সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের নান্টু কুমার

কলকাতার দামী দামী আর নামী লোকদের কথা খালি লিখে যাচ্ছি আমি। জেলার লোকদের কথা নেই একদম। শুধুই কলকাতার বাবু আর ঝাঁ চকচকে বিবিদের জীবনের উজ্জ্বল নানা কথা। কালো কথা নেই শুধুই ভালো কথা। একজন জেলার খেটে খাওয়া শ্রমিক হয়েও কি করে যে ভুলে গেলাম জেলার মানুষের কথা। সেটা নিয়ে একপাতা হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ লিখে বাংলার এই রাঢ় বাংলার একজন সাংবাদিক আমায় লিখে জানালো। খুব ভালো রিপোর্টার সে। তার থেকেও ভালো। একজন আদ্যন্ত সৎ সাংবাদিক সে। যা আজকাল পাওয়া দুষ্কর বাজারে অসময়ের ইলিশ এর মতো। 

যদিও আজ তার কথা নয়। তবু সেই চব্বিশ ঘণ্টা ছেড়ে চলে যাওয়া রাঢ়বঙ্গের এই সাংবাদিকের লেখা কথা গুলো পড়ে বেশ ভালো লাগলো আমার। মনে হলো সত্যিই তো কলকাতার বাবুদের পাশে জেলাও যে কম লড়াই করে টিকে নেই এই মিডিয়াতে। রোদে জলে ঝড়ে পড়ে কেমন বুক চিতিয়ে লড়াই করে তারা সব সময় খবর পৌঁছে দেয় হাসি মুখে অফিসে। সে রাত জেগে হোক, পাহারা দিয়ে হোক। যে করেই হোক। যেমন আমি এককালে করতাম সেটা। আজ সে সব অতীত যদিও। 

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় এক রাতের অপারেশনের গল্প। যে গল্প এক জেলার নয় শহরের খুব কাছের এক রিপোর্টারের গল্প। যে রিপোর্টার আমার বেশ পছন্দের রিপোর্টার। চ্যানেলের স্থায়ী রিপোর্টার নয় সে ঠিকে রিপোর্টার। স্টোরি দিলে তার বিনিময়ে টাকা রোজগার করে তার সংসার চলে। স্ট্রিংগার কিন্তু বন দফতরের স্ট্রিং অপারেশনে সিদ্ধহস্ত সে। হ্যাঁ, আজ এক রাতের অন্ধকারে অপারেশনের গল্প। যে অপারেশন এর সাক্ষী ছিলাম আমিও সেই রাতে। 

রোগা পটকা, আমার মতই কেমন আনইমপ্রেসিভ একদম নজর কাড়া নয়, দেখে মনে হয় বেশ দুর্বল একটা ধাক্কা মারলেই পড়ে যাবে মাটিতে এমন একজন রিপোর্টার। যার হাতে গোটা সল্টলেক, রাজারহাট আর নিউটাউন এর দায়িত্ব দিয়ে এক মিডিয়ার অফিস কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। হ্যাঁ, সেই যে প্রতি সপ্তাহের নাইট ডিউটি করতে এসেই বলতো দাদা আমি এসে গেছি। বলো কোথায় যেতে হবে আমায়। আমি বলতাম চুপ করে বসে থাক তুই। আমার কাজ শেষ হলে ধর্মতলায় নামিয়ে দিবি একটু। ও বলতো দাদা কোনো চিন্তা নেই আমি আছি তোমার জন্য। 

হ্যাঁ, আমাদের চব্বিশ ঘণ্টার নান্টু কুমার। আমি ওকে ওই নামেই ডাকি আর কি। আমাদের বিখ্যাত সেই সল্টলেকের নায়ক নান্টু। শহুরে রিপোর্টার হলেও সে বন জঙ্গল আর সেই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো বন্যপ্রাণীর নানা খবর করতে ওস্তাদ সে। যদিও বন্যপ্রাণীর খবর নিয়ে অনেকেই কলকাতা শহরে নিজেকে সেরা ওস্তাদ বলে ঘোষণা করেন সর্বসমক্ষে। সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এই লেখা নয়।

এই লেখা শুধু নান্টুর একরাতের এক অপারেশন এর গল্প। যে অপারেশন এর সাক্ষী আমি আর সেই সময়ের চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলের ডেপুটি এডিটর ধ্রুবজ্যোতি প্রামাণিক। যার আবার খবর হলেই জিজ্ঞাসা, কি করে বাঘ পাচার হচ্ছে ভাই। বড়ো বাঘ পাচার হয়ে যাচ্ছে কি করে। ভাই ঠিক বলছিস তো তুই রাত দুপুরে।এই খবরে জল নেই তো ভাই। নান্টুর মিনমিনে জবাব হ্যাঁ, দাদা সত্যিই হচ্ছে। আমার সোর্স তাই বলছে আমায়। আর বাঘ বড়ো নয়, ছোটো বাঘ। পরে যদিও জানা যায় সেটা সিংহের ছানা ছিল। আর সাথে ছিল তিনটে লেঙ্গুর। 

কলকাতা শহরে রাতের বেলায় সিংহ পাচার হচ্ছে। আর সেটা জানে মাত্র একজন রিপোর্টার যাঁর পিঠে স্ট্রিঙ্গার এর ছাপ মারা আছে। সে শহুরে বিখ্যাত সাংবাদিক নয়। সে শহরের রাজপথে নামী দামী ডাকাবুকো রিপোর্টার নয়। একদম নির্বিরোধী চুপচাপ ফুলে ছাপ মারা একজন সাংবাদিক। যার কাছে খবরটা হঠাৎ উড়ে আসে একরাতের বেলায়। তখন ও ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ ওর মোবাইল স্ক্রিনে একটা মেসেজ। বড়ো খবর। বিগ ব্রেকিং। কি খবর কিছুই নেই। শুধু এটুকু লেখা। নান্টুর ঘুম ভেঙে যায়। কিছুক্ষণ সেই সোর্সের সাথে চ্যাট করে জানতে পারে বাঘ বা সিংহ পাচার হচ্ছে। সাথে আরও তিনটে লেঙ্গুর। নান্টুর ঘুম উড়ে যায় তখন। 

সঙ্গে সঙ্গে এই খবর পেয়েই খবর জানিয়ে ধ্রুবকে ফোন করে ও। আমিও জানি এই খবর দাদা বড়ো খবর হবে কিন্তু আমায় বলে ও। অপারেশন শুরু। ধ্রুবকে বলি যদি সব ঠিক হয় তাহলে সকাল থেকে লাইভ হবে দাদা। ধ্রুব বলে দাদা ঠিক কোনো অসুবিধা নেই তুমি তোমার মত সিদ্ধান্ত নাও। যা আমি সেই সময় করেছি চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে ধ্রবর প্রশয় আর আশ্রয়ে। যদিও ক্ষমতার অপব্যবহার না করেই।

নান্টুর ফোন এলো দাদা আমি বেরোচ্ছি ছবি হলেই জেনে যাবে তুমি। রাতেই নান্টু খবরের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। মাঝে মাঝেই ওকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করছি কি রে ছবি হলো। নান্টুর জবাব দাদা খুব মশা কামড়াচ্ছে আর আমার ঘুম পাচ্ছে যে কি করবো বলো। আমি বললাম একদম নয় আর একটু জেগে থাক দেখ কি হয়। নান্টু জানালো ঠিক আছে দাদা ঘুমিয়ে পড়লে ডেকে দিও আমি বসে আছি বন দফতরের অফিসে।


 ভোররাতে নান্টুর মেসেজ দাদা ছবি হলো ডান। ধরা পড়েছে পাচার হবার সময় সিংহের ছানা কেমন যেন মিউ মিউ করছে সে ছবি তোলার সময়ে। লালগড় এর দিকে যাবার সময় গাড়ি সমেত ধরে বন দফতরের আধিকারিকরা। নিয়ে আসা হলো সল্টলেকের বন দফতরে। যার মধ্য নান্টুর সেই বিখ্যাত সোর্স লুকিয়ে ছিলেন। যিনি সেই রাতে আর কাউকে সেই খবর দেননি। আর যার ফলে নান্টুর এক্সক্লুসিভ ভিডিও খবর ব্রেকিং হলো পরদিন সকাল থেকেই চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেলে। 

সেই সময় চব্বিশ ঘণ্টার বিখ্যাত রিপোর্টার তন্ময় প্রামাণিক গিয়ে লাইভ করলো সকাল থেকে সল্টলেকের বন দফতরের অফিস এর সামনে থেকে। নান্টু সারারাত ফিল্ডিং কেটে বুঝিয়ে দিলো ও একজন জাত রিপোর্টার। আর পরদিন সেই খিদিরপুরের গ্যাং যারা এই অপারেশন করে তাদের জামিন হয়ে যায় আদালত থেকে। বিচিত্র এই দেশ আর কি বলা যায়। বাঘ সিংহ পাচার করেও জামিন পায় অপরাধীরা।

এই রাতদুপুরে আমার মনে পড়ে গেলো সেই নান্টু কুমার এর কথা। সেই অতি সাধারণ এক রিপোর্টার হয়ে কেমন সুন্দর নিটোল এক অপারেশন করে হাসতে হাসতে অন্য চ্যানেলকে গোল দিয়েছে ও মেসির মতই সেই রাতে। বাংলা মিডিয়াতে হয়তো নান্টুরা লাইম লাইটে আসে না কোনোদিনই। তাঁদের কাজ, চ্যানেলের প্রতি ভালোবাসা, কাজ এর প্রতি দায়বদ্ধতা আর খবরের নেশায় ওদের রাত জাগিয়ে রাখে দিনের পর দিন। নান্টুরা কেমন হাসি মুখে রাত জেগে বাঘ মামা আর সিংহের ছানার খবর করে পরদিন আবার একভাবেই মাঠে ব্যাট করতে নামে হাসিমুখে। 

সেই একশো টাকা কেজি দামী পিঁয়াজের বস্তা করে কচ্ছপ পাচার হোক। সেই বারাসাত অফিস থেকে বারাসাত এর রিপোর্টারদের গোল দিয়ে ছবি করে আসা হোক। কিম্বা সেই বাংলার বুলবুলি পাচার হয়ে উত্তরপ্রদেশে চলে যাওয়ার খবর হোক। নান্টু বাঘ, সিংহ, কচ্ছপ, বুলবুলির পাচার এর খবরে এখন ধীরে ধীরে মাস্টার হয়ে গেছে যেনো। 

সত্যিই কতদিন ওর সাথে দেখাই হয়নি। কতদিন ওর রাতের গাড়ী করে আমার বাড়ি ফেরা হয়নি হাওড়া স্টেশন বা ধর্মতলায়। কতদিন ওর সাথে রাত জাগা হয়নি খবরের টানে। কতদিন যে অন্য চ্যানেলকে গোল দেবো বলে সারারাত ওয়ার্মআপ করে প্র্যাকটিস করা হয়নি মাঠে নেমে। সেই নান্টু, সেই বারাসাতের দীপঙ্কর, সেই বেহালার সন্দীপ প্রামাণিক, সেই দমদম এর সৌমেন, সেই প্রসেনজিৎ সরদার, সেই তথাগত সব যে কোথায় গেলো এরা কে জানে। 

নান্টুর অপারেশনে এর কথা লিখতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো এদের কথা। সেই হাওড়ার দেবু, ঝাড়গ্রামের সৌরভ, পার্থ, অরূপ, চিত্ত, বাসু, নকিব, অনুপ, দুই বিশ্বজিৎ একজন মিত্র অন্যজন সিংহ রায়, বিধান, ভবানন্দ, শ্রীকান্ত, হীরক, কুচবিহার এর সুমন , পুরুলিয়ার অনুপ দা, সেই সিঙ্গুরের নির্মল, দিব্যেন্দু, চম্পক, সোমা মাইতি, বাচ্চু , কায়েস, নীলেশ্বর, অরূপ বসাক, তপন দেব, ই গোপী, কিরণ, আরও কতজন যে ছিল সবার নাম হয়তো মনে আসছে না এই রাতে বয়স হয়েছে যে ভুল হলে বাদ পড়লে ক্ষমা চাইলাম আগাম।
 কিন্তু সত্যিই দিনগুলো বেশ ভালই কাটত যে সেই সময় কি বল নান্টু। ও হেসে বলবে হ্যাঁ দাদা সত্যিই ঠিক বলেছো দিনগুলো ভালই ছিল বেশ। ভালো থাকিস নান্টু। এমন গোল করে আমায় জানাস মাঝে মাঝে আমার ভালো লাগবে। শহরের মাঠে গোল দিতে আমার বড়ই ভালো লাগে এই জেলার ছেলে হয়ে তোদের হাত ধরে। ইচ্ছা হয় মাঠে নেমে আবার তোদের হাত ধরে গোল করি।

আমাদের নান্টু কুমার - অভিজিৎ বসু।
বাইশে নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...