রথীন্দ্র মেলা শিল্প সদন। দু হাজার চব্বিশ। এই শ্রীনিকেতনে শুরু হলো দুদিনের রথীন্দ্র মেলা। আজ, বুধবার থেকে শ্রীনিকেতনের শিল্পসদনে শুরু হলো দু দিনের এই রথীন্দ্র মেলা। দু’দিন ধরে চলবে এই মেলা। ২৭নভেম্বর কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মতিথি। সেই উপলক্ষেই রথীন্দ্র শিল্পমেলার আয়োজন করা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি শ্রীনিকেতনকেও এগিয়ে আনার প্রচেষ্টায় স্থাপনা করেছিলেন এই শিল্পভবনের। পরবর্তীতে তা শিল্পসদন হিসেবেই পরিচিত হয়। দু’দিনের এই রথীন্দ্র মেলা ঘিরে শিল্পসদনের পড়ুয়াদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। এবছরের মেলা উদ্বোধনের কয়েকঘণ্টা আগে থেকেই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলেছে জোরকদমে মেলা প্রাঙ্গণে।
১৮৮৮সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে নির্মিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে শিক্ষা প্রদানের জন্য কবিগুরু স্থাপনা করেন এই শিল্পভবনের। পরে তা শিল্পসদন রূপে পরিচিত হয়। শ্রীনিকেতনের উন্নতিকল্পের জন্য কবিগুরু রথীন্দ্রনাথকে কৃষি বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করার জন্য বিদেশেও পাঠান। রবীন্দ্রনাথের পরবর্তীতে রথীন্দ্রনাথের হাত ধরেই শিল্পসদন তার পূর্ণতা লাভ করে।
প্রত্যেক বছর ২৭নভেম্বর রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালন করে আসছেন শিল্পসদনের পড়ুয়ারা। তাঁর জন্মশতবর্ষ অর্থাৎ ১৯৮৮সাল থেকে এই মেলার আয়োজন করা হয়। আগে এই মেলা একদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও পরে ২০১২সাল থেকে এই মেলা দু’দিন ধরে আয়োজিত হয় শিল্পসদন চত্বরে। রথীন্দ্র মেলায় শিল্পসদনের পড়ুয়াদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের শিল্পসামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য ও হস্তশিল্পের বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শিত করা হয়। তার সঙ্গেই সেই সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়।
সদন সূত্রে জানা গিয়েছে’ দু’দিন ধরে মেলায় বিক্রি থেকে যা আয় হয় তা শিল্পসদনের রথীন্দ্র অর্থ তহবিলে জমা পড়ে। শিল্পসদনের যে সমস্ত দুঃস্থ পড়ুয়া রয়েছেন তাঁদের উন্নতিকল্পে এই তহবিলের অর্থ খরচ করা হয়। এবছরও মেলা উপলক্ষে সেজে উঠেছে শিল্পসদন। গত কয়েকদিন ধরে পড়ুয়ারা নিজেদের চিন্তাধারাকে মাথায় রেখে মেলা পরিসর সাজিয়ে তুলছেন ধীরে ধীরে। এবছর টেক্সটাইল, লেদার, সেরামিক, কাগজের তৈরি সামগ্রী, টেরাকোটা, কাঠ ও বেত দিয়ে বানানো বিভিন্ন জিনিসপত্রের সম্ভার মেলায় দেখা গেছে। এছাড়াও পড়ুয়াদের হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টলও আছে এই মেলায়। ঠাণ্ডায় গলা ভেজানোর জন্য চা আর জিভে জল আনা পাটিসাপটা স্টলে বেশ ভীড় লক্ষ্য করা গেলো।
ছাত্রছাত্রীদের কাছে থেকে জানা গিয়েছে, দু’দিন ধরে চলতে থাকা মেলার সঙ্গেই নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়েছে। শিল্পসদনের পড়ুয়ারাই এই দু’দিন নানান ধরনের অনুষ্ঠান প্রদর্শিত করবেন। শিল্প সদনের অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও পড়ুয়াদের সকলের সমবেত প্রচেষ্টাতেই আয়োজিত হচ্ছে এই রথীন্দ্র মেলা।
শিল্পসনের ছাত্র ছাত্রীরা পড়ুয়ারা সকলে সারা বছর অপেক্ষা করেন এই দুটি দিনের জন্য। বেলা তিনটে থেকে সাতটা পর্যন্ত এই মেলা চলে। মেলার আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ বেশ সুন্দর মন কাড়ে সকলের। মুঠোফোনে ছবি তুলে ধরে রাখার সুন্দর চেষ্টা তাই সবার। বাদ পড়লাম না আমরাও। মেলার গেটে ভূতের দৃশ্য নজর কাড়ে অনেকের। দেড়শো টাকা খরচ করে এই মেলা দেখতে আমরা প্রতিবার এর মত এই বছরেও হাজির হলাম শিল্পসদনে।
রথীন্দ্র মেলা ২০২৪ - অভিজিৎ বসু।
সাতাশে নভেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি নিজস্ব মোবাইল ফোনে তোলা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন