সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দেখতে দেখতে বছর শেষের পথে

দেখতে দেখতে বছর শেষের পথে। ক্যালেন্ডারের পাতায় বাকি আর কটা দিন। তারপরেই নতুন বছরের নতুন প্রভাত। পুরনো বছরে আমরা কি পেলাম, আর কি হারালাম সেটা নিয়ে বিস্তর কাটা ছেঁড়া হবে নিজেদের মধ্যে।


ফেলে আসা বছরে কারুর ঝাঁপি উপচে পড়েছে সুখের আবেশে। কেউ আবার ব্যাজার মুখে কুলুপ দিয়ে জোর করে হাসি আনা মুখে ঠোঁট উল্টে বলবে ওই আর কি কেটে গেলো বছরটা কোনো ভাবে। দিন গত পাপ ক্ষয়।

পাওয়া আর হারানো। লাভ আর ক্ষতির হিসেব নিকেশ করে যাবো আমরা সবাই। না মেলা অঙ্কের খাতাকে সামনে রেখে এই সব নিয়েই আলোচনা চলবে আমাদের নিজেদের মধ্যে।

সত্যিই বলতে কি আমরা জীবনের পূর্ণতাকে স্বীকার করতে চাই না কোনো ভাবেই। যা পেলাম সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারলে বর্তে যেত এই গোটা জীবনটা। এই বোধটাই বোধহয় ধীরে ধীরে উবে গেছে আমাদের জীবন থেকে। 


 শুধু আরো বেশি চাই এর বাসনা চরিতার্থ করতেই জীবনে দৌড়ে যাওয়া। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত শুধু দৌড়। যে মাঠের সীমানা না জেনেই শুধু দৌড়ে যাওয়া মাঠের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত। ইঁদুর দৌড়ে সামিল আমরা সকলেই।

দৌড়ের এই অসম প্রতিযোগিতায় হাঁফিয়ে গেলেও আমরা সবাই দৌড়ে মরি। আসলে এটাই বোধ হয় জীবনের আসল সত্যি কথা। আর যে দৌড়তে পারে না তাল মিলিয়ে সে ছিটকে যায় মাঠ থেকে।

 যা পেলাম না এই গোটা জীবনে, যা অপূর্ণ রইলো জীবনে তার মধ্য শুধু গলদ খুঁজে বেড়াই আমরা। কিন্তু কেনো এই দোলাচল নিয়ে বেঁচে থাকা কে জানে। হাজারো প্রাপ্তির পরেও কেনো অপ্রাপ্তির শুন্যতা নিয়ে বড় বেশি চিন্তিত হয়ে পরি আমরা। যে টুকু পূর্ণ ছিল তাও হারিয়ে ফেলি আমরা। কে জানে। হয়তো বুদ্ধিমান মানুষ বলেই এমন করি আমরা।


কই পশু পাখিরা তো এমন দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে না বোধ হয়। তারা কি বুঝতে পারে বছর শেষের আর শুরুর পদ ধ্বনি। ক্যালেন্ডারের পাতার খস খস আওয়াজ কি তারা বুঝতে পারে।কে জানে। 

বাবুই পাখি কি তাল গাছের পাতার ফাঁকে আনমনে যখন দুলে দুলে, বাসা তৈরি করে একমনে তখন কি সে ভাবে এই সব কথা। কিম্বা সেই লেজ নাড়া চনমনে ফিঙে পাখিটা। যে বুনো ফুল এর রস পান করতে করতে ভাবে পুর্নতা আর অপূর্ণতার ফাঁক ফোঁকর এর মাঝে নিজের জীবনের দৌড়ের হিসেব নিকেশের কথা। কে জানে।ওদের ভাবনার কথা আমি বলি কি করে।

আর ওই যে চঞ্চল গতির প্রজাপতি যে ডানা মেলে এদিক সেদিক উড়ে বেড়ায়। আপন মনে আপন খেয়ালে। সে কি হিসেব করেই ওড়ে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে এদিক ওদিক। নাকি এমনি আপন মনে আপন খেয়ালে উড়ে বেড়ায় সে। নিজের চেনা ছন্দে। কে জানে।

আর ওই যে হাটগাছা গ্রামের ছোটো সহজ সরল জীবন কাটানো কামাল চাষী। যে জানেই না এই বছর সে ভালো ফসল সংগ্রহ করতে পারবে কি না জমি থেকে। পাঁচ পাঁচটা পেট চলবে কি করে। তবুও তার মুখে সব সময় অমলিন হাসি উপচে পড়ে। 

কী সুন্দর সেই হাসি তার। ভবিষ্যতের হিসেব নিকেশ না মিললেও সে কেমন নিশ্চিন্তে নিরাপদে জীবন কাটিয়ে দেয় অক্লেশে। আমাদের মত স্লেট পেন্সিলে কোনো আঁকি বুকি না কেটেই।

কই ওরা কি ডিসেম্বর আর জানুয়ারি মাসের ফারাক জানে। কে জানে। হয়তো জানে, কিছু বলে না ওরা সব জেনেও। ওরা বোকা বলেই হয়তো চুপ করে জীবন কাটিয়ে দেয়, হিসাব না কষেই।আর আমরা বুদ্ধিমান দু পেয়ে বলেই এমন হিসাব কষি বার বার।

সত্যিই বছর শেষের পথে এই হিসেব নিকেষ করতে বসেছি আমি। ঠিক সেই যেনো যমালয়ে জীবন্ত মানুষ সিনেমার চিত্র গুপ্তের মত হিসেব কষা। বড়ো জাব্দা খাতা কে বুকে আগলে রেখে একমনে হিসাব কষা। কী পেলাম আর কি হারালাম।

 এই হারিয়ে ফেলা আর কুড়িয়ে পাওয়া, এই দুইয়ের মধ্যে বুঝি ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক থেকে যায়। কিন্তু আদতেই তা নয় মনে হয়। আমরা যা কিছু হারাই, তার পেছনে হয়তো খানিকটা প্রাপ্তির সম্ভাবনাও থাকে ক্ষীণ হয়ে। সেটা আমরা বুঝতে পারি না।

কিন্তু যখন সবকিছু পেয়েও আমাদের কিছুতেই মন ভরে না আর, সেখানে হারিয়ে ফেলার কথা চিন্তা পর্যন্ত করি না আমরা। আসলে কোনও কিছু পেয়ে যাওয়াকে যতটা সহজ মনে করি আমরা, হারানোকে নিয়তির দিকে ঠেলে দিয়ে আপনকে ভুলিয়ে রাখি আমরা। সবটাই সমানুপাতিক। জীবনটাও বোধহয় তাই। এই দুইয়ের মেল বন্ধনের নামই বোধহয় জীবন। একে মেনে নিতে হয়, না হলে কষ্ট বাড়ে আমাদের।

সামান্য পাওয়ার আশায় যা কিছু হারাই আমরা, তার ব্যাপ্তি অনেক বেশি। কিন্তু অনেকটা হারিয়ে যে সামান্যটুকু পাই, তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারি না আমরা। মনটা যেনো কেমন খুঁত খুঁত করে আমাদের।

আমাদের জীবনটা তাই ঠিক ডিসেম্বর মাসের মতোই। বছরের এই সময়টা এলে আমরা বোঝার চেষ্টা করি গত এগারো মাসে তো। কত কিছু চেয়েছিলাম আমরা সবাই। যে চাওয়ার শেষ ছিল না।তার সবটাই কি পেলাম আমরা।যা যা চাইলাম বছর ভোর। তার কতটুকুই বা পেলাম? হিসাব কষতে বসি রাতের অন্ধকারে চুপি চুপি।

একদম চুপ করে স্থির হয়ে হিসাব করি আমি, আমরা। কিন্তু রাত গভীর হয়। রাত শেষ হয় তবু কেন জানি না হিসাব মিলতে চায় না আমাদের।শুধু খাতায় আঁকি বুকি কাটি।

দেখতে দেখতে আবারও একটা বছর পেরিয়ে গেল।ক্যালেন্ডারের পাতায় সেই চিহ্ণ স্পষ্ট। দিন গড়িয়ে গেলেও তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলাম না কোনও কিছুই। আসলে কুয়াশাকে বোতলবন্দি করে রাখা যায় না কোনো ভাবেই। সব ছেড়ে দিতে দিতে ধরে রাখার মুখস্থ করে রাখা নামতাও মাঝপথে ভুল হয়ে যায়। সেই ভুল নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় আমাদের। জীবনের পরতে পরতে ভুল কে নিয়েই বেঁচে থাকা।


প্রত্যেক ডিসেম্বর মাসের পর আবার নতুন একটা জানুয়ারি মাস আসে। কেউ কেউ সেই নতুন বছরের প্রথম জানুয়ারি মাসে পুনর্জন্ম পায়। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। অক্সিজেন পায়। আবার কেউ তাগিদ আর চাহিদায় মরে। জীবনটা কিন্তু ঠিক এগিয়ে চলে তার নিজের চেনা ছন্দে।

 একটু একটু করে ক্ষয়িষ্ণু হই আমরা। নিজেরা নিজেদের বুঝতে পারি না কিছুতেই। শুধু অপ্রাপ্তি থেকে যায় প্রত্যেকটা ডিসেম্বর জুড়ে। এই ভাবেই জীবনের ঘূর্ণাবর্তে আমরা ঘুরে মরি।


জানুয়ারি মাস আসে যায়, ডিসেম্বর আসে যায়। কিন্তু পূর্ণতা আর অপূর্ণতার দোলাচলে আমি , আমরা সবাই মিলে বেঁচে থাকি। যে যার মতো করেই। 

জানি না এই ভাবে কতদিন হিসেবের খাতাকে বুকে চেপে বেঁচে থাকতে হবে আমাদের। পূর্ণতা আর অপূর্ণতার দোলাচলে দুলবো।

নাকি ওই নাম না জানা বাবুই পাখির মতো, অচেনা ফিঙে পাখিটার মত, বা কামাল চাষার মত বা প্রজাপতির মতো জীবনের স্লেটে কোনো আঁকি বুকি না কেটেই বিন্দাস জীবন কাটিয়ে দিতে পারব আমিও।
জানি না আমি। 


শুধু এটুকু জানি জীবনের হিসাব ঠিক করে কষতে পারিনি বলেই আমার কাছে ডিসেম্বর আর জানুয়ারি মাসের কোনো ফারাক নেই। নতুন আর পুরনো বছরের ক্যালেন্ডারের পাতার খস খস আওয়াজের কোনো পার্থক্য নেই। 

তবু আমি শুধু চাই, বেহিসাবি হয়ে বিন্দাস জীবন কাটিয়ে দিতে। আকাশ, ফিঙে,বাবুই, প্রজাপতি আর কামাল চাষাকে দেখে ঠিক ওদের মতই বাঁচতে।বছর শেষে চাওয়া পাওয়ার হিসাব না কষে।

দেখতে দেখতে বছর শেষের পথে - অভিজিৎ বসু।
পনেরো ডিসেম্বর, দু হাজার তেইশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...