বহু সাংবাদিককে আমি দেখেছি মহাকরণে নানা সময়ে। কাউকে কাউকে ভুলে গেছি আমি এতদিন পরে। আবার কাউকে কাউকে আজও মনে আছে আমার এতদিন বাদেও। কারুর আবার ছবি দেখলেই হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় এই রে এর কথা তো লেখা হলো না আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে আঁকাবাঁকা অক্ষরে মেঠো পথ ধরে।
এই আমার এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবন নিয়ে জীবনের চারপাশের ঘুরে বেড়ানো হারিয়ে যাওয়া মানুষদের খুঁজে বেড়াই আমি রাতের বেলায়, দিনের মাঝ দুপুরে, সন্ধ্যার অবসরে। বেশ ভালই লাগে কিন্তু এই কাজটা করতে আমার কর্মহীন জীবনে। আর তাই আজ এতদিন পরেও কেমন করে যেনো একটা ফেসবুকের ছবি দেখেই মনে পড়ে গেলো সেই ইংরাজি কাগজের একদম চুপচাপ থাকা বিখ্যাত রিপোর্টার রমিতা দত্তর কথা।
যাঁর কলমের ক্ষুরধার লেখার জন্য বহু মন্ত্রী, আমলা, এমনকি বাম আমলের মুখ্যমন্ত্রীরও বেশ সুনজরেই ছিলেন তিনি একসময়। বহু আইএএস যাঁকে ব্যক্তিগত ভাবেই পছন্দ করেন তাঁর মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্ব আর সুন্দর মার্জিত হাসিমুখের ব্যবহার এর জন্যে। কিন্তু সেটা জেনে তিনি কোনো সময় নিজেকে হামবড়াই করে নিজেকে প্রতিভাত করেননি জনসমক্ষে সবার সামনেই প্রেস কর্ণারে। কোনও সময় কাউকেই তিনি বুঝতে দেননি তাঁর নিজের কন্ট্যাক্ট পার্সন কারা। কোন জেলার ডিএম তাঁর খুব পরিচিত বা ঘনিষ্ট। হয়তো একসাথেই পড়াশোনা করেছেন তাঁর সাথেই একসময়। কিন্তু কোনও কিছুই তিনি কাউকে বুঝতে দেননি কাউকেই তিনি তাঁর এই বিখ্যাত মানুষদের সাথে আলাপচারিতার কথা।
নিজেও হয়তো এই সাংবাদিক না হলে আমলা জীবন নিয়েই বেঁচে থাকতেন তিনিও একদম ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে। কিন্তু না, সেটা না করে কিন্তু তিনি এই আমলার ঘর আরটুকটুক করে ওই মন্ত্রীর ঘর ঘুরে কেমন দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিলেন হাসিমুখে। কাউকে তেল না দিয়ে। নিজের মতো করে খবর লিখে বেঁচে রইলেন তিনি। কাউকে পাত্তা না দিয়ে। মাথা উঁচু করে। কারুর কাছে নিজেকে বেচে না দিয়ে, হাসিমুখেই জীবন কাটালেন তিনি।
সেই তাঁর প্রথম জীবনে হিন্দুস্থান টাইমসের চাকরি জীবন। পরে যদিও অন্য জায়গায় কাজ করেন তিনি টাইমস গ্রুপে মনে হয়। আসলে বাংলা মিডিয়ার বোকা বাক্সের পর্দায় আটকে থাকা এই পাতি গ্রামের সাংবাদিক হয়ে আমি আর কেনোই বা এই সব নামিদামি ব্র্যান্ডের সাংবাদিকদের খোঁজ রাখবো খুব বিশেষ এই ধরনের সাংবাদিকদের। তবুও কেন জানিনা কোনোভাবেই সেই মহিলা সাংবাদিক কাউকেই ছোট করে দেখতেন না কোনসময়। সবার সাথেই হেসে কথা বলতেন। আর নিজের প্রয়োজনে টুক করে কোনো আমলার ঘর ঘুরে আসতেন তিনি একা একাই কাউকে কিছু না জানিয়ে। শুনলাম আজ আর তিনি এই পেশায় নেই।
তাঁর নানা রিপোর্ট, তাঁর নানা লেখা সংবাদ, তাঁর এই কলমের কড়া সমালোচনার জন্য কিন্তু রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো মানুষজনরা তাঁকে কিন্তু কোনও ভাবেই ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি কোনোদিনই। বরং তাঁর কলমের এই সমালোচনাকে মেনে নিয়েছেন সবাই হাসিমুখেই। আর এটাই বোধহয় বর্তমানের সাথে ফারাক অতীতের দিনের সাংবাদিকতার। লাল বনাম মা মাটি মানুষের সরকার এর। যা বড়ই চোখে লাগে আর কি এই বর্তমানের প্রেক্ষাপটে।
আজ হঠাৎ রাতে তাঁর একটা ছবি দেখে মনে পড়ে গেলো সেই মহিলা সাংবাদিক এর কথা। সেই অনির্বাণ চৌধুরীর মহাকরণে আসা একদিন। সেই রমিতার সাথে কত গল্প করা, মজা করা। সেই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে। আমিও ছিলাম সেই সময় মহাকরণের বারান্দায়। আসলে কি জানি এই সব অতীত অতিথিদের ভুলবো কি করে আমি। যাঁর হয়তো এই কলম না পিষে আমলা হলেই ঠিক ছিল। তিনিও কেমন হাসতে হাসতেই কলম আর সাদা কাগজে খবর লিখে গেলেন হাসি মুখে সারাটা জীবন ধরেই। আসলে এই নেশা যে মারাত্মক। আর তাঁর খবর পড়ে রিপোর্ট পড়ে অনেক নেতা মন্ত্রী পুলিশ আমলা, সচিব সবাই বেশ গুরুত্ব দিয়ে সেটাকে দেখতেন কি করে এই সমালোচনার যোগ্য জবাব দেওয়া যায় তার পথ খুঁজতেন।
রিপোর্টার তো এমন ভাবেই তাঁর কাজ করে চলেন নীরবে হাসিমুখে তাঁর কাজ। কোনো চিৎকার হট্টগোল গলাবাজি না করেই। আর নানা ধরনের খবর করে বিব্রত করা সরকার পক্ষকে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। সত্যিই অসাধারণ এই সংবাদ জীবনের নানা গল্প। তবু সেই বহুদিন আগের চেনা রমিতা দত্তকে আমি আজও বেশ মনে রেখেছি।
সেই একদিন ফোনে আমায় বলা অভিজিৎ আজতকে কিন্তু লোক নেবে কথা বলতে পারিস একবার তুই, দেখ না কি হয়। সেই ইন্দ্রজিৎ কুন্ডুকে বলা। তাঁর সাথে কথা বলা ফোনে। কিন্তু যদিও বহুলোক কাজ করলেও কিন্তু আজতকে আমার জায়গা হয়নি কোনো ভাবেই হয়তো ঝকঝকে নয় বলেই। কিন্তু সেই সময় তিনি বলেন আমায় এটাই অনেক বড়ো কথা। কে আর কলকাতা থেকে ফোনে মনে রেখে এমন কথা বলেন।
এইভাবেই তো সব ফেলে আসা দিনের কথা নানা স্মৃতি কথা মনে পড়ে যায় আমার। সেই যেভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করা যা আমার মনে পড়ে এমন কিন্তু সচরাচর দেখা যায়না আজকাল। সত্যিই কত দূরের জন হয়েও অন্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। আর কত আপন জনের দূরে সরে চলে যাওয়া। জীবন বড়ই অদ্ভুত কিন্তু।
ইংরাজি কাগজের রমিতা দত্ত, অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ ডিসেম্বর দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন