সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হারিয়ে যাওয়া সন্দীপন দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাংলা কাগজের অন্তরালে থাকা এক ডিপেন্ডেবল ওপেনার ব্যাটসম্যান এর গল্প। যে বল ধরে খেলে টুক টুক করে ক্রিজে আটকে থেকে ব্যাট করে দলকে ঠিক খুচরো রান পাইয়ে দেয় নিজের হাতের জোরে। যে কোনও হুড়োতাড়া না করেই কেমন করে যেনো দলের মধ্যে অপরিহার্য হয়ে ওঠে সে নিজের কর্মদক্ষতায় আর কর্মকৃতিত্বে। আর তারপর তাকে ছাড়া দল গঠন সম্ভব হয়না আর কিছুতেই। 


কিন্তু এমন নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটসম্যানও একদিন মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিল। কাগজের অফিসের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। সে সব তো অনেক পুরোনো দিনের ইতিহাস আর গল্প। সেই উত্তর কলকাতার ভারতকথার অফিস, সেই ১৫ নম্বর লোয়ার রেঞ্জের ওভারল্যাণ্ড এর অফিস এসব তো বাংলা কাগজের দুনিয়ায় কবেই ফসিল হয়ে গেছে আজ। এই সব নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, নানা মাঠের গন্ডি পেরিয়ে আজ সেই ব্যক্তি হাসি মুখে বাংলার ভগবানকে ভয় না পাওয়া কাগজের অন্যতম এক স্তম্ভ বা পিলার। যে পিলার ছাড়া আজ কাগজ অচল। তাই বোধহয় অবসর হলেও সে ছাড়া পায়না কোনোভাবেই। সত্যিই এমন একজন ব্যাটসম্যানকে অবসর দেবে কে।

কবে যে আমার সাথে তাঁর আলাপ হলো কোন সূত্রে কোন ঘটনায় সেটাই আর আজকাল মনে পড়েনা আমার কিছুতেই। আসলে আমার সাদা জীবনের এই কালো কথা তো আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, ভাবনা আর সেই সব মানুষকে নিজের চোখে দেখা আর তাদের নিয়ে নানা ভাবনার কথা লেখা। আর বাইরে তো কিছুই নয়। যে লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করা মাত্র। 

এই ব্যক্তিগত জীবনকে দেখে লেখা। যে জীবন আমার কাছে খুব আনন্দের আবার কখনও দুঃখের। যে জীবন কখনও খুব ভালো অনুভূতি দেয় আবার কখনও মন খারাপের বার্তা নিয়ে আসে। হ্যাঁ তিনি হলেন, সেই আমাদের বর্তমানের সন্দীপন বিশ্বাস। লম্বা অমিতাভ এর মত দেখতে না হলেও সুন্দর পেটানো চেহারা। দু চোখের দৃষ্টিতে কেমন যেনো উদাস করা চাওনি। কাঁচা পাকা চুল। মুখে অল্প হাসি। চোখে চশমা পড়া। একটা অন্তর্ভেদী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বারবার। 

তবে বেশ কঠিন লড়াই আর সংগ্রাম করে টিকে থাকা এক বাংলা কাগজের অন্তরালে থাকা সাংবাদিক। মাঠে ময়দানের না হলেও অন্তত কাগজের অফিসের ভিতরের অন্যতম একজন কারিগর। যার হাতের ছোঁয়ায় হাতের জাদুতে আমূল বদলে যায় কাগজের প্রথম পাতার লে আউট আর তার ছবি। হ্যাঁ, সেই আমাদের বর্তমানের সন্দীপন দা, সন্দীপন বিশ্বাস। 

 সম্ভবত ইটিভির আগে থাকতেই সেই আলাপ আমাদের জোড়া গির্জার অফিস থেকেই দুজনের। কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে অফিস চলে আসা তিনটের পরে। কেমন যেনো একটা নির্লিপ্ত হয়েও সব দিকেই কড়া নজরদারি তাঁর। জোড়া গির্জার অফিসে দেখা করতে গেলেই সেই জোর করে ক্যান্টিনে ডেকে চা খেতে নিয়ে যাওয়া। সাদা কাপে গরম চা খেতে বেশ ভালই লাগতো আমার। 

ওভারল্যান্ড এর অফিস থেকে হেঁটে জোড়া গির্জার অফিসে এসে এক কাপ গরম চা আর সঙ্গে বর্তমান কাগজের সেই নিউজপ্রিন্টের গন্ধ। সেই মেসিনের ঘড় ঘড় আওয়াজ।‌ সেই কাঁচের ঘরে অন্য জগতে ঘুরে বেড়ানো সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে ধীর পায়ে, হাতে কাগজ আর পেন হাতে নিয়ে চশমা পড়া অশোক বোস। সেই ঠাণ্ডায় একটা উইনচিটার পড়ে একটু ঝুঁকে হাঁটা একজন ব্যক্তি পড়ে জানলাম উনি দেবাশীষ দাশগুপ্ত। সেই আকাশবাণীর কৃষ্ণশর্বরী দাশগুপ্তের হাজব্যান্ড। যাঁর সাথে বোলপুরে বহুদিন পর এই কিছুদিন আগে কথা হলো। 

সেই চোখে চশমা পরে দ্রুত পায়ে দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসা রোগা চেহারার রূপকুমার বসু। এসেই বলা কি লেখা এনেছিস দে বাবা তাড়াতাড়ি অনেক কাজ আছে। আর সেই টাক মাথার হাসি মুখের নিমাই দা দূরে বসে আছেন কপি নিয়ে। আর এই সবের মাঝে কোনোদিন সৌভাগ্য হলে বাংলা মিডিয়ার বাংলা সংবাদপত্রের ভগবান শ্রী বরুণ সেনগুপ্তর দর্শন মেলা হঠাৎ করেই। 

আর রিসেপশনে সেই কাঁচের ওপারে বসে থাকা সেই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সুন্দরী মহিলার মিষ্টি গলা। সুন্দর লাল ঠোঁটের হাসি আর ওঁর চোখের মন কেমন করা চাওনি। অপেক্ষা করতে হবে একটু উনি ব্যস্ত আছেন বলেই কালো টেলিফোন রেখে দেওয়া ঘটাং করে। সত্যিই অসাধারণ সেই দিনগুলোর আবছা স্মৃতি আমায় বড়ই অদ্ভুত একটা সুখের অনুভুতি দেয়। সেই জোড়া গির্জার অফিস, সেই ক্যান্টিন, সেই ভিজিটর স্লিপ নিচে রেখে দিয়ে রাস্তায় নেমে ঘাড় ঘুরিয়ে লাল বাড়িকে দুর থেকে একটি বার দেখা। কেমন যেনো একটা ভালোলাগা আর ভালবাসা তৈরি হয়েছিল এই জোড়া গির্জার অফিসকে কেন্দ্র করে আমার সেই কবেই। 

পরে একদিন ইটিভির চাকরী পাবার আগে সন্দীপন দা আমায় বললেন তরুণ কে আমি বলে দেবো কোনো ভয় নেই। বর্তমানের তরুণ কান্তি দাস। যাঁর জন্য আমার ইটিভির কাজটি হলো। তরুনকান্তি দাস বর্তমান ছেড়ে ইটিভিতে গেলেন। শুনলাম একদিন আশীষ ঘোষ আসবেন বর্তমান অফিসে। সন্দীপনদার থেকেই খবর পেলাম। আমি দেখা করতে এলাম যদি একটু আলাপ হলে সুবিধা হয় আমার কাজের। না, সেদিন আর তিনি আসেননি। এইভাবেই ইটিভির চাকরির সময় নানা ভাবেই যে করে হোক কিছুটা সাহায্য করেছেন আমায় সন্দীপন দা নানা ভাবেই। 

আর আজ এই রাতে সেই সব কথাই মনে পড়ে গেলো আমার। কত দিন এর পুরোনো স্মৃতি সেই সব। অবশেষে আমার ইটিভির চাকরি হলো। খুব খুশি হলেন তিনি। বললেন বাহ দারুন রে চালিয়ে যা মন দিয়ে কাজ করে যা তুই। আর কোনো দিকে তাকাস না। সেই শুরু হলো আমার দৌড়। আর কাজের চাপে বর্তমানের অফিস যাওয়া হয়নি বহুকাল। পরে সেই জোড়া গির্জার অফিস চলে গেলো দূরে অনেক দূরে।

হঠাৎ একদিন সকাল বেলায় শ্রীরামপুরে হাজির সন্দীপন দা। সঙ্গে একজন মহিলা। আলাপ করিয়ে দিলেন বললেন আরামবাগ থাকে। স্কুলের শিক্ষিকা খানাকুলের। আমার ইউনিভার্সিটির বান্ধবী। কিছু সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চায় একটু। আমি সব শুনে সোজা চুঁচুড়া চলে গেলাম। আমরা তিনজন তপন দাশগুপ্তের অফিস গেলাম। বললাম আমার নিজের দিদি হয় এই কাজটা করে দাও। তপনদার জবাব কোনো অসুবিধা হবে না আর। কিছুটা সুবিধাও হয়েছিল সেই সময়। 

আর সেই থেকেই আরামবাগ এর দিদির সাথে আমার ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হলো। আমি আরামবাগ খবর করতে গেলেই আমি দিদির বাড়ী উঠতাম আর সেই বাড়িতেই থেকে যেতাম। মাঝে মাঝেই সন্দীপন দাও আসতেন আরামবাগে। কত হাসি, গল্প আড্ডা আর মজা হতো সেই সময়। সেই গম্ভীর মুখের গৌতম দা, নিজের দিদি না হলেও সেই দিদি, সেই কলেজ স্ট্রীট এর মেজদি, রিমা, দিশা তখন খুবই ছোট, আর সিমি পড়তে এসেছে মাসীর বাড়ী। মেজদির একমাত্র মেয়ে।

সত্যিই আরামবাগ এর সেই দু হাজার সালের বন্যা, মুন্ডেশ্বরীর জলে ভেসে যাওয়া গ্রাম আর শহর। নানা ছবি আর খবর করে সারাদিন পর না খেয়ে দিদির বাড়ি ফিরে আসা ধুঁকতে ধুঁকতে। সারাদিন পর খেতে পাওয়া দিদির কাছে। নিরামিষ রান্না করে দিত আমায় দিদি। রক্তের সম্পর্ক না হলেও কেমন যেন একটা অমলিন সম্পর্ক হয়ে গেলো আমাদের এই সন্দীপনদার জন্য। বড়ই ভালো ছিল সেই পুরোনো দিনগুলো। যে দিদির গল্প, গৌতমদার সোমাকে ডেকে ভালো চাকরি দেবার গল্প অন্য কোনোদিন বলবো। গৌতমদার চাকরি পেয়েই তো আমরা ফ্ল্যাট কিনতে পারলাম তার লোন শোধ করতে পারলাম। আজ গৌতমদা খুব অসুস্থ শুনি। তবু এই সব মানুষের কথা যে রাতের আঁধারে মনে পড়ে যায় আমার একা একাই। 

 বিয়ের সময় দিদি, সন্দীপন দা, মেজদি সবাই এলেন শ্রীরামপুরে। বিয়ের পরে সন্দীপনদার বাগুইআটির বাড়িতে সেই লাল মেঝেতে বিয়ের পর বসে খেয়ে এলাম বৌদির হাতে ডাল ভাত আর বেগুনি একদম কঠোর নিয়মে নিরামিষ রান্না। বেশ কড়া শাসনের মানুষ সন্দীপনদার বউ। সেই সময় সন্দীপনদার ছেলেও‌ বেশ ছোটো। এইভাবেই এগিয়ে চলেছে আমাদের সম্পর্ক। আসলে জীবন তো এমন করেই এগিয়ে চলে। 

সেই পাণ্ডুয়ার ঘোষ বাড়িতে পূজোর কভার করতে যাওয়া। ছোটমা বড়মার পূজো বোধহয়। সেই পুরোনো দিনের বাড়ী, পুরোনো পূজো। ছবি করা হলো দেখানো হলো টিভিতে। খুশি হলেন ওরা। আর হুগলী জেলায় বর্তমানের কাগজের সাংবাদিক এর সাথে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়ে যেতো আমার। এইভাবেই কেটে গেছে আমাদের জীবন। যোগাযোগ না হলেও সম্পর্কের অবনতি হয়নি কোনোদিন।

বহুদিন পর একদিন নতুন বর্তমানের অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে দেখলাম বহুজনের মাঝে বসে আছেন সন্দীপন দা। দেখে বেশ ভালো লাগলো আমার। টিভি চ্যানেলে কাজ করা সাংবাদিক কাগজে কাজ করতে পারবো না তেমন একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন বোর্ডের জুরি সদস্যরা। আর এতে বিশেষ করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেন একজন বিখ্যাত সাংবাদিক যাঁর দুই ভাই টিভি চ্যানেলে কর্মরত। যাক গে পরে আর এই প্রসঙ্গে আমি কিছুই আর জিজ্ঞাসা করিনি সন্দীপন দাকে। 

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় মনে হলো আমার এই মানুষটা তো আমার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবন জুড়েই ছিল একটা সময়। তাই আমি সেই মানুষটাকে ভুলে যাই কি করে। আজ আমি আর মিডিয়াতে নেই। সন্দীপনদা আজও কেমন করে যেনো টিকে আছেন। সত্যিই অসাধারণ এই টিকে থাকার চেষ্টা করে নিজেকে টিকিয়ে রাখা। 

যা উনি এই বয়সেও পারছেন সেটাই আমি পারছি না। বারবার ছিটকে যাচ্ছি মাঠ থেকে। আর উনি ধীরে ধীরে কপিবুক স্টাইলে ব্যাট করে খুচরো রান নিয়ে ক্রিজে টিকে আছেন। শুনলাম ছেলে বড় হয়ে গেছে অনেক। চাকরি করে হয়তো, বিয়েও হয়ে গেছে। বৌদির সাথে যে কতদিন কথা হয়নি আমার টেলিফোনে। সেই বৌদির ধমক শুনিনি কতদিন আমি। জোর করে ভাত দিয়ে বলা এই ভাত খেয়ে তবে উঠবে তুমি অভিজিৎ। সত্যিই আজ খুব মিস করি আমি সন্দীপন দা এই ফেলে আসা দিনগুলোকে। তুমি কি মিস করো এই দিনগুলো। হয়তো কাজের চাপে তোমার আর ফেলে আসা দিনের কথা মনেই পড়ে না আর। ভালো থেকো দাদা তুমি। আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে দাগ কেটে রেখে দিলাম সেই সব দিনের কিছু কথা। 

হারিয়ে যাওয়া সন্দীপন দা - অভিজিৎ বসু।
উনিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...