সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হারিয়ে যাওয়া সন্দীপন দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাংলা কাগজের অন্তরালে থাকা এক ডিপেন্ডেবল ওপেনার ব্যাটসম্যান এর গল্প। যে বল ধরে খেলে টুক টুক করে ক্রিজে আটকে থেকে ব্যাট করে দলকে ঠিক খুচরো রান পাইয়ে দেয় নিজের হাতের জোরে। যে কোনও হুড়োতাড়া না করেই কেমন করে যেনো দলের মধ্যে অপরিহার্য হয়ে ওঠে সে নিজের কর্মদক্ষতায় আর কর্মকৃতিত্বে। আর তারপর তাকে ছাড়া দল গঠন সম্ভব হয়না আর কিছুতেই। 


কিন্তু এমন নির্ভরযোগ্য একজন ব্যাটসম্যানও একদিন মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিল। কাগজের অফিসের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। সে সব তো অনেক পুরোনো দিনের ইতিহাস আর গল্প। সেই উত্তর কলকাতার ভারতকথার অফিস, সেই ১৫ নম্বর লোয়ার রেঞ্জের ওভারল্যাণ্ড এর অফিস এসব তো বাংলা কাগজের দুনিয়ায় কবেই ফসিল হয়ে গেছে আজ। এই সব নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, নানা মাঠের গন্ডি পেরিয়ে আজ সেই ব্যক্তি হাসি মুখে বাংলার ভগবানকে ভয় না পাওয়া কাগজের অন্যতম এক স্তম্ভ বা পিলার। যে পিলার ছাড়া আজ কাগজ অচল। তাই বোধহয় অবসর হলেও সে ছাড়া পায়না কোনোভাবেই। সত্যিই এমন একজন ব্যাটসম্যানকে অবসর দেবে কে।

কবে যে আমার সাথে তাঁর আলাপ হলো কোন সূত্রে কোন ঘটনায় সেটাই আর আজকাল মনে পড়েনা আমার কিছুতেই। আসলে আমার সাদা জীবনের এই কালো কথা তো আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, ভাবনা আর সেই সব মানুষকে নিজের চোখে দেখা আর তাদের নিয়ে নানা ভাবনার কথা লেখা। আর বাইরে তো কিছুই নয়। যে লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করা মাত্র। 

এই ব্যক্তিগত জীবনকে দেখে লেখা। যে জীবন আমার কাছে খুব আনন্দের আবার কখনও দুঃখের। যে জীবন কখনও খুব ভালো অনুভূতি দেয় আবার কখনও মন খারাপের বার্তা নিয়ে আসে। হ্যাঁ তিনি হলেন, সেই আমাদের বর্তমানের সন্দীপন বিশ্বাস। লম্বা অমিতাভ এর মত দেখতে না হলেও সুন্দর পেটানো চেহারা। দু চোখের দৃষ্টিতে কেমন যেনো উদাস করা চাওনি। কাঁচা পাকা চুল। মুখে অল্প হাসি। চোখে চশমা পড়া। একটা অন্তর্ভেদী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বারবার। 

তবে বেশ কঠিন লড়াই আর সংগ্রাম করে টিকে থাকা এক বাংলা কাগজের অন্তরালে থাকা সাংবাদিক। মাঠে ময়দানের না হলেও অন্তত কাগজের অফিসের ভিতরের অন্যতম একজন কারিগর। যার হাতের ছোঁয়ায় হাতের জাদুতে আমূল বদলে যায় কাগজের প্রথম পাতার লে আউট আর তার ছবি। হ্যাঁ, সেই আমাদের বর্তমানের সন্দীপন দা, সন্দীপন বিশ্বাস। 

 সম্ভবত ইটিভির আগে থাকতেই সেই আলাপ আমাদের জোড়া গির্জার অফিস থেকেই দুজনের। কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে অফিস চলে আসা তিনটের পরে। কেমন যেনো একটা নির্লিপ্ত হয়েও সব দিকেই কড়া নজরদারি তাঁর। জোড়া গির্জার অফিসে দেখা করতে গেলেই সেই জোর করে ক্যান্টিনে ডেকে চা খেতে নিয়ে যাওয়া। সাদা কাপে গরম চা খেতে বেশ ভালই লাগতো আমার। 

ওভারল্যান্ড এর অফিস থেকে হেঁটে জোড়া গির্জার অফিসে এসে এক কাপ গরম চা আর সঙ্গে বর্তমান কাগজের সেই নিউজপ্রিন্টের গন্ধ। সেই মেসিনের ঘড় ঘড় আওয়াজ।‌ সেই কাঁচের ঘরে অন্য জগতে ঘুরে বেড়ানো সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে ধীর পায়ে, হাতে কাগজ আর পেন হাতে নিয়ে চশমা পড়া অশোক বোস। সেই ঠাণ্ডায় একটা উইনচিটার পড়ে একটু ঝুঁকে হাঁটা একজন ব্যক্তি পড়ে জানলাম উনি দেবাশীষ দাশগুপ্ত। সেই আকাশবাণীর কৃষ্ণশর্বরী দাশগুপ্তের হাজব্যান্ড। যাঁর সাথে বোলপুরে বহুদিন পর এই কিছুদিন আগে কথা হলো। 

সেই চোখে চশমা পরে দ্রুত পায়ে দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসা রোগা চেহারার রূপকুমার বসু। এসেই বলা কি লেখা এনেছিস দে বাবা তাড়াতাড়ি অনেক কাজ আছে। আর সেই টাক মাথার হাসি মুখের নিমাই দা দূরে বসে আছেন কপি নিয়ে। আর এই সবের মাঝে কোনোদিন সৌভাগ্য হলে বাংলা মিডিয়ার বাংলা সংবাদপত্রের ভগবান শ্রী বরুণ সেনগুপ্তর দর্শন মেলা হঠাৎ করেই। 

আর রিসেপশনে সেই কাঁচের ওপারে বসে থাকা সেই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সুন্দরী মহিলার মিষ্টি গলা। সুন্দর লাল ঠোঁটের হাসি আর ওঁর চোখের মন কেমন করা চাওনি। অপেক্ষা করতে হবে একটু উনি ব্যস্ত আছেন বলেই কালো টেলিফোন রেখে দেওয়া ঘটাং করে। সত্যিই অসাধারণ সেই দিনগুলোর আবছা স্মৃতি আমায় বড়ই অদ্ভুত একটা সুখের অনুভুতি দেয়। সেই জোড়া গির্জার অফিস, সেই ক্যান্টিন, সেই ভিজিটর স্লিপ নিচে রেখে দিয়ে রাস্তায় নেমে ঘাড় ঘুরিয়ে লাল বাড়িকে দুর থেকে একটি বার দেখা। কেমন যেনো একটা ভালোলাগা আর ভালবাসা তৈরি হয়েছিল এই জোড়া গির্জার অফিসকে কেন্দ্র করে আমার সেই কবেই। 

পরে একদিন ইটিভির চাকরী পাবার আগে সন্দীপন দা আমায় বললেন তরুণ কে আমি বলে দেবো কোনো ভয় নেই। বর্তমানের তরুণ কান্তি দাস। যাঁর জন্য আমার ইটিভির কাজটি হলো। তরুনকান্তি দাস বর্তমান ছেড়ে ইটিভিতে গেলেন। শুনলাম একদিন আশীষ ঘোষ আসবেন বর্তমান অফিসে। সন্দীপনদার থেকেই খবর পেলাম। আমি দেখা করতে এলাম যদি একটু আলাপ হলে সুবিধা হয় আমার কাজের। না, সেদিন আর তিনি আসেননি। এইভাবেই ইটিভির চাকরির সময় নানা ভাবেই যে করে হোক কিছুটা সাহায্য করেছেন আমায় সন্দীপন দা নানা ভাবেই। 

আর আজ এই রাতে সেই সব কথাই মনে পড়ে গেলো আমার। কত দিন এর পুরোনো স্মৃতি সেই সব। অবশেষে আমার ইটিভির চাকরি হলো। খুব খুশি হলেন তিনি। বললেন বাহ দারুন রে চালিয়ে যা মন দিয়ে কাজ করে যা তুই। আর কোনো দিকে তাকাস না। সেই শুরু হলো আমার দৌড়। আর কাজের চাপে বর্তমানের অফিস যাওয়া হয়নি বহুকাল। পরে সেই জোড়া গির্জার অফিস চলে গেলো দূরে অনেক দূরে।

হঠাৎ একদিন সকাল বেলায় শ্রীরামপুরে হাজির সন্দীপন দা। সঙ্গে একজন মহিলা। আলাপ করিয়ে দিলেন বললেন আরামবাগ থাকে। স্কুলের শিক্ষিকা খানাকুলের। আমার ইউনিভার্সিটির বান্ধবী। কিছু সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চায় একটু। আমি সব শুনে সোজা চুঁচুড়া চলে গেলাম। আমরা তিনজন তপন দাশগুপ্তের অফিস গেলাম। বললাম আমার নিজের দিদি হয় এই কাজটা করে দাও। তপনদার জবাব কোনো অসুবিধা হবে না আর। কিছুটা সুবিধাও হয়েছিল সেই সময়। 

আর সেই থেকেই আরামবাগ এর দিদির সাথে আমার ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হলো। আমি আরামবাগ খবর করতে গেলেই আমি দিদির বাড়ী উঠতাম আর সেই বাড়িতেই থেকে যেতাম। মাঝে মাঝেই সন্দীপন দাও আসতেন আরামবাগে। কত হাসি, গল্প আড্ডা আর মজা হতো সেই সময়। সেই গম্ভীর মুখের গৌতম দা, নিজের দিদি না হলেও সেই দিদি, সেই কলেজ স্ট্রীট এর মেজদি, রিমা, দিশা তখন খুবই ছোট, আর সিমি পড়তে এসেছে মাসীর বাড়ী। মেজদির একমাত্র মেয়ে।

সত্যিই আরামবাগ এর সেই দু হাজার সালের বন্যা, মুন্ডেশ্বরীর জলে ভেসে যাওয়া গ্রাম আর শহর। নানা ছবি আর খবর করে সারাদিন পর না খেয়ে দিদির বাড়ি ফিরে আসা ধুঁকতে ধুঁকতে। সারাদিন পর খেতে পাওয়া দিদির কাছে। নিরামিষ রান্না করে দিত আমায় দিদি। রক্তের সম্পর্ক না হলেও কেমন যেন একটা অমলিন সম্পর্ক হয়ে গেলো আমাদের এই সন্দীপনদার জন্য। বড়ই ভালো ছিল সেই পুরোনো দিনগুলো। যে দিদির গল্প, গৌতমদার সোমাকে ডেকে ভালো চাকরি দেবার গল্প অন্য কোনোদিন বলবো। গৌতমদার চাকরি পেয়েই তো আমরা ফ্ল্যাট কিনতে পারলাম তার লোন শোধ করতে পারলাম। আজ গৌতমদা খুব অসুস্থ শুনি। তবু এই সব মানুষের কথা যে রাতের আঁধারে মনে পড়ে যায় আমার একা একাই। 

 বিয়ের সময় দিদি, সন্দীপন দা, মেজদি সবাই এলেন শ্রীরামপুরে। বিয়ের পরে সন্দীপনদার বাগুইআটির বাড়িতে সেই লাল মেঝেতে বিয়ের পর বসে খেয়ে এলাম বৌদির হাতে ডাল ভাত আর বেগুনি একদম কঠোর নিয়মে নিরামিষ রান্না। বেশ কড়া শাসনের মানুষ সন্দীপনদার বউ। সেই সময় সন্দীপনদার ছেলেও‌ বেশ ছোটো। এইভাবেই এগিয়ে চলেছে আমাদের সম্পর্ক। আসলে জীবন তো এমন করেই এগিয়ে চলে। 

সেই পাণ্ডুয়ার ঘোষ বাড়িতে পূজোর কভার করতে যাওয়া। ছোটমা বড়মার পূজো বোধহয়। সেই পুরোনো দিনের বাড়ী, পুরোনো পূজো। ছবি করা হলো দেখানো হলো টিভিতে। খুশি হলেন ওরা। আর হুগলী জেলায় বর্তমানের কাগজের সাংবাদিক এর সাথে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়ে যেতো আমার। এইভাবেই কেটে গেছে আমাদের জীবন। যোগাযোগ না হলেও সম্পর্কের অবনতি হয়নি কোনোদিন।

বহুদিন পর একদিন নতুন বর্তমানের অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে দেখলাম বহুজনের মাঝে বসে আছেন সন্দীপন দা। দেখে বেশ ভালো লাগলো আমার। টিভি চ্যানেলে কাজ করা সাংবাদিক কাগজে কাজ করতে পারবো না তেমন একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন বোর্ডের জুরি সদস্যরা। আর এতে বিশেষ করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেন একজন বিখ্যাত সাংবাদিক যাঁর দুই ভাই টিভি চ্যানেলে কর্মরত। যাক গে পরে আর এই প্রসঙ্গে আমি কিছুই আর জিজ্ঞাসা করিনি সন্দীপন দাকে। 

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় মনে হলো আমার এই মানুষটা তো আমার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবন জুড়েই ছিল একটা সময়। তাই আমি সেই মানুষটাকে ভুলে যাই কি করে। আজ আমি আর মিডিয়াতে নেই। সন্দীপনদা আজও কেমন করে যেনো টিকে আছেন। সত্যিই অসাধারণ এই টিকে থাকার চেষ্টা করে নিজেকে টিকিয়ে রাখা। 

যা উনি এই বয়সেও পারছেন সেটাই আমি পারছি না। বারবার ছিটকে যাচ্ছি মাঠ থেকে। আর উনি ধীরে ধীরে কপিবুক স্টাইলে ব্যাট করে খুচরো রান নিয়ে ক্রিজে টিকে আছেন। শুনলাম ছেলে বড় হয়ে গেছে অনেক। চাকরি করে হয়তো, বিয়েও হয়ে গেছে। বৌদির সাথে যে কতদিন কথা হয়নি আমার টেলিফোনে। সেই বৌদির ধমক শুনিনি কতদিন আমি। জোর করে ভাত দিয়ে বলা এই ভাত খেয়ে তবে উঠবে তুমি অভিজিৎ। সত্যিই আজ খুব মিস করি আমি সন্দীপন দা এই ফেলে আসা দিনগুলোকে। তুমি কি মিস করো এই দিনগুলো। হয়তো কাজের চাপে তোমার আর ফেলে আসা দিনের কথা মনেই পড়ে না আর। ভালো থেকো দাদা তুমি। আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে দাগ কেটে রেখে দিলাম সেই সব দিনের কিছু কথা। 

হারিয়ে যাওয়া সন্দীপন দা - অভিজিৎ বসু।
উনিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...