সাদা জীবনের কালো কথায় রুটি ও একটি ছোট্ট মেয়ের অমলিন এক হাসির গল্প। যে ছোট্ট মেয়ের অমলিন হাসি আজ বিশ্বজয় করলো বলা যায়। বদলে গেলো সেই ছোট্ট মেয়ের জীবন শুধু তার ওই হাসির দৌলতে। আর মেয়ের সাথে বদলে গেলো ছোট্টো মেয়ের মার জীবনও একটু একটু করে। আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার কেনিয়ার এই ছোট্ট তিন বছরের মেয়ের নাম লেথুকুখানিয়া মজাজিকে।
অভাবের ঘরে যার হাতে একটুকরো ব্রেড বা রুটি নিয়ে ঘরে ফেরার আনন্দে সে বেশ মশগুল ছিল একদিন। একটুকরো রুটি যার কাছে অনেক বেশী পাওয়া তার ওই শৈশবের জীবনে। আর তাই রুটি হাতে কাদামাটি পেরিয়ে ঘরে ফিরছিল সে মনের আনন্দে একদম ছোট ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে উড়ে। তার দু চোখে উপচে পড়া খুশি আর আনন্দ মাখামাখি হয়েছিল। ওই একরত্তি মেয়েটার দু চোখে আর কচি মুখে ছিল অন্য রকম এক খুশীর রূপ। তার হাতে ধরা ছিল সেই বিখ্যাত কোম্পানি এলবানির ব্রেড বা রুটি।
যখন ওই ছোটো মেয়ের ঘরে ফেরার সময় তার এই ছোটো ভাগ্নির আনন্দ আর উচ্ছাস আর চোখে মুখে উপচে পড়া খুশি দেখে সেই ছবি হঠাৎ তার নিজের ক্যামেরায় ধরে ফেলে তার নিজের মামা। যার নাম লুংগিসা মজাজি, যে দক্ষিণ আফ্রিকার এক ইউনিভার্সিটির ফটোগ্রাফির ছাত্র। ছবি তোলা যার বিষয় ও নেশা। যে নেশায় তিনি ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে বেড়ান। সেই ছবির নেশায় সে তার ভাগ্নীর খুশি মুখের ছবি তুলে ফেলে। আর মামার ছবি তোলা দেখে দাঁড়িয়েও পড়ে ছোটো মেয়ে লেথুকুখানিয়া মাজাজিকে।
লুংগিসা, যে বর্তমানে ২৬ বছর বয়সী, ২০২২ সালে Tshwane University of Technology-এ ফটোগ্রাফি পড়তে শুরু করেন তিনি। তার ছোটবেলা থেকেই ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসা ছিল খুব। তিনি জানিয়েছেন, তার "মাই ফুটপ্রিন্ট" প্রকল্পের অংশ হিসাবে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং মানুষের হাসি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন তার এই প্রজেক্টে বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে। আর তাই রুটি হাতে অমন মিষ্টি একটি ছোট্টো মেয়ে এইভাবে জল কাদা পেরিয়ে ছুটে আসছে দেখে ছবি তোলার লোভ
সামলাতে পারেনি সে। আর শুধু তাই ওই একটুকরো রুটি নিয়ে ছুটে আসা যেটা তাকে ছবি তুলতে আকর্ষিত করে। আর কিছুটা প্রলুব্ধও করে বলা যায়। তাই লোভ সামলাতে না পেরে সে ওই রুটি হাতে ছোটো কন্যার যে তার ভাগ্নী তার ছবি তুলে নেয় একমনে।
এই ছবির গল্পে হয়তো তেমন কিছুই নেই খুব সহজ সাদামাটা একটা জীবনের গল্প। যে জীবনের গল্পের গায়ে লেগে আছে রুটির গন্ধ, কেনিয়ার ছোটো মেয়ের কচি দাঁতের ঝিকিমিকি আলো করা হাসি। আর দক্ষিণ আফ্রিকার কেনিয়ার ওই মেয়ের হাসি আজ সারাদেশে প্রশংসা অর্জন করলো। ছড়িয়ে পড়ল সেই হাসি মাখা মুখের ছবি। সেই ছবিতে দেখা গেলো লুংগিসার তিন বছরের ভাগ্নি, লেথুকুখানিয়া মজাজিকে এক টুকরো এলবানির ব্রেড হাতে নিয়ে খুশিতে ভরপুর মুখে ধরা পড়তে দেখা গেছে ক্যামেরার লেন্সে।
এই ছবির গল্পটি খুব সহজ হলেও অত্যন্ত প্রভাবশালী। লেথুকুখানিয়া যখন কাদামাটি পেরিয়ে বাড়ি ফিরছিল, তার মামা লুংগিসা একটি মুহূর্তে তার উচ্ছ্বাস ধরা ফেলেন তাঁর ক্যামেরায়। এই ছবি দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের হৃদয়ে এক উষ্ণতা এনে দিয়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে খুব দ্রুত হারে। অনেকেই এই ছবিকে এলবানির ব্রেডের প্রতীক হিসেবে চেয়েছেন।
আর এলবানি রুটি কোম্পানিও এই আবেগময় ছবিটিকে পছন্দ করে স্বীকৃতিও দেয় সেই ছোটো মেয়ের হাসিকে। এবং তারা লেথুকুখানিয়াকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে নির্বাচিত করে। লুংগিসা জানান, তার এই কাজ মানুষকে কতটা আনন্দ দিয়েছে, তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। সত্যিই তিনি নিজেও খুব খুশি হয়েছেন এই ছবি তুলে। এলবানি রুটি কোম্পানি জানিয়ে দিয়েছে যে তারা, লেথুকুখানিয়ার পুরো শিক্ষাজীবন খরচ বহন করবে এবং তার পরিবারের জন্য একটি নতুন ঘর করে দিয়েছে তারা । লেথুকুথানিয়ার সিঙ্গেল মাদার মেয়ের এই হাসির পুরষ্কার পেয়ে অনেকটাই আজ নিশ্চিন্ত জীবন লাভ করেছেন তিনিও।
লুংগিসা আরও বলেন, ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তিনি মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে চান। তার মা তার ফটোগ্রাফি প্রজেক্টের জন্য সহায়তা করেছেন, এমনকি ব্রেড কেনার টাকাও দিয়েছেন তিনি নিজেই। লেথুকুখানিয়ার সাথে এই ছবিগুলি তুলতে তিনি প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝিয়েছিলেন, এবং লেথুকুখানিয়া তাকে পুরোপুরি সহযোগিতাও করেছে এই কাজ করতে।
আজ, গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে এই ছবিগুলি বিলবোর্ডে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং আলবানি ব্রেডের জনপ্রিয়তার প্রতীক হয়ে উঠেছে ওই ছোট্ট মেয়ের হাসি। লুংগিসার এই উদ্যোগ এবং তার ভাগ্নির প্রাকৃতিক হাসি যে সারা দেশের মানুষের মনে আলোড়ন তুলেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ গল্পের সাক্ষী হয়ে থাকবে ভবিষ্যতে। সত্যিই অসাধারণ এই রুটি আর হাসির গল্প।
এই গল্পটি আমাদের হাসির শক্তি এবং ফটোগ্রাফির ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের মনে করিয়ে দেয়। যে ছোট্ট একটি হাসিই হয়ত অনেক বড় পরিবর্তনের শুরু হতে পারে। যে ছোট্টো মেয়ের হাসি বদলে দিল একটা জীবন। বদলে দিলো ওদের জীবনের জলছবি। আর সাথে এটাও বুঝিয়ে দিলো ওই ছোট্ট মেয়ের হাতে ধরা একটুকরো রুটি যে বড়ই প্রিয় ওই হাসিখুশি মেয়ের। যার গন্ধে বুঁদ হয়েই বেঁচে আছে এই সব ক্ষুধার্ত শিশুরা একটুকরো রুটির জন্য।
রুটি ও একটি ছোট্ট মেয়ের অমলিন হাসির গল্প - অভিজিৎ বসু।
সাত নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে x ও ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন