সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হারিয়ে যাওয়া অর্কপ্রভ সরকার

আসলে সেই আমার ফেলে আসা সাংবাদিক জীবনে কেশপুর আর খানাকুল আর গোঘাটের লড়াই এর দিনকে আমি ভুলবো কি করে কোনোদিন। সেই গোঘাট পার হয়ে চন্দ্রকোনা রোড ধরে সোজা পশ্চিম মেদিনীপুর চলে যাওয়া। সেই কেশপুর, গড়বেতা, চমকাইতলার কথা কি ভোলা যায় কোনোদিন। সেই গোঘাটের ভরত ঘোষ, তিলক ঘোষ এর নাম কি বাম শাসনের অবসান হলেও ভোলা যায় কোনোভাবেই।

 সেই বদনগঞ্জ গ্রাম এর গল্প। সেই অভয় ঘোষ এর রোদ চশমার মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া গম্ভীর মুখে পার্টি অফিস এর কাঠের চেয়ারে বসে রিপোর্টারদের কড়া নজরে লক্ষ্য করা। সেই গ্রামের রাস্তায় হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা ডাকাবুকো রফিক এর গল্প, সেই মোটর সাইকেল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর চমকাইতলা পৌঁছে যাওয়া পুলিশকে বোকা বানিয়ে, সেই দুপুরে কম লোক নিয়ে বৃষ্টি ভিজে মমতার সভা করা। যে সভাতে হাজির আমি, আর বর্তমান পত্রিকার সাংবাদিক দেবাঞ্জন দাস আর কাজল দা ফটোগ্রাফার, আর আমার বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান সুব্রত যশ।আর কেউ ছিল না সেই দিন সেই চমকাইতলার সভায়। আজ যাঁরা মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন হাসি মুখে ঘুরে বেড়ান, তাঁরা কেউই ছিলেন না সেই বৃষ্টি ভেজা দুপুরে মমতার রাজনৈতিক সভায়। 

সেই কামারপুকুর চটির সামনে রাস্তার ধারে সেই সাদা বোদের মিষ্টির দোকান এর সুবাস। সেই মোড়ের মাথায় লাল পার্টির জমজমাট দলীয় অফিস। সেই ফরোয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক শিবু মালিকের গাছে উঠে পড়া শাসক দল সিপিএমের ভয়ে। সত্যিই কত যে স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এইভাবেই কে জানে। সেই হাসি মুখের অজিত পাঁজার জয়রামবাটির হোটেলে অন্দোলন করা সিপিএমের বিরূদ্ধে। আর আমরা সেই ছবি তুলতে গেলেই বলা বাবারা তোমরা সব প্রসাদ খেয়ে যেও কিন্তু মায়ের প্রসাদ, না খেয়ে যেওনা তোমরা কতদূর থেকে এসেছো বাবা। সত্যিই অসাধারণ সেই দিনগুলোর স্মৃতি যেনো কুলুঙ্গিতে লুকিয়ে ছিল এতদিন। 

আর সেই গুলির শব্দ, ছররা গুলির আঘাতে আহত গ্রামবাসীর আর্তনাদ,নদীর ধারে হাতকামান এর আওয়াজ, গাছের আড়ালে আবডালে লুকিয়ে পড়া আমার আর সুব্রতর আরও কত কি। কেশপুরে সিপিএমের সাথে তৃণমূলের লড়াইতে একজনের মৃত্যু হলে। তার কিছু সময় পড়েই খানাকুলের বসন্তপুরে নদীর ধারে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। ঠিক যেনো পশ্চিম মেদিনীপুরে একের বদলা দু গোল দিলো হুগলী জেলা। বেশ মজা করে জেতার আনন্দে ওকে ফোন করতাম আমি। আর ও সেই সময় হেসে বলতো ঠিক আছে আজ হুগলী জিতে গেছে। কাল আমরা জিতবো দেখো তুমি ঠিক। এইভাবেই কেশপুর আর খানাকুল কিম্বা পশ্চিম মেদিনীপুরের সাথে হুগলীর লড়াই চলতো সব সময়।

আজ এই রাতের অন্ধকারে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার সেই ইটিভির হারিয়ে যাওয়া আমার বন্ধুর কথা। এক সময়ের সেই নানা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ছবি করে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া, পড়ে অন্য চ্যানেলের এডিটর হয়ে যাওয়া সেই হাসিমুখের অর্কপ্রভ সরকারের কথা। সেই যার আলিমুদ্দিন এর অনিল বিশ্বাস এর সাথে সুসম্পর্ক ছিল সর্বজনবিদিত। যে কথা তখন সবাই জানতো। জেলার রিপোর্টার হলেও কেমন অন্য মাত্রার শহুরে সংযোগ বজায় রাখতো ও হাসি মুখেই।

আসলে সেই ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল অবধি বা তারপরেও যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, হিংসা,খুন, জখম, ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, বোমাবাজিতে যখন তখন গ্রাম দখল করতে আসা রাজনৈতিক পার্টির বর্গীর দল, গ্রামের পর গ্রামে শুধুই পুলিসের টহল আর ভারী বুটের আওয়াজ। মার কোলে বাবাকে হারিয়ে মেয়ের কান্না। মাকে হারিয়ে একরত্তি দুধের শিশুর ফ্যাল ফ্যাল বোবাদৃষ্টি, ঘরছাড়াদের করুন কান্নায় আকাশ বাতাস মুখরিত হতো সেই সময়। আর সেই সদ্য তৈরি হওয়া তৃণমূল আর রেজিমেন্টেড সংগঠিত দল সিপিএমের লেঠেল বাহিনীর রাজনৈতিক জমি দখলের লড়াই আর লড়াইয়ের কাহিনী আজ এই রাতের অন্ধকারে উঠে আসছে আমার সাদা জীবনের কালো কথাতে।

যে লড়াই করতে করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাথে সিপিএমের মেশিনারির ক্লান্ত হয়ে পড়া। আর সেই ইটিভি বাংলার আমরা দুজন আমি অভিজিৎ বসু হুগলী জেলার রিপোর্টার সাথে আমার ডাকাবুকো ক্যামেরাম্যান সুব্রত যশ আর সেই অর্কপ্রভ সরকার ইটিভি বাংলার পশ্চিম মেদিনীপুরের রিপোর্টার। এই দুজনের সাংবাদিক জুটি দেখে যাচ্ছে কার দখলে থাকে গ্রাম। আজ এক পার্টি অফিসে লাল পার্টির পতাকা পত পত করে উড়ছে তো দুদিন পরেই সেই পার্টি অফিসে ঘাস ফুলের গন্ধ মাখা পতাকা মাথা দুলিয়ে হাসে মিটি মিটি করে। সাংবাদিকদের লাল চায়ের বদলে মাটির ভাঁড়ে তখন ঘন দুধের চা। এক এক সময় কেমন অবাক লাগতো আমার। এইভাবেই কি গ্রামে গ্রামে রাজনৈতিক দল তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের কাছে জোর করে। কিছু রক্ত, কিছু তাজা প্রাণ, আর কিছু গ্রাম দখলের রাজনীতি করে। নিজের রাজনৈতিক আদর্শকে বুকে আঁকড়ে ধরে শুধুই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। 


অর্কপ্রভ বেশিদিন ছিল না জেলায় রিপোর্টার হয়ে। ও অনেক বেশি ভালো রিপোর্টার, তাই জেলা  ছেড়ে কলকাতা চলে যায় ও কিছুদিন পরেই। ওর জায়গায় কাজ করতে যায় কলকাতা থেকে বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত। আমাদের সবার প্রিয় বুদ্ধ। যে বর্তমানে দিল্লীতে কর্মরত প্রতিদিন কাগজে। কিন্তু অর্কর সেই সময়ের কথা, সেই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সেই সময়ের সিপিএম আর তৃণমূলের মধ্যে কঠিন লড়াই, পড়ে তৃণমূল বিজেপির আঁতাত এর জোট বনাম সিপিএমের বিরুদ্ধে এক হয়ে দুই  ভিন্ন মেরুর পার্টির লড়াই করা। 

আর সেই লড়াই এর প্রথম সুফল মিলে গেলো তৃণমূলের ঝুলিতে। খানাকুলের শৈলেন সিংহদার লড়াই। সেই বাম আমলে খানাকুলের মাটিতে সিপিএমকে হারিয়ে পঞ্চায়েতের সমিতি নির্বাচনে জয় লাভ করা রাজ্যের নতুন জোট তৃণমূল আর বিজেপি জোটের। আজ যাকে অনেকেই সেটিং তত্ত্বের মোড়কে মুড়ে পরিবেশন করছেন অনেকেই। কিন্তু সেই আন্ডার স্ট্যান্ডিং তো কবে থেকেই ছিল এই কালীঘাট আর নাগপুরের মধ্যে। তাহলে আজ এত গেলো গেলো বলে হৈ চৈ হুল্লোড় কেনো। 

কে জানে, বহুদিন পর গভীর রাতে আমার মনে পড়ে গেলো অর্কর কথা। কিছুদিন আগেও দেখা হলো ওর সাথে আমার। হাত তুলে সেই মুখে এক হাসি বললো অভিজিৎ কি খবর। অসুস্থ ছিল কিছুদিন ও। তবে সেই আমলের এই মাঠে ময়দানে লড়াই করা সাংবাদিকতা কিন্তু সত্যিই অসাধারণ ছিল। যা আমি আজও মিস করি। অর্ক নিশ্চয়ই মিস করে সেই দিনগুলো।

জানিনা এই আজকের দিনের হোয়াটসঅ্যাপের যুগে দ্রুত গতিতে দুরদুরান্ত থেকে হাতে ছবি চলে আসা এই আধুনিক যুগের সাংবাদিকতার যুগের সাংবাদিকরা কি  মিস করেন সেই লড়াই এর দিনের স্মৃতি ঝলমল দিনগুলোর কথা শুনে। কে জানে তাঁরা হয়তো আরও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন এই পেশায় টিকে থাকতে গিয়ে। আরও কঠিন লড়াই প্রত্যক্ষ করেন তাঁরা। সেই লড়াই মাঠে ময়দানে লড়াই নয় সেই লড়াই ঘরের লড়াই, অন্দরের লড়াই, আর রাজনৈতিক নেতাদের মন রক্ষা করে চলার লড়াই। ভাগ্যিস সেই লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়না আমাকে আর অর্ককে। 

হারিয়ে যাওয়া অর্কপ্রভ সরকার - অভিজিৎ বসু।
একুশে ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...