শুক্রবার সকাল বেলায় এই চা খাবার ছবিটা দেখে মনে হলো। হ্যাঁ,এই ব্যক্তির সাথে আমিও তো মাঝে মাঝে চা খেতে উত্তরপাড়ায় যাই। সেটা আর কারুর কাছে না গেলেও ওর কাছে চা খেতে যাই বিনে পয়সায়। রাজনীতিক নেতার অফিসে সাংবাদিক চা পান করতে যাবে। খবর নিতে যাবে। খাবার এর প্যাকেট নিতে যাবে। জনসংযোগ গড়তে যাবে, এটাই দস্তুর এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। এটা নিয়ে কোনো হৈ চৈ হুল্লোড় নেই। তার বাইরে হয়তো আরও কিছু নিতে যাবে। সে সব কথা না হয় বাদ দিলাম টোটো চালকের কি আর এসব বলা সাজে।
কিন্তু যার জন্মদিন নিয়ে লিখতে বসলাম সেটা কাল পয়লা নভেম্বর চলে গেছে খাতায় কলমে। নিজের শরীর খারাপ থাকায় সেই লেখা আর হয়নি আমার। বোলপুর ফিরে আজ ভোরবেলা সেই কথা মনে পড়ে গেলো। সেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভীড়ের মাঝে চা খাবার কথা, সেই চা দেওয়া দোকানের ছেলেটির কঠিন দৃষ্টি আর হুমকির কথা, সেই নানা মানুষের সুখ দুঃখের সব গভীর গোপন কথা, পুরসভার পুরপ্রধান হয়েও হাসি মুখে সবার কথা শুনে সাহায্য করার চেষ্টা করা, ধনী, গরীব, কাগজওলা, চা দেওয়া, গরীব সাংবাদিকদের যে কোনো ভাবেই বাছবিচার না করে সাহায্য করা।
অর্থের অভাবে পড়তে না পারা, টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করে বাড়ী পাঠিয়ে দেওয়া, টাকার অভাবে কলকাতায় চিকিৎসা করতে হবে কিন্তু গাড়ী ভাড়া নেই, তাই বিনা পয়সায় তার বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে সেই রোগীকে সাহায্য করা। গাড়ি ভাড়ার টাকা না নিয়ে এমন হাজারো উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রাস্তার চার ধারে ওই উত্তরপাড়ার কাঁঠাল বাগানের চা দোকানের পাশে। হয়তো বেশি কথা বলে ফেললাম আমি। আসলে এটা তো স্বাভাবিক ছন্দেই করে ফেলা। সেই জেলার এক সময়ের দাপুটে জেলা সভাপতি, সেই ছাত্র ও ট্রেড ইউনিয়ন এর পদ পাওয়া একসাথে ত্রিমুকুট এর অধিকারী এই নেতার কাছে এটা তো স্বাভাবিক ঘটনা। কেউ বলবেন এটা নিয়ে ভাই এত হৈ চৈ এর কি আছে।
আসলে কিছুই নয় কিছুটা চেনা চেনা সব আশ পাশের স্বার্থসঙ্কুল রাজনৈতিক নেতাদের ভীড়ে একটু যেনো অন্য রকম,অন্য ঘরানার, অন্য প্রকৃতির, অন্য রূপের নেতা। আদলে সে যত বড় নেতাই হোক সে তো মানুষের নেতা। যে সোজা কে সোজা এর বাঁকা কে বাঁকা বলতে ভয় পেয়ে গুটিয়ে যায়না কোনোদিন কোনো পরিস্থিতিতে। যে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এর কথা ভেবে গোপনে ঘরের ভেতর কারুর হাত পা ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে না। যে জানে নিজের জীবনে বাঁচতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগে না। যদি না খুব অসুস্থ হয়ে যায় সে ও তার পরিবার। যে জানে রাজনীতির এই বৃত্তে একদিন জড়িয়ে পড়েছিল বলেই হয়তো তাঁর কাছে এত লোক হাত পেতে কিছু চাইতে আসে। না হলে সেই সাইকেল করে বাড়ী বাড়ী দুধ নিয়ে যাওয়া ছেলেটির কাছে কেনো আর এই মানুষজন এসে দাঁড়াবে। যা এই জীবনে পাওয়া গেছে সেটাই বা কম কি। যা পাওয়া হয়নি তার জন্য কোনো আফশোষ নেই আজ আর।
আপনারা বলবেন ভাই এত তেল দিয়ে লেখা মানেই মাসে মাসে লুকিয়ে টাকার প্যাকেট পাওয়া যায় নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, একটা কথা আজ বলতে পারি আমি যে যে কোনো সময় যে কোনো দিন ফোন করে বলে দাদা তোমার মেয়ের পড়া বন্ধ করো না আমি আছি কিন্তু। আর যে সাংবাদিক এর মা মারা যাওয়ার পর দাহ করার একটাও টাকা নেই তার কাছে। সাদা কাপড় কিনে মাকে ঢেকে দেবো সেটাও নেই আমার। সেই দিন সকাল বেলায় যে এসে আমার মার দাহ করার টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে বলে দাদা তুমি ভেবো না আমি আছি তোমার পাশে।
আজ সেই মানুষটার কথা একটু লিখতে ইচ্ছা হলো আমার শুধু ওই চা খাওয়া ছবিটা দেখে। জানি কেউ এতে অনেক কিছুই খুঁজে পাবেন। কেউ বলবেন এটাই হলো আসল কথা আসল উদ্দেশ্য এই লেখার। বিশ্বাস করুন সেই মাকে হারানোর সকালটা আমি সারা জীবন মনে রাখবো। যে আমার কাছে নেতা হয়ে নয়, পুরপ্রধান হয়ে নয়, বড়ো মাতব্বর দাপুটে জেলার শাসক দলের কেউকেটা হয়ে নয়। সে আমার কাছে এসেছিল দেবদূতের মত। না হলে যে আমার মাকে আমি দাহ করতে পারতাম না সেদিন সকাল বেলায়। আর লেখার অবস্থা নেই আমার। আমার দু চোখ সব ঝাপসা হয়ে গেছে। আঁকাবাঁকা অক্ষর গুলো দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়ছে আমার মোবাইলের স্ক্রীন এর সামনে। আর আমার মায়ের সেই শুকনো মুখটা ভেসে উঠছে আমার চোখের সামনে বার বার। এই বেকার সাংবাদিক আর টোটো চালকের একটাই অনুরোধ, দিলীপদা তুমি বদলে যেওনা।
আমাদের সবার দিলীপ দা - অভিজিৎ বসু।
দোসরা নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন