সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের কিট্টু

কিট্টু মানেই ক্যামেরা। কিট্টু মানেই মন ভালো করা ছবি। কিট্টু মানে সেই পান্ডুয়ায় কুকুরের বিয়ের খবর করে আমায় ইটিভির জেলা রিপোর্টারকে হারিয়ে দিয়ে মনে মনে হাসি মুখে বলা এইবার দেখ কেমন লাগে, কিট্টু মানেই চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজোর বিশেষ কভারেজ, কিট্টু মানে একরাশ মান অভিমান নিয়ে চন্দননগর স্ট্রান্ড ঘাটে আপন মনে বসে থাকা, কিট্টু মানে জগদ্ধাত্রী পূজোর বিশেষ পাশ দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে ভীড়ের মধ্যে লোক দিয়ে আমায় আমার পরিবারকে ঠাকুর দেখতে ঘুরিয়ে দেওয়া, কিট্টু মানেই আলফা নিউজ এর সেই সাড়ে পাঁচটার খবরে প্রায়দিন নিজের নামে বাইলাইন করা, কিট্টু মানেই টোটো চালকের আঁকিবুঁকি ব্লগের মাঝে মাঝেই সমালোচনা করা। কিন্তু কিট্টু মানেই টোটো চালকের যে কোনো দরকার পড়লে আশ্বাস দেওয়া। আর বলা দাদা অসুবিধা হলে বলবেন কিন্তু আপনি আমায় দাদা। 


হ্যাঁ, আজ আমার সেই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর সেই চব্বিশ ঘণ্টার রিপোর্টার বিশ্বজিৎ সিংহ রায় ওরফে কিট্টুর কথা। আসলে আমার এই লেখা লেখা খেলা খেলতে বেশ ভালই লাগে। যদিও ওর সেটা আবার একদম পছন্দ নয়। আমার এই ভাবেই রাতের অন্ধকারে দৌড়ে বেড়াতে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু ওর কথায় এইসব নানা ভালো আর খারাপ লোকদের নিয়ে লিখে লাভ কি বলুন তো। লাভ কিছুই নয় শুধু চরিত্র চিত্রন করে আর মানুষকে দেখা জীবনকে দেখা নিজের মতো করে দেখা। যে দেখায় কোনো উদ্দেশ্য নেই শুধুই বিধেয় আছে। যে দেখায় শুধু মাত্র আঁকাবাঁকা অক্ষরে মেঠো পথ ধরে পৌষের সকালে এগিয়ে যাওয়া আছে।

হুগলী জেলার অনেক রিপোর্টার, ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে লেখার পর আমার মনে হলো এই জেলায় আমার নিজের জেলায় আরও অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। যাঁদের সাথে কাজ করেছি আমি দীর্ঘদিন ধরেই। কখনও খবরের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছি। আবার কখনও হাসিমুখে পাশে বসে আড্ডা দিয়েছি, চা খেয়েছি। কিন্তু সব কিছুর মাঝেই একটা দূরত্ব বজায় ছিল বরাবর। একটু সম্মান শ্রদ্ধার চোখে দেখলেও কেমন যেনো একটা প্রতিযোগী মনোভাব নিয়েই দুজন দুপক্ষের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে হাসি মুখে ঘুরে বেড়িয়েছি। এইভাবেই আমাদের কেটেছে বহুদিন, বহু বছর। 

হঠাৎ একদিন ওর সাথে দেখা হলো পোদ্দার কোর্টের চব্বিশ ঘণ্টার অফিসে আট তলায়। সেই ওর বুক ফুলিয়ে নাট্য মঞ্চে প্রবেশ করা ঠিক বিবেকের ভূমিকায়। এই টেবিল আর ওই টেবিল এ ঘুরে বেড়ানো হাসি মুখে কাঁধে সাইড ব্যাগ নিয়ে। আমায় দেখে বোধহয় একটু অবাক হয়ে যাওয়া। জেলার পাতি মাল রং বদলে ময়ূর সেজে এইখানে এলো কি করে মনে মনে ভাবা। কিন্তু খবরের সময়ে সেই দুরত্ব না রেখেই হাসি মুখে আবার ঝাঁপিয়ে পড়া। এটাই তো আমার আর ওর সেই প্রায় ত্রিশ বছরের সম্পর্ক। যে সম্পর্ক আজও আমাদের হৃদয়ে অমলিন হয়েই বেঁচে আছে। সেই সিঙ্গুরের মাঠে, সেই চাঁপদানীর ভিখারী পাসোয়ান এর খবর করতে গিয়ে, সেই পোলবা, মগরা, পাণ্ডুয়াতে, বলাগড় আর গুপ্তিপাড়ায় খবরের টানেই ছুটে গেছি আমরা দুজন মিলেই। 

এটাই তো আমাদের সেই জরিপ করা কুলুঙ্গির মধ্য জমিয়ে রাখা কড়ি আদান প্রদানের সম্পর্ক। আমার হঠাৎ করেই চলে আসা চব্বিশ ঘন্টা ছেড়ে। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো ভেসে বেড়ানোর চেষ্টা করা। ওর কথায় কেউ পেছনে লাথি তো মারেনি আপনাকে। আপনি তো নিজেই ব্যাগ নিয়ে নেমে এসেছেন রাস্তায়। সেই এগারো তলা থেকে হাঁটতে হাঁটতে প্রদীপের চায়ের দোকানে। আর ও যেনো কিছুদিন পড়ে নিজেই চলে গেলো চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেল ছেড়ে স্বেচ্ছায় নয়। যা আমার কাছে মোটেই ভালো লাগে নি সেই সময়। এতদিন সার্ভিস দেওয়ার পরই এমন ঘটনায় অবাক আমরা সবাই। সত্যিই অসাধারণ এই মিডিয়া নামক শিরদাঁড়াহীন জীব। 

আজ আমাদের দুজনের দৌড় কমে গেছে। কমে গেছে কেনো বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়। তবু আমাদের হাসি ঠাট্টার সম্পর্ক আজও রয়ে গেছে। চন্দননগর, চুঁচুড়া বা ব্যান্ডেল স্টেশন এলেই ওকে ফোন করে ফেলি আমি। কোনও সময় ফোন ধরে ও, ব্যস্ত থাকলে হয়ত ফোনে কথা হয় না আমার। তবু সেই ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের ফাঁকা মাঠ, গটু গ্রাম, সেই কুন্তী নদীর তীর, সেই দেবানন্দপুরের ভিটে, সেই পাণ্ডুয়ার স্টেশন, এমন নানা ছবি তো ভেসে ওঠে আজ এই ভোরবেলায়। 

যে ছবির জাদুকর এর হাতের শাটারে ক্লিক শব্দে ধরা থাকে নানা ছবি। সেই চব্বিশ ঘণ্টার পুরোনো একান্ন বর্তী সংসার। সেই সংসারের নানা কুশীলবদের, মাতব্বর মানুষদের ছবি। সেই আমার চোখে রুমাল দিয়ে কালো চশমা পড়ে অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকার ছবিও। যে নানা ছবির মাঝেই বেঁচে থাকে আমাদের কিট্টু হাসিমুখেই। একদম নায়কের মতই। বিন্দাস জীবন নিয়ে, হাসি মুখেই। ভালো থেকো তুমি। সুস্থ থেকো তুমি। আর ভুল লিখলে মনে মনে গাল দিয়ে, ক্ষমা করে দিও আমায়।  

আমাদের কিট্টু - অভিজিৎ বসু।
বাইশে ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...