হাজার মানুষের ভীড়ে কেমন যেনো আলগোছে ছুঁয়ে থাকা এলেবেলে এলোমেলো বিন্দাস হাসি মুখের জীবন কাটিয়ে দেওয়া আজ এমন এক মানুষের কথা আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। সারাটা জীবন যিনি কঠিন কঠোর অনুশাসনের মধ্যে কাটিয়ে দিলেন নিজের স্বার্থের কথা একদম না ভেবেই। সেই একটা আধময়লা পাজামা, পাঞ্জাবী আর কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ আর সাধারণ চটি পরে ঘুরে বেড়ানো।
বছর শেষ হলেই আর নতুন বছর পড়লেই যিনি আমাকে ফোন করে বা দেখা হলে বলতেন অভিজিৎ তোমার নতুন বছরের ডায়েরী রাখা আছে আমার কাছে এসে নিয়ে যেও কিন্তু তুমি ওটা। রাজনীতির বৃত্তে আজকাল এমন মানুষের দেখা মেলা ভার। একসময়ে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েও কেমন অগোছালো হয়েই জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় সেই একচিলতে ছোট্টো ঘরে। ঝাঁ চকচকে জীবনকে বগলদাবা করতে তাঁর কোনোও অসুবিধা হতো না কিছুতেই। তবু কেমন যেন একটু অন্য রকম করেই জীবনটা কাটিয়ে দিলেন তিনি তাঁর ওই শ্যাওলা জমা উঠোনে পা টিপে টিপে হেঁটে মাকে সঙ্গে নিয়েই। জানিনা আজ তিনি বেঁচে আছেন কি না।
আসলে রাজনিতী, ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের কাছে থাকা, কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রীর স্নেহধন্য হওয়া এমন কিছুই যে তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়নি কোনোদিন। সেই একচিলতে টালির ভেঙে পড়া জল পড়া ঘর থেকে অট্টালিকায় পৌঁছতে হবে এমন তাড়না তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়নি কোনোদিন। আর তাই বোধহয় আজও সেই একভাবেই কেমন করে হাসি মুখেই দিন যাপন করেন তিনি এক ভাবেই এমন করেই যার জন্য তাঁর কোনো অনুশোচনা আফশোষ আর হা হুতাশ নেই।
আজ সেই বহু পুরোনো দিনের হুগলী জেলার সেই বিজেপির বহু পুরোনো নেতা শ্যামল বোস এর কথা আমার সাদা জীবনের কালো কথাতে। যে মানুষটা তৎকালীন কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী তপন শিকদারের খুব কাছের ভালোবাসার ছিলেন। তপনদা শ্যামলদাকে খুব ভালোবাসতেন। তবু কেমন যেন সেই একভাবেই জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ট হয়েও।
আসলে কেউ কেউ বোধহয় এইভাবেই জীবন কাটিয়ে একটু আনন্দ উপভোগ করেন। আর হাতজোড় করে হাসিমুখে তাঁরা বাঁচতে ভালোবাসেন। ঠিক তেমনি একজন মানুষ হলেন এই আমাদের শ্যামল বোস। সবে তখন বিজেপির উত্থান। তৈরি হয়েছে তৃণমূল আর বিজেপির সদ্য জোট। কেন্দ্রের ক্ষমতায় মন্ত্রী তাঁর একদম নিজেরই লোক। একে ওকে যখন তখন গ্যাস এর কানেকশন করে দেওয়া, সেই ইটিভির হুগলীর অফিসে টেলিফোন এর অফিস থেকে টু এম বি পি এস এর লাইন আসছে না। একবার শ্যামলদাকে বলতেই তপন শিকদার এর এক ফোনে কাজ হয়ে যাওয়া। এমন কত যে ঘটনা ছড়িয়ে আছে তখনকার কে জানে।
সেই টিনবাজারের পাশে শ্রীরামপুর থানার কাছে বিজেপির ছোট্ট অফিস। মাটিতে মাদুর পেতে সেই সাংবাদিকদের বসা সবাই মিলে শ্যামলদার ঘরে ভীড় করে। সেই ডাক্তার বাবু চুনীলাল মুখার্জী বোধহয় তিনি সল্টলেক থেকে আসতেন শ্রীরামপুরে সভাপতি ছিলেন তিনি বিজেপির। ভোটেও দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি বোধহয়। আর সেই সময় চুপ করে একাই সব হাসিমুখে সামলে দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করে চাঙ্গা রেখে তৃণমুল এর হাত থেকে দলকে একটু দূরে সরিয়ে রেখে এগিয়ে নিয়ে চলা। এই কাজটাই তো তিনি পঁচিশ বছর আগে করতেন মুখ বুজে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। কারণ দলকে যে বড়ো বেশী করেই ভালোবাসেন তিনি।
আর আজ এতদিন পর দল অনেক বড় জায়গায়। দল কেন্দ্রের ক্ষমতায় দীর্ঘদিন ধরেই। দলে এখন নানা জনের ভীড় বেড়েছে, আনাগোনা বেড়েছে। দর কমেছে তাঁদের মত দলের কঠিন সময়ে মুখবুজে কাজ করা কর্মীদের। তবু বর্তমানে তিনি কেমন আলগোছে হাসি মুখেই কাটিয়ে দিলেন সেই দলে থেকেও ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে। দলবদল করার কথা ভাবলেন না কোনোদিন তিনি।
কখনও তিনি ঋষিকেশ, ত্রিবেণী সঙ্গম, কেদারনাথ বা বদ্রীনাথ মন্দিরে গিয়ে পূজো দিচ্ছেন দলের মঙ্গল কামনায় হাসি মুখে। এই মানুষটা হলেন আমাদের সবার সেই চটি পড়া শ্যামলদা। কাগজে বা টিভিতে নাম তুলতে বা খবরের প্রচারে আসতে তাঁর অনীহা ছিল প্রবল। কি হবে নিজের প্রচার করে বা মুখ দেখিয়ে। দলের আদর্শ, সংগঠন বৃদ্ধি করাই যে তাঁর সারা জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আর সেটা নিয়েই এগিয়ে চলেছেন আমাদের সেই পুরোনো আমলের বিজেপি নেতা শ্যামল বসু দা।
কদিন আগেই বোলপুর থেকে শ্রীরামপুরে গেছিলাম আমি। শ্রীরামপুরে রাস্তায় কুমিরজলা রোডে সিপিএম পার্টি অফিসের সামনে একবারে সামনে থেকে দেখা হলো। আমায় সামনে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লেন হেসে তিনি। বললেন অভিজিৎ তুমি কেমন আছো। কি খবর তোমার। আমি বললাম দাদা, বোলপুরে আছি। মেয়ে পড়ছে চলে যাচ্ছে দাদা। কোথাও কাজ করছি না বা করতে পারছি না। যা অবস্থা বাংলা মিডিয়ার।
শ্যামল দা মিটিমিটি হাসলেন আমার কথা শুনে। সেটা তাঁর থেকে বেশি ভালো আর কে জানে কি অবস্থা চলছে এখন তাঁর নিজের প্রিয় দলেও। বললেন ভালো থেকো তুমি ভাই। বলে সেই হাতে একটা ফাইল নিয়ে ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেলেন তিনি। এটাই আমাদের সবার চেনা মানুষ, কাছের মানুষ শ্যামল দা। আজ তাই মনে পড়ে গেলো এই রাত দুপুরে তাঁর কথা। লিখে ফেললাম আমি সাদা জীবনের কালো কথায়। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। এইভাবেই মাটির কাছের মানুষ হয়েই বেঁচে থাকবেন আপনি দাদা।
আমাদের বিজেপির শ্যামল বোসদা - অভিজিৎ বসু।
তেইশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন