একসময়ে খবর সংগ্রহে তৎপর হয়ে এই ঘর থেকে ওই ঘর ঘুরে বেড়াতে দেখতাম তাকে আমি বেশ অবাক হয়ে মহাকরণের অলিন্দে। মুখে মিষ্টি হাসি আর মুখে কুলুপ এঁটে ঘুরে বেড়াতো সে। তাঁর সেই খবর সংগ্রহের দিন শেষ হয়েছে অনেক আগেই এখন সদস্য সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। সংবাদ সংগ্রাহক এর জীবন থেকে সদস্য সংগ্রাহক এর জীবন। বেশ মন্দ নয় কিন্তু ব্যাপারটা।
কখনও বীরভূমের নগরী, চিনপাই, গাংমুড়ি-জয়পুর, নিমটিকুড়ি, বরিহাট-আগরে, রণপুর, সিউড়ি, করিধ্যার পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে, বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়ান তিনি। সদস্য সংগ্রহের কাজে। সৌম্যকান্তি এই পুরুষ এর এখন কাজের প্রকৃতি অনেকটাই বদলে গেছে তাঁর। আগে মন্ত্রী, সচিব, উপসচিব এর কাছে পৌঁছে এক্সক্লুসিভ খবর নিয়ে সেই খবর পৌঁছে দিতেন তিনি হাসি মুখে আমাদের কাছে। আর আমরা পরদিন তাঁর লেখা সেই এক্সক্লুসিভ খবর পড়তাম গোগ্রাসে।
সকাল বেলায় বাঙালির যে কাগজ না পড়লে ভাত হজম হয়না। রাজনীতির নেতারা যতই সেই পত্রিকাকে গাল দিক সেই কাগজে একটু নাম তুলতে পারলে কেমন যেনো বিগলিত ভাব করতেন ডাকসাইটে সব নেতা,মন্ত্রীও। সে ডান, বাম,কংগ্রেস, তৃণমূল, এস ইউ সি, কিংবা নকশাল আন্দোলন করা রাজনৈতিক দল যেই হোক। সেই পত্রিকাকে বয়কট করে কতবার যে বয়কট তুলে দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
মহাকরণের প্রেস কর্নারে খুব বেশি আড্ডা দিতে, হাসি ঠাট্টা করতে দেখিনি ওকে কোনোদিনই আমি। একদম মেসির মত মাঠে খেলতে নেমে এক পাশেই গোল করে হাসি মুখে মাঠ ছাড়তেন তিনি। কতদিন যে এক ফিন্যান্স বিভাগে এক অফিসারের ঘর থেকে আমি দরজা ঠেলে বেরোতে গিয়ে সেমসাইড হয়েছে আমাদের দুজনের মহাকরণের সেই বারান্দার কোনের ঘরে। হাসি মুখে একে অপরকে টপকে সরে গেছি আমরা চুপচাপ। যে অফিসার বিশেষ কোনো রিপোর্টারকে কাছে ঘেঁষতে দিতেন না তাঁর ঘরে। আরামবাগে পোস্টিং এর সময় তাঁর সাথে আমার আলাপ হয়। কত ভালো ভালো খবর যে তিনি দিতেন আমাদের দুজনকে। সেই সব দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার আজ।
যাকগে আসলে আজ যার কথা লেখার জন্য কলম ধরলাম তাঁর কথা লেখার ধৃষ্টতা আমার আছে কি না জানিনা আমি। সেই একসময়ের দাপুটে বাংলার একনম্বর কাগজের অন্যতম সাংবাদিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। যার জন্য মহাকরণে সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দাঁড়িয়ে গিয়ে বলতেন, জগন্নাথ বাবু আপনি একবার আমার ঘরে আসবেন তো একটু সময় করে, দরকার আছে। পারত পক্ষে যিনি কাউকেই তাঁর ঘরে ডাকতেন না। আর আমরা সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর দিকে। কিন্তু কিছুই বলতে পারতাম না আমরা তাঁকে।
একদিকে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের ছাপ অন্য দিকে নিজের খবর তোলার ক্যারিশমা এই দুই বিষয় কাজ করত সেই সময় ওর। সারাদিন প্রেস কনফারেন্স আর মন্ত্রীর ঘরে হাজিরা দিয়ে মহাকরণের সাংবাদিকদের দিন কেটে গেলেও ওর কিন্তু এক কর্নারে গোল অব্যর্থ ছিল প্রতিদিনই। পরদিন বাই লাইন আর হাসিমুখে দুপুর বেলায় মহাকরণে প্রবেশ করতেন তিনি কলার উঁচিয়ে। ভাবটা এমন যেন কিছুই হয়নি কাল। অমন তো কতই হয়। আর অংশু দা বলে উঠত প্রেস কর্নারে ওকে দেখে কাল আবার গোল। কেউ রুখতে পারবে না জগাকে।
আর তখনই জগা সলজ্জ হাসিমুখে প্রেস কর্ণারের দরজা ঠেলে বেরিয়ে যেতো। করিডোর ধরে সিএস বা হোম সেক্রেটারি ঘরে চুপচাপ পৌঁছে যেতো পরের দিনের খাবার আর খবর জোগাড় করতে। এটাই ছিল ওর স্টাইল। যে সাংবাদিকতার, যে লেখার, যে সোর্স থেকে খবর সংগ্রহ করার আমি বেশ ভক্ত ছিলাম ওর। জেলায় কাজ এর সুবাদে আলাপ পরিচয় ছিল আমার সাথে ওর। কিন্তু ও কাউকেই ওর বৃত্তে ওর ঘেরাটোপে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি কোনোদিনই। যাতে কোনো কিছুই তার হাল হকিকত কেউ জানতে না পারে। আর এটাই তার বাজিমাত করার অন্যতম কারণ বলে আমার মনে হয়।
আসলে ঐ যে দীর্ঘদিন নানা জেলায় ঘুরে ঘুরে কাজ করা সেটাই ওকে কয়েক কদম এগিয়ে রেখেছে অন্যদের থেকে বেশ কয়েক কদম। আর তাই যে কোনো খবরে যে কোনো সচিবের ঘরে প্রবেশ করতে ওর অসুবিধা হতো না কোনোদিনই। জেলা খেটে কলকাতায় কাজ করতে গেলে যেটা সব থেকে বেশি জরুরি। আমিও তার সুফল পেতাম কারণ বহু ডিএম তখন নানা দফতরের সচিব হয়ে কাজ করছেন মহাকরণে। যাঁরা আমায় খবর দিতেন অন্য রিপোর্টারদের না দিয়ে। সেই কাজটাই ওর ক্ষেত্রে একশো ভাগ ও নিজে কাজে লাগিয়ে তার সুফল তুলে নিত অন্য রিপোর্টারদের হাসি মুখে গোল দিয়ে।
আজ আর সেই সব খবরের দিন নেই, এখন তো শুধুই গ্রামে গ্রামে ঘুরে সদস্য সংগ্রহের কাজে মনোনিবেশ করা। যা বোধহয় খবর সংগ্রহের থেকেও কঠিন কাজ বলেই আমার মনে হয়। রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে নিশ্চয়ই এই কাজেও খবর সংগ্রহের মত সফল হবে ও একদিন সদস্য সংগ্রহের কাজেও। এই আশা করি আমি।
মেসির মতই গোল দিয়ে ও বিপক্ষের দলের শক্তিশালী ডিফেন্সকে ভেঙে চুরমার করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে বীরভূমের লালমাটির রাস্তায়। সেই মহাকরণের অলিন্দে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানো এক্সক্লুসিভ করা আমাদের সবার পরিচিত সেই বিখ্যাত সাংবাদিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, নিশ্চয়ই খবরের জগতের পর আবার এই রাজনীতির জগতেও উল্কার গতিতে এগিয়ে যাবে। আর তার বিপক্ষ দলকে হাবুডুবু খাইয়ে শাসক দলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে। যে আজ তার রাজনৈতিক দলের বড়ো ভরসা অনেকের।
অন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ জগা - অভিজিৎ বসু।
বাইশে নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন