আজকাল জন্মদিন পালনের খুব ধূম দেখা যায় চারিদিকে। জন্মদিন মানেই তো মৃত্যুর দিকে এক পা, এক পা করে, ঠিক গুটি গুটি পায়ে শুঁয়োপোকার মত এগিয়ে যাওয়া। তবু যাই হোক খাদের কিনারে চলে যাওয়া একটি ভালোবাসার আর অতি আদরের নিটোল পদ্মপাতায় জলের দাগ লেগে থাকা এক জীবনকে, যেনো শুভ জন্মদিন বলে মনে করিয়ে দেওয়া, যে তোমার জীবনের ক্যালেন্ডার থেকে একটি বছর কমে গেলো। জীবনের ব্যালেন্স এর খাতা থেকে তার ব্যাংক এর পাশ বই থেকে যেনো একটি বছর খরচ হয়ে গেলো তার নিজের অজান্তেই।
ঠিক যেভাবে গাছের ফুল ঝরে পড়ে যায় টুপ করে মাটির নিকোনো উঠোনে। হাজারও সুখ-দুঃখ, হাসি আর কান্না, প্রেম-বিরহ, সখ্যতা আর বৈরিতা, মান আর অভিমানকে সঙ্গে নিয়েই তো এই নিটোল সুন্দর একটি জীবন। যে জীবনে এই কাছে আসা, আর এই দূরে সরে যাওয়া। এই গলা জড়িয়ে ভালোবাসা আর এই দূরে ঠেলে দেওয়া। এই ভাবে ভক্তিতে একদম গলে জল হয়ে যাওয়া গদগদ হয়ে যাওয়া একজনের প্রতি। আবার এই একদম বজ্র আঁটুনি দিয়ে কঠিন কঠোর হয়ে যাওয়া সেই মানুষটাকে দেখেই। এই একজনের ভালো কাজের প্রশংসায় মুখর হয়ে যাওয়া আর এই নিন্দায় ভরিয়ে দেওয়া। সত্যিই জীবন বড়ো বিচিত্র।
জীবন তো এমনিই আর সেই জীবনের জন্মদিন তো একটা বড়ো ব্যাপার। আর সেই জন্মদিন যদি হয় কোনো নেতা, হাফ বা ফুল মন্ত্রী, বড়ো মাপের কোনো মানুষের হয় তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। আর যদি সেটা এভারগ্রীন দাদার জন্মদিন হয়। সেই জন্মদিন যদি আমাদের প্রিয় সেই ওহ লাভলি বলা দাদার জন্মদিন হয়। সেই জন্মদিন যদি সেই রাতের অন্ধকারে রাত বারোটায় চোখে কালো চশমা পড়া আমাদের সেই বিখ্যাত রঙিন বর্ণময় দাদার জন্মদিন হয়। তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই কি বলেন আপনারা। যার জন্মদিন পালন করতে সেই কামারহাটিতে যেমন রাস্তায় ভীড় হয়। তেমন ভীড় হয় ভবানীপুরের রাস্তায় রাত বারোটায়। হাতে কেক নিয়ে, লাল গোলাপ ফুলের মালা নিয়ে মাঝরাতে অপেক্ষায় জনতা, ও লাভলি বলা সেই নেতার জন্য। তাকে একটু শুভেচ্ছা জানাবার জন্য।
হ্যাঁ, সেই আমাদের প্রিয় নেতা মদন মিত্র। যিনি মাঝে কিছুদিন অসুস্থ হয়ে ঘরে ছিলেন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পাশে তাঁর ঘর থেকে ভবতারিণী মাকে ফুল আর বেল পাতা ধুপ জ্বেলে দিয়ে পূজো করে গুরু ব্রহ্মা,গুরু বিষ্ণু, গুরুরেব মহেশ্বর এই প্রার্থনা করতেন। আর বলতেন, মা তুমি মঙ্গল করো সকলের। সেই দাদার শুভ জন্মদিন পালনের নানা ছবি দেখে বেশ ভালো লাগলো আমার।
যাঁর সাথে একসময় আলাপ পরিচয় ঘনিষ্টতা ছিল ভালই। কাজের সুত্রে তিনি আমার বাড়িও এসেছেন দু বার। কিন্তু বহুদিন আর তাঁর সাথে কোনও যোগাযোগ নেই আমার। আর থাকার কথাও নয়। যিনি জীবনে হাজারো ঝড় ঝাপটা সামলে কাটিয়ে উঠেছেন তিনি একটু। যিনি বলতে পারেন, আমি স্বপ্ন দেখা আর বিশ্বাস করা বন্ধ করবো না। যে ভালো জিনিস এখনও অনেক আছে। যিনি হাসি মুখে বলতে পারেন, আমার জীবনে যা কিছু ঘটে তার জন্য আমি এই মহাবিশ্বকে ধন্যবাদ জানাই।
সত্যিই তো যেদিন তাঁর জন্মদিন পালন হলো ভবানীপুর ইউনাইটেড ইউথ ফোরাম এর উদ্যোগে। সেই রাস্তার পাশে ঠিক রাত বারোটায় গাড়ীর জ্যাম লেগে গেলো।সেই জ্যম কাটিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে তাঁর জন্য কেক কাটা হলো। তাঁর শুভাকাঙ্খী, তাঁর ফ্যান ফলোয়ার, তাঁকে ভালোবাসা সব চেনা অচেনা মানুষজন সবাই মিলে রাস্তায় ভীড় করলেন। দেখলেন প্রিয় দাদাকে, শুভেচ্ছা জানালেন তাঁরা।
কেউ দাদার মুখে কেক খাইয়ে দিলেন, কেউ মুঠো ফোনে নিজস্বী তুলে হাসি মুখে বিদায় নিলেন। কেউ কেউ আবার ভীড়ের মাঝে বলে উঠলেন, যে দাদা সবাই বাড়ী চলে যাবেন না আপনারা। দাদার জন্মদিন উপলক্ষে খাবার এর ব্যবস্থা করা হয়েছে আপনারা কিন্তু খেয়ে তবেই যাবেন। আর আমাদের প্রিয় বর্ণময় রঙিন হাসিখুশি মদন দা চোখে কালো চশমা পড়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রইলেন ফ্যানদের আব্দার মেনে। সত্যিই ওহ লাভলি সেই দৃশ্য।
মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কথায়, ও বেশ সুন্দর পোশাক পড়ে। ভালো গান গায় ও। এক সময় এই সরকারেরই পরিবহন মন্ত্রী ছিলেন তিনি। যদিও তিনি বর্তমানে কামারহাটির বিধায়ক। আর কামারহাটির বিধায়ক হলেও তাঁকে চেনে রাজ্যের বহু মানুষ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন হাসপাতালের দায়িত্ব ভার কে কোথায় পালন করবে তার তালিকাও প্রকাশ করেছেন। ভেঙে দিয়েছেন রোগী কল্যাণ সমিতি।
সেই তালিকায় যে মানুষটা সেই কবে থেকে নেতা মন্ত্রী না হওয়া অবস্থায় প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতা। যখন তিনি ২৪ চৌরঙ্গী রোডের সেই অন্ধকার স্যাঁত সেঁতে অফিসে বসে সবে নেতা হবার জন্য ওয়ার্ম আপ শুরু করছেন। সিপিএমের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অন্দোলন করে আর কাগজে দু একটা নাম তুলে বাজার ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। আর সেই অফিসে তখন আমি ও বর্তমান তৃণমূলের মুখপাত্র বিখ্যাত সাংবাদিক কুনাল ঘোষ খবর পেতে আসা যাওয়া করতাম বিকেল বেলায়। সেই কিছু খবর পেতে তাঁর সামনে হাজির হতাম আমরা দুজন।
আর দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত পিজি হাসপাতালে সেই বাম আমল থেকেই তাঁর দাপট দেখতাম আমরা। এস এস কে এম হাসপাতালের ইট কাঠ পাথর সবই তাঁর চেনা। কিন্তু তা সত্বেও তাঁর প্রিয় সেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের দায়িত্ব তাঁকে কিন্তু দেননি মুখ্যমন্ত্রী। আগে তো একটা সময় মদন মিত্র আর এই এসএসকেএম হাসপাতাল ছিল একটা সমার্থক শব্দবন্ধের মতই। তাঁর কথায় এই হাসপাতালের গাছের সব পাতা নড়াচড়া করতো। মরা রোগী বেঁচে উঠত। মাটিতে পড়ে থাকা রোগী তাঁর এক ফোনে বেড পেয়ে যেতো।
তবু এত কিছুর পরেও নতুন রোগীকল্যান সমিতির যে তালিকা মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন সেই তালিকায় মদন মিত্র আর এসএসকেএম হাসপাতাল যে সমার্থক শব্দ বন্ধনী সেটা আর বলা গেলো না। মদন মিত্রকে পিছনে ফেলে পিজি সুপার স্পেশালিটি এই হাসপাতাল এর দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। আর মদন মিত্র কামারহাটী হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করবেন।জন্মদিনে এর থেকে ভালো উপহার আর কি হতে পারে শুভ জন্মদিন দাদা। আপনি ভাল থাকবেন। আর জীবনে ঝড় ঝাপটা যাই আসুক আপনার কথাই বলি যে, আপনি স্বপ্ন দেখা ভুলবেন না দাদা।
আজ দাদার জন্মদিন - অভিজিৎ বসু।
তিন ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন