সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দেবমাল্যর ফোন

ওর সাথে আলাপ নেই। পরিচয় নেই কোনো। এই পঞ্চাশ বছরের আমার জীবনে কোনোদিন দেখিনি তাকে আমি। জানিনা কোনোদিন দেখা হবে কি না আমাদের দুজনের কোথাও। তবু আজ মনে হলো আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় প্রেস ফ্রীডম দিবস এর দিনে এমন এক এক জীবন নিয়ে কিছু কথা লেখা যেতে পারে আর কি। 

যার নাম আমি জানলাম ফেসবুকের দৌলতে। দেবমাল্য ভট্টাচার্য। বাড়ি বারুইপুরে। অল্প বয়স। এখনও ওর গায়ে ছাত্রের গন্ধ লেগে আছে। সদ্য মনীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতক হবার পর ও এখন সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ভর্তি হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রীট এর ক্যাম্পাসে। হঠাৎ একদিন দেখলাম ফেসবুকের মেসেঞ্জারে একটা লাইন লেখা, আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই আমি। 

আমি একটু ভয় পেলাম আর অবাক হলাম কি দরকার কে জানে রে বাবা। শামুকের মতো গুটিয়ে থাকা এক জন মানুষ আমি। জীবনের নানা হাজারো ঘাত আর প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে কোনরকমে কিছু মানুষের দু তিনজনের কাছে সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকা। সেই তেমন একজন মানুষের সাথে আর কি বা দরকার থাকতে পারে কারুর। যার সাথে কথা বলতে উৎসাহী হবে কেউ। লিখলাম তাকে হ্যাঁ, কথা বলতে পারো এই নম্বরে।

 আজ সকালে সেই ফোনটা পেলাম আমি। এই প্রেস স্বাধীনতা দিবসের দিনে একজন সাংবাদিকতা আর মাসকম নিয়ে পড়াশোনা করা এক ছাত্রের প্রশ্ন। আমায় এই টোটো চালকের কাছে, যদিও টোটো চালক আপাতত নই আমি। এটা আমি বলি বেশ ভালই লাগে আমার, বিন্দাস এই খোলামেলা টোটো চালকের জীবন। দাদা এই মিডিয়ার লাইনে কি কিছু ভবিষ্যৎ আছে কিছু করা যাবে উন্নতি। আপনার লেখা পড়ি আমি বেশ সুন্দর লাগে, ভালো লাগে। মনে হলো আপনাকে এই বিষয়ে একটু জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। 

আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই সবে তখন কলেজ থেকে পাশ করে সাংবাদিক হবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি আমিও ঠিক ওর মতই। ও যেমন ফিল্ডে কাজ করতে চায় ঠিক তেমনি আমিও রিপোর্টার হয়ে ঘুরতে চাই। সেই শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে তিন নম্বর বা দু নম্বর হবে সেই ছকু খানসামা লেন। সেই ফ্রিল্যান্স প্রেস ক্লাব। সেই অজিতদার অফিস আর পুরোনো বাড়ী। সেই বৈঠকখানা রোডের ট্রাম লাইন। টং টং ট্রামের ঘণ্টার আওয়াজ। আর সেই নানা ছোটো বড়ো চেহারার দোকানে কাগজের প্যাকেট এর উৎকট গন্ধ আজও আমার নাকে লেগে আছে। 

 সেই তৎকালীন সব বিখ্যাত সাংবাদিক স্নেহাশীষ শুর , কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী, ইন্দ্রানী রাহাদের দেখতে পেলাম সেই সাংবাদিকতার ক্লাসে গিয়ে। বোধহয় মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন একদিন ক্লাস করাতে। উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করছেন তারা সব আমাদের সামনে। সেই কাঠের বেঞ্চে বসে ক্লাস করা। একবুক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে সাংবাদিক হবো সবাই আমরা। সেই সময় বর্তমান কাগজের সেই বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হয়েছিলাম আমি, সাংবাদিক হতে চান? মার কাছে আবদার আর বায়না করে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে ভর্তি হলাম সেখানে আমি, সাংবাদিক হবো বলে। 

দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেলো। সালটা উনিশশো নব্বই সাল। পাশ করলাম বেশ ভালো ভাবেই। বোধহয় আমাদের ব্যাচ এর মধ্যে আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেলাম। স্যাররা সব আলতো করে পিঠ চাপড়ে বললেন, বাহ দারুন তোর হবে। কি হবে জানতাম না তখন আমি। উত্তাল ঢেউ আর সমুদ্রের মাঝে ঝাঁপ দিলাম আমি সেই সময়। ভাসতে ভাসতে নিজেই নিজের জীবন তৈরি করার চেষ্টা করলাম ধীরে ধীরে। সেই ওভারল্যান্ড কাগজের তিন দিনের কাগজে সেই সময়ে ষাট টাকার লেখা গ্রামীন হাট মেলা নিয়ে, সেই বর্তমান পত্রিকায় বিজ্ঞানের পাতায় ত্রিশ টাকার লেখা রূপকুমার বসুর পাতায়। আর সেই আজকাল পত্রিকায় মৃদুল দাশগুপ্তকে ধরে আজকালের আয়নাতে লেখা ত্রিশ টাকায়। হ্যাঁ, বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হয়ে লেগে পড়লাম সাংবাদিক হতে জোরকদমে। 

আজ দেবমাল্যর প্রশ্ন আর ওর আকুতি শুনে আমার মনে পড়ে গেলো বহু পুরোনো দিনের এইসব নানা কথা। সত্যিই কি এই পেশাকে ভরসা করে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় আজ। যাঁরা আমাদের শিক্ষক ছিলেন তারা অনেকেই আজ জীবন এর শেষ প্রান্তে এসে কেউ সরকারী চাকরী শেষ করে, কেউ সাদা বাড়ির চাকরি শেষ করে বেশ ভালো অবস্থায় দিন যাপন করছেন। কিন্তু এর মাঝে এই ভালোর মাঝেও যে অনেক কালো অন্ধকার লুকিয়ে আছে আমাদের চারপাশে। যাদের খবর হয়তো আমরা পাইনা। বা পেলেও মনে রাখতে চাইনা সেই সব কিছু। 

তাহলে কি জবাব দেবো আমি দেবমাল্যকে। যার জন্যে আজ এত কথা লিখতে হচ্ছে আমায় এই রাতের বেলায়। সত্যিই যে আশা আর স্বপ্ন নিয়ে ঝাঁপ দিলাম এই পেশায় আজ কি সত্যিই জীবনের শেষ অর্ধে এসে মনে হলো সঠিক ভাবে বিচার বিবেচনা করেই আমি এই পেশাকে বেছে নিয়েছিলাম। নাকি ত্রিশ বছর আগের সেই স্বপ্ন দেখায় কোনো ভুল ছিল আমার। যে স্বপ্ন আবার ঠিক আমার মতোই দেখছে ওই বারুইপুরের দেবমাল্য। যা একদিন দেখেছিল শ্রীরামপুরের এই অভিজিৎ বসুও।

ওকে বললাম দেখো এটা তো আর এখনই বলা যাবে না, যে তুমি নিশ্চিত করেই এই মিডিয়ার আগুন জ্বলা লাইনে ঝাঁপ দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে উল্কার মত দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর দ্রুত গতিতে তোমার উত্থান হবে। সবার আগে তুমি যে পড়া করছো সেটা করো। সেই আমার স্যার স্নেহাশীষ শুর বর্তমানে ওদেরও পড়ান ইউনিভার্সিটিতে। এখনও সাংবাদিক তৈরী করে চলেছেন তিনি আজও হাসি মুখে। বেশ ভালই লাগলো এটা শুনে আমার। সেদিনের সেই আমার স্যার আজ ওদেরও স্যার হয়ে টিকে আছেন আজও নিজের কর্মদক্ষতায়। সাংবাদিক গড়ে চলেছেন ত্রিশ বছর ধরে হাসি মুখে। বললাম পড়া শেষ করো দু বছর কাটাও তারপর যোগাযোগ রেখো আমার সাথে দেখা যাক কি হয়। 

সত্যিই ওর ফোনটা ছেড়ে আমার মনে পড়ে গেলো সেই ফ্রিল্যান্স প্রেস ক্লাব থেকে ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম কোর্স করার কথা। যে কোর্স করে সাংবাদিক হবার স্বপ্ন দেখা সেই আমি কি সত্যিই আজ সাংবাদিক হতে পেরেছি। এই প্রেস স্বাধীনতার দিনে সেই স্বপ্ন দেখা এক সত্যিকারের সাংবাদিক। যে কাউকে প্রশ্ন করতে ভয় পায়না, তার একবারও মনে হয় না এই প্রশ্নের জন্য তার চাকরির সংকট হতে পারে। তার সাংবাদিক জীবনের অস্তিত্বের সংকট হতে পারে। তার বসের কাছে রাজনীতির নেতাদের ফোন আসতে পারে। আর তারপর দিন থেকে তার কাজটা চলে যেতে পারে। আর সব সংবাদ মাধ্যমে রাজনীতির লোকদের তাঁদের পছন্দের লোকদের বসিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যমের গলা টিপে ধরা যেতে পারে। 

নাকি আমি শুধুই সমাজে, সংসারে, নেতা আর মন্ত্রীদের আর পুলিসের কাছে হাত কচলে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে সাংবাদিক হয়ে টিকে থাকতে পেরেছি। নাকি শুধু মাত্র একটা মিথ্যে স্বপ্ন আর ফাঁকা আদর্শকে বুকে জড়িয়ে আমি সৎ সাংবাদিক, সৎ সাংবাদিক বলে চিৎকার করে গেছি। আর আমার আশপাশের লোক জন তারা সব হাততালি দিয়ে হেসে উঠে বলেছে দেখ, দেখ কি অবস্থা ওর। সত্যিই বোধহয় শিরদাঁড়ার জোর দেখিয়ে বাঁচতে গিয়ে আজ এইভাবেই পাগল হয়ে গেছে লোকটা। 

জানিনা আমি সত্যিই যা হতে চেয়েছিলাম সেটা কি আমি হতে পেরেছি। দেবমাল্যর একটা ফোন আজ আমায় এতদিন পরে বহু কিছুর সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। ওর ফোনটা ছেড়ে দিয়ে এই প্রেস স্বাধীনতার দিনে আমি খুঁজতে থাকলাম সত্যিই কারের নিরপেক্ষ এক স্বাধীন অকুতোভয় সাংবাদিককে। যে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হয়ে স্বপ্ন দেখবে কিন্তু ভয় পাবে না কাউকেই। জানিনা আমি আমার এই স্বপ্ন দেখা সাংবাদিককে কোনোদিন খুঁজে পাবো কিনা এই পোড়া দেশে।

দেবমাল্যর ফোন - অভিজিৎ বসু।
সতেরো নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...