মাথায় ছোটো ঘটিতে আগুন। দড়ির ওপরে ছোটো দু পায়ের ব্যালেন্স এর খেলার মাদারি কা খেল। জীবন মরণের খেলা দেখিয়ে দু পয়সা রোজগার এর কঠিন কঠোর অপরিসীম চেষ্টা করা। অষ্টমীর রাতে চন্দননগর স্ট্রাণ্ড ঘাটের ওপর সেন্ট জোসেফ স্কুল এর সামনের এই দৃশ্য দেখে পথ চলতি অনেকেই ঠাকুর দেখার ভীড়ে আটকে যাচ্ছেন। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। কেউ পকেট থেকে রাস্তায় রাখা থালায় দু পয়সা বা পাঁচ বা দশ টাকা দিচ্ছেন। আবার কেউ সেই ঘুরে বেড়ানো বাচ্চার হাতে তুলে দিচ্ছেন দু পাঁচ টাকা।
আবার কেউ শুধু জীবন মরণের এই ব্যালেন্সের খেলা দেখে এগিয়ে যাচ্ছেন গঙ্গার পাড় ধরে পরের ঠাকুরের মণ্ডপে ভীড় ঠেলে। ফুটপাথের ওপর ছড়িয়ে থাকা ওদের ছোট সংসার। কালো প্লাস্টিকের ওপর বসে থাকা ছোটো ভাই, কেমন মুখে রং মেখে সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে খুশি মনে এদিক ওদিক। ওদের মা কালো প্লাস্টিকে বসে দেখছে মেয়ের ব্যালেন্সের খেলা একনজরে যেনো কোনো বিপদ না হয়। আর একজন অন্য কেউ দাদা হবে হয়তো যে লোহার রিং বা ঘটিতে আগুন এগিয়ে দিচ্ছে মেয়েটিকে।
হিন্দি গান বাজছে যে গানের তালে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে ওই ছোট্ট নাম না জানা মেয়েটি দড়ির ওপর দিয়ে এদিক থেকে ওদিক আর ওদিক থেকে এদিক। যে শুধু জানে এই ব্যালেন্সের খেলা দেখিয়ে তাকে দু পয়সা রোজগার করতে হবে এই পূজোর মরশুমে কটা দিন। আর সেই রোজগারে তাদের পেট ভরবে।
আসলে জীবনের এই ব্যালেন্সের অদ্ভুত খেলা তো আমরা সবাই খেলছি। অদৃশ্য এক সুতোয় নেচে চলেছি আমরা কেমন নিজেদের অজান্তে। মেয়েটির এই ব্যালেন্সের খেলা দেখতে দেখতে আমার সেই কথাই মনে হলো। ইচ্ছা হলো কথা বলতে জানতে বাড়ী কোথায়। কিন্তু না, অদৃশ্য সুতোয় ঝুলে থাকা সম্পর্কের কারণেই হয়তো ওদের সেটা জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না আমিও। দুর থেকে দেখলাম কেমন নিশ্চিন্ত হয়ে একা একমনে মাদারিকা খেল দেখিয়ে ব্যালেন্সের খেলা খেলে চলেছে ওই ছোটো মেয়েটি। আর আমি সেটা দেখে মনে মনে ভাবলাম মেয়েটির ক্যালি আছে বলতে হবে। যা আমরা করতে পারিনা সেই ছোট মেয়েটি কিছুটা করে দেখিয়েছে। পেটের জন্য কত কিছুই না করতে হয়।
'মাদারি কা খেল' - অভিজিৎ বসু
দশ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন