সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হায়দ্রাবাদ এর বড়া বোলপুরে

রবিবার সন্ধ্যায় বোলপুরের রাস্তায় শ্রী নিকেতন রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখ আটকে গেল আমার একটা দোকানে। রাস্তার পাশের একটি দোকানে কম বেশি ভীড় রয়েছে। হালকা ঠাণ্ডায়  রবিবারের সন্ধ্যায় লোকজন বেশ রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েছে এদিক ওদিক। আমার চোখে পড়লো এক ফার্স্ট ফুডের দোকানে রাখা সেই বিখ্যাত হায়দ্রাবাদের বড়া। সত্যিই বলতে কি আমি লোভ সামলাতে পারলাম না। ঢুকে পড়লাম দোকানে। ছিমছাম দোকান। হালকা হিন্দি গান বাজছে। অর্ডার দিলাম দু প্লেট বড়ার। পকেটে টাকা আছে কি না, সেটা না দেখেই বসে পড়লাম টেবিলে।

অপেক্ষায় রইলাম বড়ার,কখন আসবে সে। কবিগুরুর দেশে হায়দরাবাদি সেই বড়া দর্শন করে, আমি সত্যিই তখন রীতিমত উত্তেজিত। অবশেষে দুটি প্লেট সাজিয়ে বড়া এলো আমার কাছে। এক মনে তাকে নিরীক্ষণ করলাম আমি অনেক সময় ধরে। কত কথা মনে পড়ছে আমার। এক লহমায় পিছিয়ে গেলাম প্রায় দশ বছর আগের জীবনে। এক সময় এই বড়া খেয়েই দিন কেটেছে হায়দ্রাবাদে।গরম বড়া আর চা খেয়ে সকালের টিফিন পর্ব সারতাম আমি রোজ সকাল বেলায় তখন। তারপর ঘরে ফিরে কোনো রকমে একটু রান্না করে খেয়ে অফিসের বাস ধরতাম আমি। প্রতিদিন এই এক রুটিনের কোনো পরিবর্তন হয় নি আমার, হায়দ্রাবাদের কিছুদিনের কর্ম জীবনে। যদিও সেই জীবনের নাম দিয়েছিলাম আমি নিজেই, পানিশমেন্ট লাইফ। কিন্তু কেনো পানিশমেন্ট হলো সেটা আজও বুঝতে পারলাম না আমি। কী জন্য আমার পানিশমেন্ট সেটাই অধরা, অজানা থেকে গেলো আজও আমার কাছে।

জেলার সাংবাদিকতার গন্ডি পেরিয়ে আমার ইচ্ছা হয়েছিলো, একটু কলকাতা শহরে গিয়ে কাজ করার। আর সেটাই যে আমার কাছে পানিশমেন্ট ডেকে আনবে বুঝিনি তখন। জেলার গাঁয়ের গন্ধ গায়ে মেখে গুটি গুটি পায়ে হাজির হয়ে ছিলাম শহর কলকাতায়। জেলা থেকে বড়ো চেহারার শহরে এসে কিছুটা থই হারিয়ে ফেলেছিলাম প্রথমে আমি। ঠিক যেমন উয়াড়ি দল থেকে মোহনবাগান মাঠে খেলতে নামলে যেমন হয় আর কি। আমারও সেই অবস্থাই হয়েছিল। কিন্তু আমি সাহস হারাইনি কোনো দিন। কলকাতার মাঠে খেলতে গিয়ে প্রথমে একটু জড়তা ছিল, সেটাকে কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলাম। অচেনা মাঠ হলেও নিজের মধ্যে সাহস এনে নতুন দৌড় শুরু করলাম। জেলার লোক এর গায় তখন জেলার গন্ধ বিদ্যমান। কলকাতার বাবুদের হাল হকিকত বোল চাল, না বুঝলেও খবর বুঝতে অসুবিধা হতো না আমার কোনো দিন। মুখ চোরা হলেও বেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পাচ্ছিলাম আমি নতুন কলকাতার মাঠে। ভেবে ছিলাম জেলা থেকে কলকাতায় এসে ভালই হলো।

কিন্তু না ছন্দপতন হলো একদিন। দুপুরে মহাকরনের প্রেস কর্নার এর কাছে চেয়ারে বসে আছি আমি একা। আচমকা অফিসের একটা ফোন এলো। ওপর প্রান্ত থেকে শুধু আমার কানে এলো সাত দিনের মধ্য আমায় হায়দ্রাবাদ চলে যেতে হবে,বিকেলে অফিস ফিরে যেনো ট্রান্সফার অর্ডারটা নিয়ে যাই আমি। চোখের সামনে অচেনা মাঠটাকে বড়ো কঠিন আর কঠোর মনে হলো আমার। এবড়ো খেবড়ো মাঠ এর মাঝখানে একা বসে রইলাম আমি স্থবির হয়ে কিছু সময় একা। শুধু বাড়িতে ফোন করে জানালাম আমার পানিশমেন্ট ট্রান্সফার হলো। কী জন্য, কার জন্য আমি আজও জানি না। জানতে চাই না সে কথা। শুধু এটুকু জানি শিরদাঁড়া না ঝুঁকিয়ে কাজ করলে, কলকাতার মাঠে বাবুদের সাথে খেলাতে পেরে ওঠা খুব কঠিন। সত্যিই বড়ো যন্ত্রণা নিয়ে, আমি কলকাতা ছাড়লাম। 

চোখের সামনে মহাকরণের বারান্দায় মন্ত্রীর আনা গোনা সব কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে আমার। ক্ষমতার মসনদের কাছে পৌঁছতে চেয়ে খবর এর সন্ধানে কলকাতা এসেছিলাম। দীর্ঘ কুড়ি বছর জেলায় কাজ করে কলকাতার সাংবাদিক হবো বলে এসেছিলাম। কিন্তু পারলাম না আমি কলকাতায় কাজ করতে। বাড়ী ফিরলাম হাতে ট্রান্সফারের চিঠি নিয়ে। প্রাণপাত করা চাকরিতে, জীবনকে বাজি রেখে যে চাকরি করেছি আমি। সেই চাকরিতে এক লহমায় আমার রিপোর্টার এর জীবনের ইতি টেনে দেওয়া হলো শুধু একটা কলমের খোঁচায়, কিছু লোকের ক্ষমতার জোরে। চুপ করে নিঃশব্দে ঘর ছাড়লাম আমি।

কলকাতা ছাড়ার দিনটা আমার আজও মনে পড়ে, সকাল সাতটা পঁচিশের ট্রেন ছাড়লো হাওড়া স্টেশন থেকে। আমার ছোটো মেয়ের অবয়ব ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে দ্রুত আমার চোখের সামনে থেকে। ট্রেনের দরজা ধরে আমি হাত নাড়ছি,আমার বুটাও হাত নাড়ছে।আস্তে আস্তে দুজন দুজনকে ছেড়ে চলে গেলাম। দূরে অনেক দূরে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে। চোখের জলে ভিজে গেল আমার গোটা যাত্রাপথ। সেই পিছল যাত্রাপথকে সঙ্গী করে আমরা বেঁচে রইলাম। আপনজনকে ছেড়ে চলে যাবার সময় এত যে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে, সেটা বোধ হয় জীবনের এই ট্রান্সফার না হলে বুঝতে পারতাম না আমি। জীবনের পরতে পরতে এত ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে আমাদের সকলকে ঘিরে। একটু ঘসা মাজা করলেই সেই ভালোবাসার প্রদীপ দপ করে কেমন জ্বলে ওঠে। আর আমরা সবাই সেই ভালোবাসার উত্তাপে ,গলে জল হয়ে যাই সবাই এক নিমেষে।

 তাহলে কে বলে, মানুষ স্বার্থপর, কে বলে মানুষ অন্যর কথা ভাবে না। এসব একদম ভুল কথা।তাহলে কি আর এত কান্না ভেজা শিশিরের বিন্দু বিন্দু জল ঝরতে পারতো আমার চোখে, আমার মেয়ের চোখে। এই জল আমাদের সকলকে ঘিরে রাখে, জড়িয়ে রাখে সারাটা জীবন। শেখায় কি করে দূরে চলে গিয়েও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে হয়, ঘরে ফেরার দিন গুনতে হয় একটা একটা করে। তারপর সেই দিন এলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার আনন্দ ভাগাভাগি করে একান্তভাবেই উপভোগ করতে হয়। আর এটাই জীবনের আসল স্বর্গ প্রাপ্তি।

সত্যিই আমি আজও জানি না কেনো আমার বদলি হলো। পূজোর ঠিক এক মাস আগে আমি চলে এলাম হায়দ্রাবাদ। একদম অজানা অচেনা শহরে একা। বাংলায় কাজ করা রিপোর্টারকে আরো শাস্তি দিতে তাকে বসানো হল ন্যাশনাল ডেস্ক- এ। বাংলা চ্যানেলে কাজের কোনো সুযোগ দেওয়া হলো না আমায়। যাতে আমার লড়াই আরো কঠিন হয়।কোনো দিন আর বাংলায় ফিরতে না পারি আমি। লড়াই করে বাঁচতে পারব এই আশা নিয়ে আমি লড়তে নামলাম আরো অচেনা এক মাঠে। যে মাঠ আরও অচেনা। এসব ভাবতে ভাবতে প্লেটের বড়া গুলো আমায় চুপ করে দেখছিল এক মনে। কী লোকরে বাবা দু প্লেট বড়া নিয়ে বসেই আছে সেই কখন থেকে। আর একমনে জরিপ করছে আমাদের।

সত্যিই এমন আজব পাবলিক দেখিনি আমরা কোনো দিন। এক প্লেট অন্য প্লেটকে ইশারায় বলে ফিস ফিস করে। আমি কিছুটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে প্লেট দুটোকে কাছে নিয়ে যাই। এক প্লেটের সাথে অন্য প্লেটের গায় গায় ঠেকিয়ে রাখি।আর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে।মনে পড়ে যায় ভাগ্যলতার সেই চা -এর দোকানটার কথা।সকালে উঠে যেখানে বসে এই ভাবে টিফিন সারতাম আর বাড়িতে ফোন করে বলতাম আমি ভালই আছি তোমরা চিন্তা করো না। সকালে প্রতিদিন যে মেয়েকে স্কুলের গাড়িতে তোলা আমার কাজ ছিল ,সেই ছোটো মেয়ে বাবাকে ছেড়ে প্রতিদিন মার হাত ধরে টাটা করে গাড়িতে বসে স্কুল যেত চুপ করে। সে জানতো মাঝ রাতে অফিস থেকে ফিরে তার বাবা তাকে বুটা বলে সকালে ডাকতে পারবে না আর। সে জানতো তার বাবাকে পানিশমেন্ট দেওয়া হয়েছে। আর কোনো দিন তার বাবা ফিরতে পারবে না কলকাতা। আমি জানতাম না আমার ছোট্ট বুটা,আমার বালিশের নিচে পেন্সিল দিয়ে বু লিখে সেটা আঁকড়ে ধরে প্রতি রাতে নাকি ঘুমোতে যেত। মুখ লুকিয়ে সে প্রতি রাতে তার বু কে ফিরে আসবে ভেবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ত।অনেক পরে এসব আমি জানতে পারি চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে এসে। 

আজও মনে পড়ে আমার, মহালয়ার ভোরে বাবা মেয়ে দুজনে একসাথে মোবাইলে পূজোর আগমনী গান শুনেছিলাম সেই বছর। দুজনেই একসাথে ভোর রাতে বালিশ ভিজিয়েছি কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে দিতে চাইনি আমরা বাবা আর মেয়ে। যাতে কেউ না কষ্ট পাই। আজও মনে পড়ে দূর্গাপূজার সময় সেই বছর ঘরে ফিরতে পারিনি আমি। দেওয়ালিতে বাড়ী এসেছিলাম আমি। আসার পর আমার বুটা সারা দুপুর আমার কাছে মুখ গুঁজে শুয়ে ছিল, ছোট্ট বাচ্চার মত একমিনিট কাছ থেকে নড়েনি সে। আমি ভুলবো কি করে এই জীবনের এসব অভিজ্ঞতার কালো কথা গুলো। সাদা জীবনে এই কালো কথা বলতে গেলে শেষ হবে না। 

একে একে ভেসে আসছে নানা স্মৃতি। ছুটি কাটিয়ে আবার আমি ফিরে গেলাম কাজ এর জায়গায়, মাঝে চেষ্টা করলাম যদি আর ফিরতে না হয় হায়দ্রাবাদ। কিন্তু না হাজার চেষ্টা করেও লাভ হলো না কোনও। আবার কলকাতা ছেড়ে, ঘর ছেড়ে, সাংবাদিক জীবন ছেড়ে চলে গেলাম আমার কঠিন পানিশমেন্ট জীবনে। ফিরে যাবার সময় বুটার দরজার আড়াল থেকে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা। বারান্দা থেকে হাত নাড়িয়ে বলা, সাবধানে যাও তুমি। আমি আজও ভুলতে পারি না সেই দৃশ্য, সেই সব কালো দগ দগে স্মৃতিকে কি ভোলা যায়। কেনো যে আমার জীবন থেকে খবর কে কেড়ে নেওয়া হলো আজও জানি না আমি। শুধু এটুকু জানি, বুঝি আমার শিরদাঁড়া সোজা রাখার ফল আমি পাচ্ছি সারা জীবন ধরে।

 চুপ করে এসব কথা শুনছিল ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া প্লেটের বড়াগুলো একমনে। এত সময় যারা আমায় নিয়ে হাসাহাসি করছিল তারাও যেনো কিছুটা চুপ করে গেছে সব শুনে। ভাবছে সত্যিই পাগল আছে লোকটা। ওদের বোধহয় শেষটা শোনার ইচ্ছা হচ্ছিল তাই আমিও অস্ফুটে বলে ফেললাম ওদের দুজনের কাছে বাকিটুকু উজাড় করে। এক সময় খবর পেলাম আমার বুটা খুব অসুস্থ। আর কোনো উপায় না দেখে আমি নিজেই স্বেচ্ছায় আমার পানিশমেন্ট - জীবনের ষোল বছরের চাকরিকে বিদায় জানিয়ে ফিরে এলাম হায়দ্রাবাদ ছেড়ে ,আমার ঘরে ,আমার বুটার কাছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ালাম আমি সেদিন থেকেই।


 কিন্তু ফিরে পেলাম আমি আমার প্রাণের ভালো বাসাকে। আর প্রতি রাতে আমায়, আমার মেয়েকে আজ চোখের জলে ভিজে ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে হয় না। হাজার কষ্টের, যন্ত্রণার, আঁধার রাতের অন্ধকারে আচমকা জানলার পাশে কেউ বসে থাকে না। বলে না আমাদের সময় হয়ে গেছে এই বার দূরে চলে যেতে হবে তোমাদের একে অপরকে ছেড়ে। আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত। আমরা একে অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করি। অভিমান করি একে অপরের সাথে।আবার এক থালায় ভাত মেখে খাই। সাইকেল করে দুর আকাশের নিচে রাস্তায় ঘুরে বেড়াই আমরা। বুনো ফুল তুলে বেড়াই। ধুপ করে গাছ থেকে তাল পড়লে দৌড়ে গিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাল তুলে বেড়াই দুজনে। এই জীবনের আস্বাদ কখনো কি ভুলতে পারি। 

আমার পানিশমেন্ট যারা দিয়েছিলেন আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে এই ঘটনা না হলে বোধহয় জীবনের পরতে পরতে এত ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে সেটা বুঝতে পারতাম না আমি।  টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ি আমি। দু প্লেট বড়ার দাম দিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই একা একা আপন মনে। পাগল হলেও নিজের কলজের জোরে, শিরদাঁড়ার জোরে যেনো আমার বাকি জীবনটা এই ভাবে কেটে যায়। শুধু ফাঁকা নিঃস্ব জীবনের পরতে পরতে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে এই ভাবে। সে যেনো আমায় ছেড়ে না চলে যায় কোনোদিন। 

সোনাঝুরির রাস্তায় দেখি সন্ধ্যার অন্ধকারে একা বসে আছেন বিশাল আকৃতির বুদ্ধ মূর্তি। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় তিনি আলোকিত। স্মিত হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন তিনি। সারা বিশ্বকে যিনি নিজেই ভালবাসার বন্ধনে বেঁধে রেখেছেন। সেই ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি আমিও।একা একা হিমেল বাতাস গায়ে মেখে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাই আমি একা একদম একা। জানি দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে আমায়, না হলে যে এক্ষুনি আমার বুটার ফোন আসবে কোথায় তুমি।দ্রুত ঘরে ফেরার রাস্তা ধরি আমি। ফিরে যাই আমার ভালবাসার কাছে।

বোলপুরের রাস্তায় হায়দরাবাদ এর বড়া - অভিজিৎ বসু।
সাতাশ নভেম্বর, দু হাজার তেইশ।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...