শীতের সকালে খেজুর গাছের ছবি। গাছে হাঁড়ি লাগানোর ছবি। খেজুরের রস তৈরির যে উদ্যোগ চলছে গ্রামে সেটা দেখার আমন্ত্রণ তিনি জানান আমায় ফি বছর। এইবারও নিয়ম মেনে সেই ছবি দিয়ে বলেছেন চলে আসুন দাদা আপনি আমাদের গ্রামে। রসিক ভাই এর গুড় তৈরি হচ্ছে নিয়ে যান। দেখে যান। গন্ধ উপভোগ করে যান। একে নাম রসিক। তারপর রসিক এর রসের খেজুর রসের গুড়।
শীত পড়লেই পরিযায়ী পাখির মতই নদীয়া থেকে যারা চলে আসেন গ্রামে গ্রামে। বীরভূমের বোলপুরের প্রান্তিক এর কাছে ধর্মতলার কাছে ওরা গুড় তৈরি করে গদাধরপুর গ্রামে। এই সব এলাকার গোপীনাথপুর ও গদাধরপুর গ্রামের নানা জায়গায় গাছ থেকে রস নামিয়ে তৈরি হচ্ছে সাধের খেজুর রসের গুড়। আদিত্যপুর মোড়ে দেখা পেয়েছিলাম এমন এক জনের। নাম ছিল নবীন গুড়ওলা। সেও নদীয়া থেকে এসে আশপাশের প্রায় চারশো গাছ লিজ নিয়ে এই শীতের সময় ব্যবসা করেন। এই মিষ্টি মধুর গুড়ের ব্যবসা। যার গুড় দিয়ে মিষ্টির দোকানে তৈরি হয় গুড়ের রসগোল্লা। যার স্বাদ অনির্বচনীয়। এইভাবেই শীতের মরশুমে এলেই টাটকা গুড়ের স্মৃতি আমায় কাবু করে।
বিশ্বজিৎ এর সাথে দেখা হয়েছিল বছর চারেক আগে প্রান্তিক থেকে কোপাই যাওয়ার রাস্তায় ধর্মতলার মোড়ে। প্রথমে ফোনে কথা শুরু হয়। পরে তার সাথে দেখা হয় একদিন। মাঝে মাঝেই তার বাড়িতে যাওয়ার নিমন্ত্রন করে সে। যেমন হয় আর কি ভাবনা চিন্তার নিমন্ত্রণ নয় একদম সোজা সাপটা আমন্ত্রণ। গুড় নিয়ে যান, ক্ষেতের সর্ষে ফলেছে ঘানির টাটকা তেল নিয়ে যান। সর্ষে ক্ষেতে এসে ছবি তুলুন। এমন নানা উপহার সে বারবার আমায় দিতে চাইলেও সেটা নেওয়া হয়নি কোনদিন।
মাঝে মাঝেই এই নিয়ে মান অভিমান হয়েছে। ফোন এর ওপর প্রান্ত থেকে রাগ করে বলেছেন দাদা আপনাকে আর আসতে হবে না আমাদের গ্রামে। আমি বলেছি যাবো যাবো দাদা। কিন্তু তাতে সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। আবার ও কিছু সকালের ছবি দেখে মনে পড়ে গেলো সেই কথা। শীতের আলসেমির সকালে সাইকেল নিয়ে এতদূর যাওয়াটা খুব চাপের। তবু নতুন গুড় বলে কথা। তার টানে একবার যেতে হবেই।
ওর নতুন ব্যাগ এর দোকানে যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি ওর বাড়িতেও। কিন্তু চার বছর ধরে আমাদের যোগাযোগ ঠিক রয়ে গেছে। উনি যদিও বোলপুরে আমাদের ভাড়া বাড়িতে এসেছেন রামকৃষ্ণ রোডে। বলেছেন দাদা আমি এলাম এরপর আপনি যাবেন কিন্তু। আসলে এই সহজ সরল সম্পর্কটা রয়ে যায় আর কি। না হলে কেউ কি আর বলেন আমার নিজের জায়গায় ঘর করে থাকবেন ক্ষতি কি দাদা। সত্যিই অচেনা অজানা মানুষের কত নিকটের হয়ে যান। আর আত্মীয় স্বজনেরা কত দূরের হয়ে যান। এটাই বোধহয় আসল চিত্র এক মানুষের সাথে অন্য মানুষের।
ঠিক ওই রসিক ভাই এর গুড়ের রসের মতই আঠালো চিটচিটে সম্পর্ক। যে সম্পর্ক একদিন দুপুরে ধর্মতলার মোড়ে রাস্তায় দেখা হয়ে তৈরি হয়েছিল। সেই সম্পর্ক আজও কেমন করে টিকে আছে কে জানে। শীতের সকালে এমন কিছু ছবি দেখে মনে হলো দু চার কথা লিখি আমি। সে রাগ করুক ক্ষতি কি। এমন সুন্দর দৃশ্য। ট্রেন এর চলে যাওয়া। গাছের মাথায় উঠে রস পাড়া। তারপর গরম রসে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা এসবের মাঝেই যে এই শীতের আসল রূপ রস গন্ধ লুকিয়ে থাকে। লুকিয়ে থাকে চিটচিটে সম্পর্ক। যা চট করে ভেঙে যায় না কিছুতেই। ভালো থাকবেন বিশ্বজিৎ দা। আমাদের দুজনের সম্পর্ক যেনো এইভাবেই টিকে থাকে।
শীতের সকালে একটি রসের গ্রাম - অভিজিৎ বসু।
পঁচিশ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য বিশ্বজিৎ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন