হাওড়ার মনোজ আর নেই। খবরটা আমাকে দিলো এনকে বাংলা টিভির হাওড়া জেলার সাংবাদিক অর্পণ। মেঘদূত এর পোস্ট দেখে মনে পড়েনি আমার ওর কথা। সত্যিই এতদিন পরে ভুলেই গেছিলাম আমি ওর কথা। হাওড়ার চব্বিশ ঘণ্টার দেবব্রত যাকে আমি দেবু বলতে অভ্যস্ত সেই দেবু ওকে দিয়েছিল আমায়। দেবু বলেছিল দাদা একে নাও তুমি আমার পরিচিত খারাপ ছেলে নয়।
তখন সবে জেলায় জেলায় লোক নিয়োগ চলছে। অর্পণ আগে থাকতেই এই চ্যানেলে ছিল যে এন কে বাংলা চ্যানেলের হয়ে কাজ করত হাওড়া জেলায়। উলুবেড়িয়াতে একটা ছেলে দরকার। শুভাশীষ আছে তবু দেবুর কথায় ওকে নিলাম আমি। কলকাতায় অনেকে যোগ দিলো সেই সময় এই নতুন এনকে বাংলা চ্যানেলে। নতুন অফিস, নতুন চ্যানেল, কিছু মানুষের রুটির জোগাড় হলো। একটা কর্ম চঞ্চলতা আর খবর নিয়ে দৌড় শুরু হলো।
যাঁরা একদিন হঠাৎ করেই মাঠের বাইরে ছিটকে গেছিলো তারা ফের মাঠ পেয়ে লোকজন পেয়ে কেমন ধীরে ধীরে কাজের জগতে ডুবে গেলো। বেশ ভালই লাগলো আমার বুড়ো বয়সে একটা নতুন অচেনা সংসার পাতা। দু একবার কথা হয়েছে ওর সাথে আমার ফোনে। লোগো নিতে আসার সময় কলেজ মোড় এর সেই অফিসে দেখাও হয়েছিল। একটু চুপচাপ কম কথা বলা ছেলে।
যাই হোক বড়ো হাই ফাই চ্যানেল তো নয় কম টাকায় কাজ উঠে গেলেই হলো নিয়েছিলাম ওকে। আজ শুনলাম হঠাৎ সে মারা গেলো অসুস্থ হয়ে। সত্যিই কি বলব খবরের দৌড় বন্ধ হয়ে গেলো ওর। জানিনা আমি এর বেশি কিছুই। ওর মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে এসে সে সবাইকে ছেড়ে চলে গেলো। এই খবরের জন্য দৌড় সারাজীবন ধরে খবরের পেছনে দৌড়তে দৌড়তে নিজেই খবর হয়ে গেলো মনোজ।
জীবনের দৌড় বোধহয় হঠাৎ করে এইভাবেই শেষ হয়। কোনো আগাম জানান না দিয়েই। আজ আমি সেই এন কে বাংলা চ্যানেলে নেই। কোনো চ্যানেলেই নেই। তবু মনোজ এর কথা শুনে মনটা খারাপ হলো। রাতে অর্পণ এর মেসেজ দেখে মনটা খারাপ হলো। হয়তো আরও কিছুদিন ও বেশি বাঁচতে পারত। খবরের নেশায় দৌড়ে বেড়ানো মনোজ।
একটা জেলার মহকুমায় সাংবাদিকতা করে হয়তো খুব বেশি টাকা রোজগার করতো না ও। তবু তো এই পেশাকে ভালোবেসে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে গেলো হাসি মুখে। পেশা না বদলে অসুস্থ হয়েও কাজ চালিয়ে গেলো। আর তারপর একদিন কাউকে বুঝতে না দিয়ে টুক করে কেটে পড়লো সবাইকে হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে।
ভালো থাকিস মনোজ - অভিজিৎ বসু।
তেইশ নভেম্বর,দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক। ও সি এন নিউজ ও অর্পণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন