সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পৌষ মেলা, শান্তিনিকেতন


শীতের সন্ধ্যা ঠিক বলা যাবে না এখনও। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ হলেও শীত থমকে গেছে অনেকটাই। আর কিছুদিন পরেই তো পৌষ মেলা শুরু হবে। তাই আমি একটু হেঁটে মেলা মাঠকে দেখতে গেছিলাম সন্ধ্যা বেলায়। কেমন আছে মেলা মাঠ। পূর্বপল্লীর রাস্তায় এমনিতেই লোকজন কম। আমি আপন মনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছি। দু একটা সাইকেল যাচ্ছে পাশ দিয়ে। মাথার ওপর বড়ো বড়ো গাছের অমলিন বন্ধুত্বের হাসি। 

 রাতের অন্ধকারে সন্ধ্যায় আচমকা ছাতিম গাছের ডালে এসে বসলো রাতচরা পাখিটা। একটু যেনো নড়ে উঠলো গাছের ডালটি। আমিও আমার হাঁটার গতি একটু কমিয়ে দিলাম। মাথা তুলে ওপর দিকে তাকালাম আমি।না ওকে দেখতে পেলাম না। 

সত্যিই বলতে কি আমিও তো ওর মতই মাঠ দেখতেই সন্ধ্যার অন্ধকারে এসেছি, চুপি চুপি ওর মতই। নিশ্চয়ই ওই পাখিও আমার মত খবর পেয়ে সেও এসেছে লুকিয়ে মাঠ দেখতে। যাতে কেউ দেখতে না পায় তাকে। দুজন দুজনকে দেখতে না পেলেও এক উদ্দেশ্যে এসেছি আমরা।

কিন্তু যাকে নিয়ে এত আলোচনা এত হৈ চৈ সে একদম চুপ, মুখে কুলুপ তার। কেনো জানিনা সন্ধ্যার নরম আলোয় কেমন মনমরা লাগছে ধুলো ধূসর মাঠকে দেখে।গাছের ডালে বসে রাতচরাও চুপ। আর আমিও একদম চুপ।

 সত্যিই কি তাহলে মাঠের মন ভালো নেই আজ। যাকে নিয়ে এত মাতামাতি, হৈ চৈ সে এসবের থেকে দূরে সরে আছে। কিন্তু কেনো, কিসের অভিমান এত তার। কে জানে হয়তো গভীর গোপন বেদনায় সে চুপ করে আছে। আমরা কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না কি হয়েছে তার। 

এক সময় সে নিজেই তার নীরবতা ভাঙলো। বিড় বিড় করে বলতে থাকলো সালটা ১৮৪৩ সালের ২১ শে ডিসেম্বর বাংলার ১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ ই পৌষ। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়ি জন অনুগামীকে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের থেকে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। আর এটিই হলো শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের মূল ভিত্তি।

 ১৮৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৯৮ বঙ্গাব্দ ব্রাহ্মমন্দির স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালে ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী স্মরণে মন্দিরের উল্টোদিকের মাঠে একটি ছোটো মেলার আয়োজন করা হয়েছিল ১৮৯৪ সালের ৭ ই পৌষ। সেই থেকেই পথ চলা শুরু হয় পৌষ মেলার। 


ধীরে ধীরে পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের সেই পৌষমেলা শুধুমাত্র বীরভূম জেলার নয়, অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকেদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। যা পরে বিশ্বজনীন হয়ে যায়।

 ১৮৯৪ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে আয়োজিত হয়ে আসছে পৌষমেলা। ১২৬ বছরের ইতিহাসে মোট দু বার বন্ধ থেকেছে এই পৌষ মেলা। ১৯৪৩ সালে দেবেন্দ্রনাথের দীক্ষাগ্রহণ এর শতবর্ষে মন্বতরের কারণে। আর ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে মেলা করা যায়নি। আর পরে যদিও কোভিড এর কারণে পৌষমেলা বন্ধ থাকে দু বছর।

 প্রথম দিকে তো এই মেলা ব্রাহ্ম মন্দিরের যা কাঁচ মন্দির নামেও পরিচিত, উত্তর দিকের মাঠে এই মেলা হতো। পরে ধীরে ধীরে মেলার আকার বড় হতে থাকে। তারপর থেকেই এই পূর্ব পল্লীর মাঠে শুরু হয় মেলা।

সে এক আলাদা ব্যাপার, ভোরবেলা সানাই বাজিয়ে মেলার শুরু। সত্যিই বলতে কি সানাই এর সুরে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে গোটা মাঠ, গোটা এলাকা। সে এক আলাদা অনুভুতি বলে বোঝাবার নয়। স্মৃতির সরণি বেয়ে এগিয়ে যায় সে।বৈতালিকের দল গান গাইতে গাইতে আশ্রম পরিক্রমা করে। আর তারপর ছাতিম তলায় উপাসনার আয়োজন করা হয়। সত্যিই বলতে কি একটা আলাদা মেলার আমেজ ছিল সেই সময়। অন্য সব মেলার সাথে একে গুলিয়ে ফেললে হবে না। আপন মনে বলতে থাকে সে।

বলতে বলতে মাঠ, একটু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে। সত্যিই তো কি দ্রুত সব বদলে গেলো যেনো, উন্নয়নের চাপে। এই পৌষ মেলা শান্তিনিকেতনের বার্ষিক মেলা দ্রুত উৎসবে পরিণত হলো। ২১, ২২ আর ২৩ ডিসেম্বর এর তিন দিনের এই মেলা। আম জনতার কাছে একটা এমন মেলা যেখানে আবেগ আর আভিজাত্য এর থেকেও বেশি স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে গেলো পৌষ মেলা। ধীরে ধীরে পৌষ মেলা তার কৌলিন্য হারালো। পুরনো মেলার আমেজ হারাতে থাকলো সে ধীরে ধীরে।

যে মেলার বাজি পোড়ানো নিয়ে, দূষণ নিয়ে আদালত অবধি যেতে হলো। সত্যিই বলতে লজ্জা হয় আজ তার এই সব কথা। কোনো দিন এমন হবে সে ভাবেই নি।কেনো মেলা শেষের দিন একটু আলোর রোশনাই তো খারাপ লাগতো না তাদেরও। রাতের আধারে আচমকা তারা আলোর রোশনাই আর তুবড়ির ফুলকি দেখে মনে মনে খুশি হতো তারাও। কই তাদের তো কোনো দিন অসুবিধা হয় নি এই জন্য। কিন্তু তাও আপত্তি জানিয়ে সোজা কোর্টের দরজায়। ছি ছি কি আর বলবো এসব কথা। লাজ শরমের কোনো বালাই নেই গো এদের। 

তাহলে কিসের আপত্তি কে জানে। যাদের আপত্তি তারাও তো মেলা উপভোগ করতেই আসত এখানে। তারপর কেনো যে তারা দূষণের দোহাই দিয়ে মেলা বন্ধ করলো, এই মাঠে কে জানে। তার জবাব কেউ দিতে পারেনি আজও। সত্যিই বলতে কি, এটা নিয়ে অভিমান নিয়েই এতদিন চুপ ছিল সে। কাউকে কিছুই বলে নি। 

আবার সেই মাঠ নিয়ে মাতামাতি হতেই আজ অস্ফুটে কিছু অভিমান বেরিয়ে এলো তার মুখ থেকে। রাতচরা আর আমি দুজনেই চুপ। কী বলবো আর। এত দিনের অভিমান গলে জল হয়ে বের হচ্ছে ওর। যত হালকা হবে ভালো লাগবে ওর।

একমাত্র শান্তিনিকেতনের সেই পৌষমেলা আজ শুধু আর বীরভূম জেলার নয়, রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকদেরও আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই মেলাকে নিয়েও এত কেনো দড়ি টানা টানি কে জানে। কই আগে তো এমন কোনো দিন হয়নি আগে।বাউল গানের সুর আর নাগর দোলার ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজে তারা বেশ মজাই পেত।তারাও দুর থেকে সবাই উপভোগ করতো। যেমন তাদের ভালো লাগতো গরম গরম জিলিপির গন্ধে ম ম করতো গোটা মাঠ। গুড় কাঠির ওপর বসত বড়ো বড়ো মাছি। 
আর মার হাত ধরে ছোটো ছেলে মেয়েরা বায়না করতো গুড় কাঠি খাবে বলে। টোকো মাথায় চাষী আপন মনে মেলায় ঘুরতো এদিক ওদিক। বাউল গানের সুরে মাতোয়ারা হয়ে উঠতো গোটা মেলার মাঠ। ধুলো মেখে মেলার ভীড়ে হারিয়ে যেত কত স্মৃতি। 

আর আজ সেই মেলার আয়োজন নিয়ে এত আলোচনা, এত হৈ চৈ। সত্যিই ভাবলে কষ্ট হয় তার। চুপ করে সব দেখে সে।কী দরকার ছিল বেশ তো ভালই আছি আমি। কেনো আবার আমায় নিয়ে এত আলোচনা কে জানে। এতে দুঃখ বাড়ে বই কমে না।

এই মাঠেই তো এমন একটি দিনে ঘুরে বেড়িয়েছেন কবি নিজেই। এত ঘেরা টোপে বন্দী হয়ে তো তাঁকে ঘুরতে হয়নি। তাহলে এখন কেনো এতো আলোচনা এই মাঠের মেলার আয়োজন নিয়ে। দরকার নেই সে যেমন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে তেমন করেই থাকতে পারবে। দরকার নেই তাদের কাছে আবার মেলাকে ফিরিয়ে দিয়ে ,তাদের কষ্টকে বাড়িয়ে দিতে। তারা এই বেশ আছে।

 মাঠের অভিমানের কথা শুনে আমরাও একটু অবাক হয়ে যাই। দড়ি টানা টানির মার প্যাঁচে কেনো যে বিন্দাস জীবনে আবার তাদের কাছে একটা যতি চিহ্ণ পড়ছে কে জানে। বেশ তো ছিল তারা। তাহলে আবার কেনো এই মেলা মাঠ নিয়ে মাতামাতি, উত্তেজনা, শর্ত আরোপ কে জানে। বেশ তো ভালই আছে সে। 

এত দুঃখ, কষ্ট বুকে চেপে সে এতদিন মুখ বুজেই ছিল। আজ একটু বেশিই কষ্ট হলো তাই উগড়ে দিলো সে কিছু কথা। সত্যিই বলতে কি আমি নিজেই লজ্জিত হলাম ওর কথা শুনে। কেনো যে আমি ওকে দেখতে এলাম মেলার খবর পেয়ে কে জানে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো আমার নিজেকে। 

কিন্তু আমাকে অবাক করে, রাত চরা পাখিটা ছাতিম গাছের ডাল থেকে নেমে এলো। মাঠের মাঝখানে উড়ে এসে বসলো সে। মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলো সে মাঠের মাঝখানে। যেনো নিজের অপরাধ কবুল করে সে ক্ষমা চাচ্ছে মাঠের কাছে।

 ওকে দেখে আমিও ভাবলাম, আমি কি ক্ষমা চাইবো ওর কাছে। ওকে বলবো আমাকেও ক্ষমা করে দাও তুমি। কিন্তু না পারলাম না, আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইতে পারলাম না। ভাবলাম যদি আমায় সে ক্ষমা না করে ফিরিয়ে দেয় অভিমানে। তাহলে কোন মুখে বাড়ী ফিরবো আমি। লজ্জায় ধীরে ধীরে আমি মাঠ থেকে মুখ লুকিয়ে বাড়ীর পথ ধরলাম। মাথা নিচু করে। 

পৌষমেলা,শান্তিনিকেতন - অভিজিৎ বসু।
চার ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সংগৃহীত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...