সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিবিসির অমিতাভ ভট্টশালী

কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে। সেই হুগলীর সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন। সেই শেওড়াফুলি স্টেশন থেকে নকশাল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্যের মিছিল বের হওয়া। গঙ্গা পাড় হয়ে গোপনে তিন পয়সার ঘাট পেরিয়ে বারাকপুর দিয়ে এই নদীর পাড়ে আসার কথা ছিল, আর এই মিছিলেই গোপনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বিখ্যাত কানু সান্যাল এর। আর আমরা সব অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় কখন শুরু হবে এই মিছিল পুলিসকে বাধা দিয়ে জোর করে।

জোর করে জমি অধিগ্রহণ এর বিরুদ্ধে শাসক দল সিপিএমের বিরুদ্ধে নকশালদের এই মিছিল। হাজির সব বাংলা চ্যানেল এর লোকজন। হাজির জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। হাতে ছোটো সুন্দর কালো মাইক্রোফোন নিয়ে একটা ছোট্ট টেপ রেকর্ডার নিয়ে হাজির একজন। রোগা চেহারা। সব সময় হাসিখুশি। বেশ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার একজন সাংবাদিক। আমার পরিচিত সে। কি খবর অভিজিৎ। বলে কথা বলা তাঁর স্টাইল।

 আসলে জেলার পাতি সাংবাদিকদের সাথে ন্যাশনাল বা ইন্টারন্যাশনাল সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা সচরাচর কথা বলে নিজেদের জাত কুল আর মান খোয়াতে চাননা। যদিও এই ক্ষেত্রে সেটা হয়না কোনো সময়। হয়তো সেটা আগের পরিচয়ের সূত্র ধরেই। তাহলে কি জোর করে বিশাল পুলিশের ব্যারিকেড পার হয়ে এই নকশালদের মিছিল আজকেই সিঙ্গুরে জমি দখল করে চাষীদের ফেরত দিয়ে দেবে সঙ্গে সঙ্গে। নকশালদের অন্দোলন বলে কথা। উত্তেজনায় কাঁপছি আমরা সাংবাদিকরা, উত্তেজনায় কাঁপছে হুগলী জেলার পুলিশও। আর সেই সাংবাদিক চুপ করে উত্তেজনাহীন হয়ে সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে একদৃষ্টিতে আর একমনে। 

মিছিল শুরু হলো হুগলী জেলার সেই সময়ের এসপি ছিলেন সুপ্রতিম সরকার। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে মিছিল আটকাতে এগিয়ে আসা তাঁর। সেই শেওড়াফুলির স্টেশনের পাশে পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই জিটিরোড এর ওপর মিছিল উঠতেই চেনা সব পুলিশের থানার ওসির অচেনা হয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে যাওয়া। এলোপাথাড়ি লাঠি চার্জ করে মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করা আপ্রাণ। আর বেছে বেছে যারা সেই মিছিলের ছবি তুলছে তাদের আগে থাকতেই টার্গেট করে লাঠি দিয়ে মেরে ক্যামেরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের গুরুতর ভাবে জখম করা। যাতে ছত্রভঙ্গ হয় এই মিছিল।কোনো ছবি না ওঠে ক্যামেরা দিয়ে।

 দেখলাম পুলিশের লাঠির ঘায়ে রাস্তার একদিকে বাপি নিউজ টাইম এর ক্যামেরাম্যান, একদিকে উপেন তারা নিউজ এর, আর একজন কে মিন্টে না অন্য কেউ পুলিশের মারে রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছে তিনজন। তবু মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে গেল জি টি রোড ধরে বৈদ্যবাটি চৌরাস্তার দিকে। আর মিছিল পুলিশের প্রথম আক্রমণ সামলে এগিয়ে আসছে শুনে পুলিশ সুপার সুপ্রতিম সরকার এর তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কয়েক হাজার পুলিশ নিয়ে তিনি এগিয়ে আসছেন। আর বুক ফুলিয়ে এগিয়ে চলেছেন নকশাল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। 

সত্যিই সে এক দিন গেছে এই বাংলায়। আর আবার পুলিশের ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা করা। রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খাওয়া সাংবাদিক, নকশাল সমর্থকদের। জেলা পুলিশের সুপারকে আমি আমার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চিৎকার করে বলা ক্যামেরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে কি করবেন আপনি। কেনো এমন করা হলো তার জবাব দিন আগে তারপর আপনি মিছিল আটকাবেন। সেই সময় সবটাই এসপি আর আমার কথপোকথন সেই রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করে রাখছে সেই সাংবাদিক একমনে চুপ করে। আর ভদ্র বিনয়ী পুলিশ সুপার সুপ্রতিম সরকার আমার চন্ডাল আর সেই রণদেহী রূপ দেখে বলছেন, অভিজিৎ প্লিস আমি দেখছি সব। আপনি একটু শান্ত হন। আর প্রকাশ্য রাস্তায় আমি চিৎকার করছি এসব কি হচ্ছে কি।

সত্যিই সেই দিন গুলো বেশ ভালই ছিল কিন্তু। আজকাল এমন কোনো এসপিকে বললে কি হতো জানিনা আমি নিশ্চয়ই নিশ্চিত হাজত বাস। আর সেই সাংবাদিক তখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে নানা আহত লোকের, এসপির ইন্টারভিউ নিয়ে যাচ্ছে ঠাণ্ডা মাথায় একদম চিৎকার না করে। তারপরেও যে কতবার সিঙ্গুরের মাঠে দেখা হয়েছে আমার তাঁর সাথে। দেখা হয়েছে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সন্ধ্যা বেলায়। কথা হয়েছে নানা খবর নিয়ে, নানা ইস্যু নিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা। সেই সাংবাদিক এর তো হায়দরাবাদ এর রামোজি ফিল্ম সিটিতে নাক ফেটে যাওয়ার গল্প বহুল প্রচলিত ছিল। হায়দরাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেসে চেপে এই গল্প কলকাতা আর বাংলাতেও ছড়িয়ে পরে ধীরে ধীরে।

 হ্যাঁ, আজ সেই আমার হারিয়ে যাওয়া এক বন্ধুর কথা আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। সেই আমাদের সবার পরিচিত হাসিমুখের বিবিসির সাংবাদিক অমিতাভ ভট্টশালী। সেই অনেকের কাছে যে ভট্ট বলেই পরিচিত। সেই রাত নটার নিউজ এর জন্য সিদ্ধার্থ সরকারের কাছে যে সব থেকে ফেভারিট আর পছন্দের ভরসার ব্যক্তি ছিল সেই সময়। আসলে আজ আমার হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ওর কথা। কতদিন যে ওর সাথে কথা হয়না আর আমার এই এলোমেলো এলেবেলে জীবন হয়ে যাওয়ার পর। কিছুদিন আগেও তো চব্বিশ ঘণ্টার চাকরি করার সুবাদে নানা বিষয়ে কথা হতো দুজনের। বিশেষ কোনো বিষয় নিয়ে স্পেশাল স্টোরি করা নিয়ে আলোচনাও হতো দুজনের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘন্টা।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো বিশেষ উব্দেগজনক রিপোর্ট নিয়ে ওর তথ্যমূলক প্রতিবেদন তৈরি করা। বাংলার এই একটা মরা, দুটো লরি উল্টে যাওয়া বা সেই তৃণমূল আর সিপিএম এর আকচাআকচি এই সব খবর নয়। একদম বিবিসির জাত সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধান মূলক প্রতিবেদন। আর সেই খবর করে প্রেস ক্লাবে এসে একা একা বা গুটিকয় বন্ধু নিয়ে আলাদা একটা বৃত্তের ব্যাসার্ধ তৈরি করে টেবিল নিয়ে বসে থাকা। আর চুপ করে দেখা বাংলার বিখ্যাত সব সাংবাদিকদের। আমার বেশ ভালই লাগত ওর এই কাজ দেখতে। বেশ একটা উত্তেজনা আর থ্রিলার অনুভব করতাম আমি। কত যে খবরের ছোটো ছোটো টিপস পেতাম ওর থেকে সেই সময় কলকাতায় কাজ করার সময়। আজ সেই সব কথা মনে পড়ে যায় আমার। 

সেই হায়দরাবাদ এর ভরা বাংলা ডেস্ক, সেই ধ্রুব, অমিতাভ ভট্টশালী, অমিতাভ সেনগুপ্ত, সুদীপ্ত , সুবীর চক্রবর্তী, শুভ্রাংশু, জাগরণ দা, শাশ্বতী দি, কিছুদিনের জন্য উৎপল, সেই আরও কতজন যে ছিল সেই প্রথম ইটিভির আমলে নাম মনে আসে না আর। সেই খবরের নতুন সংসার আর নতুন চ্যানেল নিয়ে দৌড় ঝাঁপ করা সকলের। সেই খবরের ক্যাসেট পৌঁছতে গিয়ে দৌড়তে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে সুদীপ্ত সোম এর হাত ভেঙে যাওয়া বোধহয়। যে হাত দিয়েছি সে সুন্দর পাখির ছবি তুলে মন কেড়ে নেয় আমাদের।

 এমন কত যে স্মৃতি ছড়িয়ে আছে কে জানে। সেই পড়ে সিদ্ধার্থ সরকারের হাতে এই চ্যানেলের ক্ষমতা চলে যাওয়া। ইটিভির বাংলা চ্যানেল চব্বিশ ঘণ্টার চ্যানেল হলে কতটা সেই ক্ষমতার অধিকারীর স্বাদ কে পাবে সেটাও বেশ মজার বিষয় কিন্তু। সত্যিই বেশ ভালো আর মন্দ স্মৃতি রোমন্থন করেই তো এই জীবন কাটিয়ে দেওয়া। বিবিসির এই সাংবাদিক এর সাথে কথা বলতে চাই আমিও। আবার ফিরে যেতে চাই আমি আমার হারিয়ে যাওয়া জীবনে, হারিয়ে যাওয়া খবরের দুনিয়ায়। 

যেখানে অমিতাভ ভট্টশালী আবার আগের মতই সহজ সরল ভাবে এগিয়ে আসবে, খবরের পেছনে দৌড়বে, নটার রান অর্ডার সাজাবে। ইটিভির সেই মন কেমন করা খবরের চাকা ঘুরবে। সব বাড়ির ড্রয়িং রুমে নটার খবরের চেনা টিউন বাজবে। আর অমিতাভ ভট্টশালী নিজের হাতে জাতীয় খবর বেছে দিয়ে দর্শকদের মন ভরিয়ে দেবে। দীর্ঘদিন নটার খবরকে ভালো পয়েন্ট করে দিয়েছে সে এইভাবেই। সত্যিই এটাই যে সেই সিঙ্গুরে সিপিএমের বিরুদ্ধে জমি দখলের আন্দোলন তৃণমূলের, সেই পাল্টা নকশালদের মুভমেন্ট তৈরি হওয়া, সেই রাস্তায় পড়ে মার খেয়ে সাংবাদিকদের লুটিয়ে পড়া এই সাদা জীবনের কালো কথায় এমন কত যে ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম আমি। আজ রাতের অন্ধকারে মনে হলো এমন কিছু কথা লিখে ফেলি। ভালো থেকো তুমি অমিতাভ। আর সময় হলে আগের মতোই ফোন কোরো। 

বিবিসির অমিতাভ ভট্টশালী - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...