সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের পদু

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমাদের সেই প্রদীপ সাধুর গল্প। আমাদের সবার আদরের সেই পদু। চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলে কাজ করতে গিয়ে ওকে আমি পেলাম সেই পোদ্দার কোর্ট এর অফিসে। বেশ সুন্দর হাসি মাখা মুখের ছেলে প্রদীপ। কোনো কাজ করতে ওর না নেই। সব কাজ নতুন করে শেখার প্রবল বাসনা ওর। শুধু মাত্র ওই ব্রেকিং বা টিকার লিখতে বললেই পদুর একটু আপত্তি আছে। কতবার যে এই নিয়ে ও নানাভাবেই অনুনয় বিনয় করেছে শৌনক এর কাছে তার ঠিক নেই। আর শৌনক গম্ভীর মুখে বলেছে, শোন তুই কিন্তু কাল ব্রেকিং এই বসবি লোক নেই। পদু পেছনে হাত দিয়ে চুপ চাপ শুনে নিজের চেয়ার এ গিয়ে বসে পড়েছে মাথা নিচু করে চিন্তা নিয়ে। কিন্তু মুখে না বলেনি। আজ সকালে সেই আমাদের ইনজেস্ট এর পদুর কথা মনে পড়লো আমার। 


সেই ওর বিয়ের আগে শুভ্রনীল এর ওকে বলা এইবার তোকে চেহারা দ্রুত ঠিক করতে হবে কিন্তু। ঘোড়ার মতো মাঠে খেলতে হবে, দৌড়তে হবে। তাই তোকে ছোলা খেতে হবে কিন্তু রোজ। ব্যস আর কোনো কথা নেই ওর। শুভ্র দাদার কথা শুনে প্রদীপ সাত সকালেই মর্নিং শিফট এর অফিসে আসছে ব্যাগে করে টিফিন বক্স করে ভেজানো ছোলা আর বাদাম নিয়ে। সকালে হাসি মুখে সবাইকে পদু ছোলা ভেজা খাওয়াচ্ছে হাসি মুখে এই টেবিল ওই টেবিল এ ঘুরে ঘুরে। এই হলো আমাদের সেই প্রদীপ। ওর কোনো শত্রু ছিল বলে শুনিনি আমি যে ওকে পছন্দ করতো না। সেই ওর বেলেঘাটার বাড়িতে মাকে নিয়ে ওর একা থাকা। সেই বেলেঘাটা থেকে ফুটবল খেলতে যেতো ও। ভালো ফুটবল খেলতো প্রদীপ। 

যেবার সেই ইনজেষ্ট এর চেয়ারে বসে অফিস এর বাৎসরিক অ্যাপ্রাইসাল এর সময় পদুকে ভালো নম্বর দিলো ধ্রুব। আর বুকে জড়িয়ে ধরে নিল। প্রদীপ এর মুখের হাসিটা কি সুন্দর ছিল সেই দিন। আর সেই ওকে সৌম্য সিনহা বলত নানা কথা ও সেটাকে একদম আমল দিত না কিন্তু। পেছনে লাগতো কুশলও। ওর সেই পিসিআর এর ডিউটি করার শখ ছিল বহুদিনের। তার জন্য সে এক চব্বিশ ঘণ্টার দাদাকে বারবার ধরে বলে দাদা তুমি ওই জায়গায় একটু সুযোগ দিও। সেই ডান আর বাম দিকের চাকা ঘোরানো ডিউটি। সেই সময়ে ডিউটি করা অজয় দা, কৃষ্ণ দা, প্রদীপ আর জয়ন্ত আর বিভাস এরাই ছিল প্রথমে টিপি অপারেটর এর কাজে যুক্ত চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেলে। পড়ে বিভাস পি সি আর এর ডিউটি শুরু করায় প্রদীপ কাজ পায় এই চব্বিশ ঘণ্টা অফিসে। পরে এরাই সব ব্রেকিং আর টিকার এর কাজে যুক্ত হয় ধীরে ধীরে। এই তথ্য সরবরাহ করলো দীপেন্দ্র গোস্বামী।

আসলে এই ধরনের চরিত্র বেশ মজার হয়। যেদিন শৌনক রোস্টার করবে সেদিন প্রদীপ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে হেড মাস্টার এর সামনে মাথা নিচু করে। কারণ ওর একটা ছুটি দরকার মেয়ে দেখতে যাবে ও বাড়ির লোকদের সাথে। কিন্তু সেটা হয়তো বলতে পারছে না কিছুতেই। আবার সেই ঝড়ের রাতে আমাদের ডিউটি করা মিডিয়া সিটি অফিসে পদু আমি আর ওর পছন্দের এক দাদা। পদু ইনজেস্ট এর চেয়ারে বসে রাত দুটোর পরে ঘুমিয়েই পড়লো।

 বকা ঝকা করলেও ওর মুখের সেই হাসিটা কিন্তু রয়ে গেছে আজও। সেই ওর বিয়ে হলো হাওড়াতে। তখন ও বেলেঘাটার ওদের শরিকি বাড়ী ছেড়ে বাগুইআটির ভাড়া বাড়িতে থাকে মাকে নিয়ে। অফিস এর সবাইকে বেশ ভালো করে নিমন্ত্রণ করলো। একটু লজ্জা লজ্জা মুখে ও অফিস এর বসদের কার্ড দিলো সবার কাছে গিয়ে তাদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লজ্জা অবনত মুখে। সেই নামে নামে কার্ড দেওয়া নিয়ে কত যে ওর পিছনে লাগা হয়েছে তার ঠিক নেই। শৌনক বলতো ওকে তুই তো সব বসদের নামে নামে কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করলি আমায় তো কার্ড দিলিনা। কিন্তু ও রেগে গিয়ে কাউকে কিছু বলছে এই সব কথা শুনে। আমার মতো মাথা গরম করে অফিস ছেড়ে চলে গেছে এমন কিন্তু হয়নি কোনদিনই। একদম ফুটবল মাঠের খেলোয়ার এর মত হিসেব করে ঠাণ্ডা মাথায় বল নিয়ে এগিয়ে গেছে ওর নিজের লক্ষ্যে। এটাই বোধহয় পদুর সবথেকে বড় গুণ একটা। যার জন্য আজও কেমন টিকে আছে সাইড ট্যাকল করে হাসি মুখে এই শক্ত পাথুরে মাঠে।

মাঝে শুনলাম সেই ওর চব্বিশ ঘণ্টা ছেড়ে টিভি নাইনে চলে যাওয়া। সেই ইনজেস্ট এর চেয়ারে আর পদু নেই এটা ভাবতেই কেমন লাগলো আমার শুনে। আমি যদিও টোটো চালকের কাজ করবো বলে চব্বিশ ঘণ্টা ছেড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। একটা সুন্দর সাজানো গোছানো ভীড় করা ভরা চব্বিশ ঘণ্টার ভরা সংসার ক্রমেই দ্রুত ভাঙতে থাকলো। বেছে বেছে কিছু লোককে নিয়ে মিডিয়া সিটির ওপর তলায় নতুন চ্যানেল হলো টিভি নাইন এর। আমাদের আশপাশের চেনা মুখগুলো সব চলে গেলো আমাদের ছেড়ে অন্য চ্যানেলে। একটা ভরা চ্যানেল ধীরে ধীরে কেমন মরা হয়ে গেলো আমাদের চেনা দাদাদের হাত ধরেই। ভেঙে যাওয়া সংসার দেখে বেশ খারাপ লাগতো আমার সেই সময়। একটা যৌথ পরিবার ভেঙে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আর সবার সাথে আমাদের সদা হাস্যময় সেই পদুও ওপরে উঠে গেলো। টিভি নাইন এর কাজ পেয়ে এগারো তলা থেকে চোদ্দো তলায় চলে গেলো ওর সেই চেনা ঢঙে পকেটে হাত দিয়ে।

 তারপর একদিন শুনলাম ওর কোমরের অসুখ বেড়ে গেলো। দীর্ঘ দিন অফিস আসতে পারল না প্রদীপ। মাঝে মাঝেই খবর নিতাম আমি শুভ্রজিত আইচ এর থেকে। যাকে আমি ফ ব বলি। মানে আমাদের বাম শরিক ফরোয়ার্ড ব্লক দল। প্রদীপ কেমন আছে শুভ্রকে জিজ্ঞাসা করি। চাকরি করার সুবাদে ওর সাথে ফোনে যোগাযোগ থাকলেও মিডিয়ার কাজ ছেড়ে টোটো চালকের কাজ করলে কে আর যোগাযোগ করবে আমার সাথে। পদু ও ভুলে গেলো আমায় তাই ধীরে ধীরে। যে রোজ ভোরবেলায় অফিস এসে বলতো অভিজিৎ দা এই নাও ছোলা খাও তুমি। সন্ধ্যায় মুড়ি খেতে গেলে হাসি মুখে মুড়ির ঠোঙা এগিয়ে দিত ও অভিজিৎ দা এই নাও তুমি খাও। সেই পদু ও কেমন ভুলে গেল। এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা।

 তখন যে আমি টোটো চালক হয়ে যাইনি তাই বোধ হয় কথা বলতো ও। আর ও হয়তো জানতো যে এই লোকটা মুখে রেগে দু চার কথা বললেও ক্ষতি করবে না ওর কোনোদিন। তেমন আবহাওয়া ছিল সেই সময় অফিসে। একদম কাউকে মেরে দিয়ে, তাড়িয়ে দিয়ে, দাদা আর দিদি কার লোক এই কথা প্রকাশ্যে বলে ভাগাভাগি করে দেওয়া, এমন মিডিয়ার নব্য যুগ বোধহয় শুরু হয়নি তখনও। যা পরে চলে এলো এই বাংলা মিডিয়াতে বেশ প্রকট ভাবেই।

 আজ ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে তাই আমার সেই অজাতশত্রু ওই পদুর কথা মনে পড়ে গেলো। এই সব নানা ছোটো, বড়ো চরিত্র নিয়েই তো জীবন। জীবনের মাঝে সমুদ্রের তীরে হেঁটে বেড়ানো, ভেসে বেড়ানো। যেখানে সেই পদুর মুখের উজ্জ্বল হাসিটা আজও অমলিন হয়ে টিকে আছে।একদিন সেই সেক্টর ফাইভ এর রাস্তায় দেখা হয়েছিল দেখলাম দুপুর বেলায় ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিস যাচ্ছে। দেখা হলো ওর সাথে তখন আমিও কিছু দিন সেক্টর ফাইভ যাচ্ছি এক প্রাক্তন বন্ধুর বদান্যতায় আর সহযোগিতায়। যদিও সেই চাকরি বেশিদিন করার সুযোগ আর সৌভাগ্য হয়নি আমার। পদু আমায় দেখেই একগাল হেসে বললো অভিজিৎ দা ভালো আছো তুমি। অসুস্থতা কাটিয়ে ও তখন আবার কাজে ফিরেছে। বেশ ভালো লাগলো ওকে দেখে সেদিন। তারপর আর দেখা কথা হয়নি ওর সাথে।


 আজ ও নতুন নতুন কিছু কাজ শিখতে খাতা আর পেন নিয়ে পদু বসে পড়ছে এদিক ওদিক ওর টিভি নাইন এর অফিসে। শিখে যাচ্ছে তার নিজের কাজ ছাড়াও। যা নিয়ে অনেকে হয়তো হাসছে তাকে দেখে। কিন্তু ওর তাতে কোনো লজ্জা ও ভ্রুক্ষেপ নেই। কোনো সময় পিসিআর এর কাজ। কোনো সময় ভি স্যাট এর কাজ। কোনো সময় অন্য নতুন কোনো কাজ। কারণ পদু জানে শেখার কোনো শেষ নাই। যে শেখার আগ্রহ দিয়েই পদু কেমন স্বচ্ছন্দে এই কঠিন মিডিয়ার সবুজ মাঠে ড্রিবল করে হাসি মাখা উজ্জ্বল মুখে এগিয়ে চলেছে ধীরে ধীরে।

আমাদের পদু - অভিজিৎ বসু।
আট নভেম্বর, দুহাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...