দিবসের তো শেষ নেই। আর সেই দিবস নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় এরও শেষ নেই। পৃথিবী জুড়েই এই নানা দিবস পালনের এখন ঘোর ঘনঘটা। সত্যিই বলতে কি আমার তো বেশ ভালই লাগে ঘুম থেকে সকালে উঠেই আজ কি দিন সেটা দেখতে আর জানতে। এই দিন পালন করে হয়তো খুব একটা কিছুই হয়না কিন্তু তবু তো একটা দিনকে স্মরণ করে কিছু কথা মনে পড়ে যায়। যাদের স্মরণ করে এই দিন পালন করা তাদের একটু হলেও মনে রাখার চেষ্টা করা আর কি এর বেশি কিছুই নয়।
১৯ শে নভেম্বর হলো বিশ্ব টয়লেট দিবস। আর সেই ওয়ার্ল্ড টয়লেট ডে- এর এই বছরের থিম হলো
'শৌচাগার: শান্তির জন্য একটি জায়গা'। যে শান্তির জায়গা সারা বিশ্বের আর কোথাও মেলে না। হ্যাঁ, সত্যিই তো আপনি ভাবুন যদি সেই আপনার প্রিয়, সব থেকে প্রিয় জায়গাতে সেই শৌচাগারে শান্তি, স্বস্তি, আর তৃপ্তি আর আনন্দ না থাকে তাহলে কেমন লাগে বলুন তো। সেই ছোট্টো জায়গায় কারুর বিরক্ত বা ডিস্টারবেন্স কিম্বা অনধিকার প্রবেশ মেনে নেওয়া যায় না কোনোভাবেই। সে যতবড় মাতব্বর আর তালেবরই হোক না কেনো।
এই প্রসঙ্গে আমার গোপাল ভাঁড়ের সেই বিখ্যাত গল্পের কথা মনে পড়ে যায় আর কি। যদিও সেই গল্প আমাদের সবারই জানা আছে। আর সেই কথা মাথায় রেখেই বোধহয় জাতিসংঘ এই বছর বিশ্ব টয়লেট দিবসের থিম করেছে, শৌচাগার শান্তির জন্য একটি জায়গা। যে শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও মেলে না। সে আপনি যেখানেই ভ্রমণ করুন। পাহাড়, পর্বত, জঙ্গল, সাগর যে স্থানেই যান। শৌচাগারের শান্তি একটা আলাদা শান্তি। যে শান্তি সারা পৃথিবী ঘুরেও মেলে না।
কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের ধরিত্রীর বুকে বাস করে ৮.২ বিলিয়ন বা ৮০০০ কোটিরও বেশি মানুষ। তার মধ্যে ৩.৫ বিলিয়ন মানুষের কাছে এখনও কোনও নিরাপদ টয়লেটের ব্যবস্থাই নেই। পাশাপাশি এরই মধ্যে গোটা পৃথিবীতে ৪১৯ মিলিয়ন বা ৪১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ নিরাপদ ব্যবস্থা তো দূরে থাক, মলত্যাগ করে একেবারে খোলা জায়গায়। ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস’ উপলক্ষ্যে এই তথ্য সামনে এনেছে স্ট্যাটিস্টা ডট কম।
ভাল এবং উন্নত শৌচাগার ব্যবস্থা রোগ-বালাই থেকে দূরে রাখে মানুষকে। নানা দেশের সংঘাত, রাজনৈতিক পালাবদল,গৃহযুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ এবং অবহেলার কারণে জীবনে নানা হুমকির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য মানুষ। ইউনিসেফের তথ্য যেসব শিশু অত্যন্ত খারাপ ও কঠিন পরিস্থিতিতে বাস করে তাদের খোলা মলত্যাগের অভ্যাস করার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি, মৌলিক স্যানিটেশন পরিষেবা না মেলার সম্ভাবনা চার গুণ বেশি এবং পানীয় জল পরিষেবার না পাওয়ার সম্ভাবনা আট গুণ বেশি।
বিশ্ব জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থার মধ্যে নেই,যার অর্থ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তারা। তবে বাইরে মলত্যাগ বন্ধ করতে এবং সকলের জন্য শৌচাগার পরিষেবার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। যেমন ২০০০ সালে বাইরে বা খোলা জায়গায় মলত্যাগ করত ১.৩ বিলিয়ন মানুষ। ২০১৭ সালে কোনও বাথরুমে অ্যাক্সেস নেই এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৬৭৩ মিলিয়ন এবং ২০২২ সালে তা ৪১৯ মিলিয়নে নেমে গেছে।
স্ট্যাটিস্টার তথ্য বলছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জেরে সাব-সাহারান আফ্রিকায় এখনও সেভাবে উন্নতি না হলেও কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, নেপাল এবং ভারতে ২০০০ সালের পর থেকে বাইরের মলত্যাগ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে এসেছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার আগে, ভারতের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি বাড়িতে একটি টয়লেট অ্যাক্সেস ছিল না। তারপর স্বচ্ছ ভারত বা পরিচ্ছন্ন ভারত অভিযানের জেরে ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশে।
এত গেলো সংখ্যা আর পরিসংখ্যান এর নানা জাগলারি আর তথ্য বহুল ভারী বিষয় নিয়ে আলোচনা। তবে একটা দু কামরার ফ্ল্যাটে দুটো টয়লেট মাস্ট। কারন কেউ যেনো সঠিক সময়ে বিরক্ত না হয় যে অন্য কেউ দরজা এঁটে বসে আছে আর শিস দিয়ে গান করছে। দেখরে নয়ন মেলে জগতের বাহার। কারণ এর থেকে ভালো নিরাপদ জায়গা তো আর হবে না কোথাও। সে গান হতে পারে, কবিতা হতে পারে, অভিনয় হতে পারে, কিম্বা উচ্চাঙ্গ সংগীত হতে পারে। আর তাই জাতিসংঘ এই বছর শৌচাগার শান্তির জন্য একটি জায়গা বলে তাদের এই বছরের দিবস পালনের থিম ঘোষণা করেছে। যে থিম নিয়ে ইতিমধ্য বেশ শোরগোল পরে গেছে।
দু হাজার এক সালে সিঙ্গাপুরের এক ব্যক্তি জ্যাক সিম নামের এক ব্যক্তি , স্যানিটেশন সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই ১৯ শেষ নভেম্বরকে বিশ্ব টয়লেট দিবস হিসেবে উদযাপনের প্রস্তাব দেন। ২০১৩ সালে জাতি সংঘ এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক টয়লেট দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আর সেই থেকেই এই দিন পালন হয়ে আসছে সারা বিশ্বে।
কিন্তু এত সব দিন পালন। থিম নিয়ে আলোচনা কিছুই ছিল না আমাদের সেই ছোটোবেলায়। ছিল শুধুই শান্তির জায়গায় নির্মল আনন্দ আর হৈ হৈ করে কোনো শৌচালয় ব্যবহার না করে খোলা আকাশের নিচে বাঁশবনেই সেই আনন্দ করে কাজ সেরে নেওয়া একে অপরের সাথে গল্প করতে করতে হাসি মুখে। শুকনো বাঁশ পাতার খোঁচা খেয়ে আর পাখির ডাক শুনতে শুনতে। আর বসন্তে কোকিলের কাতর আহবান শুনে।
সেই হরিপালের মায়ের মামারবাড়ির পিছনের খিড়কির দরজার পাশ দিয়ে গোয়ালঘর পার করে চলে যাওয়া বাড়ীর পিছন দিকে ডাক পড়লেই। তারপর অনাবিল সুখ আর আনন্দ নিয়ে দু কামরার ছোট্টো ফ্ল্যাটে ততোধিক ছোট্ট শৌচালয় নয় এটি। এ যেনো বিরাট এক খোলা মাঠে খেলে বেড়ানো, ভেসে বেড়ানো, নেচে বেড়ানো। দু বাহু তুলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সুখের সাগরে ভেসে যাওয়া প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতির ডাকে। সেটাই বোধহয় এই বারের থিম জাতিসংঘের। শৌচাগার শান্তির জন্য একটি জায়গা। যে পরম শান্তি আর কোথাও মেলে না।
বিশ্ব টয়লেট দিবস - অভিজিৎ বসু।
উনিশে নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক ও গুগল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন