অফিসে সাংবাদিক চা পান করতে যাবে। খবর নিতে যাবে। খাবার এর প্যাকেট নিতে যাবে। জনসংযোগ গড়তে যাবে, এটাই দস্তুর এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। এটা নিয়ে কোনো হৈ চৈ হুল্লোড় নেই। তার বাইরে হয়তো আরও কিছু নিতে যাবে। সে সব কথা না হয় বাদ দিলাম টোটো চালকের কি আর এসব বলা সাজে। 

কিন্তু যার জন্মদিন নিয়ে লিখতে বসলাম সেটা কাল পয়লা নভেম্বর চলে গেছে খাতায় কলমে। নিজের শরীর খারাপ থাকায় সেই লেখা আর হয়নি আমার। বোলপুর ফিরে আজ ভোরবেলা সেই কথা মনে পড়ে গেলো। সেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভীড়ের মাঝে চা খাবার কথা, সেই চা দেওয়া দোকানের ছেলেটির কঠিন দৃষ্টি আর হুমকির কথা, সেই নানা মানুষের সুখ দুঃখের সব গভীর গোপন কথা, পুরসভার পুরপ্রধান হয়েও হাসি মুখে সবার কথা শুনে সাহায্য করার চেষ্টা করা, ধনী, গরীব, কাগজওলা, চা দেওয়া, গরীব সাংবাদিকদের যে কোনো ভাবেই বাছবিচার না করে সাহায্য করা। 
অর্থের অভাবে পড়তে না পারা, টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করে বাড়ী পাঠিয়ে দেওয়া, টাকার অভাবে কলকাতায় চিকিৎসা করতে হবে কিন্তু গাড়ী ভাড়া নেই, তাই বিনা পয়সায় তার বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে সেই রোগীকে সাহায্য করা। গাড়ি ভাড়ার টাকা না নিয়ে এমন হাজারো উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রাস্তার চার ধারে ওই উত্তরপাড়ার কাঁঠাল বাগানের চা দোকানের পাশে। হয়তো বেশি কথা বলে ফেললাম আমি। আসলে এটা তো স্বাভাবিক ছন্দেই করে ফেলা। সেই জেলার এক সময়ের দাপুটে জেলা সভাপতি, সেই ছাত্র ও ট্রেড ইউনিয়ন এর পদ পাওয়া একসাথে ত্রিমুকুট এর অধিকারী এই নেতার কাছে এটা তো স্বাভাবিক ঘটনা। কেউ বলবেন এটা নিয়ে ভাই এত হৈ চৈ এর কি আছে। 

আসলে কিছুই নয় কিছুটা চেনা চেনা সব আশ পাশের স্বার্থসঙ্কুল রাজনৈতিক নেতাদের ভীড়ে একটু যেনো অন্য রকম,অন্য ঘরানার, অন্য প্রকৃতির, অন্য রূপের নেতা। আদলে সে যত বড় নেতাই হোক সে তো মানুষের নেতা। যে সোজা কে সোজা এর বাঁকা কে বাঁকা বলতে ভয় পেয়ে গুটিয়ে যায়না কোনোদিন কোনো পরিস্থিতিতে। যে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এর কথা ভেবে গোপনে ঘরের ভেতর কারুর হাত পা ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে না। যে জানে নিজের জীবনে বাঁচতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগে না। যদি না খুব অসুস্থ হয়ে যায় সে ও তার পরিবার। যে জানে রাজনীতির এই বৃত্তে একদিন জড়িয়ে পড়েছিল বলেই হয়তো তাঁর কাছে এত লোক হাত পেতে কিছু চাইতে আসে। না হলে সেই সাইকেল করে বাড়ী বাড়ী  দুধ  নিয়ে যাওয়া ছেলেটির কাছে কেনো আর এই মানুষজন এসে দাঁড়াবে। যা এই জীবনে পাওয়া গেছে সেটাই বা কম কি। যা পাওয়া হয়নি তার জন্য কোনো আফশোষ নেই আজ আর। 

আপনারা বলবেন ভাই এত তেল দিয়ে লেখা মানেই মাসে মাসে লুকিয়ে টাকার প্যাকেট পাওয়া যায় নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, একটা কথা আজ বলতে পারি আমি যে যে কোনো সময় যে কোনো দিন ফোন করে বলে দাদা তোমার মেয়ের পড়া বন্ধ করো না আমি আছি কিন্তু। আর যে সাংবাদিক এর মা মারা যাওয়ার পর দাহ করার একটাও টাকা নেই তার কাছে। সাদা কাপড় কিনে মাকে ঢেকে দেবো সেটাও নেই আমার। সেই দিন সকাল বেলায় যে এসে আমার মার দাহ করার টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে বলে দাদা তুমি ভেবো না আমি আছি তোমার পাশে। 

আজ সেই মানুষটার কথা একটু লিখতে ইচ্ছা হলো আমার শুধু ওই চা খাওয়া ছবিটা দেখে। জানি কেউ এতে অনেক কিছুই খুঁজে পাবেন। কেউ বলবেন এটাই হলো আসল কথা আসল উদ্দেশ্য এই লেখার। বিশ্বাস করুন সেই মাকে হারানোর সকালটা আমি সারা জীবন মনে রাখবো। যে আমার কাছে নেতা হয়ে নয়, পুরপ্রধান হয়ে নয়, বড়ো মাতব্বর দাপুটে জেলার শাসক দলের কেউকেটা হয়ে নয়। সে আমার কাছে এসেছিল দেবদূতের মত। না হলে যে আমার মাকে আমি দাহ করতে পারতাম না সেদিন সকাল বেলায়। আর লেখার অবস্থা নেই আমার। আমার দু চোখ সব ঝাপসা হয়ে গেছে। আঁকাবাঁকা অক্ষর গুলো দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়ছে আমার মোবাইলের স্ক্রীন এর সামনে। আর আমার মায়ের সেই শুকনো মুখটা ভেসে উঠছে আমার চোখের সামনে বার বার। এই বেকার সাংবাদিক আর টোটো চালকের একটাই অনুরোধ, দিলীপদা তুমি বদলে যেওনা। 

আমাদের সবার দিলীপ দা - অভিজিৎ বসু।
দোসরা নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...