সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তারাদের দেশে অরুণ দা

শ্রীরামপুর থেকে খবরের কাজের সূত্রে চুঁচুড়া স্টেশনে নামতেই দেখতাম তিনি বসে আছেন শংকরের চায়ের দোকানে। আশপাশে ভীড় করে আছে সব নানা মানুষ জন। দাঁড়িয়ে পড়তাম আমিও। সেই সময় রোজ চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে শংকরের চায়ের দোকানে আড্ডা চলত। রিকশায় চড়ে আসতেন অরুণদা। চায়ের টেবিলে মুগ্ধ হয়ে থাকতাম তাঁর কবিতায়। কাগজ, পেন বাড়িয়ে দিলেই নতুন কবিতার জন্ম হতো তাঁর হাতে। আমাদের আবদারে ''লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা ' তিনি প্রায় দিনই পাঠ করে শোনাতেন তিনি। চুঁচুড়ার ময়নাডাঙ্গার ভাড়া বাড়িতেও সন্ধ্যার দিকে মাঝেমধ্যেই বসত কবিতার আসর। যে কবিতার জগতের মাঝেই তিনি হারিয়ে গেলেন আজ।

লাল পাহাড়ির দেশে যা,
রাঙা মাটির দেশে যা,
ইতাক তোকে মানাইছেনা রে,
ইক্কেবারে মানাইছেনা রে।

একটা অধ্যায় এর শেষ হলো আজ। কেউ আর রাস্তায় দেখা হলে স্মিতমুখে হেসে লজেন্স দেবে না ব্যাগ থেকে বের করে। বহু বছর আগে শ্রীরামপুর স্টেশনের পাশে এক মহুয়া গাছ দেখে অরুণদার মনে হয়েছিল এটা এখানে বেমানান। এখানে এক্কেবারেই মানাইছে না। তাই তিনি লিখেছিলেন, লালপাহাড়ির দেশে যা 
রাঙামাটির দেশে যা'। পরে সেই কবিতা গান হয়ে বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে যায়। আজ অরুণদাও পাড়ি দিলেন সেই এক অজানা দেশে যে দেশের কথা তিনি বহু বছর আগেই তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন। আপনার মতন মানুষ সত্যিই বিরল। অজানা অচেনা কাউকে আপন করে নেওয়ার মতো ক্ষমতা আপনার মত খুব কমজনের আছে । ভালোবেসে কি ভাবে মন জয় করা যায় সেটা আপনি দেখিয়েছেন। ভালো থাকবেন দাদা।

না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন 'লাল পাহাড়ি দেশে'র শিল্পী অরুণ চক্রবর্তী। 'লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা'– এই গান শোনেননি বাংলায় এমন মানুষ খুব কমই আছেন! এই গানের গীতিকার-সুরকার দের নাম অবশ্য অনেকেই জানেন না। এই মর-পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন 'লাল পাহাড়ি দেশে'র শিল্পী অরুণ চক্রবর্তী। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন শিল্পী। এদিন সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অরুণ চক্রবর্তী ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে শ্রীরামপুর স্টেশনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মহুয়া ফুলের গাছ ও ফুল দেখতে পান। শ্রীরামপুরে মহুয়া গাছ ও ফুলকে দেখে বড্ড বেমানান মনে হয়েছিল। তাঁর মনে হয়েছিল বাংলার ধান, আলু উৎপাদনের অঞ্চলে মহুয়া ফুলের গাছ কেন থাকবে, মহুয়া তো লাল পাহাড়ের রানি, এই গাছকে সেখানেই মানায়। মহুয়া তো লাল মাটির গাছ। তার পর তিনি 'লাল পাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা' গান রচনা করেন।

অরুণ চক্রবর্তী এই গানের গীতিকার। এরপর ঝুমুর গায়ক সুভাষ চক্রবর্তী এই রচনাটিতে সুরোরোপ করেন এবং ১৯৭৯ সালে প্রচলিত সুরে ভি বালসারার ব্যবস্থাপনায় সুভাষ চক্রবর্তী রেকর্ড করেন। সুভাষ চক্রবর্তী বাঁকুড়ার লোকগান ঝুমুর,টুসু,ভাদু গানকে জনপ্রিয় করেছিলেন। গত বছররে ২৬ ফেব্রুিয়ারি প্রয়াত হয়েছিলেন সঙ্গীত শিল্পী সুভাষ চক্রবর্তী। এবার সেই একই পথের যাত্রী হলেন কবি অরুণবাবু।

সুভাষ চক্রবর্তী বাঁকুড়ার লোকগানের স্রষ্টা হলেও মূলধারার গানে তিনি কোনও ভাবেই প্রচারের আলো পাননি। তাঁর গান বিখ্যাত, কিন্তু তাঁর কণ্ঠে নয়। 'লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা' গানটি বাংলা ব্যান্ড 'ভূমি' র অ্যালবামে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পায়। 'ভূমি'র লাইভ ফাংশানে দীর্ঘ দশক জনপ্রিয় ছিল এই গান। অথচ শ্রোতাদের কাছে পৌঁছয়নি পূর্বের শিল্পী সুভাষ চক্রবর্তীর নাম। এমনকী গীতিকার অরুণ চক্রবর্তী ও রয়ে গেছেন আড়ালে। প্রচলিত কথা-সুর লেখা ছিল ভূমির অ্যালবামে।

‘ভূমি’ এই গানটি রেকর্ড করলেও গীতিকার-সুরকারের নাম উল্লেখ না করায় শুরু হয় বিতর্ক। গান নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে ভূমির গায়ক সৌমিত্র রায় পরে জানান, ‘‘গীতিকারের নাম জানতাম না। তাই উল্লেখ করিনি। প্রচলিত লেখা ছিল অ্যালবামে। ভুল করেছিলাম। পরে ক্ষমাও চেয়ে নিই আমরা। 

একটা লোকগান সমান জনপ্রিয় হয়ে ৫০ বছর পথ হেঁটে এল, এটা খুব সহজ কথা নয় কিন্তু। আমাদের জীবন আমাদের অস্তিত্ব প্রতি মুহূর্তে হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বেমানান হয়ে পড়ে, আমরা যে যার আপাত স্বস্থানে যেমন অত্যন্ত বেমানান। সেসব বিভ্রান্তির মুহূর্তগুলোয় জীবন যেন প্রশ্ন করে বসে, ‘তুই ইখানে কেনে, হেথাক তুকে মানাইছে নাই গো, ইক্কেবারেই…’।

কবি অরুণ চক্রবর্তী আপনভোলা। স্বভাব বাউল। বরাবরই স্কুলে প্রথম। পেশায় উঁচু পদমর্যাদার ইঞ্জিয়ার ছিলেন। তাঁর বন্ধুরা ফুলওয়ালা, ফলওয়ালা, টিটি, কুলি, পুলিশ অফিসার, জি আর পি, মাস্টারমশাই, মদওয়ালা, আশ্রমিক, বাউল, চাষি, কবি, মাছওয়ালা, সন্ন্যাসী, মাতাল, চোর, আপাত পাগলের দল আর সাংবাদিক এর দল তাঁর বন্ধু ছিলেন। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে বেড়িয়ে পড়তেন এদিক-ওদিক। বিভিন্ন বাউলের আখড়ায়, লাল মাটির দেশে অথবা অজানা কোনও স্টেশনে। ১৯৭২ সালে শিবপুর বিই কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে অরুণবাবু তখন চাকরীপ্রার্থী। ট্রেকিংও চলছে পাহাড়ে, সমুদ্র সৈকতে আর জঙ্গলে। 

সেবছরই এপ্রিলের শেষাশেষি নাগাদ একদিন ভরদুপুরে নেমে পড়েছিলেন শ্রীরামপুর স্টেশনে। স্টেশন চত্বরে একটি গাছ দেখে থমকে গেলেন। গাছটির নাম মহুয়া। ইংরেজিতে Madhuka Latifolia—যা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা বা মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে পর্যাপ্ত দেখা যায়। এই গাছের সঙ্গে বনবাসী মানুষদের কোথায় যেন একটা আন্তরিক যোগাযোগ আছে। এর পাতার আগুনে ওরা শীত আড়াল করে। ফুলের গন্ধে ভেঙে পড়ে সাগরের ঢেউ, গানে গানে কল্লোলিত হয় অরণ্যনির্জন। এ গাছ ওদের বড়ো আদরের। ওর ফলও ওরা খায়। এই মহুয়া গাছই অরুণবাবুর মননে জন্ম দেয় একটি মাটির কবিতা, পরবর্তীতে যা ৫০ বছর ধরে লোকগান হিসেবে থেকে যাবে বাংলা-বাঙালির হৃদয়জুড়ে বোধহয় কবি নিজেও বুঝতে পারেননি।

তাঁর কথায় “এই রকম একটি গাছ শ্রীরামপুর স্টেশনে ঠায় দাঁড়িয়ে দেখেছি। যেখানে শব্দের অসহ্য দামামা। লক্ষ লক্ষ মানুষের তাৎক্ষণিক দাপট নিয়ত। ট্রেনের হাঁসফাঁস। হকারের দাপাদাপি, দূষিত ধুলোর থাবা। অসহ্য দুপুর। টোপা টোপা মহুয়া ফুলের ভারে অলংকৃত দেখে মুহূর্তের মধ্যে আমার অরণ্যের কথা মনে হল। অরণ্যবাসীদের কথা মনে পড়ে গেল।” বলেন অরুণবাবু। শ্রীরামপুর স্টেশনে মহুয়া গাছটি দেখে তাঁর মনে হয়েছিল গাছটি এখানে ‘মিসফিট’। মনে হয়েছিল ইঁট, কাঠ, পাথরের এ শহরে লাল মাটির গাছ বড়োই বেমানান। সেই ভাবনাই যে একদিন আপামার বাঙালির মন ‘লাল পাহাড়ির দেশে’ টেনে নিয়ে যাবে এমনকি লোকসংগীত ঘরানার চিরকালীন উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে, তা তিনি টের পাননি।

মাথায় লাল ফেট্টি, পকেটে লজেন্স আর মুখে ‘জয় গুরু’। এটাই তো আমাদের চেনা কবি অরুণ চক্রবর্তী। তিনি মানুষের জন্য কবিতা লেখেন। মনে করেন, কবিতার মধ্যে এমন একটা শক্তি আর সততা আছে যা পৃথিবীর মঙ্গল করে। “আদিবাসী আঞ্চলিক মানুষের মুখ মনে করে, তাদের গান, নাচ, পায়ে পায়ে ভেঙে যাওয়া হাজার ঢেউ, তাদের সহজিয়া জীবন যাপন…সব মিলিয়ে একটা উচ্চারণ ‘হাই দ্যাখো গো…তুই এখানে কেনে, লাল পাহাড়ির দ্যেশে যা, রাঙা মাটির দ্যেশে যা’।” বলেন লালপাহাড়ি গানের গীতিকার-কবি।

অরুণবাবুর কথায় “মানুষের জন্য লিখি। মানুষ ভালোবেসেছে ৫০ বছর ধরে। আরও বাসবে কারণ এর মধ্যে একটা কথা লুকিয়ে আছে—হেথাক তোকে মানাইছে নাই রে। যেখানে তোমার জায়গা নেই, সেই জায়গাটা তোমার জন্য নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে এত অশান্তি, আতঙ্কবাদ, মারামারি, খুনোখুনি, অহংকার। যদি সত্যি সত্যিই মানবিকতার অধিকারি হতো মানুষ, সব মানুষের ভিতর যদি মানবিকতা প্রতিষ্ঠিত হতো তাহলে এসবের কোনও জায়গাই থাকতো না। তাই ঠিক জায়গায় ঠিক মানুষের থাকাটা প্রয়োজন। মহাশ্বেতা দেবী কবিতা পড়তেন না কিন্তু আমার লাল পাহাড়ির দ্যেশে যা খুব পছন্দ করতেন। গুনগুন করে গাইতেনও।” সেই কথাই বলতেন কবি হাসতে হাসতে।


ভি বালসারার হাত ধরে গান হয়েছিল কবি অরুণ চক্রবর্তীর লালপাহাড়ি কবিতা। সুর করেছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী। ১৯৭৩-৭৪ সালেই সুরারোপণের কাজ হয়ে যায়। তা মঞ্চে মঞ্চে গেয়ে বেড়ান সুভাষবাবু। খনি অঞ্চলে, সাঁওতাল পাড়ায়। ভি বালসারাজি তখন ইনরেকো (কলকাতার অক্রুর দত্ত লেন) কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। সুভাষবাবুর মুখে গান শুনে বেশ চমকে গিয়েছিলেন। নতুনত্বের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি সেই গানে। 

ফোকগানের একটা বাজার আছে, মানুষ শুনতে চায় তার উপর কোম্পানির খুব একটা ক্ষতি হবে না মনে করে তিনি রাজি হয়ে যান। সারা বাংলা, আসাম, ত্রিপুরায় হইচই পড়ে যায়। হু হু করে বিক্রি হতে থাকে রেকর্ড। দেশ-এ, আনন্দবাজারে, অমৃত পত্রিকায়, যুগান্তরে ভূয়সী প্রশংসা ছাপা হয়। আখড়ায়, সভায়, সমিতিতে, মাউন্টেনিয়ারিং ক্যাম্পে ক্যাম্পে, কবিতার আড্ডায় শোনা যেত এই গান।

লোকাল ট্রেন থেকে বাংলা ব্যান্ড এখনও এই সুরে মাতোয়ারা। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুদিত হতে চলেছে লালপাহাড়ি কবিতা। অনেক সময় দেখা যায় কোনও লোকগান তুমুল জনপ্রিয় কিন্তু তার গীতিকারের নাম আমরা জানি না। লাল পাহাড়ি গানের সঙ্গেও এরকমটা ঘটেছিল। আমরা জানি বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’ এই গানটি রেকর্ড করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। গীতিকারের নাম উল্লেখ না করায় শুরু হয়েছিল বিতর্ক। ‘‘এক অনুষ্ঠানে বাসুদেব বাউল গাইছিলেন ‘লাল পাহাড়ির দেশে যা’। আমরা ‘ভূমি’-র সবাই ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। গানটা এত ভালো লেগেছিল, রেকর্ড করে নিই। এর পর কোচবিহার যাচ্ছিলাম অনুষ্ঠান করতে, ট্রেনে একজন বাউল উঠলেন। উনিও সে দিন 'লাল পাহাড়ি' গাইছিলেন, সঙ্গে ছিল ‘ও নাগর’। সে দিনই আমরা ঠিক করি, গানটা রেকর্ড করব। কিন্তু, তখন গীতিকারের নাম জানতাম না। তাই উল্লেখ করিনি। ভুল করেছিলাম। পরে অরুণদার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি’’ গান নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে এক সংবাদপত্রে একথা জানিয়েছিলেন ‘ভূমি’র সৌমিত্র।

লোকাল ট্রেন থেকে বাংলা ব্যান্ড এখনও এই সুরে মাতোয়ারা। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হতে চলেছে লালপাহাড়ি কবিতা। ‘সহজিয়া ফাউন্ডেশন’ গত ৮ জুলাই রবীন্দ্র সদনে সম্মান জানায় ‘লালপাহাড়ি’র স্রষ্টাকে। সেই লাল পাহাড়ের দেশেই হাসি মুখে চলে গেলেন আমাদের সবার প্রিয় অরুন দা। ভালো থাকবেন দাদা। আর চুঁচুড়া স্টেশনে শংকরের চায়ের দোকানে গেলে আপনার দেখা পাবো না। আপনাকে ঘিরে ভীড় করে থাকবে না সেই সাধারণ নানা ধরনের নানা রকমের সব মানুষজন। আর আপনি তাদের হাসি মুখে আবদার মিটিয়ে বলছেন, 

লাল পাহাড়ির দেশে যা,
রাঙা মাটির দেশে যা,
ইতাক তোকে মানাইছেনা রে,
ইক্কেবারে মানাইছেনা রে।

সত্যিই আপনাকে বোধহয় এখানে আর মানাচ্ছিল না দাদা। এই স্বার্থ সঙ্কুল পৃথিবীতে। তাই বোধহয় হাসি মুখে সবাইকে ছেড়ে আপনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। কেউ আর রাস্তায় দেখা হলে লজেন্স দেবে না। হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করবে না কেমন আছো ভাই তুমি। ভালো থাকবেন আপনি দাদা।

তারাদের দেশে অরুণ দা - অভিজিৎ বসু।
তেইশ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...