সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলুর দাম বৃদ্ধিতে রাস্তায় মন্ত্রী বেচারাম মান্না

শীত পড়লেই মাঠে আলু ওঠার সময় হয়ে যায়। সেই ছোটো ছোট নতুন আলুর আলুর দম আর মুড়ি‌ বেশ ভালো খাওয়া। আর অন্যদিকে বড়ো বড়ো নতুন আলুর সেই কষা ঝাল ঝাল শুধু আলুর দম এর ফিস্ট হওয়া। সেই সন্ধ্যা থেকেই শ্রীরামপুরে মামার বাড়ির পাশের এঁদোপুকুরের পাশে সেই জাম্বুল গাছের নিচে এই ডিসেম্বর মাসেই ফিস্ট হতো। কাঠের জ্বাল এর রান্না। সেই পাড়ার বড়োরা কানু মামা, ভোদা মামা, ভিজে মামারা থাকতেন। জানিনা আজ হয়তো কানু মামা বেঁচে নেই আর। সেদিন লাহিড়ী পাড়ায় সমীরদের বাড়ী যাওয়ার সময় দেখলাম কানু মামার ছেলে দেবাশীষকে দেখলাম, গম ভাঙ্গানোর মেসিন চালাচ্ছে ও। ওকেই প্রাইভেট টিউশনি পড়াতাম আমি। 


বড়ো রান্নার কড়াইতে রান্না হচ্ছে জোর কদমে। তার সুন্দর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। রাতের অন্ধকারে সেই শিশির পড়ে ভিজে যাওয়া জাম্বুল গাছের পাতায় লেগে যাচ্ছে ঝাল ঝাল আলুর দমের মন ভালো করা গন্ধ। এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ছে সেই গন্ধ।
আর বড়রা কোমরে হাত দিয়ে সবাই তদারকি করতে ব্যস্ত। আর আমরা যারা ছোটো সেই সময় তখন শাল পাতা জোগাড় করে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। যদি একটু টেস্ট করা যায়, একটুকরো গরম আলু পাওয়া যায় এই আশায়। কপাল ভালো থাকলে গরম ধোঁয়া ওঠা আলুর একটা টুকরো আর একটু গরম লাল ঝোল মিলে যেতো আমাদের ছোটদের। 

ছোটো হাতে শাল পাতা ধরে কেমন গরম ধোঁয়া বের হওয়া দেখতাম একমনে আমরা অপলক নয়নে। দূরে রান্নার টগবগ আওয়াজ আর মন মাতানো গন্ধ ছড়াচ্ছে চারিদিকে। আর আমরা সেই শুধু আলুর দম এর গন্ধ মেখে আনন্দে বুঁদ হয়ে যেতাম। তখন বোধহয় এত সমাজে বড়লোক আর গরীব লোক এর মতো আলুর সংসারেও ভাগাভাগি হয়নি। সেই জ্যোতি আর চন্দ্রমুখীর মত। 

একটাই আলু সেই হাটে মাঠে ঘাটে বাজারে দেখা যেতো সেই জ্যোতি আলু। যে আলুর ঘরে ঘরে তার কদর ছিল বেশ সেই সময়। এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চল্লিশ বা পঁয়তাল্লিশ টাকার চন্দ্রমুখী আলু কেনা বাবুর ব্যাগে একটা একটা করে আলু বেছে দিয়ে আলু ওলার মুখে কেমন একটা স্মিত গর্বের হাসি। ভাবটা এমন উনি যেন অন্য গ্রহ থেকে আলু কিনতে এসেছেন। 

আর আমার মত ছাপোষা একজন রোজগারহীন কর্মহীন মানুষ যারা যমালয়ে জীবন্ত মানুষের মতো বেঁচে আছে। কম দামের সস্তার জিনিস কিনে যাঁরা দিনাতিপাত করেন বেশ কষ্টে। করুন আর বেজার মুখে বাজার বিক্রেতারা তাদের ব্যাগে পঁয়ত্রিশ টাকার বিনিময়ে এক কেজি আলু বিক্রি করছে বিরস বদনে। পাঁচ কেজি আলু কিনতে গেলে কড়কড়ে দুশো টাকার বিনিময়ে মাত্র পঁচিশ টাকা ফেরত মিলছে আলু বিক্রেতার কাছ থেকে। সারা সপ্তাহের আলু কিনতেই যদি দুশো টাকা চলে যায় তাহলে আর বাজারে আনাজ সবজি কিনব কি করে। মাথায় হাত পড়েছে সাধারণ ক্রেতার। এমনকি যাঁরা জ্যোতি আলু কি সেটা নজর করেন না বাজারে এসে তাঁরাও বলতে শুরু করেছেন হচ্ছেটা কি। 

আসলে আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে বছরভর এই এক নাটক প্রতিবার হয়ে আসছে। আলুর দাম চল্লিশ এর ঘর পেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে তারা যতই মাটির নিচে তৈরি হওয়া একটি শ্বেতসার সমৃদ্ধ ভূনিম্নস্থ পরিবর্তিত কাণ্ড হোক সেটি কিন্তু আমাদের একমাত্র জীবন। ঠিক যেনো আলু ছাড়া জীবন যেনো আলুনি লাগে আমাদের। তাই এই আলুর দামকে বেঁধে রাখার নিরন্তর প্রয়াস সরকার এর। আর আমাদের জ্বর হলে ডাক্তারবাবুর যেমন এন্টিবায়োটিক দিয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করেন। আর সরকার প্রতিবছর সেটাই করে আলুর দামকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই বাগে আনতে পারে না সরকার। থার্মোমিটার এর পারা মতো সে দ্রুত ঊর্ধ্বগামী। 

আর তাই সেই চাষী ঘরের ছেলে, মাটির গন্ধ যাঁর গায়ে এখনও লেগে আছে। সেই হুগলীর সিঙ্গুরের রতন পুরের আলুর আড়ত এর পাশেই যাঁর বাড়ী। সেই সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের সময় যাঁর হাত ধরে সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটি তৈরি হয়। যে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি চাষের জমিকে শিল্পের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে একটা অনন্য নজির স্থাপন করে। যার ফলশ্রুতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সিঙ্গুরের কৃষি জমি বাঁচাও আন্দোলন সারা দেশ জুড়ে হৈ হুল্লোড় ফেলে দেয়।

 সেই বিখ্যাত সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে দেখলাম রাতের অন্ধকারে তিনি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে রাস্তার ওপর। সেখানে পুলিশ সহ দাঁড়িয়ে আছেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না স্বয়ং। উদ্যেশ্য একটাই যে করে হোক আলুর লরিকে ভিন রাজ্যে যেতে দেওয়া হবে না। সে বিহার হোক, উড়িষ্যা হোক, কিম্বা অন্য যে কোনো রাজ্যে। আলু বাংলা থেকে রাতের অন্ধকারে পার হয়ে যাবে না কিছুতেই। আগে বাংলার মানুষ ঠিক দামে আলু পাবে তারপর না হয় একটু ভিন্ন চিন্তা করা যাবে। 

এই হুগলী জেলা আলুর জন্য বিখ্যাত। এরপর আছে বর্ধমান, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বেশ কিছু জেলা যেখানে আলুর ফলন হয় বেশ বেশি পরিমাণে হয়। যে আলু রাজ্যে উৎপাদিত হয় প্রচুর। সেখানে কেনো যে রাতের অন্ধকারে আচমকা মন্ত্রীকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দিতে হয় কে জানে। হয়ত এটা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ। তাই তিনি নিজেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন মন্ত্রী স্বয়ং। কিছুটা পরিস্থিতিকে নিজেদের বাগে আনার জন্য এমন কাজ করছেন রাতে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাতে কিছুতেই না যায় সেদিকেও তাঁর কড়া দৃষ্টি রেখেছেন। যে দৃষ্টি দিয়ে তিনি রাতের বেলাতে আলুর বেআইনি লরিকে ধরতে চাইছেন। 

এইভাবেই তো টাটার ন্যানো প্রকল্পের জন্য ঘেরা জমিকে রাতের বেলায়, দিনের বেলায় কড়া নজরদারি করে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তিনি। যাতে কোনও ভাবেই হাতছাড়া না হয় চাষের জমির। আর আজ সেই জমি অন্দোলন করা বিখ্যাত নেতা বর্তমানের মন্ত্রী বেচারাম মান্না আজ আলুর দাম বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন হয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। দেখা যাক মন্ত্রী রাস্তায় নেমে পড়ায় কতটা কাজ হয়। বাজারে গিয়ে তার কতটা সুফল পায় ক্রেতারা। সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও বুঝতে পারে কি না যে আলুর বাম্পার ফলন হলেও এই লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বৃদ্ধি তাহলে কেনো। 

তাহলে কি সবটাই একটা নিয়ম অনুযায়ী ঘটে যাওয়া ঘটনা মাত্র। লোক দেখানো নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু ঘটে যায়। প্রতি বছর আলুর দাম ওঠে, আবার দাম নামে। চাষী, ফড়ে, হিমঘর মালিক, আড়তদার, আলু বাছাই করে যারা তারা, যাঁরা মাঠে খেটে চাষ করে তারা সবাই তো এই আলুর দাম এর মাধ্যমে নির্ভর করে তাদের জীবন। ভোট এর বছরে শোনা যায় বাজার তো এই বছর চড়া মূল্য হবেই। যতই সে মাটির নিচের ফসল হোক। তবু কেনো যে এই আলুকে কিছুতেই ফি বছর তার দামকে বেঁধে রাখা যায়না কে জানে। 

সে মাটির নিচের ফসল সাত থেকে দশ হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ অঞ্চলে প্রথম চাষ করা হয় বলে জানা যায়। পরে এই আলুকে ১৬শ‌ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে স্পেনীয়রা আমেরিকা থেকে ইউরোপে নিয়ে আসে চাষ শুরু করে। ভুট্টা, গম, ধানের পর আলু বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খাদ্য শস্য। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৫০০০ টি প্রজাতির আলুর জাত দেখা যায়।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫,০০০ আলুর জাত রয়েছে। তাদের মধ্যে তিন হাজার শুধুমাত্র আন্দিজ অঞ্চলে পাওয়া যায়, প্রধানত পেরু, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, চিলি এবং কলম্বিয়াতে। শ্রেণিবিন্যাসগত গোষ্ঠীর উপর নির্ভর করে তারা আট বা নয়টি প্রজাতির অন্তর্গত। ৫,০০০টি চাষ করা জাত ছাড়াও, প্রায় ২০০টি বন্য প্রজাতি এবং উপ-প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলিই চাষ করা জাতের সাথে আন্তঃ-প্রজনন করানো যেতে পারে। বন্য প্রজাতির জিন পুল থেকে চাষকৃত আলু প্রজাতির জিন পুলে নির্দিষ্ট কীটপতঙ্গ এবং রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা স্থানান্তর করার জন্য বারবার আন্তঃ-প্রজনন করা হয়েছে।


 ইংরেজি শব্দ potato এসেছে স্পেনীয় patata (স্পেনে ব্যবহৃত নাম) থেকে। "আলু" এর জন্য একটি শব্দ ব্যবহার করার জন্য পরিচিত যা মোটামুটিভাবে ইংরেজিতে "আর্থ অ্যাপেল" বা "গ্রাউন্ড অ্যাপল" হিসাবে অনুবাদ করা যায়। বাংলা ভাষায় "আলু" শব্দের উৎপত্তি বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয় যে আলু চাষের প্রাথমিক সময়ে পেরুর আন্দীয় সভ্যতায় চাষের জমিকে আলু বলা হতো এবং সেখান থেকেই বাংলায় আলু শব্দটি এসেছে। সাধারণত লাল আলু, হলুদ আলু, সাদা আলু আর বেগুনি আলুর সন্ধান পাই আমরা। 

শুধু তাই নয় ভ্যান গগের তুলিতে এই আলুকে নিয়ে ছবি এঁকেছেন তিনি। ১৮৮৫ সালের চিত্রকর্ম দ্য পটেটো ইটারস একটি পরিবারের আলু খাওয়ার দৃশ্যকে চিত্রিত করেছে। ভ্যান গগ বলেছিলেন যে তিনি কৃষকদের তারা যেমন ছিল তেমন চিত্রিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মোটা এবং কুৎসিত মডেলদের বেছে নিয়েছিলেন, এই ভেবে যে তারা তার সমাপ্ত কাজে স্বাভাবিক এবং অস্পষ্ট হবে। 
আর যে আলুর এই সুদীর্ঘ হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। যাকে ছাড়া আমরা বাঁচতেই পারিনা। সেই আলু আজ কেমন করে যেন দুর্মূল্য হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। তাকে আটকাতে তাই পথে নেমেছেন রাজ্যের মন্ত্রী। তবে এতসব ঘটনার মাঝে আমার সেই আলুর দম এর পিকনিক এর কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে আমরা সবাই বেশ কত ভালোভাবেই তো মাটির নিচের এই ফসলকে পেতাম। তাহলে আজ কেনো যে এত টানাটানি কে জানে। সব হয়তো রাজনীতির মারপ্যাঁচ আর কিছুটা হলেও কৃত্রিম উপায়ে দাম বৃদ্ধি করে বাজারে চাহিদার বৃদ্ধি করা। যা হলে লাভ বিক্রেতার, আড়তদারের, কিছুটা চাষীদের। ক্ষতি শুধু আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের ক্রেতাদের। তারা যে সত্যিই বড়ো ভালো নেই। 

আলুর দাম বৃদ্ধিতে রাস্তায় মন্ত্রী বেচারাম মান্না - অভিজিৎ বসু।
চৌঠা ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক বেচারাম মান্না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...