সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র, এই কথা সর্বজনবিদিত। আর আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় এতদিন ধরে নানা মুখ, নানা চরিত্রের ভীড়ে হাজার মানুষের ভীড় উপচে পড়েছে আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে আঁকাবাঁকা অক্ষরে এই মেঠো পথে। আমার এই নানা লেখায় রিপোর্টার, ক্যামেরাম্যান, ডেস্ক এর লোক, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কনসাল্টিং এডিটর, ম্যানেজিং এডিটর থেকে শুরু করে নানা বিভাগের লোকজন হাজির হয়েছেন অনেকেই হাসি মুখে। কেউ বলেছেন বেশ ভালো হয়েছে, খুশি হয়েছেন তিনি আমার ব্লগের লেখা পড়ে। আবার কেউ বলেছেন আমাকেও ছাড়লো না যে। হ্যাঁ, টোটো চালকের বিন্দাস জীবনের এই কলমে এইভাবেই উঠে এসেছেন অনেকেই নানা সময়ে, নানা ভাবে।
কিন্তু আমি এতজনকে নিয়ে লিখলেও সাহস করে একটা বিভাগ নিয়ে লিখতে পারিনি আমি বুকে দম নিয়ে। আসলে টিভি চ্যানেলে এর এই সংবাদ পাঠিকা বা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাঙ্করদের নিয়ে লিখতে সাহস হয়নি আমার কিছুতেই কোনোদিন। এই সব স্টার বা নক্ষত্র আলোকে খচিত উদ্ভাসিত সব তারাদের নিয়ে লেখার কথা মনে হলেও লেখার মত সাহস হয়নি আমার এই দুর্বল শ্রেনীর টোটো চালকের। এই মিডিয়ার একটা অন্য জগতে কল্পলোকে বিচরণ করা এই বিশেষ শ্রেণীর বিখ্যাত সব ঝাঁ চকচকে সাংবাদিকদের নিয়ে লিখতে মন চাইলেও পারিনি আমি কোনোদিনই।
যাঁদের টিভির পর্দায় দেখে আমরা মুগ্ধ হই, বুদ্ধ হই আর কৃতার্থ হই। কিছুটা যেনো স্বপ্নলোকে বিচরণ করি। যাদের ওই বোকা বাক্সের পর্দায় দেখি তাঁরা সব আমার আশপাশ দিয়ে হেঁটে চলে ঘুরে বেড়ান। আর আমি কেমন অবাক হয়ে দেখি তাঁদের। কিন্তু একটা দূরত্ব বজায় রেখেই চলি কিছুটা ভয় আর কিছুটা ভক্তিতে। সে যাই হোক হয়তো এই লেখার পর সেটা কিছুটা কেটে যাবে। কিন্তু আমার অতীত দিনের অভিজ্ঞতা তো আর খুব সুখকর নয়। যাক গে সে সব কথা বাদ দিন। সাদা কালো জীবনে সাদা রঙের আঁকিবুঁকি দাগ কেটে যাই আমি আর কি। কালো দাগ না হয় নাই বা কাটলাম।
আজ যাকে নিয়ে লিখবো বলে আমি ভয় কাটিয়ে কলম ধরলাম সেই বাংলা মিডিয়ায় সুন্দর উজ্জ্বল মুখের ঝকঝকে নানা কর্পোরেট চ্যানেলে কাজ করা বিখ্যাত এক সংবাদ পাঠিকা সেই কোয়েল পাল। আসলে চব্বিশ ঘন্টায় কাজ করতে গিয়ে ওকে দেখলাম আমি প্রথম। হাসিখুশি একদম বেশ সুন্দর একটি মেয়ে। যার সাথে চা খেতে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায়। যার সাথে একটু আধটু ঠাট্টা তামাশা ইয়ার্কি মজা করা যায় বুকে সাহস নিয়ে বল আর ভরসা নিয়ে।
তাই কতদিন যে মিডিয়া সিটির বাইরে সেই বিখ্যাত প্রদীপদার দোকানে চা খেতে গিয়ে গল্প করেছি দাঁড়িয়ে পড়ে আজ সেই সব নানা কথা মনে পড়ে গেলো আজ এই এতদিন পরে। ওর চব্বিশ ঘন্টা ছেড়ে চলে যাওয়া টিভি এইটিন এর চ্যানেলে। তারপর আবার টিভি নাইন এর পর্দায় ফিরে আসা। সব পুরোনো দিনের চব্বিশ এর লোকদের সাথে ওর কাজ করা। সেই সব নানা ছবি আর কোলাজ দেখে বেশ ভালই লাগত আমার দুর থেকে।
কিন্তু ওর হঠাৎ মিডিয়া ছেড়ে মুম্বাই চলে যাওয়া শুনে একটু অবাক হলাম আমি। ভাবলাম কি হলো কে জানে। কিছুটা দ্বিধা আর দ্বন্দ্ব নিয়ে যোগাযোগ হলো বহুদিন পর ফেসবুক এর আমার লেখা পড়ে। ভাবলাম তাহলে হয়তো ভুলে যায়নি এখনো এই মিডিয়া ছেড়ে দিলেও আমি। একটু অস্বস্তি নিয়ে বললাম তুমি ভালো আছো তো। সেই আগের মতই হৈ হৈ করে বলল হ্যাঁ, অভিজিৎ দা। বৌদি আর মেয়ে ভালো আছে তো। বেশ ওর এই পরিবার এর লোকজন কেমন আছে জানতে চাওয়া শুনে আমার বেশ ভালো লাগলো বহুদিন পর।
একদম ঠিক আগের মতই আন্তরিক যেনো। কোনো লোক দেখানো ভাব ভঙ্গি নয়। মেয়ের কথা জানতে চাইলো কোয়েল। বললাম এই আমার নম্বর যোগাযোগ হলো ভালো লাগলো বেশ। ওর কথায় তোমার নম্বর আমার সেভ করা আছে দাদা। আমি একটু অবাক হলাম আর বেশ ভালো লাগলো এতদূরে থাকা একজন বিখ্যাত সাংবাদিক যে এখনও মনে রেখে দিয়েছে আরব সাগরের নোনা জলের উত্তাল ঢেউ খেলানো বালি পথে হাঁটতে হাঁটতে এই ক্ষুদ্র টোটো চালককে এতদিন পরেও।
আসলে জীবনের এই সব ছোটো ছোটো নানা পাওনা। কর্মজীবনের এই নানা ছোটো ছোটো হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক। এই নানা মাতব্বর আর স্টারদের ভীড়ে এমন ছোটো তারার নরম আলোর রোশনাই আমায় সত্যিই বেশ আনন্দ দেয়। মনে হয় জীবনের গভীর গোপন সম্পর্ক তো শুধুই একে অপরকে ঠেলে দিয়ে ওপরে ওঠার জন্য নয়। এই সম্পর্কের মাঝে হয়তো অনেক কিছুই লুকিয়ে থাকে। যাকে আমরা অনুভব করতে পারিনা সেই সময়। আজ বহুদিন পরে সেই কুয়াশা মাখা অনুভূতি আমায় স্নাত করলো। আজ এই হেমন্তের সন্ধ্যায় মনে হলো বোলপুর শান্তিনিকেতনের এই এক অতি ক্ষুদ্র এক মানুষের লেখা পড়ে যে আমায় বলে অভিজিৎ দা খুব ভালো লিখেছো তুমি। তার কথা সাহস করে লেখা যায় হয়তো কিছুটা।
ওকে বললাম জানো আমার মেয়ে কলাভবনের স্টুডেন্ট রেসিন এর নানা হাতের কাজ করে আর জাপানী ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করছে ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বললো ছবি দাও তুমি দেখি কেমন কাজ। ওর কাজের ছবি দেখেই বললো এই দুটো জিনিস আমার চাই কিন্তু। আমি বললাম ঠিক আছে আমি মেয়েকে বলে দেবো। এই নাও ওর নম্বর রাখো। মনে মনে ভাবলাম কতজন যে এমন বলেও আর কিছুই নেয়না হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে বলে পড়ে কথা হবে। আবার কেউ কেউ তো চিনতেই পারে না আর।
আর তার মাঝেই কোয়েল বোধহয় একটু অন্য ঘরানার অন্য ধরনের। না হলে কি আর আমায় চিনতে পেরে এতদিন পরে এমন সহজ সরল ভাবে কথা বলতে পারে কেউ। অন্য কারুর সম্বন্ধে লেখা পড়ে বলতে পারে বেশ ভালো লিখেছো কিন্তু তুমি অভিজিৎ দা। মেয়ের হাতে তৈরি জিনিস ওর বাড়ী মুম্বইতে পেয়ে খুব খুশি ও। আমায় বলে তোমায় বলে রাখলাম নতুন কিছু করলেই যেনো ও বলে আমায় ছবি দিও কিন্তু তুমি। কত ছোটো ওকে দেখেছি সেই চব্বিশ এর অফিসে আসতো পূজোর সময়।
সত্যিই বেশ ভালো ছিল দিন গুলো কোয়েল কি বলো। কিন্তু সব কেমন যেনো বদলে গেলো। ধীরে ধীরে আশপাশের চেনা মানুষ গুলো কেমন যেন বদলে গেলো। একে অপরকে টপকে ওপরে ওঠার হুড়ো তাড়া লেগে গেলো চারিদিকে। আর এসবের মাঝেই কেমন সুন্দর হাসি মুখ নিয়ে মুম্বই এর আরবসাগরের নোনা জলের ঢেউ এর মাঝে এই বিশ্ব বাংলার মিডিয়া ছেড়ে কোয়েল বোধহয় এখন ভালই আছে।
ওর মুখের সেই অমলিন হাসি। ওর উজ্জ্বল সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে আজও এত দূরে থেকেও। বাংলা টিভি মিডিয়ার দর্শক নিশ্চয়ই আবার একদিন এই সুন্দর মুখকে ফিরে পাবে টিভির পর্দায়। দেখা যাবে তার সেই সুন্দর মুখটাকে টিভির পর্দায় ফের। যার জন্য আজও আমরা অপেক্ষা করি। তবে ওর এই এত দূরে থেকেও এতদিন পর আপন করে নেওয়া। কেমন করে পারিবারিক কথা জানতে চাওয়া আমায় সত্যিই আভিভূত করলো। যা দীর্ঘ পাঁচ বছরে কেউ কোনো খবর নেয়নি আমার। সেটাই করে দেখিয়ে দিল কোয়েল। আর এটাই বোধহয় এই আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।
আমাদের অ্যাঙ্কর কোয়েল - অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
খুব সুন্দর লেখা হয়েছে।
উত্তরমুছুন