আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় সুখেন দাস এর কথা লেখার জন্য আমায় বহুদিন ধরেই বার বার বলছে চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলের সেই প্রথম দিকের স্বর্ণযুগের এক বিখ্যাত স্থপতি। আমার সেই দীর্ঘদিনের সুখ দুঃখের আমলকী গাছের বন্ধুত্ব যাঁর সাথে। যিনি বরাবর সেই একটু আলাদা ধরনের দূরে সরে থাকা এক বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে দিন কাটান বাংলা মিডিয়াতে সেই দীপেন্দ্র গোস্বামী। যে আমায় বলে অভিজিৎ এতো জনের কথা লিখছো তুমি কিন্তু সেই সুখেন দাস কোথায় গেলো তোমার লেখায়।
কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করুন আমি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় ওকে নিয়ে কিছু লেখা যায় কোনো ভাবে, আর কোনো সময়ে। কোনোদিন লেখার মত খোরাক বা মশলা পাবো কিছু ওর থেকে সেটা মাথায় আসেনি আমার কোনোদিন। যা দিয়ে মন ভরা উদরপূর্তি না হলেও অন্তত একটা পাঁচ মিশেলি তরকারি তৈরি করা যায় যে কোনো উপায়ে নুন হলুদ দিয়ে। যদিও সুখেন দাস তাঁর আসল নাম নয়। তাঁর আসল নাম হলো আমাদের সেই বিখ্যাত প্রীতম দে।
কিন্তু যখন আমি শুনলাম যে সেই সুখেন দাস এর মানে প্রীতমের সেই ভালো খবরের কনসেপ্ট থেকেই নাকি চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলের অনন্য সম্মানের একটা কনসেপ্ট আবিষ্কার করেন সেই সময়ের চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলের বিখ্যাত ব্যক্তি রাহুল পুরকায়স্থ। সেই সারাদিন হাজার হাজার খারাপ খবরের মাঝে একটু ভালো খবর, কলকাতা মেট্রো বুলেটিনের একটা সেগমেন্টে একটু মন ভালো করা পজিটিভ খবর করতে বলেছিলেন সেই সময়ের চব্বিশ ঘণ্টার সর্বময় কর্তা জি আকাশ গ্রুপের ডিরেক্টর প্রয়াত অভীক দত্ত। প্রয়াত অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কে বলেছিলেন তিনি সেই কথা। আর যে কথা শুনে সেই প্রীতম বেড়িয়ে পড়েছিল রাস্তায় আপনমনে ক্যামেরা আর বুম নিয়ে। কিছুটা নিজের মন ভালো করতে আর কিছুটা দর্শকদের মন ভালো করার খবর খুঁজতে।
হ্যাঁ, এটাই তো আমাদের সেই সুখেন দাস ওই হাসি মুখের প্রীতম। যে আমায় বহুদিন আগে অনায়াসে হাসি মুখে ফোন করে বলেছিল আমি তখন চব্বিশ ঘণ্টার চাকরি ছেড়ে সদ্য বেকার জীবন নিয়ে বোলপুরে থাকি। দাদা কেমন আছো তুমি। আমি বললাম বিন্দাস আছি ভাই। টোটো চালক হয়ে দিব্যি আছি ভাই। যেমন বলি আমি সবাইকে সেই কথা বললাম তাঁকেও। আর সেই প্রীতম কোনো আগুপিছু না ভেবে সাফ কথা তাঁর। যে দাদা একটা অনুরোধ আমার তোমার কাছে। কি অনুরোধ ভাই। দাদা তুমি যে টোটো চালকের কাজ করছ বোলপুরে আমি শুনলাম। টোটো চালকের সেই একটু তোমার ছবি দেবে। তুমি টোটো চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ রাস্তায় রাস্তায়। এটা নিয়ে আমি একটা খবর করে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখাবো। যদি তুমি এটা একটু করে দাও খুব উপকার হয় আমার।
আমি ওকে আর কোনো কথা না বলে বললাম দেখছি ভাই আমি। কিছুটা রাগ, কিছুটা অভিমান হয়েছিল ওর ওপর আমার সেই দিন। এইভাবে ছোটো হতে হলো আমায়। খুব কষ্ট লেগেছিল সেই দিন ওর এই কথা শুনে। তাহলে টোটো চালকের কাজ সত্যিই করে করলে আরও কি খারাপ অবস্থা হতো আমার কে জানে। সেই থেকে কিছুটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিলো ওর আর আমার মধ্যে। কিন্তু সেই দীপেন্দ্র গোস্বামী যখন বারবার সেই সুখেন দাস এর কথা লিখতে বলেন আমায় তখন আবার মনে হলো একটু সিঁটিয়ে যাওয়া সেই পুরোনো সম্পর্ককে একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক আবার। আর তাই এই রাত দুপুরে ওকে নিয়ে লিখতে বসলাম আমি বহুদিন পরে।
সেই ভালো খবরের খোঁজ করতে নেমে এমন খবর এমন চরিত্রকে তুলে আনা হতো , যে সেই সব চরিত্র আর প্রান্তিক মানুষেরা সন্ধান দিলো এই অনন্য সম্মানের অনুষ্ঠানের। যা তৈরি করলেন রাহুল দা। যেটা কিছুটা হলেও সেই প্রীতমের অবদান ছিল বলে মনে করা হয় আজও এতদিন পরেও। পরে যদিও তাকে আভিজাত্যের মোড়কে মুড়ে সেটাকে ভালো করে বাজার জাত করছিল সেই সময়ের চব্বিশ ঘণ্টার বিখ্যাত কর্তা ব্যক্তিরা। কেউ হয়তো বেঁচে আছেন আবার কেউ নেই। কিন্তু প্রাথমিক ধারণা কিন্তু প্রীতমের ভালো খবরের হাত ধরেই হয়েছে চব্বিশ ঘণ্টার সেই বহু পুরোনো বিখ্যাত অনুষ্ঠান অনন্য সম্মান। যা বেশিরভাগ সেই বাম আমলের বিশেষ আলোচিত একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বিখ্যাত অনুষ্ঠান এটি।
সেই যে ওয়েদার বিটে খবর করতে যাওয়া ওর, দুপুর হলেই আলিপুর চলে যাওয়া হাওয়া অফিসে সাংবাদিক বৈঠক কভার করতে বলে। আর তারপর সেই অফিস এর গাড়ী নিয়ে রামরাজা তলার দিকে চলে যাওয়া। বার বার ওকে বলেও কোনো ফল না হওয়ায় বিকল্প রাস্তার কথা ভাবা অ্যাসাইনমেন্টের কর্মীদের। সেই নিয়ে যে কত কিছু ঘটেছে মিটিং হয়েছে তার ঠিক নেই। কিন্তু আমাদের প্রীতম সেই এক ভাবেই চালিয়ে গেলো আর কি।
আর কোনো সত্যিই ভালো খবর পেয়ে গেলেও সেটা নিয়ে অফিস জুড়ে হৈ চৈ হুল্লোড় হলেও ওর সেই কাঁদ কাঁদ মুখে সলাজ জবাব দাদা হয়ে গেছে, আমি জানিনা কি করে হলো সেটা। ওই ভালো খবর কি করে হলো কে জানে। এমনকি তার যে কোনো কৃতিত্ব নেই সেই খবরে সেটা বোঝাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত সেই সময় প্রীতম তার দাদাদের। তার উক্তি দাদা আমি যে ভালো রিপোর্টার নই দাদা। তাই কি করে ভালো খবর করবো বোলো আমি।
এটাই হলো আমাদের সেই বিখ্যাত সুখেন দাস বা প্রীতম দে। যার সাথে চব্বিশ ঘণ্টা চাকরি ছেড়ে আমার আর কথা হয়নি বহু দিন ধরে ওই একবার আমার ছবি চাওয়া ছাড়া। শুনেছিলাম প্রীতম টিভি নাইন এর কাজ করে যাচ্ছে মন দিয়ে। দেখেছি টিভির পর্দায়। আর একদিন শুনলাম না সে টিভি নাইন এর কাজ করছে না ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে আছে। হয়তো কাউকে কাউকে ফোন করে বলে একদম বিরক্ত না করে দাদা একটু মনে রেখো আমায়। ব্যস, ওইটুকু তার আবদার। পুরোনো দাদার কাছে। এর থেকে বেশি কিছুই চাহিদা নেই তার।
যে একমাত্র রিপোর্টার এই কলকাতা শহরের এই ইট কাঠ পাথরের ভীড়ে মন ভালো করা খবর করতে যার একদম জুড়ি মেলা ভার। আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে সেই বিখ্যাত রিপোর্টার প্রীতম দে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে হারিয়ে গেছে তার আর এক বন্ধু এবিপি আনন্দের সেই বিখ্যাত সাংবাদিক সঞ্চয়ন মিত্র। যাঁরা কঠিন এই খবরের দুনিয়ায় থেকেও কেমন করে যেনো মন ভালো করা খবর পরিবেশন করে আমাদের মন ভালো রাখতে জানত। সেই বাংলা মিডিয়ার সুখেন দাস কে সত্যিই আমি বড়ো মিস করছি।
আমাদের সেই সুখেন দাস - অভিজিৎ বসু।
পনেরো নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন