সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুশলের জন্মদিনে টোটো চালকের শুভেচ্ছা

ওর মাথায় সেই টুপি। চোখে মোটা ফ্রেমের একটা চশমা পড়া। চিরাচরিত ভঙ্গিতে ওর সেই হাত তুলে অভয় দিয়ে বলা, কোনো চিন্তা নেই দাদা বা কমরেড। আমরা সব কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়ে যাবো একসাথে সবাই মিলে, এটা আমাদের সবার লড়াই কারুর, একার লড়াই নয় কিন্তু। আর মাঠে খেলা শুরু হতেই দেখা গেলো মাঠেই নেই কুশল। হয়তো চা খেতে নিচে চলে গেছে বা ব্যাগ ঝুলিয়ে অফিস ছেড়ে চলে গেছে অজানা অচেনা পথে। আর ওর মুখে একটা মায়াবী মিষ্টি হাসি। যে হাসিতে লুকিয়ে আছে যেনো অনেক কিছুই। 


ওর সেই স্বপ্ন দেখা ওর দুটো চোখ টুপির আড়ালে কাকে যেনো খুঁজে বেড়াচ্ছে অনবরত। হয়তো বেলা বোস বা চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশাকে খুঁজছে ও আপনমনে অফিসে বসেও আপনমনে। ওর কাঁধের সেই চেনা সাইড ব্যাগ আর বুক পকেটে একটা পেন নিয়ে অফিস আসতো সে অনেকটা মহাকরণে কাজ করা দশটা পাঁচটার কেরানীর মতই হেলে দুলে। 
কোনো তাড়া নেই জীবনে ওর। বেশ মজার জীবন ওর।

 আমি ওকে দেখে ভাবতাম আমি যদি এমন হতে পারতাম কি ভালো যে লাগতো আমার। অফিস এর সময়েও যে সেই রাস্তায় ঘুরছে আপনমনে নিজের ছন্দে। কখনও প্রদীপদার চায়ের দোকান, কালাম এর দোকানের কাছে বা ওয়াটার সাইডের সামনে, কিছু হয়তো ভাবছে আনমনে কোনো কবিতার লাইন বা হয়তো কোনো প্যাকেজের অ্যাঙ্গেল বা ইন্ট্রো যা নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। আর ওর কথায় দাদা মাথাটা পরিষ্কার রাখতে হবে তো তাই নীল আকাশের নিচে একটু পদচারণা করা, বিশুদ্ধ বাতাসে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া। আর ওর এই উত্তরে সব বস চুপ কি আর বলবে এরপরে তাকে। 

হ্যাঁ, আজ সেই বিখ্যাত সাংবাদিক, কবি, ভাবুক, এক স্বপ্ন দেখা মানুষ, একটু ফাঁকিবাজ হয়েও কেমন বিন্দাস চালে নিজের আপন ছন্দে জীবন চালানো এক সাংবাদিকের কথা। আজ সেই আমাদের সবার প্রিয় কুশল মিশ্রের জন্মদিন। দেখলাম যাঁর জন্মদিনের কয়েক ঘণ্টা আগে থাকতেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে তার ফেসবুকের দেওয়াল। ঠিক যেনো দেওয়ালীর অন্ধকার রাতে শুধুই রকমারি আলোক উজ্জ্বল বাজির আছড়ে পড়া নিকষ কালো অন্ধকার আকাশে মুহুর্মুহু। শুধু শুভেচ্ছা আর শুভেচ্ছা দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁকে অনবরত। আর সে স্নান করছে শুভেচ্ছার বন্যায়। সে লজ্জাবনত মায়া ভরা দৃষ্টিতে ইট কাঠ পাথরের কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে মাটির পানে। 

তারা নিউজ এর থেকে সে এসেছিল ২৪ ঘণ্টায় চাকরি করতে। তারা নিউজ এর এক সহকর্মী একদিন ফোন করে চব্বিশ ঘণ্টার একজন কর্তার কাছে ভালো কাজের ছেলে বলে দরবার করে তার নাম। সেই ওকে দরবার করা বন্ধুটি যদিও আজও কুশলের খুব কাছের বন্ধু, কাছের জন। আর সেই ২৪ ঘন্টার চাকরির সূত্রে কুশলের একটু চাপের জীবনের শুরু হয় আরকি। ওর তারা নিউজ এর এক পুরনো সহকর্মীর কথায়, কি করে যে ও কাটিয়ে দিলো এমন সুন্দর মিডিয়ার চাপের চাকরির জীবন কুশল কে জানে। এই কঠিন ঘুর্ণি পিচে ব্যাট করে কি করে যে টিকে গেলো ও চব্বিশ ঘণ্টা চাকরি ছেড়ে নিউজ এইট্টিন এর কঠিন এবড়ো খেবড়ো পিচে কে জানে। সেটা বোধহয় একমাত্র ওই জানে, কি তার রসায়ন। সেটা বোধহয় একমাত্র কুশল নিজেই জানে। আর কেউ সেটা জানেই না কিছুতেই। ওর জাদু জানা আছে নিশ্চয়ই ওর তারা নিউজ এর এক প্রাক্তন সহকর্মীর এই মূল্যায়ন করা দেখে আমিও অবাক হলাম। সত্যিই তো এই মুকেশ আম্বানির কঠিন ঘুর্ণি পিচে ও ব্যাট করে কি করে। গুগলি আর ইয়র্কার বল সামলায় কি করে কে জানে সব হাসি মুখে।

আমি সেই কুশলকে দেখলাম সেই চব্বিশ ঘণ্টার কলকাতার পোদ্দার কোর্টের অফিসে। সেই অ্যাসাইনমেন্টের অতি দ্রুত গতিতে ছবি এফটিপি থেকে ফেলে দিলেও কুশল এর হাসি মুখের জবাব কই ছবি তো দেয়নি ওরা। ছবি তো আসেনি দাদা এখনও। ছবি পেলেই কপি লেখা শুরু হবে দাদা। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম প্রথমে। তাহলে কি আমার বয়স হচ্ছে ভুল করছি কাজ করতে গিয়ে। ওদের সাথে তাল মেলাতে পারছি না কিছুতেই। কিন্তু একদিন আমার জেদ চেপে গেলো ছবি দিলেও ছবি যাচ্ছে না দেখে অন্য মেসিনে দেখলাম ওই ছবি দেখা যাচ্ছে। কুশল পাচ্ছে না। পরে যদিও ওর মেসিনেও সেটা মিলে গেলো আর কি। আর কুশলের হাসি মুখে উত্তর এই যে দাদা পেলাম এইমাত্র। এমন নানা পরীক্ষার সন্মুখীন হয়েই তো আমি কোনো রকমে চব্বিশ ঘণ্টার কঠিন পিচে ব্যাট করে গেছি বুক চিতিয়ে নিজের সাহস আর কাজের জোরে। যদিও তারপর আমি বাতিল মাল বলেই গণ্য হয়েছি। 

সেই ২৪ ঘন্টার অফিসের লোকজন বলে ওদের তিনজনের জুটি হলো ব্রহ্মা,বিষ্ণু আর মহেশ্বর। এই তিনজনকে নিয়েই ওদের হাসিখুশির ভরা সংসার। একে অপরের নাড়ী নক্ষত্র, হাসি কান্না, হারিয়ে যাওয়া খুঁজে পাওয়া, অফিস ডুব দেওয়া আবার অফিসের দরকার হলে মরণপণ করে ঝাঁপিয়ে কাজ করা সবটাই ওরা একসাথেই করে প্ল্যান করে একে অপরের সাথে কথা বলে। সবটাই যেনও ওদের তিনজনের এক সুতোয় বাঁধা একটা সুন্দর বাঁধনের মালার মতই। সে ক্যান্টিনে খেতে যাওয়া হোক, কালাম এর দোকানে চা খাওয়া। কিম্বা পরে সেই মিডিয়া সিটির নতুন অফিস এর নিচে প্রদীপদার চা এর দোকানের নিচে আড্ডার আসর বসা হোক বা মোটার দোকানে বিকেলের সিঙ্গারা খেতে যাওয়া হোক। আসলে আমিও বেশ মিস করি যে সেই মজার দিনগুলোকে যে। 

সেই একদিন রাত দুপুরে হঠাৎ করেই কুশলের বেহালার বাড়ী থেকে উধাও হয়ে যাওয়া। ওর ঘরের কাছের মানুষের উচাটন মন ছটফট করে আকুলি বিকুলি করা। কি করবে বুঝে উঠতে না পারা। সাত সকালেই কুশলের তিনজনের জুটির একজনের কাছে চব্বিশ ঘণ্টার দুই বড়ো কর্তার ফোন আসে। কুশল কোথায় রে, তোর বাড়ীতে এসেছে কি। অফিসের আর এক সিনিয়র এর মন্তব্য ব্যাংক এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এটিএম কার্ড থেকে কোথায় টাকা তুলেছে সেটা ধরে যদি ট্র্যাক করা যায় ও এখন কোথায় আছে কারণ ফোন বন্ধ কুশলের।

 চব্বিশ ঘণ্টার কর্তাদের ফোন পেয়ে ধড়মড় করে সেই কুশলের এক ত্রয়ী জুটির একজনের রাস্তায় বেরিয়ে ওর বেহালার বাড়ী দ্রুত পৌঁছে যাওয়া। ওর বউ এর সাথে দেখা করা। আর ঠিক সেই সময়ে একটি অজানা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসা সেই ওর হরিহর আত্মা বন্ধুর কাছে, কি রে ভাই, কি খবর কি বুঝছিস তুই। খুব কি চাপে আছে সবাই। হ্যাঁ, এটাই হলো বিন্দাস এলোমেলো জীবন এর স্বপ্ন দেখে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাওয়া আমাদের কুশল। যাঁর এই জীবনকে আমি টোটো চালক হয়েও কেমন যেনো হিংসা করি বেশ।

সেই পোদ্দার কোর্টের বিকেলে চা খাবার জন্য এক বসকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাসি মুখে বলা, দাদা আজ শরীরটা ঠিক ভালো নেই আমার মাথা একদম কাজ করছে না দাদা। যা চাপ যাচ্ছে দাদা সারাদিন। এইসব কথা আর কাকে বলব তোমায় ছাড়া। তুমিই যে আমাদের সবার ভরসা দাদা। সেই কর্তার কাছে এইভাবেই সন্ধ্যা ছটার বুলেটিনের প্যাকেজটা যাতে তাকে আর না লিখতে হয় তার জন্য দরবার করা। সফল হলে ভালো একটু দ্রুত মুক্তি এই বদ্ধ অফিস জীবন থেকে আর না হলে ব্যাজার মুখে কম্পিউটার এর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। এমন কতদিন যে এইভাবেই দিন গেছে ওর কে জানে। প্রথম প্রথম সেই বস হাসিমুখে ওর আব্দার মেনে নিলেও পরে সেটা বুঝে গিয়ে এমন আগে ছুটির সুযোগ আর দিত না তাকে। 

সেই চব্বিশ এর ক্যান্টিন, সেই প্রবাল, আইচ আর কুশলের একসাথে তিনজনের মিলে মিশে তৃপ্তি করে দুপুরে ভাত খাওয়া, সেই মিডিয়া সিটির বিকেল হলেই এডিটর অনির্বাণ চৌধুরীর সাথে চা খেতে যাবার জন্য লাইন পড়ে যাওয়া। কাঁচের ঘর থেকে বেরিয়ে এডিটর এর ডাক পড়া প্রবাল, কুশল আর কত লিখবি তোরা চল চা খেয়ে আসি অনেক কাজ করেছিস। শৌনক তো তোদের খাটিয়ে মেরে ফেলবে এরপর। আর এডিটর এর মুখে এমন কথা শুনে কুশলের সেই হাসি দেখে আমার মনে হতো ও যেনো কোটি টাকার লটারি জেতার খবর শুনেছে সে এইমাত্র। ওর চশমার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে লিড আউটপুট এডিটর শৌনক কে কোনও কথা না বলে বলা, দেখ কেমন লাগে। 

আসলে ফেলে আসা সেই মিডিয়ার দিনগুলো বেশ ভালই ছিল। কুশলের জন্মদিনের দিন এই টোটো চালকের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মনে হলো আমার খালি হাতে আর কি শুভেছা জানানো যায় কাউকে। তাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আঁকাবাঁকা অক্ষরে আঁকিবুঁকি ব্লগে কিছু কথা লিখে ফেললাম আমি। জানিনা ওর পছন্দ হবে কি না। কারণ কোনদিন আমায় পছন্দ করেনি চব্বিশ ঘণ্টার পুরনো টিমের এই নানা সদস্যরা। আমি ছিলাম ওদের কাছে বহিরাগত একজনের মতই। তবু আমার সাংবাদিক জীবনে কুশল এর বিন্দাস জীবন, মেজদা গল্পের নায়কের মতই উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। কতদিন যে ওর সাথে দেখা হয়নি আমার। শোনা হয়নি ওর মুখ থেকে কমরেড কি খবর। দাদা আমাদের প্রতিবাদে মুখর একজন সাংবাদিক। সত্যিই ভালো থেকো তুমি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিও। 

কুশলের জন্মদিনে শুভেচ্ছা - অভিজিৎ বসু।
বিশে ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...